
ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারীর সন্তান হলে সেই সন্তানের দায়িত্ব নেবে সরকার। ধর্ষকের সম্পদ থেকে ভরণপোষণের এ টাকা আদায় করা হবে। প্রস্তাবিত ‘নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০২১’- এমন বিধান রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগীকে দেয়া হয়েছে গর্ভপাতের অনুমতিও। আর ধর্ষণের শিকার নারীর সন্তান বেড়ে উঠবে মায়ের পরিচয়ে। এ আইনকে দেশের বিচারবিভাগের জন্য মাইলফলক বলছেন আইন সংশ্লিষ্টরা।
এমন অবস্থায় ধর্ষণের শিকার নারী আর তার সন্তানের সুরক্ষায় নতুন আইন পাসের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে ধর্ষণের শিকার নারীর সন্তান শুধু তার মায়ের পরিচয়েই পরিচিত হবেন। আর শিশুটির ২১ বছর পর্যন্ত সরকার তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে। যা আদায় করা হবে ধর্ষকের কাছ থেকে।
খসড়া আইনটিতে বলা হয়েছে, ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হলে গর্ভধারণের ১০ সপ্তাহের মধ্যে স্বেচ্ছায় ভুক্তভোগী গর্ভপাত করাতে পারবেন।
দেশের বিচার বিভাগের জন্য এ আইনকে মাইলফলক- বললেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শাসমুদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এই আইনটা আরো আগে করা প্রয়োজন ছিলো। কেউ যদি ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃস্বত্বা হয়ে যান তাহলে বাচ্চার দায়িত্বভার বহন তার জন্য বোঝা।
অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, আইনটি বাস্তবায়ন হলে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার সন্তানের সুরক্ষা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে।
আইন কমিশনের প্রস্তাবিত আইনটি সংসদে বিল আকারে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইন এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।..
সংবাদ সুত্র সময় টিভি নিউজ
আলোচিত এই আইনিপদক্ষেপটি একটি নারীর বিরুদ্ধে কি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না?
এখানে শর্ত হিসেবে কিছু অপশন রাখা হয়েছে,
১/ ধর্ষিতা ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হলে দশ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে পারবেন।
২/ জন্ম নেয়ার পর ২১বছর পর্যন্ত শিশুটির ভরনপোষণের দ্বায়িত্ব নিবে সরকার, যা আদায় করা হবে ধর্ষকের পক্ষ থেকে।
তারমানে ২১ বছর পর্যন্ত শিশুটির ভরনপোষণ চালিয়ে গেলেই ধর্ষকের মুক্তি? আর শিশুটি বড় হতে হতে বুড়ো হয়ে একসময় মরে যাবে ধর্ষিতা মায়ের পরিচয়ে? শিশুটি স্কুলে পড়বে, সমাজে বড়ো হবে, কর্মক্ষেত্রে যোগ দিবে একই পরিচয় নিয়ে, যেখানে প্রতিটি স্তরে পরিচিতি পাবে সে একজন ধর্ষিতার সন্তান। সিরিয়াসলি?কোন কারণে যদি দশ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করা না হয় বা উক্ত শিশুকে গর্ভধারণ করা হয় তাহলে সেই ধর্ষিতাকে আদালত কি বলে নিস্কৃতি দিবে? ধর্ষকের আইনজীবিরা ধর্ষিতার বিরুদ্ধে ভরনপোষণ হরপ করার অভিযোগ না করেই ছেড়ে দিবে? প্রশ্ন হচ্ছে কারা বানায় এসব আইন!?
