
লোকটার হাবভাব একদম ভালো লাগছে না নিলুর। কি বিশ্রী রকম চাহনি। উফফ অসহ্য একটা। অন্য কোনো সময় হলে এমন মানুষের সাথে কথা তো দূর ত্রিসীমানায় আসতো না নিলু। কিন্তু নিরুপায় নিলু বিপদে পড়েছে কথা তো বলতেই হবে। নিলু বললো
নিলুঃ না না চাচা ঠিক আছে, বসতে হবে না। এখানে দাঁড়িয়ে থেকেই কথা বলা যাবে।
কাদের ব্যাপারী পা থেকে মাথা অব্দি বার বার দেখছে নিলু কে। যেনো জীবনেও কোনো মেয়ে দেখেনি। কাদের বললো
কাদেরঃ তা বললে কি হয়? প্রথম বার এসেছো আমার বাড়িতে না বসেই যাবে। তাই কি হয়? বলো তা কেনো এসেছো আমার বাড়িতে?
নিলু মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে ছিলো এতোক্ষণ। হঠাৎ কাদেরের চোখে চোখ পড়তেই কুঁকড়ে যায় নিলু। এ কি লোকটার চোখ দুটো যেনো কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে নিলুর সুডৌল বক্ষ যুগলের দিকে। জিহ্বা যেনো লকলক করছে । এই বুঝি নিলুর দিকে থাবা বসাবে যেমন ক্ষুধার্ত হিংস্র বাঘ হরিণ শাবককে দেখলে থাবা বসায়। কি করবে এখন নিলু, কি ভাবে এই লোকটার সাথে কথা বলবে? ঘৃণায় নিলুর গা ঘিন ঘিন করতে শুরু করলো। মেয়ে বয়সি একটা মেয়ের দিকে কেউ এমন কুৎসিত দৃষ্টি দিয়ে তাকাতে পারে ভাবতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তবুও কথা বলতেই হবে উপায় নেই। নিরবতা ভেঙ্গে নিলু বললো
নিলুঃ চাচা বাবা আপনার কাছে বাড়ির দলিল রেখে টাকা নিয়েছিলো। তা কতো টাকা নিয়েছিলো বলতে পারেন?
কাদের ব্যাপারী প্রায় অনেকটায় ভেবাচেকা খায়।
কাদেরঃ হ্যাঁ না মানে চার বছর আগে নিয়েছিলো ঠিক মনে নেই। খাতা দেখে বলতে হবে। তা তুমি বসো না আমি দেখে বলছি।
নিলুঃ চাচা বলছিলাম আমি বাড়িটা বিক্রি করতে চাই। আপনি যদি নিতেন ভালো হতো খুব। আমার অনেক টাকার দরকার। আর তা না হলে দলিলটা দিন অন্য কোথাও বিক্রি করে আপনার টাকা দিয়ে দেবো।
কাদেরঃ আহা! তোমার টাকার দরকার সেটা বলবে তো। কতো টাকার দরকার বলো আমি দিয়ে দিচ্ছি? পরে না হয় বাড়ি বিক্রি নিয়ে কথা বলা যাবে।
নিলুঃ না চাচা আপনি খাতা দেখে বুলন। আমি এখানে অপেক্ষা করছি।
কাদের ব্যাপারী পড়ি কি মরি করে দৌড়ে গিয়ে খাতা বের করে এনলো
কাদেরঃ তা প্রায় লাখ দুয়েক হয়েছে।
নিলু অবাক হয়নি একটুও। এই লোকের সুদের হার দ্বিগুণের চাইতেও বেশী। পারে তো মাসে এক হাজারে দুহাজার টাকা সুদের হার ধার্য্য করে। নিলু শান্ত গলায় জানতে চায় বাড়ির দাম কতো হতে পারে?
কাদেরঃ তা ধরো পাঁচ শতক জায়গা পঞ্চাশ হাজার শতক হলে আড়াই লাখ টাকা হয়। আমি পাবো দু লাখ। তাহলে তুমি আর পঞ্চাশ হাজার পাবে?
নিলু অস্পষ্ট স্বরে বলে মাত্র পঞ্চাশ হাজার। এ দিয়ে কি হবে? এতো অল্প টাকায় বাবার চিকিৎসা করা তো সম্ভব নয়। নিলু দিশাহারা হলেও শান্ত গলায় বলে
নিলুঃ চাচা দলিলটা দেবেন? অন্য কোথায় দেখাতাম।
কাদেরঃ তোমার টাকা দরকার নিয়ে যাও না যতো লাগে। টাকার চিন্তা করছো কেনো? আমি তো আছিই
বলতে বলতেই নিলুর কাছে এসে এক প্রকার নিলুর গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। নিলু যতোটা পারে দূরে থাকে।
কাদের ব্যাপারী মোচে তা দিতে দিতে বলে।
কাদেরঃ না মানে যদি কিছু না মনে করো একটা কথা বলি। তোমাকে এক টাকাও দিতে হবে না। যতো লাগে টাকা নিয়ে যাও সাথে দলিলও। শুধু আমার একটা প্রস্তাব আছে।
চমকে উঠে নিলু। প্রস্তাব! কি প্রস্তাব থাকতে পারে এই লোকটার? আবার কোন বিপদের আভাস পাচ্ছে নিলু। আর কতো সহ্য করতে হবে ওকে।
কাদের হুট করে নিলুর হাত চেপে ধরে বলে।
কাদেরঃ নীলাঞ্জনা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। বিনিময়ে আমার অর্ধেক সম্পত্তি আমি তোমার নামে দেবো। তুমি কি রাজি নীলাঞ্জনা?
নীলু জোর জবরদস্তি করে কোনো ক্রমে হাত ছাড়িয়ে নিলো। এই মুহূর্তে নিলু অস্পষ্ট স্বরে চিৎকার করে বললো হে মাটি তুমি দু’ফাক হয়ে যাও আমি তোমার বুকে বিলীন হয়ে যাই। হে আকাশ তুমি নেমে পড়লো ধ্বংস করে দাও এই কুৎসিত মস্তিষ্কের মানুষ গুলো কে।
নিলুঃ ছিঃ ছিঃ এ কথা বলতে আপনার লজ্জা করলো না? এতো নিকৃষ্ট মস্তিষ্ক বিকৃতি মানুষ আপনি। একজন মেয়ে বয়সি মেয়েকে দিচ্ছেন এমন জঘন্য প্রস্তাব। আপনার অসৎ পথে রোজগারের অর্ধেক কেনো পুরো সম্পত্তি আমার পায়ে ফেললেও এই প্রস্তাবে রাজি হবো না কেনোদিন। ওয়াক থু
বলেই এক দলা থুতু ছিটিয়ে দিলো কাদের ব্যাপারীর মুখে। রেগে ফুঁসে উঠলো কাদের। বললো তোর এতো বড়ো সাহস আমার মুখে থুতু দিস! আজি তোদের সব কটাকে ঘাড় ধরে বের করে দেবো বাড়ি থেকে। এতো অহংকার তোর। দেখ কেমন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেই তোর সমস্ত অহংকার।
নিলু আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বেড়িয়ে আসে। ঊর্ধ্ব গতিতে হাঁটতে হাঁটতে কাদের ব্যাপারীর বাড়ি থেকে অনেকটায় দূরে এসে রাস্তায় বসে পড়লো। নিলু যেনো চোখে অন্ধকার দেখছে। নিলুর মনে হলো পুরো পৃথিবীটাই যেনো ভন ভন করে ঘুরছে। রাগে দুঃখে ফোঁস ফোঁস করছে এই ভেবে শুধু থুতু নয় পায়ের জুতা খুলে মারতে পারলে শান্তি পেতো শয়তানটাকে। গ্ৰামের রাস্তা অনেকটায় নির্জন নিলু অনেকটায় চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। নিলু কি করবে এখন? সত্যিই যদি শয়তানটা এসে ঘর ছেড়ে দিতে বলে তাহলে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কোথায় যাবে নিলু? এ কেমন বিপদ আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরেছে নিলুকে। নিয়তি এ কেমন নিষ্ঠুরতা করছে ওদের সাথে।
ঘোর সন্ধ্যা প্রায় অনেকটায় অন্ধকার হলো নিলুর ঘরে ফিরতে। নিলুর বাবা ব্যতি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
আনোয়ারঃ নিলু মা এতোক্ষণ কোথায় ছিলে? এতো দেরি করে ঘরে ফিরলে খুব চিন্তা হচ্ছিলো। তুমি ঠিক আছো তো মা।
নিলুঃ বাবা এতো চিন্তা করো না তো। আমি একদম ঠিক আছি। বাইরে কাজ ছিলো একটু।
আনোয়ার হয়তো এতো গুরুত্ব দেয়নি কিন্তু নিলুর মায়ের চোখ এড়িয়ে গেলো না কিছুই। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো সাংঘাতিক কিছু তো ঘটেছে! কথা বলতে হবে মেয়ের সাথে।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আয়েশা পান নিয়ে এলো ঘরে। আনোয়ার কে পান এগিয়ে দিতে দিতে বললো
আয়েশাঃ নিলুর বাবা আজ আপনি একা ঘুমান। আমি নিলু সাথে ঘুমাবো আজ।
আনোয়ারঃ আচ্ছা ঠিক আছে। যাও মেয়ের কাছে। আজ নিলুকে কেমন যেনো দেখাচ্ছিলো। তুমি গিয়ে কথা বলো মেয়ের সাথে। আয়েশা নিলু ঘরে এসে বলে নিলু আজ আমি এ ঘরে ঘুমাবো তোমার সাথে।
নিলুঃ মা তুমি বাবার কাছে যাও। বাবাকে একা রাখা ঠিক হবে না। বাবা সুস্থ নয় মা।
বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠে আয়েশার। জানতে চায় একথা কেনো বলছো, কি হয়েছে তোমার বাবার? নিলু এক এক করে সব কথা বলতে থাকতে তার মাকে।
আনোয়ার একা বিছানায় ছটফট করে। মনের মধ্যে কেমন করছে যেনো কোনো অশনি সংকেত টের পাচ্ছে। কিছুতেই ঘুম আসছে না। মনে মনে ভাবলো সেও আজ মেয়ের ঘরে ঘুমাবে। সবাই মিলে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে যাবে। মেয়ের দরজায় পা রাখতেই চমকে উঠে আনোয়ার। কানে এলো নিলুর তার মাকে বলা সব কথা। শাওনের কথা, নিলুর রেজাল্ট, তার বাবা অসুস্থতা, ব্যাপারীর করা আচরণ। আনোয়ার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কি বলছে নিলু ওর মাকে এসব? আনোয়ারের বুকের উপর কেউ যেনো বসে পড়েছে। কিছুতেই শ্বাস নিতে দিচ্ছে না।
হঠাৎ কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দে মা মেয়ে বাইরে আসে,,,,,,
২৭টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
গল্পটা জমে উঠেছে। এগিয়ে যান।
সুরাইয়া পারভিন
অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি
ইঞ্জা
সমাজের কিছু নিকৃষ্ট কুলাঙ্গার মানুষের অসভ্য আচরণ দেখলাম, আপু আগে এই লেখা পড়িনি বলে বিশদ ভাবে কমেন্ট করছিনা, লেখাটি অবশ্যই প্রথম থেকে পড়ে কমেন্ট করবো।
সুরাইয়া পারভিন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা প্রিয় আপু।
ছাইরাছ হেলাল
দেখি, নিলু কীভাবে এই জটিলতা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজে।
সুরাইয়া পারভিন
হুম দেখা যাক
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
নিতাই বাবু
গল্পটা পড়লাম! খুবই ভালো লেগেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। শুভকামনা আপনার জন্য।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
তৌহিদ
আনোয়ার সাহেবের কষ্ট অনুভব করতে পারছি। চলুক গল্প।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
মাহবুবুল আলম
এই পর্বটিও অন্যন্য পর্বের মতো ভাল লেগেছে।
শুভেচ্ছা রইলো।
সুরাইয়া পারভিন
কৃতজ্ঞতা অশেষ
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
কামাল উদ্দিন
গল্প তো দেখছি ক্রমান্বয়ে কঠিনের দিকেই যাচ্ছে আপু………এগিয়ে যান, আছি সাথে।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু
এস.জেড বাবু
কাদের ব্যাপারির চরিত্রের চরম বর্ণনা, সত্যি হলো কাদের ব্যাপারটা মতো শুকুনী দৃষ্টি আজকাল অনেকের আছে ভদ্র পোষাকের আড়ালে।
সাথে নিলুর সাহসীকতা ও তিরষ্কার নিদারুন তুলে ধরেছেন।
দারুন এগিয়েছে গল্প-
অপেক্ষা পরের পর্বের।
সুরাইয়া পারভিন
একদম সঠিক বলেছেন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া।
নুর হোসেন
ভাল লাগছে চলুক, আমিতো বলেই রেখেছি রিভিউ দিবো।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
কৃতজ্ঞতা অশেষ
নুর হোসেন
শুভ কামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
গল্প খুব সুন্দর ভাবেই এগুচ্ছে।হয়তো ঘটবে কোন অঘটন।আর ঐ সব বজ্জাতরা বজ্জাতই থাকে। খুব ভাল লাগছে। চলুক।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
আপনারা পড়েন বলেই লেখার সাহস পাই।
কৃতজ্ঞতা অশেষ
জিসান শা ইকরাম
অনেক পুরুষেরই এমন চোখ থাকে, যে চোখ যে কোনো বয়সের মেয়ে/ নারীর দিকে এমন ভাবে তাকায়।
অপেক্ষা করছি, নিলু কিভাবে এই সংকট মোকাবেলা করে।
গল্প জমিয়ে ফেলেছেন।
সুরাইয়া পারভিন
কৃতজ্ঞতা অশেষ ভাইয়া
সৈকত দে
এক কথায় অসাধারণ লিখেছেন, দেখা যাক শেষে কি হয়।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন