
সাইবেরীয় চুনিকণ্ঠী বা Siberian rubythroat পাখিটি উত্তর এশিয়ার খুবই পরিচিত একটি ছোট পাখি। শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসে। এরা পরিযায়ী পাখি। আমাদের দেশে মূলত খাদ্য সন্ধানে আসে। এখানে তিন থেকে চার মাস অবস্থান করার পর প্রজননের জন্য আবার চলে যায় নিজ আবাসে। এরা মূলত ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে চায়। যার জন্য শীত মৌসুমে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশে চলে আসে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার ও আশেপাশের দেশগুলোতেও এ পাখি দেখা যায়। তবে আমাদের দেশের জন্য সাইবেরীয় চুনিকণ্ঠী বিরল পরিযায়ী একটি পাখি। অনেকের কাছে পাখিটি ‘লাল গলা বা গুম্পিগোরা’ নামেও পরিচিত।
পাখিটির দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৫-১৭ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ২২-২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির গলার মাঝখানে উজ্জ্বল লাল রঙের। যা পাখিটির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। উপর-নিচে স্পষ্ট চওড়া সাদা টান। অপরদিকে স্ত্রী পাখির গলা অস্পষ্ট সাদাটে ও বেগুনী রেখা। উভয়ের মাথা, পিঠ ও লেজ জলপাই-বাদামি। লেজ ঊর্ধ্বমুখী। লেজতল সাদাটে। বুক ধূসর। পেট জলপাই-বাদামির উপর অস্পষ্ট সাদাটে। ঠোঁট কালো, গোড়ার দিকে ফ্যাকাসে। চোখ কালো। পুরুষ পাখির ভ্রু-রেখা স্পষ্ট সাদা, গলা চুনি লাল, থুতনির পাশে কালো টান থাকে। মেয়ে পাখির গলা সাদা কিংবা বেগুনি। মূলত পুরুষ পাখিটির গলা চুন্নি পাথরের মতো লাল টকটকে হওয়ায় বাংলায় চুনিকণ্ঠী নামকরণ হয়েছে।
এদের প্রধান খাবার পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। এরা ময়লার স্তুপ বা জমে থাকা লতাপাতা থেকে ঠোঁট দিয়ে খাবার খুঁজে খুঁজে খায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়ার তাইগ্যা অঞ্চলে। সরাসরি ভূমিতে ঘাস, তন্তু, চিকন ডালপালা ও চুল পেঁচিয়ে বাসা বানায়। এরা ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪ দিন। বাচ্চা ফুটে উড়ে যেতে আরো সময় লাগে দুই সপ্তাহ। প্রজননের পর থেকে মোটামুটি ৪৫ দিনের মাথায় এরা বংশবৃদ্ধি করে প্রকৃতিতে মিশে থাকে।
বাংলা নাম: সাইবেরীয় চুনিকণ্ঠী
ইংরেজি নাম: Siberian rubythroat
বৈজ্ঞানিক নামঃ Luscinia Calliope
ছবিগুলো ঢাকার দক্ষিণ কেরনীগঞ্জের আঁড়ারকূল গ্রাম ও উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে তোলা।
২৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আজ জানলাম এরা পরিযায়ী পাখি, কি অসাধারণ তাদের চেহেরা, সত্যি মুগ্ধ হলাম ওদের কথা জেনে।
সুন্দর পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ ভাইজান।
শুভ কামনা রইলো।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
সুরাইয়া পারভীন
কত পাখি সম্পর্কে জানছি আপনার পোস্টে! কি সুন্দর সুন্দর সব পাখি? অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে দাদাভাই চমৎকার সব পোস্টের জন্য।
শামীম চৌধুরী
কৃতজ্ঞ আপু।
শুভেচ্ছা নিবেন।
খাদিজাতুল কুবরা
পাখিটি দেখতে খুব সুন্দর!