গত কিছুদিন ধরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার উল্লেখ করছি,
ধর্ষণের শিকার তরুণীকে বিয়ের শর্তে ধর্ষকের জামিন মঞ্জুর করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। লিংকএখানে
ধর্ষিতাকে বিয়ে করে জামিন পেলো ধর্ষক লিংকএখানে,
প্রশ্ন এখানেও থেকে যায়,
একটা সময় ছিলো চুরি/ ধর্ষনের শালিসি কাজকর্ম গুলো গ্রাম্য মোড়লেরা করতো। স্বাভাবিক ভাবেই অনেকক্ষেত্রে সেইসব শালিস পক্ষপাতহীন হতো না, যে কারনে মানুষ গ্রাম্য শালিসির আওতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। শতশত বছর ধরে চলে আসা সিস্টেম গুলোকে বোতলবন্দী করে সামনে এগিয়ে এসেছে সুবিচার পাবার আশায়।
ধর্ষক ধর্ষিতাকে বিয়ে করে যদি জামিনই পাবে, তাহলে গ্রাম্য সালিশি ব্যবস্থাকে ত্যাগ করার কোন দরকারই ছিলো না।
আমরা চাই আইনে সংস্কার হোক, সিস্টেমে চেঞ্জ আসুক।
সমাজের চাহিদা আর বৈশিষ্ট্যকে ভিত্তি করেই আইনের প্রয়োগ হোক। যারা ধর্ষকের সাথে বিয়েকে সঠিক সমাধান মনে করেন তারা এই প্রতিবেদন পড়তে পারেন ,
ধর্ষণ হয় ইচ্ছের বিরুদ্ধে, “ না” এর প্রতিক্রিয়ায়।
“ না ” মানে না, এটাকে জোর করে বা মীমাংসার নামে “ হ্যা” তে পরিনত করার পরিনতি কখনো ব্যাক্তি/ পরিবার/ সমাজ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। আইন হোক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে, মানবতার পক্ষে।
+ ছবি গুগল থেকে নিয়েছি।
১৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
নারী অবহেলিত ই থেকে গেল। আপনার পোষ্ট পড়ে যেটুকু বুঝলাম ধর্ষিতা আর ধর্ষনের ফলে যে সন্তান দুজনেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলো। ধর্ষকের শাস্তি কি হলো? ভরণপোষণ দিয়েই পার পেলে ধর্ষণ কখনো কমবে না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার একটি বিষয় তুলে ধরলেন বলে। অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
স্বপ্ন গোধূলি
আপাতত দৃষ্টিতে এই আইন ধর্ষকের পক্ষে মনে হচ্ছে। হয়তো দেখা যাবে এই আইন চালু হলে সামর্থবান ধর্ষকেরা নিশ্চিন্তে তাদের কাজ করতে পারবে।
মতামত রাখার জন্য ধন্যবাদ।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
বাস্তবতার আলোকে সুন্দর মননশীল উপস্থাপন।
নিঃসন্দেহে অতুলণীয়।
আন্তরিক শুভেচ্ছা জানবেন সতত।
স্বপ্ন গোধূলি
আপনার মতামত জানতে পারলে ভালো লাগতো।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
মজবুত আইন প্রনয়ণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে
তাতে আপনা আপনিই আত্ম সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
স্বপ্ন নীলা
আপনার সুন্দর পোস্টের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। ধর্ষিতার সন্তান তার মায়ের পরিচয়ে বড় হয়ে উঠবে খুবই ভাল কথা, কিন্তু ঐ ধর্ষিতা নারীর জীবনটাই পাল্টে যাবে–আহারে ! পরিবার এবং সমাজের কঠিণ বেড়াজালে উক্ত নারী জড়িয়ে যাবে–কিসে সেই নারীর মুক্তি !!!!
