‘সোনেলা’ আমার অনলাইন সময়ে সাহিত্য+আড্ডার জন্য প্রিয় জায়গা। নিজের একাকীত্বের সময়টুকু এই সোনেলার সাথে কাটিয়েছি বেশ ক’টা মাস।  ঘুরে ফিরে নানান পোস্টে বারেবারে বলেছি কেন ও কি করে এই সোনেলায় সবার মাঝে সময় কাটানো তাই নতুন করে কিছুই বলছি না। তবে ইদানীং সোনেলায় আমার পদচারণা সীমিত হয়ে এসেছে বেশ কিছু কারণে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অনলাইনের সময়টুকুর প্রায় ৮০ ভাগ সময় কেটে যাচ্ছে ভাল লাগা এবং দায়িত্ববোধের কারণে অন্য একটি স্বেচ্ছাশ্রমের কাজের জন্য। অনেকটাই ঘুমের সময় পাল্টে ফেলে এবং ব্যক্তি সময় ছোট করেই। সোনেলায় সবার পোস্টে তো যাওয়া হচ্ছেই না বরং প্রিয় যে কয়জন ব্লগার এখানে আছেন তাঁদের পোস্টেও অতোটা সময় নিয়ে বসতে পারছি না।

 

ইচ্ছে ছিল সোনেলায় আমার ভাবনায় সেরা পোস্টের তালিকা করার, প্রতি মাসে আমার ভাল লাগার পোস্টগুলো নিয়ে পোস্ট দেওয়ার। কিন্তু মনোযোগ অন্যখানে দিতে গিয়ে এখানে পুরো মনোযোগের সাথে তা করতেও পারছি না। তবুও চোখ বন্ধ করে ভাবলেই গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত পোস্টের মধ্যে কয়েকটি পোস্টের কথা আমার ভাবনায় চলে আসে। এদের মধ্যে মানবিক বোধের জায়গা থেকে ঘটনানুক্রমিক দু’টি ছোট গল্প “এটি কোন গল্প নয়না গল্প অথবা অন্য কিছু“, রহস্যে ভরা অতি-প্রাকৃত ক্ষমতা নিয়ে বড় গল্পের সিরিজ “অনূসুয়া- অ্যান আনসলভড মিস্ট্রি (১, ২, ৩, ৪ ও ৫ )” বারেবারেই পড়তে ইচ্ছে করে। এর বাইরে আরো অনেক পোস্ট এসেছে যা কোনটাকে বাদ দিয়ে কোনটার নাম নেবো ভাবলেই সবগুলো নিতে ইচ্ছে করে। শুধু এখানে আলাদা করে একটি ছোট গল্পের সিরিজ আর বড় গল্পের সিরিজের নাম নিলাম বলে এই না যে আমি বাকিদের লেখাকে খারাপ বলছি।  আলাদা করে নাম নিলাম কারণ এই এক মাস পরে এসেও এই দু’টিই সবার আগে আমার মাথায় খেলে।

২০১৫তে সোনেলায় কাটানো সময়গুলো হতে কিছু পোস্টদাতাকে আলাদাভাবে উল্লেখ করতেই হয়, তবে সাথে আমার ব্যক্তি অনুভূতির দু’একটি লাইন যেখানে সমআলো ও লোচন দুই’ই রাখছি।

 

১। অরুনি মায়াঃ গল্প এবং কবিতা দুই’কেই এক করে লিখে ফেলা কঠিন। কবিতার ভাবনাকে গল্প আকারে লিখে সাথে আবার কবিতাকেও প্রকাশ করেন একই সাথে। এমন করে সবাই পারেন না। আপনার কবিতার জায়গাগুলোতে প্রায় সময়েই ভালবাসা চলে আসে। ভালবাসা ছাড়া কিছুই লেখা যায় না। বিদ্রোহ হতে শুরু করে জনমানুষের জন্য সব কথাতেই থাকে ভালবাসা। কিন্তু আপনার লেখায় নর-নারীর ভালবাসা উঠে আসে বেশ ভিন্নভাবেই। কখনই তা অন্য অনেকের মতো আমি-তুমি ধরনের নয় বরং নানান পরিবেশ দিয়েই সেই ভালবাসা প্রকাশ করেন। এইজন্যে আপনার এই রকমের পোস্ট পড়ার পরে একই রকমের মন্তব্য করা হয় প্রায়ই। তবে, ইদানীং আপনার লেখায় পুনরাবৃত্তির ব্যাপারটি চলে এসেছে। একই কবিতায় একই লাইন হুবহু বা একটি/দু’টি শব্দের পরিবর্তন এনে একই মানে ঠিক রেখে বারেবারে উল্লেখ করাটা পাঠকের মনে বিরতি নিয়ে আসে। মূলতও কবিতায় পুনরাবৃত্তি না আনাটাই উচিত, যদিও এটা বেশ কঠিন কিন্তু একই লাইন বারেবারে থাকাটাও ঠেকে যায়। আশা করছি আপনি আবার আপনার স্বরুপে ফিরবেন। আপনার লেখা “গাঁয়ের বধু” আমি বেশ অনেকের কাছেই ভালবাসা প্রকাশের উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছি। আমার দৃষ্টিতে এটিই আপনার সেরা লেখা।

