বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। বেড়াতে এসেছিলাম বললে ভুল বলা হবে ,বাবা মাকে দেখতে এসেছিলাম। অনেক দিন নানা ব্যস্ততায় নিজের বাড়ির দিকে আর আসা হয়নি। কিন্তু এবার মনটা এত বেশি প্রিয় মুখগুলোর জন্য ছুটলো যে আর কোন ব্যস্ততার বাধা, বাধাই রইলো না।চলে এলাম সব ছেড়ে ছুড়ে বাবা মাকে দেখতে।
দেখতে দেখতে বেশ ক’দিন হয়ে গেলো,ফেরার তারিখ আরো দুদিন আগে ছিলো বাবা বললেন আরো দুদিন থেকে যেতে। তাই বয়স্ক মানুষটার অনুরোধ আর ফেলতে পারলাম না ।থেকে গেলাম আরো দুটো দিন।
যশোহর শহরটা আমার খুবই চেনা এবং একান্ত আপন। তবু ইদানিং এই শহরটা আমাকে আগের মতো খুব একটা টানে না।এর কারণ সম্ভবত সঙ্গ। আসলে এই শহরে এসে সবসময় কেমন যেন ঘর বন্দি হয়ে আছি।বন্ধু বান্ধব যা ছিলো সবাই কম বেশি জীবন জীবিকার সাথে সময়ের প্রয়োজনে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে গেছে।
আবার কেউ কেউ ঘোরতর সংসারী হয়েছে , বিদেশেও অবস্থান করছে অনেকে।এককথায় সোনালী অতিত হারিয়ে সবাই যার যার নিজের কাজে ব্যস্ত। এর মধ্যে ও কারো কারো সাথে দেখা হলে কথা বলে কিন্তু আন্তরিকতার অভাব যেন কোথাও একটা থেকেই যায়। দুএকটা কথা বলে ই দে ছুট দে ছুট ভাব। আবার কেউ কেউ দেখা হলে এড়িয়ে যায়।কষ্ট লাগে খুব কষ্ট লাগে তবু বুঝতে দেই না হাজার হলেও ছোট বেলার বন্ধু।তারপর কি আর করা শহর ঘুরে ঘুরে দেখা, ছোট্ট শহর কয়েক পাক ঘুরতেই সব দেখা শেষ। তারপর আর সময় কাটে না।মা বলেন খোকা তুই এতো ঘরকুনো কবে থেকে হলি। আমি হাসি উত্তর দেই না।
এবার বাড়িতে বেড়াতে এসে দেখলাম বাবা ও মায়ে দুজনের ই বয়সটা যেনো আরো বেশি বেড়ে গেছে।আমাকে তারা খুব বেশি মিস করে সেটাও বুঝতে পারলাম, ঠিক করলাম এবার ফিরেই বাবা মাকে ঢাকায় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে।নিজের কাছে রাখতে হবে।তাতে তাদের দেখাশোনাটা নিজের মতো করে করতে পারবো অন্তত।
তাছাড়া এমনিতেও নতুন বাসা নিতে হবে ,মা বাবা দুজনেই বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছে , বয়স হয়ে যাচ্ছে সেটা আমিও বুঝতে পারছি। কিন্তু কি আর করা, এতোদিন পড়াশোনার চাপে ঠিত মতো এদিকটায় নজর দেয় হয়নি। মাঝে মাঝে যে প্রেম বিয়ে এসবে ইচ্ছা হতো না তা কিন্তু নয়।তবু নিজে পায়ে না দাড়িয়ে আরেকজনের দায়িত্ব নেয়া সত্যি সত্যি বোকামি সেটাও মাথায় রাখতাম।
[২]
আজ ঢাকা ফিরে যাচ্ছি ,বাসা থেকে উঠতে
একটু দেরিই করে ফেললাম ।কাউন্টারে পৌছে তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠলাম। ভেবেছিলাম বাস হয়তো ছেড়ে দিয়েছে।এদিকে কাউন্টার থেকে বারবার ফোনে তাগাদা দিচ্ছিলো।কি করবো, যে রিকশায় ছিলাম সেই রিকশাটার বারবার চেইন পড়ে যাচ্ছিলো।শেষে যখন কাউন্টারে পৌছলাম তখন একরকম হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক বাবা গাড়ি ছাড়েনি।কিন্তু বাসে উঠেই ভ্রু কুচকে গেলো একি বাস তো ভর্তি,আমার ছিট কই? এদিক ওদিক তাকিয়ে বিব্রত বোধ করছি। এভাবে তো এতোটা পথ যাওয়া সম্ভব না । ঠিক তখনই দেখি সুপারভাইজার উঠলেন গাড়িতে আমি বললাম,
ভাইয়া আমার সিটটা তো বুকড মনে হচ্ছে।
-টিকিট দেন।টিকিট চেক করে সুপারভাইজার নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বললেন,
এই সুমন উঠতে হবে, ইঞ্জিন কভারে যা।লোকটি এক কথায় উঠে গেলো।
যাক শেষমেষ ভালোই হলো আমি একটু গুছিয়ে নিয়ে বসতেই দেখি আমার পাশের যাত্রীটি একজন তরুনী। আড় চোখে দেখে নিলাম মেয়েটিকে এক ঝলক, দেখতে শুনতে মন্দ না।ভাব জমালে সময়টা মন্দ কাটবে না কিন্তু ভাব সাব দেখে তো মনে হচ্ছে কাটখোট্টা অবশ্য আমিও মেয়েদের ব্যপারে একেবারে অনভিজ্ঞ বলা যায় আর মানুষের চেহারা দেখে তার ভেতরটা ধরা যায় না অবশ্যই। আগে এড়িয়ে গেলেও ইদানিং ভেতর থেকে মেয়েদের প্রতি অনেক গভীর টান অনুভব করি।তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। নাহ বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে হবে।আমার মনে হয় প্রেমিকা ট্রেমিকা আমার কপালে নেই ।
এসব আবোল তাবোল ভাবছি হঠাৎ শুনি কে যেনো মিষ্টি কন্ঠে বলছে,
-ভাইয়া এখন কয়টা বাজে? ।
একটু চমকে উঠলেও,নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
-আমায় বলছেন?
-আর কাউকে তো দেখছি না শুধু আপনাকে ছাড়া!
-ওহ সরি,ঠিক আছে ঠিক আছে কি যেনো বলছিলেন?
-এখন কয়টা বাজে? আমার ফোনের চার্জ হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে।কি বিপদ বলুন তো।
-ও ঠিক আছে বলছি…..দশটা বেজে আঠারো।
-থ্যাংকস।
-না না ইটস ওকে।বাই দা বাই আপনার নামটা কি জানতে পারি? কিছু মনে করবেন না প্লিজ, নাম জানলে কথা বলতে সুবিধা হয় তাই আরকি জিজ্ঞসা করছি।
-অনামিকা।
-বাহ সুন্দর নাম।আমি রাজীব ।
-ভালো রাগলো আপনার সাথে পরিচিত হয়ে মিঃরাজীব।
-শুধু রাজীব বলতে পারেন মিঃ বললে পর পর মনে হয়।
-আপনার কি ধারনা আমরা দুজন দুজনের খুব চেনা?
-না না ঠিক তা বলছিনা। আচ্ছা ঠিক আছে আপনার মতো করে আপনি ডাকুন।
-বাহ বেশ মজার লোকতো আপনি?তাই বলে আমায় কিন্তু আবার মিস অনামিকা বলে ডাকাডাকি করবেন না। আমার মিস শুনতে একটুও অভস্ত্য নই।
কথায় কথায় আমাদের সময় অনেক সুন্দর কেটে গেলো,এক সময় আমি অনামিকার ফোন নাম্বারটা চাইলে অনামিকা জানালো ফোন নম্বর তার মুখস্থ নেই ,ফোন তো চার্জ শেষ তাই সে আমার ফোন নাম্বারটা নিলো পরে যোগাযোগ করবে বলে। দুজনেই স্মৃতি হিসাবে ফেরি ঘাটে কিছু ছবি তুললাম।আসলে অনামিকাকে যত দেখছিলাম ততই আমার মুগ্ধতা বেড়ে যাচ্ছিলো ।আমার ঠিক করলাম ঢাকায় গেলে আমরা অবশ্যই তার সাথে দেখা করবো। অনামিকা থাকে মিরপুরে আর আমি থাকি মোহাম্মদপুরে এর বেশি জানাশোনা থেকে বিরত রইলাম ইচ্ছা করেই।মেয়েটি যদি মাইন্ড করে ,পরে না হয় সময় করে সবটুকু চেনা জানা করা যাবে। কথায় আছে সবুরে মেওয়া ফলে।
ঠিক হলো বাস থেকে গাবতলীতে নেমে যে যার মতো বাড়ি চলে যাবো। অনামিকার কাছে তো আমার ফোন নাম্বার আছেই সে কাল দশটায় ফোন দেবে ,তারপর আমরা দেখা করবো সুবিধা মতো জায়গাতে।
বাসায় ফিরে গোসল করতেই মনটা আরো ফুরফুরে হয়ে গেলো।বারবার মনে হতে লাগলো অনামিকার আন্তরিকতা মাখা কথাবার্তাগুলো। আহ চমৎকার মেয়েটি।
এতটাই আবেগ প্রবন হয়ে পড়লাম যে রাতে ওকে নিয়ে জমজমাট এক স্বপ্ন দেখে ফেললাম। কি বলবো স্বপ্নে যা হলো ভাবতেই আমার নিজেই লজ্জা লাগলো। যা হোক সকাল সকাল গোসল সেরে নাশতা খেয়ে আমি রেডি।যে কোন মুহুর্তে অনামিকার ফোন আসতে পারে ।দশটা প্রায় বাজতে চলেছে। অপেক্ষার প্রহরগুলো দীর্ঘ লাগছিলো বলে আমি ফোন গ্যালারিতে কালকের ছবিগুলো চেক করতে লাগলাম। সময় কাটানোর জন্য।
কিন্তু একি কোন ছবিতে অনামিকা নেই কেন? আমি নিজেই থমকে গেলাম এটা কি করে সম্ভব?সব ছবিগুলোতে শুধু আমি একা। আরো অবাক ব্যপার একে একে এগারোটা, বারোটা ,একটা বেজে চলল অনামিকার ফােনের কোন খোঁজ নেই।খোঁজ নেই তো খোঁজই নেই…..।
এরপর অনেক খুঁজেছি অনামিকাকে কিন্তু কোথাও পাইনি।
মানুষের জীবনের কিছু কিছু রহস্যের সমাধান কখনো হয়না এটাও আমার জীবনের তেমনি এক রহস্যময় ঘটনা।
২৫টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
ফোন না হয় না দিক কিন্তু ছবি!
অনামিকা নিশ্চিত ভূত ছিলো
নয়তো ছবিতে থাকবে না কেনো?
চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
ইসিয়াক
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আপু। শুভকামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
মাঝে মাঝে রহস্যের জট খুলতে হয়।
ভালো লাগলো।
শুভ কামনা।
ইসিয়াক
ভালো থাকুন সবসময়।
শুভকামনা।
হালিম নজরুল
আশ্চর্য ব্যপার! ছবিগুলো গেল কোথায়!
ইসিয়াক
সেটাই প্রশ্ন ছবিগুলো গেলো কোথায়?
ভালো থাকুন ভাইয়া।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হায় হায় ছবি গায়েব! ফোন নম্বর ও নেই। কি আর করা। আপনি কি বাসে বসে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন? ভালো লেগেছে তবুও। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। পরের বার সাবধানে থাকবেন
ইসিয়াক
না দিদিভাই স্বপ্ন দেখছিলাম না।
ভালো আছেন নিশ্চয়। ভালো থাকুন সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
ভুতের ছবি ক্যামেরায় তোলা যায় না 🙂
তবে পুরোটাই একটি কল্পনা।
ভালো লেগেছে রহস্য গল্প।
ইসিয়াক
অনেক অনেক ধন্যবাদ রইলো ভাইয়া।
শুভকামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
রহস্যময় গল্প!!!
ইসিয়াক
হ্যাঁ ভাইয়া রহস্যময় গল্প।
ভালো থাকুন সবসময়।
তৌহিদ
আমারতো মনে হচ্ছে এসব অবচেতন মনের ভাবনা থেকেই হয়েছে। ভীন্নমাত্রায় লেখা গল্পটি পড়ে আনন্দ পেলাম ভাই।
ভালো থাকবেন।
ইসিয়াক
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া।
শুভকামনা্
ফয়জুল মহী
মন পুলকিত হল। উপভোগ্য।
ইসিয়াক
ধন্যবাদ ভাইয়া্
ছাইরাছ হেলাল
এক ভূতনির কবলে পরার গল্প বেশ ভালই।
ইসিয়াক
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
ভীষণ সুন্দর লিখেন আপনি। কোন শবজট নেই, বাক্যের গঠনে ভুল নেই। তবময় হয়ে পড়ছিলাম সবটা। আর ভাবছিলাম রহস্যটা কী হবে। শেষের চমক টা সত্যিই খুব বড় চমক। গল্পপ্টা খুবই মন ছুঁয়ে
গেলো।
ইসিয়াক
অনেক ধন্যবাদ রইলো আপু। শুভকামনা্
আতা স্বপন
ভাই গো ভাল কইরা ঘুমান
হাইপার টেনশন কমান
কি দেখতে কি দেখছেন
মন থেইকা ঝাইরা ফেলেন
রহস্য নাকি ধুয়া
বদহজমের কাম, পুরোটাই ভুয়া
ইসিয়াক
হা হা হা মন্তব্যে ভালো লাগা। শুভকামনা।
কামাল উদ্দিন
বলেন কি! আমি তো ভাবলাম আপনি অনামিকাকে এবার বিয়ে করেই ফেলবেন। নাকি পুরোটাই ঘুরের ঘোরে স্বপ্ন ছিলো?……যাি হক গল্পের গাথুনি বেশ মজবুত, ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম ভাই।
ইসিয়াক
বিয়ে করলে তো খবর দিতাম কামাল ভাই।
গল্প ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
শুভকামনা।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও শুভ কামনা সব সময়।