সাইবেরিয় পাখিটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম।
খুব ভালো লাগলো।
শামীম চৌধুরী
সুন্দর মন্তব্য ও আপনাকে জানাতে পেরে কৃতজ্ঞ।
শুভ কামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
কত অজানা সুন্দর পাখিদের দেখলাম, আপনার লেখায়,
জানা পাখি-ও আবার জানলাম নুতন করে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে।
নামকরণের যথার্থতা সহজেই ভাল লেগে যায়।
শামীম চৌধুরী
সত্যিই বলেছেন ভাইজান। প্রকৃতিতে কত রঙের যে পশু পাখি আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। আবার একেকটার সঙ্গে আরেকটার চরিত্রও ভিন্ন।
শুভ কামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
শেষের পাখির ছবি দেখে মনে হচ্ছে ছবি তুলার সময় শিকারী বা আপনার আগমন আচ করততে পেরে গলা উচিয়ে আছে।পরিযায়ী পাখি ঢাকার মত শহরেওএমন সুন্দর পাখি থাকে।খুব ভাল লাগল।
শামীম চৌধুরী
নাহ ভাইজান,
এদের খাবার সংগ্রহটা খুব মজার। এক নাগাড়ে খাবারে ডুবে থাকে না। যেহেতু পরিযায়ী তাই ভিন্ন দেশে ভিন্ন আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলে। তারপরও মনের ভিতর একটা ভয় কাজ করে। তাই খাবার সংগ্রহের সময় বেশ ঘন ঘন মাথা উঁচু করে চারিপাশ দেখে। যখন মাথা উঁচু করে তখন লেজটাও লম্বা হয়ে যায়। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইজান।
মনির হোসেন মমি
হুম তাই বলি আমার প্রিয় পাখি বিশেজ্ঞ ভাইয়া।ভাল থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পাখিটির লেজের অংশের আকৃতি অন্যরকম লাগলো দ্বিতীয় ছবিটিতে । এটাই কি এদের আকৃতি ভাইয়া? নামটা চমৎকার সাইবেরীয় চুনিকন্ঠী। পরিযায়ী পাখিদের যত্ন নিতে হবে কারণ তারা আমাদের অতিথি কিন্তু আমরা তো যত্ন নেইনা উল্টো তাদের জীবন ধ্বংস করে দেই। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
দিদি ভাই,
যেহেতু পরিযায়ী তাই ভিন্ন দেশে ভিন্ন আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলে। তারপরও মনের ভিতর একটা ভয় কাজ করে। তাই খাবার সংগ্রহের সময় বেশ ঘন ঘন মাথা উঁচু করে চারিপাশ দেখে। যখন মাথা উঁচু করে তখন লেজটাও লম্বা হয়ে যায়। আপনার ভালো লাগাই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।
আরজু মুক্তা
নামটা চমৎকার।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ আপু। ঠিক যেন মুক্তার মতন।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ অশেষ
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর সাইবেরীয় চুনিকণ্ঠী সম্পর্কে বেশ জানলাম শামীম দা
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ কবি দা।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক কিছু জানলাম। ভাইয়া পাখিগুলো এত সুন্দর কি সত্যিই ? নাকি ক্যামেরার জন্য।
শামীম চৌধুরী
আপু
আপনার যা রূপ তাইতো ক্যামেরায় আসবে। তাই না?
আসলেই এমন বর্ণিল রূপ ওদের।
বুদ্ধিজীবী লাঠিয়াল
সাইবেরীয় চুনিকণ্ঠী সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। পাখি নিয়ে নিয়মিত পোষ্ট হতে পারে তা সোনেলা ব্লগে না এলে জানা হতো না। আপনিই সম্ভবত বাংলা ব্লগ ইতিহাসে একমাত্র ব্লগার যিনি পাখি নিয়ে লিখছেন। আপনার বেশ কিছু পোষ্ট পড়েছি আমি। পড়ে আপনার ভক্ত হয়ে গিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ ভাইয়া।
তৌহিদ
এত ছোটপাখি সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসে এত কষ্ট করে ভাবতেই অবাক হতে হয়!
ভালো থাকুন ভাইজান।