
হঠাৎ এমন অস্বাভাবিক আচরণ। কখনো অযথায় হাসছি, কখনো অকারণেই প্রচণ্ড রেগে যাচ্ছি, কখনো আবার একদম চুপচাপ থাকছি। এরই মধ্যে মা বলে উঠলেন বার বার বারণ করেছি পুকুরের না নামতে শুনলো না। এখন দেখো চেহারা পুরো কুটকুটে কালো হয়ে গেছে। পুকুরের নোংরা, ঘোলা পানি আর দুপুরের রোদ মুখে লেগে কি করেছে চেহারার। যা হোক এমন করেই কেটে গেলো বিকেলে। সন্ধ্যার পরে মা ভাবী নানী আর আমি লুডু খেলতে বসেছি। বেশ হাসাহাসি চলছিল। ছোট ভাই বললো আমিও খেলবো। ওকে নিয়েও বেশ মজা হলো। একটু পর মা কে কে বলে উঠলেন? কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। সবাই বললাম কই কেউ তো নেই? মা বললেন এই তো এখনই দেখলাম কেউ হেঁটে গেলো। আমরা সবাই মায়ের ভুল ধারণা মনে করে খেলায় মনোনিবেশ করলাম। খেলতে খেলতে নানী আমার একটা গুটি কেটে দিলো। প্রচণ্ড মেজাজ গরম করে চিৎকার চেঁচামেচি করে খেলা নষ্ট করে সেই যে হাত পা ছড়িয়ে কান্না শুরু করলাম। মা বললেন এমন করছো কেনো? ছোট মানুষের মতো কান্নার কি হলো? যা হোক রাতের খাবার খেয়ে দেয়ে যে যার রুমে গেলাম ঘুমাতে।
মা আর আমি রুমে টিভি দেখছি। রাত যখন১০:৩০ মি.
কি যে হলো হঠাৎ রুম থেকে বের হয়ে এলাম। দাঁড়াতে পারছি না। মাথা ঘুরতে শুরু করলো। মা আমাকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছি কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না। মা দ্রুত বের হয়ে আমাকে পড়তে দেখেই ধরে চিৎকার শুরু করলেন। সবাই বের হলেন। তখনও আমি আমি অবচেতন হইনি। প্রেসার উঠেছে ভেবে সবাই মাথায় পানি ঢালা শুরু করলো। একটু পর অজ্ঞান হয়ে পড়েছি। তারপরে ঘটনা শোনা…
আমি গা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কয়েকজন ধরে থেকেও যখন কিছুতেই দাঁড়িয়ে রাখতে পারছিলো না তখন ঠিক করলো হাসপাতালে নিয়ে যাবে। ভ্যানে করে নিয়ে যেতেই বাজারে একজন হোমিও ডাক্তারের সাথে দেখা হলো। ডাক্তার শুধু ডাক্তার নয় কবিরাজও। আমি বিড়বিড় করছি দেখে বললেন দাঁড়ান পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। আমি একটু দেখি। ডাক্তার আমার কাছে আসতেই নাকি চোখ বড় বড় করে দেখতে শুরু করলাম। একটু পর হাসতে শুরু করলাম। ডাক্তার বললো আগুন, শুকনো মরিচ নিয়ে আসতে। দোয়া কলমা পড়তেই নাকি আমি ভ্যান থেকে উঠছি তখন ডাক্তার বললো শক্ত করে ধরে রাখো। চার পাঁচজন ধরেও নাকি আমাকে ধরে রাখতে পারছে না। ভাবীকে লাথি দিয়ে ভ্যান থেকে নাকি ফেলে দিয়েছিলাম।
ডাক্তার বকাতেই নাকি বললো ওর নাম মনসা। ও পুকুরে থাকে, আমি ওর মেয়ে। হবার পর থেকেই চোখে চোখে রেখেছে। কোনো বিপদ ছুঁতে দেয়নি আমাকে। তখন নাকি ডাক্তার বলেছিলেন তাহলে আজ কেনো মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস। যা ওকে ছেড়ে চলে যা। সে বললো সে কখনোই যাবে না। আরও বললো সে কিছু করেনি। আমার সাথে নাকি আরও দু’জন জ্বীন থাকে। একজন ভালো আর একজন খারাপ। খারাপটা যখন আমার কাছে আসতে চায় তখন ওরা দুজন বাঁধা দেয়। কাছে আসতে পারে না কিন্তু দূর থেকে দৃষ্টি দেয়। আর তখন মাথা ঘুরে পড়ে যাই অজ্ঞান হয়ে যাই।