স্বপ্ন গোধূলি
আমাদের দেশ যদি মাতৃতান্ত্রিক দেশ হতো তাহলে এতে কোন সমস্যাই হতো না। কিন্তু বাবার পরিচয়ে পরিচিত হওয়া এই দেশে এই আইন/নিয়ম কতটা যুক্তিগত হবে সেটা ভেবে দেখার বিষয়। একেতো নারীটি ধর্ষনের শিকার হবে তার উপর ধর্ষনের ফলে জন্ম দেওয়া শিশুকে নিজের নামেই পরিচিতি দিবে, কত অদ্ভুত চিন্তা আইন প্রনেতাদের মাঝে!! — নারীর মুক্তি মিলে না মৃত্যুতেও।
সুগঠিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
ইন্টারনেটে অনুপস্থিতির কারণে এই বিষয়টি আমার অগোচরেই থেকে গিয়েছে।
আপনার দেয়া পোষ্টের মাধ্যমে এটি আজই প্রথম জানলাম।
” #ধর্ষণের শিকার তরুণীকে বিয়ের শর্তে ধর্ষকের জামিন মঞ্জুর করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
#ধর্ষিতাকে বিয়ে করে জামিন পেলো ধর্ষক ”
এসব কোনো বিচার হলো! ধর্ষিতা যে আমৃত্যু একটি দুর্বিসহ, দুঃস্বপ্নময় জীবন অতিবাহিত করবেন, এর বিচার কোথায়? বিয়ে করলেই ধর্ষক থেকে মুক্তি! এই বিয়ে যে জোর করে মেয়েটির উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।
ধর্ষিতার সন্তানের দায়িত্ব নেবে সরকার, সন্তানের ভরন পোষণের খরচ আদায় হবে ধর্ষকের কাছ হতে- এটি কোনো সুষ্ঠ বিচারই নয়।
এই বিষয়ে চমৎকার সমসাময়িক পোষ্ট দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
স্বপ্ন গোধূলি
এটা কোন সঠিক বিচারের মধ্যে পড়ে না। বিচারের নামে প্রহসন বলা যায়। ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই আইনের বিপক্ষে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তির বিধান রাখা যেখানে সময়ের দাবী, সেখানে এই ধরনের কর্মকান্ড নেহাতই যুক্তিহীন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তুল্য।
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এই আইন পাশ হলে ধর্ষন আরও বেড়ে যাবে বলে মন হচ্ছে। আর একটা খারাপ দিক হল সন্তানের উপর খুব নেগেটিভ একটা প্রভাব পড়বে। তাই অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে দেখা উচিত তার সুরাহা অবশ্যই বিচারিক হবে, শালিসী নয়।
আপনাকে ব্লগে পেয়ে আমরা ধন্য। দুটো লেখাই ভীষন ভালো লাগলো। লিখুন লিখুন🥰🥰🌹🌹
স্বপ্ন গোধূলি
বিচারিক ব্যবস্থা স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ হবে এটাই আমাদের চাওয়া। আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি
আসলে ধর্ষন ধর্ষকদের নিয়ে আমরা যা বলিনা কেন দেশের আইন প্রণেতারা যেন শুনছেননা তারা মনে করছেন তারা যা করছেন বা বলছেন সব সঠিক।আসলে তা নয় দেশের ধর্ষনের সংখ্যা বাড়ার পেছনে রাষ্ট্র অনেকটা দায়ী।একজন ধর্ষককে নিন্ম আদালত জেলে দিলে উচ্চ আদালত তার জামিন দেন!এটা হবে কেন?এমন আইন কী পরিবর্তন করা যায়না?
রাষট্র চমৎকার আইন পাস করছেন-গর্ভপাতের সন্তানের বরনপোষনের দায়ীত্ব সরকারের!! বাহ বাহ সাধুবাদ না দিলেই নয়! অথচ ভাবলেন না সন্তানটি সমাজে চলবেন কী করে। ধিক জানাই রাষ্ট্র ব্যাবস্থা্।
স্বপ্ন গোধূলি
তিক্ত হলেও এটাই সত্যি, দেশে ধর্ষন বেড়ে যাওয়ার পেছনে আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অনেকাংশেই দায়ী। আইনপ্রণেতার বিবেক জাগ্রত হোক এটাই চাই। আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি
সহমত।ধন্যবাদ।
তৌহিদ
আপনার লেখা পড়ে আইনটি সম্পর্কে বিশদ জানলাম। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ধর্ষণ করে অপরাধী পার পেয়ে যাবে। তবে অদূর ভবিষ্যতে কার্যকারীতা দেখা যাক কি হয়! যেহেতু আদালতের রায় তাই এই সম্পর্কে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম। প্রতিটি জিনিষের ভালোমন্দ দুটো দিকই আছে বৈকি!
ভালো থাকুন সবসময়।
আরজু মুক্তা
ভরণপোষন দরকার নাই। বিয়ে দিতে হবে এবং বিয়ের পর যেনো আজীবন তার সাথে থাকে। এমন আইন দরকার।