১৯৮০ সালে বাংলাদেশে যৌতুক নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। তাতে আছে কেউ যৌতুক প্রদান বা গ্রহণ করিলে অথবা প্রদান বা গ্রহণে সহায়তা করলে সে ৫ বছর পর্যন্ত (এক বছরের কম নয়, আবার ৫ বছরের বেশি নয়) কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডণীয় হবে। বারবার আইন করেও যৌতুক বন্ধ করা যাচ্ছে না।আইনের প্রয়োগেরও একটা ব্যাপার থাকে যা প্রশাসনের দুর্বলতা কিংবা দুর্নিতিই দায়ী।
নিম্নের পরিসংখ্যান থেকে তা সহজেই বোঝা যায়।
২০০৩ সালের জুলাই মাসে প্রাপ্ত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (টঘউচ) এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে পূর্ববর্তী ১০ বছরে ৫০ শতাংশ নারী যৌতুকের কারণে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে সারা দেশে অন্তত ১২৮ জন মহিলা যৌতুকের কারণে খুন হয়েছে, আত্মহত্যা ১৮ জন, নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪০ জন, তালাকপ্রাপ্তা হয়েছে ১৫ জন। এজন্য মামলা হয়েছে ২, ৭৭১টি।
জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির এক জরিপে প্রকাশ, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যৌতুকের জন্য খুন হয়েছে ৬৮৫ জন নারী, শারীরিক নির্যাতন ৫৮২ জন।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন সেলের হিসাব অনুযায়ী যৌতুকের কারণে ২০০০ সালে পারিবারিক আদালতে মামলা হয়েছে ৬৭৫টি। ২০০১ সালে ৪১২টি, ২০০২ সালে ১২০টি ও ২০০৩ সালে ১৪১টি।এখন এর সংখ্যা হয়তো কয়েকগুণ।
(পিআইডি ইউনিসেফ ফিচার, তথ্য অধিদপ্তর ইউনিসেফ থেকে প্রকাশিত ‘মা ও শিশু’ বই থেকে সংগৃহিত)
যৌতুকের জন্য এক প্রতিষ্টিত নারীর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার অধ্যায় এমনি আরো কত গ্রামে গঞ্জে ঘটে যাওয়া কিছু দুর্বল চিত্র বর্ননা করছেন লেখক সাংবাদিক রায়হান সাহেব তারই নিকত্মীয়র বাড়ীতে।মোটামোটি পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে বেশ কিছু অজ্ঞ বিজ্ঞ গ্রাম বাসীকে একত্রিত করে যৌতুকের উপর সচেনতার চেষ্টা চালান যদিও এটা তার দায়ীত্ত্ব নয় তবুও ঘটে যাওয়া রিপোর্টটির সত্যতা যাচাইয়ে তাকে এ গ্রামে বেশ কয়েক দিন অবস্হানের সুযোগের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্ভন করা।
এ রকম দু একদিনের সভা হতে রায়হান সাহেব পেয়ে যান বেশ কিছু আগ্রহী তরুন।তরুনদের সাথে করে সে বের করার চেষ্টা করেন ফুলী নামক মেয়েটির নিখোঁজের আসল রহস্য।
-শুনেছিলাম মেয়েটি পাচঁ মাস সংসার করার পর পাগল হয়ে কোথাও যেন চলে গেছেন,তার পর মেয়েটির বর আবার বিয়ে করেন।
তরুনদের সাথে কথা প্রসঙ্গে এমন তথ্য বেড়িয়ে আসে।
-আমি যতটুকু জানি মেয়েটির বিয়ের আগেই নাকি অন্য এক ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল হয়তো সেখানেও চলে যেতে পারে।
-তোমাদের সব কথাই মিথ্যে, মেয়েটি না পাগল ছিল না ছিল পরকিয়ায় আবদ্ধ, গ্রামের সাধারন আট দশটা গ্রাম্য বধুর ন্যায় বধু সেজে এসেছিল এ গ্রামে সে,তবে বিয়ের সময় একটু ঝামেলা হয়েছিল যৌতুকের দেনা পানা নিয়ে তা আবার কি ভাবে যেন মিটেও যায় সে ঘটনা আমার জানা নেই,আর বধু হয়ে আসার পর গ্রামে সে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। প্রায় আট দশ মাস ভালোয় ভাল ভাবে সে সংসার করতে পেরেছিল তার পর এক দিন দেখি ওদের বাড়ীতে ভন্ড ফকিরের আনাগোনা…দেবরের কাছে জানতে চাইলে সে বলেছিল ভাবী পাগল হয়ে গেছেন, এর সপ্তাহ দুয়েক পর হতেই মেয়েটিকে এ বাড়ীতে আর দেখতে পাইনি সবাই বলছেন মেয়েটি পাগল হয়ে কোথায় যেন চলে গেছেন।তখন থেকে তার নিখোজঁ সংবাদ প্রচার হতে থাকে।
লেখক পড়ল মহা টেনসনে সবার কথার মাঝে কেমন যেন একটু ফাক থেকে যায়।লেখক তরুনদের সাথে কথা শেষ করে ফুলীদের শশুড় বাড়ীর দিকে যাচ্ছিলেন হঠাৎ এক জীর্ণ মোটর সাইকেলে আসা থানার দারোগার লেখকের গতি পথে বাধা দেন।
-কোথায় যাচ্ছিস?তোর পরিচয়টা দে,আই ডি কার্ড আছে?
-থাকবেনা কেনো,তবে ভদ্রতা বজায় রাখুন এক জন অপরিচিত লোকের সাথে প্রথম কথা বলতে হয় কি ভাবে তা মনে ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে গেছেন।
-কি বলতে চাস?
-আবারও একই ভূল,আমি আপনার বয়সেরও ছোট, তাই নয় কি?।
-ওহ্ সরি ভাইজান, আমি ভূলে গেছিলাম আপনি একজন সাংবাদিক……যাক সে কথা এখন বলেন কোথায় যাচ্ছেন এ পথে।
-রশিদ মোল্লার বাড়ীতে।
-কেনো যাচ্ছেন যানতে পারি?
-কারনটা মনে হয় আমার চেয়ে ভাল আপনিই জানেন।
-এই সাংবাদিকদের একটি দোষ কিছু জিজ্ঞাসা করলে উল্টো প্রশ্ন করে, যাক আমি শুধু বলব রশিদ মোল্লার সাথে কথা বার্তা বলে নিজ গৃহে চলে যান।
-আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?
-না…না ভয় দেখাবো কেনো,বলছিলাম এই এলাকার লোকজন বেশী সুবিদের নয়,অকারনেই মানুষ খুন করেন।
-তা হলে আপনারা আছেন কেনো?আপনাদের তো চাকুরী ছেড়ে অথবা চাকুরী চলে যাবার কথা।দায়ীত্ত্ব পালনে ব্যার্থ লোকতো স্ব-পদে বহাল থাকতে পারে না।
-নাহ্… আপনিতো দেখছি একটু তেরা।
-একটু নয় পুরাই তেরা,দায়ীত্ত্বের প্রয়োজনে জান যাবে তবুও দায়ীত্ত্বের স্প্রিড এক বিন্দুও কমবে না, বুঝলেন।পারলে সহযোগিতা করুন নতুবা ডিষ্ট্রাভ করবেন না।
-ঠিক আছে দেখা যাক…..সময় করে থানায় আইসেন কথা বলবোনে।
