
ঘড়িতে এখন দুপুর ৩ টা।সকালের কাজ শেষ করে অলস দুপুরে আলতো করে গুছানো বিছানা মনে হয়, আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে কেননা শরীরটা অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে।।
আজ আবার সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। সেদিনও ছিল শুক্রবার, ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৭.০০।ল্যান্ডফোন বেঁজে উঠল।আমি রিসিভ করতে গিয়েই ওপাশ থেকে
হ্যালো!এটা কি ফায়ার সার্ভিস?
আমিঃ রং নাম্বার। বলে কেটে দিলাম,।
আবার ফোনের আওয়াজ উফফ! বিরক্তিকর
হ্যালো,
আমিঃ আপনাকে বললাম, রং নাম্বার তারপর ও।
ওপাশ থেকেঃহ্যালো,ফোনটা কাটবেন না প্লিজ। একটু কথা বলবো।
তার এই কথাটার মধ্যে অদ্ভুত এক মায়ায় পড়ে আর ফোনটা কাটতে পারলাম না।
সে বললো,আপনার একটা নাম দেই,রাগ করবেন?
আমিঃ মুচকি হেসে বললাম,শুনি সেই নাম!
ওপাশ থেকেঃ আপনার নাম ঝগড়াটে 😋😋
আমিঃরেগে আগুন,কি বলব,বুঝতে পারার আগেই ফোনটা কেটে গেল।
হ্যালো,হ্যালো,ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ নাই।
পরেরদিন,,,,,,
সব কাজ করছি কিন্তু কোন কাজেই মন বসছে না,শুধু কানের কাছে সেই কন্ঠস্বর বেঁজে উঠছে। আমি কি তার প্রেমে পড়ে গেলাম। আরে না,একদিনের আলাপে অচেনা লোকের প্রেমে কি পড়া যায়?
ঘড়িতে আবার ৭ঃ০০টা।ফোন বেঁজে উঠল,
আমিঃ হ্যালো,
ওপাশ থেকেঃ কি ঝগড়াটে অপেক্ষা করে ছিলেন ফোনের জন্য।
আমিঃআমার বয়েই গেছে!
ওপাশ থেকেঃতাই বুঝি!
আমিঃহুম। আচ্ছা আপনার নাম কি?আপনি কিভাবে আমার নাম্বার পেলেন?আর কি চান?
ওপাশ থেকেঃসেই হাসি,তারপর আরে বাবা!এত প্রশ্ন করলে কোনটার আগে উত্তর দিব??
আমিঃ সবগুলোর উত্তর দেন
ওপাশ থেকেঃআমি তোমার ছায়াসঙ্গী, তাই তোমাকে ছায়ার মত আজীবন আগলে রাখার জন্য আমি তোমার নাম্বার খুঁজে বের করবছি।
আমিঃযদিও কথাগুলো ছিনেমার মত তবুও শুনতে ভালো লাগল।
আবার ফোনটা কেটে গেল।
পরেরদিন,,,
আবার সেই সন্ধ্যায় ফোন,
আমি দৌড়ে যাওয়ার আগেই ফোনটা বাবা ধরে বলল রং নাম্বার।
আমি আর সেদিন ফোনের কাছে যেতে পারলাম না,
তারপরের দিন,,,
আবার সন্ধ্যা ৭ঃ০০ টায় অপেক্ষা করেছি মা এসে মালয়েশিয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা খালার সাথে কথা বলছে।আমি বার বার ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাচ্ছি,সময় যাচ্ছে কিন্তু মা আর ফোন রাখছে না।
সেদিনও আর ফোন এল না।সারারাত ঘুমাতে পারি নি।
৩ দিন পর,,,
ঠিক ৭ঃ০০টায় ফোন এল।
আজ ফোনটা আমি ধরলাম,
ওপাশ থেকেঃমিষ্টি মেয়ে কেমন আছো?
আমিঃ মনে হয় প্রান ফিরে পেলাম।সেদিন তার সাথে অনেক কথা হল,খুনশুটি হল,তার কাছে তার ফোন নাম্বার চাইবো তার মধ্যেই ফোনটা কেটে গেল।
এভাবেই শুধু ফোনেই কথা বলে কেটে গেল প্রায় ৩ মাস,,কত গল্প হতো,কিন্তু আমি যেসব প্রশ্ন করব বলে ভেবে রাখতাম তার এত সুন্দর সুন্দর কবিতার মত কথার ছলে সেসব ভুলেই যেতাম।ভালোই কাটছিল,,,,
সেদিন ও ছিল শুক্রবার,,,,
যথারীতি ফোন এল,
ওপাশ থেকেঃ তোমাকে অনেক কথা বলার আছে,
আমিঃ হ্যা মশাই বলুন,
ওপাশ থেকেঃ আমি সত্যি তোমাকে,,,,,,,,
খট করে আওয়াজ হল
আমিঃ হ্যালো,হ্যালো ফোনটা কেটে গেল।
আমি ভাবলাম কাল কথা তো হবেই কাল শুনব।
কিন্তু সেই কাল আর আসল না,বাঁজল না তার ফোন
প্রতিদিন সেই ফোনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে জীবনের প্রায় ৩০ টা বছর পার করলাম।কিন্তু আসল না সেই ফোন।আমি যে তাকে ফোন করব কোন নাম্বার ও নেই আমার কাছে,কেননা,সে আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল।তাই কখনো ভাবিনি সে এভাবে হারিয়ে যাবে,তাই তার নাম,ঠিকানা,কোন কিছুই নিতে পারি নি,একদিন ভেবেছিলাম তার নাম্বার চাইব,কিন্তু তার এত শ্রুতিমধুর কথায় আমার ভুলে গেছিলাম।এখন সময় পাল্টেছে,ডিজিটাল যুগ এসেছে,ফেসবুক,টুইটার,ইমো,কত কিছু!মানুষেকে খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।কিন্তু আমি,,,,,,,,,,,,,,,
আজও সেই শুক্রবার, সন্ধ্যা ৭ঃ ০০টা
ফোন আর আসে না,,,আমি বার বার সেই ল্যান্ডফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি,,৷
তাই আমি বেঁচে আছি অন্ত্যহীন অপেক্ষায়।।।।।।
২৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
থাকুন সেই ল্যান্ড ফোনের কলের অ পেক্ষায় আমি আবার আসব……
রেজওয়ানা কবির
আচ্ছা অপেক্ষায় আমিও থাকলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! আবার লেখা চাই
ফয়জুল মহী
বেশ লেখনশৈলী দারুণ
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।
তৌহিদ
কত কত স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। সবচেয়ে মজা সেই সাথে বিরক্তিকর ছিলো রঙ নাম্বারের ফোনগুলি।
অনেক মজার কিছু স্মৃতি আছে আমার, আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে লিখবো অচিরেই।
ভালো থাকুন আপু।
রেজওয়ানা কবির
ঠিক আছে ভাইয়া,আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।ধন্যবাদ ভাইয়া।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
কি অবস্থা হ্যাঁ। ল্যান্ড ফোন ব্যাপারটাই অন্যরকম ছিল।
মজার দিনগুলি কি আর ফিরে পাব না?
শুভ কামনা।
রেজওয়ানা কবির
পাবো ইনশাআল্লাহ , মানুষ বাঁচেই আশায় আশায়।
নিতাই বাবু
ল্যান্ডফোনের আলাপচারিতা ভালোই লাগলো। সেসময়কার অবস্থা কিন্তু এরকমই ছিলো। এখন কিন্তু ওইরকম আর হয় না।
শুভকামনা থাকলো।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইঞ্জা
অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো আপনার লেখা পড়ে, এমনই সব ঘটনা আমার সাথে হয়েছিলো।
আহ স্মৃতি। 🥺
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।স্মৃতি সত্যি সুন্দর।
ইঞ্জা
শুভকামনা রইলো।
সাদিয়া শারমীন
সুন্দর স্মৃতি। ল্যান্ড ফোনের দিন গুলো আসলেই অনেক স্পর্শকাতর ছিলো। স্মৃতি হোক অমলীন।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপু ল্যান্ডফোনের কথা শুনলেই একটা ভালো লাগা, রোমাঞ্চ কাজ করে । সেই দিনগুলো তে এভাবেই প্রেম, ভালোলাগা হতো। ইস নাম্বার টা কেন যে নিতে পারলেন না! খুব আফসোস হচ্ছে। খুব খুব ভালো লিখেছেন। অনেক ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো
রেজওয়ানা কবির
আপু এটাও আমার কল্পনা, কল্পনায় সবসময় আমি বিরহ ব্যাপারটি রাখি আর বিরহ থাকলেই কবিতা গল্প তাড়াতাড়ি লেখা যায়,এটা আমার ধারণ। শুভকামনা রইল।
সুরাইয়া নার্গিস
অনেক রোমান্টিক একটা লেখা আপু, হয়ত এটা নিছক একটা গল্প কিন্তু আমি ল্যান্ডফোন বয়স দেখি নাই। তবে মোবাইল ফোনের মিষ্টি মধুর যন্ত্রনাটা অনেক পেয়েছি, আজও পাই আপনার লেখা পড়ে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
শুভ কামনা রইল আপু।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু।
আরজু মুক্তা
সেই ল্যান্ড ফোনের দিনগুলি। বড্ড মধুময়
রেজওয়ানা কবির
হুম আপু ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
ল্যান্ডফোন! বাড়িতে একটা ছিলো কিন্তু এইরকম গল্প লেখার মতো কোন স্মৃতি নেই। রং নাম্বার টেলিফোনে অজানা কারো হ্যালো শোনার সৌভাগ্য হয়নি 😭
সব কল মা ধরতো 😥😥
দারুণ হয়েছে গল্পটা। আরও লিখুন 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু।শুভকামনা।