লেখালেখি নির্জনতা দাবী করে। মহামারীর কারণে বাধ্যতামূলক বিচ্ছিন্নতার দিনগুলো স্বর্ণলিপি মোড়ানো থাকার কথা ছিলো। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এখন আমরা সৃজনশীলতার সাথে যুক্ত না হয়ে সারা পৃথিবীতে কী হচ্ছে তাই ব্রেন শুধু বুঝতে চাচ্ছে, বিষয়টা অদ্ভুত।
আপনি একজন লেখক অথচ লেখার জন্য কোন টপিক মাথায় আসছে না। তাহলে, আপনি রাইটার্স ব্লকে পড়েছেন।
রাইটার্স ব্লক কি? রাইটার্স ব্লক হলো লেখা সম্পর্কিত কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে না আসতে পারা, লেখার কোনো গতি খুৃঁজে না পাওয়া, চরিত্রের গড়ন দিতে ব্যর্থ হওয়া, লেখার সংগতি হারানো। রাইটার্স ব্লক এর বাংলা অর্থ ” লেখকের বন্ধ্যাত্ব “। ১৯৪০ এর দশকে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী এডমন্ড বার্গলার প্রথম রাইটার্স ব্লক শব্দ দুটি ব্যবহার করেন।
বিভিন্ন উপায়ে আমরা এই ব্লক কাটাতে পারি। যেমন :
১) ঠাণ্ডা পানি পান করা : পরীক্ষায় দেখা গেছে যে মানব শরীরের মাত্র ১ শতাংশ পানি শূন্যতা তার সৃষ্টিশীল কার্যক্রম ও উৎপাদনশীলতাকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। সুতরাং চটজলদি বরফ শীতল পানি পান করি আর লেখা শুরু করি।
২) একটু হেঁটে আসা : নিজেকে খুব চাপ না দিয়ে বরং খোলা হাওয়ায় খানিকটা হেঁটে আসা ভালো। ২০ মিনিট হাঁটলে মানুষের শরীরের রক্ত চলাচল বা অন্যান্য জিনিসগুলো সেই পর্যায়ে যায় যেমন সে কর্মক্ষম থাকলে হয়। এতে কিন্তু ক্লান্তি তৈরি হয় না।
৩) ব্রেক নেয়া : আমরা অনেকক্ষণ ধরে যখন কোন কাজ করি একটা নির্ধারিত সময় পর পর আমাদের মস্তিষ্ক ধীর হতে পারে। একঘেয়েমি লাগে। তাই ব্রেক নেয়া উচিত। এতে মস্তিষ্ক নতুন উদ্যমে চিন্তা করে শব্দ বা ছন্দ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
৪) সৃজনশীল কাজ করা : লিখতে না পারলে ছবি আঁকা, বাথরুমে কল ছেড়ে গান গাওয়া, নতুন নতুন রান্না শেখা, বাগান করা, মেডিটেশন শেখা, ব্যায়াম করা অর্থাৎ নিজের যা ভালো লাগে তাই করা।
৫) প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকা : প্রযুক্তি আমাদের অলস এবং অন্য কাজে মনোযোগী করে তোলে। তাই কিছুদিন এসব থেকে দূরে থাকলে আবার নব উদ্যমে কাজে ফেরা যায়।
৬ ) প্রতিদিন সময় দিন : নিয়মিত লেখার মানোন্নয়নে লেখার অভাস বাড়ান। নির্দিষ্ট সময়ে লিখুন। আগে কী লিখছিলেন তাতে একটু চোখ বুলিয়ে আসুন। এতে করে লেখার গোছানো ভাব আসবে। লেখাটা গ্রগণযোগ্য হবে।
৭) ব্রেইন স্টর্মিং : সবচেয়ে সহজ ও প্রাথমিক উপায় এটি। মাথায় যা আসছে সেই আইডিয়া খাতায় টুকে রাখা। নিজের ধারণাগুলো মোটামুটি ক্রমানুসারে বা এলোমেলো করে লেখা। তারপর সময় পেলে স্তরে স্তরে সাজিয়ে লিখলেই হলো।
৮) খুঁটিনাটি ধারণা যোগ : এ পর্যায়ে নতুন নতুবা আইডিয়া যোগ করবেন অথবা পুরানোগুলো ছেটে ফেলবেন। ছোট ছোট অনুচ্ছেদ করে ছোট ছোট নামও দিতে পারেন। এরপর সুযোগ বুঝে এগুলো বিস্তৃতি করবেন। দেখবেন একটা দারুণ লেখা দাঁড়িয়েছে।
৯ ) পড়ার প্রতি মনোযোগ বাড়ান : পড়ার বইগুলো গুছিয়ে নেন। আপনি যে বিষয়ের উপর লিখবেন তার প্রাসঙ্গিক বইগুলো তালিকা করে মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন। তা উপন্যাস হোক, গল্প হোক বা কবিতা।
১০) পড়াশোনার সময় বেছে নেন : প্রতিদিন কাজকর্মের সময় জেনে নিজের অবসর বেছে নেন।আবার মন যেনো ভালো থাকে তাও খেয়াল করুন। সেই সময় বই পড়ুন। যতটুকু সময় থাকেন না কেনো ; মনোযোগ দিয়ে বই পড়ুন। এতে লেখার গতিশীলতা বাড়বে। নতুন আইডিয়াও মাথায় আসবে।
” Discipline allows magic. To be a writer is to be the very bent of assassins. You do not sit down and write everyday if force the muse to show up, you get in to the habit of writing everyday “—– Lilies St Crow.
১১) ইতিবাচক চিন্তা : ইতিবাচক চিন্তা বা আশাবাদী চিন্তা ভাবনাগুলোকে লেখার মাধ্যমে প্রকাশযোগ্য করে। তাই ইতিবাচক চিন্তা নিজের সমস্যাগুলোকে দূর করার মানসিকতা তৈরি করে দেয়। সনস্যার সমাধান খুঁজে নিজে নিজে লিখতে পারেন। এটাও ভাবেন। আস্তে আস্তে লেখার খসড়া তৈরি করেন এবং বাস্তবে রূপ দেন। নিশ্চয় আপনি সফলতা পাবেন।
রাইটার্স ব্লক এড়িয়ে চলার জন্য গ্যাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কোস বলেছেন, ” তাড়াহুড়ো করে শেষ করার দরকার নাই। আপনি খেলছেন আপনমনে। এমন ভাবে লিখে যান। তবেই সমস্যা হবে না।”
আবার, ফকনোর বলেছেন, ” লেখা তো আধ্যাত্মিক কিছু না। যে আজ পারবো। কাল পারবো না। এটা একটা টেকনিক। সেই টেকনিকটা রপ্ত করেন। দেখবেন আপনার কোন সমস্যা নাই। ”
তাহলে, আমরা নিজের সমস্যা বের করে উপরোক্ত নিয়ম, যেটা যার কাজে লাগবে, তা মেনে লেখা শুরু করি। সাথে থাক ধোঁয়া ওঠা কফি, বিভিন্ন রং এর কলম, নীল কাগজ বা রাইটিং প্যাড আর গান বাজুক ” মোর ভাবনারে কে হাওয়ায় মাতালো, দোলে মন দোলে অকারণ হরষে। ” আর না হলে চলুন সেই গানটার মতো একটু হারিয়ে যাই, ” কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে। মেলে দিলেম গানের সুরে এই ডানা।” তো মন ভালো হলে লিখা চলবে লেখার গতিতে।
তথ্যসুত্র : বিভিন্ন পত্রিকা আর আমার মনো জগত।
২৪টি মন্তব্য
স্বপ্নীল মেঘ
আমি এ সমস্যার সম্মুখীন হই। মাঝেমধ্যে টুক করে ভাবনা আসে- আহ! আমার মস্তিষ্কে বোধহয় কিছুই নেই। পরক্ষণেই বিরক্তি এসে যায় আর লিখা ছেড়ে উঠে যাই।
লিখতে বসলে টপিক আসেনা! শব্দ খুঁজতে হয় মুক্তোর মতোন করে তাও ধরা দেয়না।
তবে হ্যা, একটা অভ্যেস্ত খুব পাকাপোক্ত মনে যখন কিছু ভাবনা আসে বা লিখা আসে, এই ধরেন চলতি পথে কিংবা গানের আসরে হঠাৎ করে মনে মনে দু’এক লাইন রচনা গেঁথে বসি। ঠিক তখনি সেটা মোবাইল ড্রাফস বা ডায়েরিতে বন্দী করে ফেলি।
ধন্যবাদ এতো সুন্দর কথা বলার জন্য। ভালো থাকুন বুবু।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। লেখাটা পড়ে কারও কাজে লাগলেই সার্থক।
শুভ কামনা
হালিমা আক্তার
এ সমস্যায় মাঝে মাঝে পড়তে হয়। বিশেষ করে চারদিকে যখন অস্থিরতা তখন মাথা কোন কাজই করেনা। আবার কখনও দু এক লাইন হঠাৎ মনে হলেও লিখে না রাখলে পরে ভুলে যাই। অনেক প্রয়োজনীয় একটি পোস্ট। ধন্যবাদ আপনাকে শুভকামনা।
আরজু মুক্তা
আপা, ভালোবাসা জানবেন।
শুভ কামনা
নাজমুল হুদা
আমি এই সমস্যায় আক্রান্ত। যতদিন কোভিড না যাবে, জীবনে পড়াশোনায় গতি না আসবে, জীবিকার কেন্দ্র সন্ধান না হবে, ততদিন আমার এই সমস্যা থেকে মুক্তি নাই।
সাহিত্যচর্চা আমার এখন দুঃস্বপ্ন ।
আরজু মুক্তা
এটা শুনেই মন খারাপ হলো। সৃজনশীল কাজ করো। নিশ্চয় সবকিছু ভালো হবে
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখালেখির সাথে যারা জড়িত তারা প্রায়শই এমন সমস্যায় পড়েন। আমারও এমন হয়। হঠাৎ করেই মাথা ফাঁকা হয়ে যায়, কি লিখছি/পড়ছি তাতে কোন বোধ কাজ করে না। পোস্ট টা উপকারে লাগলো।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা আপনার জন্য 🌹🌹
আরজু মুক্তা
সময়টা অনুকূল নয়। লেখালেখিও মনের উপর নির্ভর করে।
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ইদানিং আমার এই সমস্যাটা মাথায় জেঁকে বসেছে। টুকটাক লিখছি কিন্তু শেষ করতে পারছিনা কোনো ভাবেই। কোনো ভাবেই বের হতে পারছিনা এই অবস্থা থেকে। হাঁসফাঁস অবস্থা। দেখি আপনার টপিকস গুলো এপ্লাই করার চেষ্টা করবো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে । অফুরন্ত শুভকামনা রইলো
আরজু মুক্তা
সবাই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠুক।
ভালো থাকুন সবসময়
জিসান শা ইকরাম
এমন অবস্থায় আমি প্রায়ই পরি।
এ থেকে পরিত্রানের উপায় সমূহ কাজে লাগিয়ে দেখি।
খুবই উপকারী পোস্ট,
শুভ কামনা
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ সময় করে পড়ার জন্য।
শুভ কামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমরা সবাই এমন সমস্যায় পডি। অনেক অজানা তথ্য জানা গেলো। কাছে লাগবে
অসংখ্য ধন্যবাদ এমন পোষ্টের জন্য
আরজু মুক্তা
কাজে লাগলেই লেখা সার্থক।
ভালো থাকেন সবসময়
তৌহিদুল ইসলাম
চমৎকার পোষ্ট, আশাকরি প্রত্যেকেই উপকৃত হবেন।
শুভকামনা আপু।
নার্গিস রশিদ
পোস্ট টা পড়ে সত্যি অনেক উপকার হল। ঠিক এরকম আমারও হয়। অনেক ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
সবার উপকারেলাগলে লেখা সার্থক।
আরজু মুক্তা
সবারি উপকারে লাগলে লেখা সার্থক।
নার্গিস রশিদ
ভালো কথা বলেছেন।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপা
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
মন্তব্য বিশ্লেষণ করতে পারব না।।
অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে লেখা।।
শুভকামনা রইল।।
আরজু মুক্তা
এমন মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো।
শুভ কামনা
ছাইরাছ হেলাল
যাক, অবশেষে ‘দাক্তারের’ আগমন, সোনেলা এমুন কাউকে পেল!!
ফাইন ফাইন জড়িবুটির সাথে অনুপম পথ্য! আর যায় কোথায়!! এক ঢিলে মাইল পাড়!!
তবে ‘দাক্তার’ যে নিজের এলাচ করতে পেরেছে দেখে ভালো লাগছে;
কিন্তু কথা সেটি না, কথা হলো কেউ যদি রাইটারস ব্লক-কে ভালুবাসতে চায়, ভালুবেসে তব্দা খেতে চায়,
তার তো কোন সহহী উপায় কইলেন না!!
আরজু মুক্তা
হা হা। কঠিন কথা। রাইটার্স ব্লককে ভালোবেসেছে আর পণ করেছে লিখবো না। এমন হলে ওকে বলা উচিত। বনবাসে যাও। সাথে গ্রীন টি নিয়ে যাও। এক কাপে তিন চামচ দিও। জীবন যখন তিতা। তখন মনও তিতা হোক।
শুভ কামনা।
তবুও রাইটার্স ব্লক পড়ে কারও উপকার হলে মন্দ নয়।