(বলে রাখা ভালো আমি মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যাই)
এগুলো যখন সকালে ওরা বলছিল আমি হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছিলাম। ফাজলামী করছে দেখে…তখন ভাবী রেগে গিয়ে বললো ভিডিও করে রাখা উচিত ছিল। পরে ডাক্তার বলেছে। ওরা সবসময় আমাদের বাড়ি আর বাড়ির মানুষদের পাহারা দিয়ে রেখেছে। যারা যারা ক্ষতি করতে চেয়েছে তাদের কে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। আমাকে তাবিজ দিতে বলেছিলো। আমি বিশ্বাস ই করিনি তাই তাবিজও দেইনি। তবে তখন খুব কষ্ট পাই বট গাছের নিচে গিয়ে বলি তোমরা নাকি আছো? আমাকে দূরে কোথাও নিয়ে যাও। আবার এও বলি আমাকে নিয়ে সারারাত ঘুরিয়ে আবার ঘরে রেখে যাও। কিন্তু কোনোদিন এমন কিছু হয়নি। তাই এ ঘটনা কখনো বিশ্বাস ই করিনি। হ্যাঁ মাঝে মাঝে অজ্ঞান হই বটে তবে সেটা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা ভেবে নেই। ওরা কখনো বিশ্বাস করাতে পারে নি। আমি বিশ্বাস না করলেও কিন্তু ঘটেছিল ঘটনাটা। আমার কাছে গল্প মনে হলেও এটা নেহাত ই গল্প নয়। এ সত্যি, ওদের চোখে দেখা সত্যি ঘটনা। তবে ওরাও বলে রেখেছে আবার যদি এমন হয় তবে ভিডিও করে দেখাবে। তবে এটাও সত্যি আমার কখনো কোনো ক্ষতি হয়নি। আমি সেদিনই বিশ্বাস করবো ওরা আছে যেদিন আমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমাকে রাতে ঘুরতে নিয়ে যাবে।
৩৩টি মন্তব্য
কামাল উদ্দিন
এসব আমি একেবারেই বিশ্বাস করিনা, সবই থাকে কবিরাজদের কারসাজি। এখনো মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়লে ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হওয়া উচিৎ আপু। ছোট বেলা আমাকে মাদ্রাসায় দিয়ে ছিল হুজুরদের অত্যাচারে আমি পালিয়ে যেতাম। পরে এক কবিরাজ আমাকে রূপোর তাবিজ দিলো, বিরক্ত লাগে বলে খুলে ফেলে দিলাম। কবিরাজের ভাষ্য তিনারা ওটা খুলে নিয়েছেন, আমি হাসি। আর আমার হাসিটাও ওদের কাছে অশরীরী মনে হয়।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা হা
একদমই তাই
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপু
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ লাগলো। আপনাকে তারা পাহারা দিয়ে রাখে, কোনো ক্ষতি হতে দেয়না । খুব ভালো । আমরাও চাই আপনার কোনো ক্ষতি না হোক। শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
জানি তো দিদি
আপনারা আমাকে কত ভালোবাসেন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা রইলো
সুপায়ন বড়ুয়া
খুব ভালো আপু।
কৌতুহল তো রহেই গেল
সত্যিই কি পাগলামিটা করেছিলেন ?
