
প্রিয় শুক্লপক্ষ চাঁদ,
কেমন আছো জ্যোৎস্না বিলিয়ে?
তোমাকে এখন যখন লিখছি তখন তিথি অনুসারে তোমারই সময়, এখন শুক্লপক্ষ। মাথার উপর মস্ত চাঁদ। চন্দ্র শুদ্ধি। পূর্ণ পূর্ণিমা।
কৃষ্ণপক্ষে তোমাকে নজরে পড়ে না, তবে খুঁজি না যে তা নয় খুঁজে ফিরি। উপভোগের ইচ্ছায় নয় রাতের যে প্রহরগুলো আমার নিদ্রাহীন কেটে যায় গুণে গুণে সে সব মুহূর্তগুলোয় দৃষ্টি আপনাই খোঁজে ফিরে তোমায়। কারণ, এ জীবন খাতা থেকে উপভোগ নামক শব্দকে আমি কোথাও খুঁজে পাইনা আর। কৃষ্ণপক্ষ এ যেনো দুঃখের আকাশ। মেঘ থাকে না,, তবু নিকোষ কালো অন্ধকার।
সন্ধ্যার আকাশে তোমার পরে জ্বল জ্বল উঁকি মারে সন্ধ্যা তারা। ঘূর্ণনচক্রে ভোরের শুকতারা। যদিও ভোরে দৃষ্টি কাড়ে না তেমন একটা। যদি কখনো মোরগ ডাকা ভোরে শিউলির অভিমানে ঝরে পড়ার সময় দৃষ্টি ফেলে খুঁজে ফিরি তখন বেশ স্পষ্ট উঁকি মারে।
ভোরে আমার কথার ঝুড়ি তেমন থাকে না। ঐ যে রাতজাগা চোখজোড়া ক্লান্ত ভারি তখন। মুজে আসে সকল শৃঙ্খল ভেঙ্গে।
জানো?
আজকাল হেমন্তের সন্ধ্যাটা বড় ছোট্ট। ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে। আমার আজকাল চাওয়া পাওয়াই যেনো সীমিত পরিমাপের সবকিছু। কারণ, অঢেল ও তুমুল কোনোকিছুই আমার কোনোকালে সয় না। ভাগেই পড়ে না! মোহোকালের এক ভারি বস্তু যেনো আমি। দু’দন্ডকাল পার হতেই হাঁপিয়ে উঠে ফিরে চলে যায় চেনা তার সোজা পথে।
শুধু তার জন্য আমার অপেক্ষা গুলোই দীর্ঘ। তাই, সময়ের দীর্ঘ মাপকাঠি আজকাল কেনো যেনো একদম ভালো লাগে না। আমার অপেক্ষাগুলোও আজকাল টের পাচ্ছি ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সেই আকুলতাও জোয়ারের মতো ফুসে উঠে পরক্ষণেই আবার ভাটির টান ধরে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না!
অথচ একসময় দীর্ঘ সন্ধ্যা চাইতাম গোধূলি জুড়ে। আকাঙ্ক্ষারা ঝড় তুলতো উথাল পাথাল। এক পলকা দেখার সে সময়টুকুর দীর্ঘতা চাইতাম বড্ড। চোখ চোখ পড়তেই বুকের ভিতরে হৃদপিণ্ডের আওয়াজে আমিই ডেনো চমকে যেতাম!
তাই গ্রীষ্মের সন্ধ্যা বড় প্রিয় ছিলো।
আমার সে সকল আকাঙ্খার উপর আক্রমণ চালানোর ব্যাপারে কারো উপর আমার কোনো অভিমান নেই।
আমি নির্বিকার চেয়ে থাকি আজকাল। বুঝতে পারছি স্নায়ু জীর্ণতা দেখা দিচ্ছে। স্নায়বিক অবসাদ হাতছানি দিচ্ছে। চিন্তার জালবুনে মাকড়সার মতো বাস করা দুঃখবিলাসীদের মতো এক মনকুঠির গড়ছে যেনো কোথাও। দখলদার কোনো ভূমিদস্যুদের দখলে যেনো চলে যেতে চাইছে মন জমিনের কিছু অংশ। ক্ষতচিহ্নগুলোকে অলঙ্কার ভূষণ করতে চাইছে অভিমান।
সে অন্তরে গভীরভাবে দাগ কাটতে পারিনি বলে তার আরাধনার নই আমি।
শান্তি ও স্নিগ্ধ সুখের অনুসরনে যে পথ আমি দীর্ঘ সন্ধ্যাজুড়ে হেঁটেছি তা আসলে তার কাছে প্রয়োজনাতিরিক্ত। আর প্রয়োজনাতিরিক্ত মাত্রেই মূল্য দিতে নারাজ মানুষ।
আমি তোমার দিকে অপলোক চেয়ে আছি আজ। সৌন্দর্যের যে নন্দনকাননে তুমি ভিড় জমিয়েছো সেখানে আমার উপস্থিতি রাখতে চাই। তাই প্রিয় শুক্লপক্ষ চাঁদ- নৈরাশ্যের কারাগার থেকে হাত ধরে মোরে তুমি লয়ে যাও তোমার সৌন্দর্যের অমৃত আলয়ে
যেখানে লাবণ্যের কোনো পরিসীমা নেই,
শুনাবে যেথা মোরে তারা নবনব গান।
আজ আর লিখছি না,,, ভালো থেকো শুক্লপক্ষ চাঁদ।
ইতি,,
রিতু জাহান,, রংপুর
আজ অগ্রহায়ণ।
১১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
‘অথচ একসময় দীর্ঘ সন্ধ্যা চাইতাম গোধূলি জুড়ে’
একান্ত চাওয়ার দারুন শব্দ সম্ভার।
চিঠিটি ভাব প্রকাশের ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, এত এত সুন্দর বহিঃপ্রকাশের জন্য।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ গুরুজি,,,
শিখেছি কো এখানেই।
পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা
ছাইরাছ হেলাল
আমিও শিখতেছি,
চিঠির সাথে ভাব/আড়ি অবশ্য অবশ্যই নেব!
হালিমা আক্তার
এতো সুন্দর আহ্বান সাড়া না দিয়ে পারে। সন্ধ্যা সত্যি খুব ছোট। সন্ধ্যার চায়ে চুমুক দিতে ই রাতের গভীরতা নেমে আসে। চমৎকার একটা চিঠি পড়লাম। শুভ কামনা রইলো।
রিতু জাহান
আমার কাছে সন্ধ্যা কখনো কখনো খুব দীর্ঘ লাগে,,,
আবার ঝুপ করে নেমেও যায় এমন।
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
মনিরুজ্জামান অনিক
বাহ্।
চমৎকার লিখেন তো আপনি।
লেখাটা পড়ে ভীষণ তৃপ্তি পেলাম।
একটু মন খারাপও হলো।।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সুন্দর অনুভবী উচ্চারণ।
জীবন ও প্রকৃতির অপূর্ব সমন্বয়।
’আশায় কাটে কাল
তবুও ফুরায় না অপেক্ষার প্রহর
হয়তো মন্দ বলে ভাল’
অশেষ মুগ্ধতা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম আপু।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালোলাগা, বেদনা মিলেমিশে একাকার। সমকক্ষ ভাষায় কমেন্ট করা হবে না শুধু বলবো চিঠিই সবথেকে সুন্দর তোমার।।
শুভকামনা।।।
রিতু জাহান
তাই না! অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনুপ্রাণিত হলাম।
পাশে থেকো।