২। রিমি রুম্মানঃ আপনার একান্ত অনুভূতি নিয়ে লিখে রাখা পোস্টগুলো আমার কাছে মনে হয় আক্ষরিক অর্থেই ব্যক্তি ব্লগের কথা। আপনার স্মৃতিতে জেগে থাকা বা ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা এমনভাবে এখানে লিখে রাখছেন যা যেই পড়ুক ভাবাবে তাকে। বেশ কিছু পোস্টে মানুষের ‘বিবেক’ হয়ে প্রশ্ন রেখেছেন সবার কাছে যার উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। আপনার পরবর্তী প্রজন্ম আপনার এই স্মৃতির স্রোতা হলে ভাগ্যবান হবেন নিশ্চিত।

৩। মরুভূমির জলদস্যুঃ আপনার বুক রিভিউ ও এপিগ্রাম নিয়ে লেখা প্রতিটি পোস্টই মনে রাখার মতো তাই আলাদা করে নাম নেওয়া কিছুই নেই। সোনেলায় আপনি এই বিভাগে অনন্য। এছাড়া আপনার ছবি ব্লগে ছবিতে আমাদের ভ্রমণ করাচ্ছেন, অংক নিয়ে রঙ্গ উপস্থাপন করে আমার মাথার চুল যা আছে তাও ছিঁড়ে ফেলছেন অবলীলায়  ^:^   :p  এইসব বিভাগে আপনিই সেরা 😀

৪। ফাঁকিবাজ ব্লগারঃ সোনেলার দুইজন প্রাচীন ও আদি ব্লগার জিসান শা ইকরাম এবং ছাইরাছ হেলাল। ইনাদের মধ্যে জিসান শা ইকরাম হচ্ছেন চরম ফাঁকিবাজ পোস্ট দাতা। ২০১৫তে বলতে গেলে তেমন পোস্ট দেননি; উল্টো অন্যদেরকে নিয়মিত পোস্ট দেওয়ার মতো কাজে লিপ্ত ছিলেন জোরেসোরেই।  :@  ছাইরাছ হেলাল নিয়মিতই কবিতা লিখে পোস্ট করছেন, তবে ফাঁকিবাজ কেন? ফাঁকিবাজ কারণ উনি ভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট লিখেন একেবারেই “সারাংশের সারমর্ম’ লিখে ফেলার মতো করে। উনার ‘রুপকথা’ কবিতাগুলোও ইদানীং বন্ধ রেখেছেন।

৫। মারজানা ফেরদৌস রুবাঃ মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই লিখেছেন বেশী। প্রায় ১ বছর ১ মাস ৬ দিন হলো সোনেলায়, উনি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে  লিখেই যাচ্ছেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন পোস্ট এলে আমার তেমন মন্তব্য করা হয় না যার কারণ একটাই- সেখানে কিছু বলার মতোন জ্ঞান ও যোগ্যতা নেই আমার। তাই উনারা য৭। তই লিখেন ততই চুপ করে পড়ার ইচ্ছে জাগে বেশী।

৬। ফাতেমা জোহরাঃ ১ বছর ১১দিনের ৩৭টি পোস্তের প্রায় সবগুলোই উনি বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, বীরাঙ্গনা ও স্বাধীনতার বিভিন্ন সময় নিয়ে পোস্ট করেছেন, তবে রেফারেন্স সহ যেভাবে পোস্টগুলো এনেছেন তাতে বলতেই হয় উনার পোস্টগুলো একসময় দেশের ইতিহাসের অনেক কাজে আসবে রেফারেন্সের জন্যই।

৭। মেহেরী তাজঃ সেন্স অফ হিউমারের মুখপাত্র এই তাজ। নিষ্পাপ দুষ্ট বুদ্ধি আর রসবোধের জন্য সোনেলার সকলের কাছে জায়গা করে নিয়েছেন, নিচ্ছেন। যদিও বেশ কিছুদিন হতে ব্যক্তি সমস্যায় অনুপস্থিত সোনেলায় তবুও উনার পোস্ট মানেই হাসি আর মিষ্টি-দুষ্ট আলাপচারিতায় মেতে ওঠার জায়গা। মাঝে মধ্যে দু’একটা ভিন্ন লেখা পোস্ট করে উনার মেধার ও উদ্ভাবনী চিন্তার পরিচয় দিয়ে অবাক করেছেন আমাদের।

৮। ব্লগার সজীবঃ নানান উপাধিতে ভূষিত আমাদের সজু বাইয়া। যদিও সবার পিচ্চি বলেই পরিচিত তবুও উনি হচ্ছেন স্বস্বীকৃত ও অনুমোদিত একমাত্র শিষ্য যাকে মেহেরী তাজ একমাত্র শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। রম্য লিখতে সবাই পারেন না, অত্যন্ত কঠিন আর এই কঠিন কাজ অবলীলায় শুরু হতেই করে যাচ্ছেন সজু বাইয়া। ইদানীং দু একটি রম্য পোস্ট ও মন্তব্যে উনার প্রাজ্ঞতা দেখে অবাক হতে হয়েছে আমাদের।

৯। অপার্থিবঃ একেবারেই স্বতন্ত্র ঘরানার। উনার বিজ্ঞতা উনার মন্তব্যেই প্রকাশ পায়, কিন্তু পোস্ট করেছেন একেবারেই কম, যা করেছেন তা প্রতিটিই অনেক বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে, বলা চলে অনলাইনের স্বত্বা নিয়ে উনার লেখাগুলো চিন্তাকর্ষক। আশা করছি ২০১৬ তে উনি পোস্ট বেশী দিয়ে আমাদের তৃপ্ত করবেন।

১০।  আবু খায়ের আনিছঃ সোনেলায় আলোচনায় এসেছেন উনার ‘লাশ’ নিয়ে। এরপরে রম্য লেখা কাল্পনিক সাক্ষাৎকার দিয়ে সবার পেটে হাত দিয়ে হাসিয়েছেন বটে। উনি লিখেন, লিখছেন। আশা করছি ২০১৬তে এসে আরো একজন পূর্ণ লিখিয়েকে পাবো আমরা।

১১। মনির হোসেন মমিঃ সোনেলার প্রথম মিলনমেলা ২০১৪ তে উনার সাথে দেখা হয়। মাটির মানুষ, লিখে যাচ্ছেন। উনার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পোস্টগুলো নিয়েই উনি মা ও মাটির মানুষ।

১২। নীলাঞ্জনা নীলাঃ সোনেলার আরো এক প্রাচীন সদস্য। উনি উনার বলাকা সিরিজের ভেলায় ভেসে ভাসাচ্ছেন সবাইকে নিয়মিতই। সম্প্রতি উনি সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে সোনেলায় উপস্থিতি নেই। উনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

*ফিরে আসাঃ সোনেলায় অনেকেই ফিরে আসছেন আবার অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। তবে ফিরে এসে আবার ঝাঁকিয়ে বসেছেন সোনেলার একমাত্র সন্ত্রাসী অনিকেত নন্দিনী। যার দাপুটে পদচারণায় সোনেলা মুখর ছিলো তাকে আদর করে লীলাবতী অনিকেত সন্ত্রাসী উপাধিতে ভূষিত করেছেন। (ভয়ে ভয়ে লিখছি, না জানি আবার কবে আমার উপর হামলা করেন :p )

১-১২ জন ব্লগারের নাম যাদের নিলাম উপরে উনাদেরকে ক্রমানুসার করেছি মেধার বিচার করে নয় বরং সরব উপস্থিতি ও উপস্থাপনার বিবেচনায়। আরো বেশ কজন আছেন যাদের নাম আমি এখন নিচ্ছি না কিন্তু ২০১৬ শেষে নিশ্চিত উনাদের নাম আমি উল্লেখ করবো।

দুইজনের নাম আমি কিছুতেই কোন তালিকাতেই রাখবো না তাঁরা হচ্ছেন শুন্য শুন্যালয় এবং লীলাবতী। এই দু’জন ছাড়া সোনেলা কোনদিনই পুর্ণতা পাবে না। কিছুতেই না। উনারা উনাদের নামেই স্বয়ং সম্পূর্ণ।

এইবার আসি সমালোচনায়। সোনেলাকে এই অবস্থানে আসতে নানান চড়াই উৎরাই পার হতে হচ্ছে। যারা এই কাজ করছেন তাদের ধিক্কার নয় বরং আহ্বান করলাম শুদ্ধ মনে লেখার মাধ্যমে সোনেলায় জায়গা নিতে চাইলে নিতে আসুন নচেৎ তফাতে যান।

যা বলতে এই পোস্টের শুরু তা হচ্ছে আমি সময় দিতে পারছি না। ধারণা করছি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে আরো বেশ ক’জনার মতো স্বেচ্ছাশ্রমে যে কাজে সময় দিচ্ছি তা ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়ে যাবে। এরপরেই পূর্ণ মনোযোগের সাথে সোনেলায় মেতে উঠবো বলে বিশ্বাস রাখছি নিজের উপরেই, ততোদিন আমার অনিয়মিত উপস্থিতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুতেই মাত্র গুটি’কয়েক পোস্টের নাম নিয়ে শেষ করে দিলাম বলে সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

 

শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ।  -{@

 

 

 

৯৮০জন ৯৮০জন

৫৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