যাক এখন তো সমস্যা নাই।
কবিরাজ গোল্লায় যাক।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
সবাই তো বলে করেছিল
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
সুরাইয়া পারভীন
নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা রইলো দাদা
জিসান শা ইকরাম
আমাদের সোনেলায় এমন একজন মানুষ আছেন যাকে জীন পাহারা দিয়ে রাখে! ভালোই তো হলো, আপনার সাথের জীন এখন সোনেলাকেও পাহারা দিয়ে রাখবে 🙂
জীবনে রহস্যের কোন শেষ নেই,
আমরা আর কতটুকুই বা জানি।
শুভ নববর্ষ,
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
দিচ্ছি কিন্তু পাহারা। হয়তো সোনেলার যোগ্য এক লেখক আমি। তবুও কিন্তু আছি আর থাকবো ইনশাআল্লাহ।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
হয়তো সোনেলার অযোগ্য লেখক আমি
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনি ভাগ্যবান জিন আপনাকে পাহারা দেয়।
ভালো লাগার মতো গল্প।
রহস্যময়।
শুভকামনা দিদি।
সুরাইয়া পারভীন
সত্যিই রহস্যময়
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা, সরাক্ষণ হাসি হাসি হাসাহাসির আসল রহস্য বের হলো!
এগুলো একদম খারাপ না।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো
তৌহিদ
এমন অনেক কিছুই জীবনে ঘটে যেসবের কোন ব্যাখ্যা নেই। আসলে কবিরাজি গ্রামের দিকে আমিও দেখেছি। ঠিক বিশ্বাস হয়না।
তবে ডাক্তার দেখানোই উচিত। আপনি ডানপিটে ছিলেন মনে হচ্ছে।
সুরাইয়া পারভীন
হুম ছিলাম বটে
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো
নৃ মাসুদ রানা
রহস্য সিরিজ বরাবরই ভালো লাগে।
সুরাইয়া পারভীন
নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
ফয়জুল মহী
লেখা পড়ে বিমোহিত হলাম।
সুরাইয়া পারভীন
ধন্যবাদ অশেষ
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো
সাবিনা ইয়াসমিন
এসব ব্যাপার গুলো নিয়ে আসলে কোনো সমাধানে পৌছানো যায় না। কিছু না কিছু রহস্য থেকেই যায়। যেমন আপনি নাহয় অজ্ঞান ছিলেন, কবিরাজও ভুয়া ছিলো, কিন্তু মুখ দিয়ে যা যা বলেছেন ঐগুলো তো আপনার নিকট জনেরা ঠিকই শুনেছে! তারা সবাই নিশ্চয়ই ভুল দেখেননি। আবার এসব জিনিস দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করারও কিছু নেই। নয়তো মানসিক স্থিতিশীলতা বরবাদ হয়ে যাবে। অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার গুলো সব সময় ঘটেনা, আবার যখন ঘটে তখন এর ব্যাখ্যা দেয়াও সম্ভব হয় না। কিছু করার নেই, সৃষ্টি জগতের বেশিরভাগ রহস্য গুলোই এখনো উন্মুক্ত হয়নি। আপনার ঘটনা গুলোও তেমন কিছু হবে হয়তো।
ভালো লাগলো, সময়াভাবে প্রতিপর্বে কমেন্ট করতে পারছিনা। তবে পড়া চালু আছে। আরও লিখুন।
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
তারা বলেছে তারা কেউ মিথ্যে বলেনি
তবুও মন মানতে চায় না যে এমনটা হয়েছে
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো
ইসিয়াক
গল্পে ভালো লাগা।
শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো আপু।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো
রেহানা বীথি
মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটা কিন্তু এপিলেপসি-এর লক্ষণ। আমারও একসময় তেমন হতো। ডাক্তার দেখিয়ে একটানা দু’বছর ওষুধ খেয়ে ঠিক হয়েছে। আপনারও ডাক্তার দেখানো উচিত বলেই মনে হয়।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো
ইঞ্জা
হতে পারে, আমি বিশ্বাস না করলেও করি আপু, সবসময় নামাজ কালাম পড়বেন, এতে বিপদ কখনোই ছুঁতে পারবেনা।
সুরাইয়া পারভীন
সেটা তো আবশ্যক ভাইয়া। চেষ্টা করি
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো ভাইয়া
ইঞ্জা
শুভ নববর্ষ আপু
হালিম নজরুল
ছোটবেলায় আমিও ভীষণ ডানপিটে ছিলাম।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো