
>> কেন শূণ্যতায় বাড়ালে হাত ?
—শুনেছি শূণ্যতার অনেক ভার, বিশ্বাস হয়নি, তাই সত্যিটা জানতে চাই।
>> দীর্ঘশ্বাস বেঁধে দেয়ার মতো কোন শেকল যদি থাকত, তবে নাহয় দু’আঁটি রেখে দিতাম শূণ্য পথে।
—পথে কেন ? শূণ্য হাতে কেন নয় ?
>> বুঝতে পারতে, কতটা উঁচু হয় শূণ্যতার স্পীডব্রেকার, কাউকে কত যত্নকরে গতিশূণ্য করে, নজর এড়ালেই যেখানে নির্ঘাত দুর্ঘটনা।
— কেউ পুঁতে রাখলেই পারে দুটি সবুজের নিশানা ।
>> হাজার বছরের তৃষ্ণার্ত মরুর পথ, চোখের পলকে পাণ করে আকাশের অঝড় কান্না । বুক জুড়ে থাকে ভেজা শূণ্যতায় খানিকক্ষণ বয়ে যাওয়া স্রোতের দাগ।
জলের দাগে সবুজের বীজ খুড়ি মেলে না যে।
—তবু কেন অযথাই আকাশের চোখে জল ? কেন বিজলী আর গগণবিদারী আর্তনাদে মিশে নামে বর্ষন ? এ কি খরার জন্য নীলের ভালোবাসা নাকি শূণ্যতার জন্য দিগন্তের অনুসুচনা ?
>> সে পথের বাঁকে, নগ্ন বুকে চিত হয়েছিল আলেয়া- ষোড়শী নদীর মতো। ভরা পূর্ণিমায় আকাশের বুক ছিড়ে একটি নক্ষত্র ছিটকে পড়েছিল স্নানের নেশায় । উজ্জলতার পরশে উষ্ণ মরুবুকে উঠেছিল ঝড়। মরিচিকায় ভুলে জলের বদলে বালুঝড়ে হারিয়েছিল নক্ষত্রের ইচ্ছে তরী।
—তবে আজও কেন মেঘ ডাকে বেলা অবেলায় ?
আষাঢ়ের স্রোত কি ছুঁতে পায় নক্ষত্রের তৃষ্ণা ?
শ্রাবণ জোয়াড়ে ভরা কোন স্রোতস্মীনী নদীর বুকে ক্ষাণিকক্ষন ভাসে কি ইচ্ছে হারানো তরী ?
>> তবে তো মোহনায় মিশে যেত পথ , সৈকতে হয়ে যেত আলেয়া আর স্রোতের মহাপরিণয় ।
—কি পেলেন একা একা দহনে শূণ্য ঠিকানাহীন, অশ্রুভেজা, ব্যার্থ যাত্রা পথের শেষে ?
>> রোদে জ্বলা তামাটে চামড়া, একটা ভারী চশমা,
আর …..
—আর ?
>> আর একগুচ্ছ বর্ণের খেলাঘর, যে ঘরের দেয়ালে, আলেয়ার রেখে যাওয়া ঘুণেধরা অক্ষরগুলির শব্দার্থ খুঁজে পেলে সারিবদ্ধ করে লিখে রাখি।
—তবে থাক সে আলেয়ার গল্প । মরিচিকায় ভরা পুরুনো গল্প শুনতে মন চাইছে না।
>> তা জানতাম, তবে ফিরিয়ে নাও হাত ।
—কেন ? শূণ্য হাত ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তুলিনি।
>> কি দিবো তোমায় নতুন করে ?
—খানিকটা সুবাস দেবেন ! দীর্ঘশ্বাসের গন্ধমাখা দহন ?
>> কর্ম ক্লান্ত পথের শেষে গর্মাক্ত দেহ, পরাজয়ের মেলায় সুবাস কোথায় পাবো বলো !
—তবে ঐ কাঁধের ঝুলিটা দেখতে চাই, ওখানে সুবাস আছে ।
>> নাহ, একটা দেয়শালাই, খানিক জলে পূর্ণ লালচে প্লাস্টিক বোতল, আর তো কিছু নেই
—আরও কিছু আছে, ভেবে বলেন তো
>> কি করে জানলে ? তবে হ্যাঁ – আছে একটা কলম
—আর ?
>> আর একটা পুরুনো ডাইরি ।
—আর ?
>> আর !! আর নেই তো কিছু ।
—মিথ্যে বলছেন ;
>> কেন মিথ্যে বলবো ?
—ডাইরিতে কি আছে বলেন ;
>>ওহহ ! অতটা গভীরে ভাবিনি
তবে আছে ; কিছু অমিমাংসিত বর্ণ সমাহার |
—অমিমাংসিত কেন ?
>> মাঝখানের পৃষ্ঠা হারিয়ে ফেলা উপন্যাস, সময় অসময়ে লিখা ছন্দহীন কবিতা – যাদের করুন চিৎকার এই মন বার বার শুনে, শান্তনা দেয়ার অক্ষর খুঁজে, আর একটা দীর্ঘশ্বাসে সে ইচ্ছে পুড়ে ছাই হয়।
তবু মিলে না বাক্য – এইতো অমিমাংসিত বর্ণমালা ।
—আর কি আছে ডাইরিতে ?
>> একটা শুকনো গোলাপের গুটিকয়েক ঝড়ে যাওয়া পাপড়ি ।
—তবে আমি সত্যি কিছু নিবো , দেবেন ?
>> হুমম,
নাহ- !!
সে গোলাপ তো একটাই, ইচ্ছে ভরা নৌকা ডুবু ডুবু প্রায় , বোঝাই হয়ে গিয়েছিলো, তাই গোলাপটা তুলে রেখেছিলাম।
—কেন দেবেন না ?