দারোগা মোটর সাইকেল ষ্টার্ড দিয়ে চলে গেলেন লেখক আপন গতিতে হেটে যাচ্ছে রশিদ মোল্লার বাড়ীর দিকে।এ দিকে আকাশেঁ কালো মেঘের আনাগোনা মনে হয় যেন তুফান আসবে….ঠান্ডা বাতাস ছেড়ে দিয়েছে, আকাশেঁ মেঘের কারনে পরিবেশ কেমন যেন অন্ধকার, একটি ভয়ার্ত অনুভূতি জাগছে লেখকের মনে।এমনি পরিবেশে বেশ কিছু অচেনা লোক তার গতিপথে এসে দাড়ায় লেখক যেন হতভম্ভঃ এরই মধ্যে কিছু তরুন এসে লেখকের সঙ্গ দেয়াতে অচেনা লোকগুলো চলে যায়।তরুনদের মাঝে দু’জন লেখকের কর্মক্ষেত্রের পত্রিকার একজন লোকাল এবং অন্যজন জেলার রিপোর্টার প্রতিনিধি ছিলেন।
-সালাম রায়হান ভাই,ভালো আছেন।
-আপনাকে ঠিক চিনতে পারছিনা আবার চেনা চেনাও লাগে।
-আমি বশির একই পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি… ঐতো পাশের গ্রামেই আমার বাড়ী।এক দিন সময় করে আসবেন।
-অবশ্যই যাবো,তবে নিখোজঁ ফুলী সম্পর্কে কিছু জানেন নাকি।
-না,অনেক চেষ্টা করেছি…রশিদ মোল্লা প্রভাবশালী লোক ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না।
-এ সব প্রভাবশালী মুখোশধারীদের চিহ্নিত করার দায়ীত্ত্ব আপনাদের মতন তরুনদের।যাক আমাকে একটু সহযোগিতা করবেন।
-হ্যা,অবশ্যই।
-তবে আসুন আমার কাছাকাছি।
অত্যান্ত গোপনীয়তায় তরুনদের সাথে লেখক সাংবাদিক তার পরবর্তী কর্মপ্লান বর্ননা করেন।
চলবে…
২৪টি মন্তব্য
সঞ্জয় কুমার
এক কুত্তারবাচ্চার গল্প শোনলাম মাত্র। শরীরের রক্ত আগুন হয়ে ছুটছিলো নাড়ী ধননীতে।
এমবিবিএস ডাক্তার এক ছেলে এক ধনীর দুলালীকে বিয়ে করেছে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুক চেয়ে চেয়ে শ্বশুরকে যারপরনাই বিরক্ত করে আসছিলো, বৌকে শারিরীক নির্যাতন, বন্ধুর হাতে বৌকে রাতে তুলে দেবার ভয়, শ্বশুরকে হত্যার হুমকি, ইত্যাদি নানাবিধ জাতির মুখ উজ্জ্বল করা কর্মকান্ড করে সরকারি টাকায় এমবিবিএস পড়া জাতির গর্বিত সন্তান জাতির জন্য তার অবদান রেখে যাচ্ছিলো।
তারপর দাবী অনুযায়ী যৌতুক না পেয়ে একদিন সত্যিই নিজের ঘরে বন্ধুকে ডেকে এনে, বন্ধুর সাথে জোরপূর্বক স্ত্রীর ভিডিও দৃশ্য ধারন করে শ্বশুরের কাছে পাঠাবে বলে। এবং পরের দৃশ্য সবার জানা, মেয়েটি আত্মহত্যা করে নিজেকে আর পিতাকে মুক্তি দিয়ে যায়।
এমন কুকুরের বাচ্চা আপনার আমার সবার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যারা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে জনগনের টাকায় ডিগ্রি অর্জন করলেও কুকুরের ঘ্রাণ যায়নি।
যে কুকুর শাবক বিয়ের আগে বা পরে যৌতুক গ্রহনের ন্যুনতম ইচ্ছা পোষণ করবে, ততক্ষণাত এক নম্বর জিলেট ব্লেড কিনে তার বীচি দুটো ফেলে দিন।
কেননা তার জন্য যৌতুকই যথেষ্ট। স্ত্রীসুখ ও সন্তানসুখের অধিকার তার নেই।
copy from facebook.
