(গল্পঃসেগুন কাঠের গুঁড়ি)
নির্জন পদ্মা নদীর গভীরে ভেসে উঠলো সেগুন কাঠের গুঁড়ি-
প্রচন্ড স্রোতে হাবুডুবু খাচ্ছে দু’জন খেই হারা মানুষ।
গুড়িটি ছুটে চললো উহাদের কাছে_
কি আশ্চর্য!
একটি অজীব অস্তিত্ব দু’টি সজীবকে বাঁচাতে চাচ্ছে!
যেদিকে চোখ যায় চৈ চৈ নিঃশব্দ্য মাতন-
কোলাহলহীন জল সপেনে ছড়ানো ছিটানো কচুরিপানার ঝাঁক_
অন্ধকার আকাশের সূর্যহীন প্রহর।
আধমৃত মানুষ দুটি জাপটে ধরলো গুড়িটিকে,
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালো_
এভাবে কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে যায়।
ঢেউয়ের তীব্রতা বাড়তে থাকে আরও-
সর্বনাশ!জল পাক খেয়ে এগিয়ে আসছে প্রচন্ড বেগে !
হয়তো মৃত্যু সন্নিকটে_
তাই তারা চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরকে ডাকতে থাকলো।
বহুক্ষণ অস্থির ঢেউ আর জল পাকের সাথে যুদ্ধ চলতে থাকলো গুঁড়িটির-
কিছুতেই ডুবানো গেলোনা তাকে-
এই যুদ্ধ চললো প্রভাতের প্রথম প্রহর হতে সন্ধ্যার গোধূলী লগ্ন পর্যন্ত-
অবশেষে তীর খুঁজে পেলো সে।
একটি গহীন উপকূল-আশেপাশে ঘাসের চারণভূমি-সাথে কিছু শুকনো ডালপালাও,
হয়তো ভ্রমনবিলাসী কেউ রেখে গেছে রান্না বান্না শেষে।
এবার বিদায় নেয়ার পালা-গুঁড়িটি বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে-
তার মুক্ত বিচরণে চ্ছেদ পড়লো বুঝি-
টেনে হেঁছড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শুকনো উপকূলে-
প্রচন্ড শীতে থরথর করে কাঁপছে মানুষ দুজন-
কুয়াশার আবছায়ায় নদীটি অস্পষ্ট হয়ে আসছে।
অতঃপর দু’টি পতিত পাথরের ঘর্ষনে শুকনো ডালপালায় আগুন দিয়ে মনের আনন্দে নাচতে শুরু করলো মানুষদ্বয়।।
বেঁচে গেছি আমারা বেঁচে গেছি!!
সেই আগুন খুব দ্রুতই তীব্রতায় রুপ নিলো।
তারপর নিক্ষেপ করা হলো সেগুন কাঠের গুঁড়িটিকে।
সে চিৎকার করে কাঁদছিলো,
আমাকে পুঁড়োনা হে স্বার্থপর মানুষ-
একদিন জলে ঝাঁপিয়েছিনু আগুনের ভয়ে-
ওরা শুনলোনা সেই কষ্টজীর্ণ আকুতি।দাউ দাউ আগুনে পোঁড়া কয়লার স্তুপে পরিনত করা হলো তাকে।
অতঃপর–পোঁড়া কয়লার সমাধিতে বসে-
প্রথম মানুষ দ্বিতীয় মানুষটিকে বললোঃগুঁড়িটির কল্যানে দু’বার রক্ষা হলোরে-একবার সাক্ষ্যাৎ মৃত্যু হতে,আরেকবার শীতের তীব্রতা হতে।কাপড় শুঁকালো,শরীর শুঁকোলো,আহা!সেগুন কাঠের কি নিবিড় দাহ্যক্ষমতা-এখনো গনগন করছে কয়লার তেঁজ।দ্বিতীয় বন্ধু মাথায় হাত রেখে বিস্ময় সিক্ত চোখ নিয়ে আকাশের দিকে তাকায়-না জানি এই গুঁড়িটি কতো শতজনের প্রাণ বাঁচিয়েছিলো এভাবে-আজ তার নিঃস্বার্থ প্রয়াস থমকে গেলো।
সে তো নিয়তির উপলক্ষ ছিলো_
প্রকৃতিতে এমন অসংখ্য উপলক্ষ বিরাজমান_
কৃত্রিমতায় পূর্নতা পাবেনা কখনো এই অবক্ষয় –
আমরা তো অগনিত মানুষের হত্যার উপলক্ষ সাজিয়ে দিলাম_
প্রথমজন দ্বিতীয় জনের কাঁধে হাত রাখলো,ধূর বোকা!কি যে বলিস!নিজে বাঁচি জন্মান্তর,অন্যেরটা দেখার সময় কই।
(মাসুদ চয়ন)
১২টি মন্তব্য
তৌহিদ
মানুষের জীবনে এরকম অনেক কিছুই ঘটে, কে কার কারনে কখন কোথায় কিভাবে যে উপকৃত হয় বলা যায়না। তবুও আমরা অকৃতজ্ঞের মতন কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিনা। নিজে বাঁচলে বাপের নাম এই তত্ত্বকেই সত্য ধরে চালিয়ে নিচ্ছি নিজের জীবন। আশ্চর্য মানুষ আমরা!
ভালো লিখেছেন চয়ন।
মাসুদ চয়ন
ধন্যবাদ ভাই
জিসান শা ইকরাম
মানুষের স্বার্থপরতা ভিন্ন ভাবে দেখালেন, মুগ্ধ হলাম চয়ন।
অনেক মানুষই আছে যারা যার জন্য বেঁচে থাকার প্রেরনা পায়, যখনই তাদের পায়ের নীচে একটি শক্ত ভীত খুঁজে পায়, স্বার্থপরতা আর বেইমানীর উদহারন হয়ে যায়।
শুভ কামনা।
মাসুদ চয়ন
ধন্যবাদ দাদা
শাহরিন
প্রকৃতি সব সময়ই আমাদের কল্যাণ সাধন করে আর আমরা উল্টো ক্ষতি করি। অনেক ভালো লেগেছে লেখা।
মাসুদ চয়ন
ধন্যবাদ আপু
সাবিনা ইয়াসমিন
সব সময়ে উপকার করা মানুষগুলো দিনশেষে একাকী হয়ে যায়, কারন স্বীকৃতির প্রত্যাশায় সে কারো কল্যানে যায়না। তেমনি প্রকৃতি ও বস্তু। এরা নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিতে জানে। বিনিময়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যতাই এদের পাওনা হয়ে রয়।
মাসুদ চয়ন
সত্যিই তাই আপু।
রাফি আরাফাত
ভালো লাগছে ভাই। ভাষাশৈলির প্রশংসা করছি। ভালো থাকবেন
মাসুদ চয়ন
ধন্যবাদ ভাই
মনির হোসেন মমি
মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস হারায় এভাবেই।খুব ভাল লাগল।
শিরিন হক
মানুষ এক আজব জীব। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝেই যার বসোবাস।
ভালো লিখেছেন প্রশংসা করতে দ্বিধা নেই।