>> এটা আমার কাছে আলেয়ার অসমাপ্ত ইতিহাসের সৌধ- আপনার কাছে ঝড়ে পড়া শুকনো পাপড়ি,
যাকে দেয়ার ছিলো তাকে দেয়া হয়নি,
আপনি নাইবা নিলেন ।
—আরে না না – আমি গোলাপ নিবো না-
>> তবে ?
—যদি দিতে চান তবে,
যে পৃষ্ঠার ভাঁজে গোলাপটা রাখা, সে পৃষ্ঠা টা আমায় দেবেন,
>> কি করবেন ?
—ঐ যে বল্লাম,
যে আলেয়ার পিছনে তপ্ত মরুর বুক চষে বেড়িয়েছেন,
কাগজের নৌকায় ইচ্ছে ভাসিয়েছেন,
মরা স্রোতের দাগ দেখে দেখে হৃদয় পুডিয়ে দীর্ঘশ্বাসের ভার মিশিয়ে দিচ্ছেন শূণ্যতায়;
আমি সে হৃদয়ের চর্বি পোড়া ধোঁয়ার মন্ডপে রাখা- গোলাপের চারপাশের বর্ণগুলি থেকে, সেদিনের মতো খানিকটা সুবাস খুঁজে নিবো___॥
-০-
০৭/০২/২০১৯
১৮টি মন্তব্য
তৌহিদ
শুন্যতার হাহাকারে লেখা সেই ডায়েরির লাইনগুলি পড়তে চাই। তাহলে অনেক প্রশ্নের উত্তর পেতাম আমিও।
পড়াবেন কিন্তু সোনেলার পাঠকদের। ভালো লিখেছেন বাবু ভাই।
এস.জেড বাবু
পৃষ্ঠাগুলি ছিঁড়ে গেছে অনেক- তবুও যতদুর খোঁজে পাই।
সোনেলা কে ডাইরির ডিজিটাল কপি বানিয়ে নিবো- হাহাহা।
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
চমৎকার লেখা,
শব্দের বুননে মুগ্ধ হলাম।
এস.জেড বাবু
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইজান
ছাইরাছ হেলাল
পোড়াপুড়ি বার তিনেক এসেছে!
দহনের সুবাস আমাদের পর্যন্ত না পৌঁছালেও শূণ্যতার হাতছানি বেশ টের পাচ্ছি।
শেষে গোলাপ নয় পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে থাকা গোলাপের বিনিময় মন্দ না কিন্তু!
লেখাটির সময়কাল বলুন।
এস.জেড বাবু
হাহাহা- পুড়ার মতো সম্পত্তি আছে যার, তারই তো পুড়বে-
বছরের পর বছরের দহন মাত্র তিন বার গুনেছেন সোনেলার লাইভ ক্যালকুলেটর।
এতো হিসেব কেমনে রাখে আল্লাহ ই জানে।
যে পুরো পৃষ্ঠা নিলো- সে কিছুটা চালাক মনে হচ্ছে।
লিখাটার শুরু যে ডাইরিতে তার বয়স একুশ হবে। এর পরেও কিছু মেকআপ-টেকআপ করেছে আরকি ।
ধন্যবাদ দিলাম।
সুরাইয়া পারভিন
ইশ মাত্র একটা পৃষ্ঠা! আমি তো পুরো ডায়রীটাই চেয়ে নিতাম। দেখতাম কতোটা শূণ্যতার চাষাবাদ হয় সেই পুরোনো ডায়রীতে, কতটা দীর্ঘশ্বাস হয় পুড়ে ছাই?
এস.জেড বাবু
ইশশ
তেমন হলে পুরো অগ্নি কুন্ডলী দুরে সরে যেত। হাহাহা।
পরে দেখতাম কেউ সেই শূণ্যতার গোড়ায় সার দিচ্ছে, দীর্ঘশ্বাস লম্বা হওয়ার জন্য।
মজার কমেন্ট ছিলো আপু।
অশেষ কৃতজ্ঞতা
নৃ মাসুদ রানা
সে গোলাপ তো একটাই, ইচ্ছে ভরা নৌকা ডুবু ডুবু প্রায় , বোঝাই হয়ে গিয়েছিলো, তাই গোলাপটা তুলে রেখেছিলাম।
এস.জেড বাবু
সারাংশ তুলে নিয়েছে ভাইটি-
অশেষ ধন্যবাদ ভাইজান।
আকবর হোসেন রবিন
শব্দের খেলা খেলেছেন। ভালো লাগলো।
এস.জেড বাবু
মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা রইলো ভাইজান।
মাহবুবুল আলম
শূন্যতার ভারের চেয়ে এর দহন বেশি!
পড়ে নতুন অভিজ্ঞতা হলো।
এস.জেড বাবু
ভার বইতে ঘাম ঝড়ে
দহনে ঝড়ে রক্ত
কৃতজ্ঞতা ভাইজান।
ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার চমৎকার একটি পোস্ট। ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা লেখা দেয়ার জন্য।
এস.জেড বাবু
সত্যি পুলকিত হলো মন।
অনেক অনুপ্রাণিত হলাম আপু।
অশেষ কৃতজ্ঞতা সহ ধন্যবাদ জানাই।
সঞ্জয় মালাকার
সে গোলাপ তো একটাই, ইচ্ছে ভরা নৌকা ডুবু ডুবু প্রায় , বোঝাই হয়ে গিয়েছিলো, তাই গোলাপটা তুলে রেখেছিলাম।
চমৎকার শব্দে গাঁথুনি পড়ে মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
এস.জেড বাবু
শুকরীয়া সঞ্জয় দা-
মিষ্টি কমেন্টে মন ভরে যায়।
কৃতজ্ঞতা অশেষ।