fb link https://0.facebook.com/story.php?story_fbid=10205148102008091&id=1410960986
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হ্যা ভাই এমন হাজারো নজির এদেশে আছে।ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
মন মানসিকতার উন্নয়ন না হলে কিই বা করার আছে। গল্প স্বাভাবিক গতিতে চলছে।
তবে ভবিষ্যৎ খুবকাল মেঘের ঘটা মনে হচ্ছে।
গ্রামের মোড়ল আর প্রশাসন এদের নিশ্চিহ্ন করা খুবই দরকার।
ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ আপনাকেও।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনাকেউ অসংখ্য ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
সাংবাদিক কে বেশ ধারালো ভূমিকায় নিয়ে এসেছেন, ভালো লাগছে বেশ। অনেক আইন এদেশে, যত আইন ততো উপার্জন। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূর্নীতি আমাদের, কিছু বলার নাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সব সাংবাদিক এক নয় কিছু ভালো লোক আছে বলেই দেশ এখনও বাংলাদেশ রয়েছে।ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
জানিনা এ অভিশাপ থেকে আমাদের মুক্তি হবে কী না। তবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে।
সাংবাদিক ! ভাবতে ভালো লাগে ,কিন্তু আশাবাদী হতে পারি না।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এ অভিশাপটি ক্রমসতঃ আধুনিক নগরায়ণের সচেনতায় কমে আসছে আগের তুলনায়।ধন্যবাদ।
বনলতা সেন
আইন আইনের জায়গায় থাকে ,শুধু সাংবাদিকেরা কিছুই করতে পারবে না।
তবুও এই লেখা পড়ে যদি আমরা নূতন কিছু ভাবতে পারি যা আমাদের কাম্য।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
লেখাটিতে একজনকে হিরো করে দেখানো হয়েছে মাত্র।প্রয়োজন সম্মেলিত জন সচেনতা।
খেয়ালী মেয়ে
এই যৌতুক প্রথা বাংলাদেশ থেকে বিলীন হবে বলে মনে হয় না 🙁
ধনীরা স্বেচ্ছায় দেয় প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত, আর গরীবরা হয় যৌতুকের বলি…
বন্ধ হওয়া উচিত হয় যৌতুক সবার(ধনী/গরীব) জন্য..
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ আপনাকে এখন যৌতুক নাম পাল্টিয়ে হয়েছে জামাইয়ের সম্মানী।ঘর সাজানো কিংবা জামাই কনে সাজানো অথবা উভয়।
খেয়ালী মেয়ে
যতই রূপ পাল্টানো হোক না কেন,ইহা যৌতুক,যৌতুকই 🙂
লীলাবতী
পরিসংখ্যান দেয়াতে পোষ্টের গুরুত্ব এবং মুল্য বৃধি পেয়েছে ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
ব্লগার সজীব
এক্সিলেন্ট পোষ্ট।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ সজীব ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
গুছানো পোষ্ট।
ভালো লিখেছেন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হুম বিশেষ ধন্যবাদ বড় ভাইয়া।
বন্য
এই দুর্যোগ থেকে কবে যে পরিত্রান পাবো জানি না। , এই পর্বেও সমাজের এই যৌতুক নামের পশুত্বকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন, সাথেই আছি মনির ভাই, শুভ কামনা জানবেন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
যৌতুক ব্যাধি কখনও বিলীন হবে যদি না আমাদের মাঝে সচেনতা বৃদ্ধি পায়।ধন্যবাদ বন্য সাথেই থাকুন।
অলিভার
পরিসংখ্যান দেখেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যে পারছে সে তো দিচ্ছে, কিন্তু যে পারছে না সেই তো এভাবে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে ঘরে ঘরে।
সাংবাদিক এইবার খুব আঁটসাঁট করে লেগেছে বুঝতে পারছি।
সামনে কিভাবে ঘটনার মোকাবেলা করে তা সবার সামনে নিয়ে আসে সেই অপেক্ষাতেই রইলাম 🙂
পোষ্টের জন্যে ভালোলাগা -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সেই ভাবনায় পড়ে আছি কি ভাবে যে ব্যার্থতার কথা লিখি….।