যৌতুকের বলি (২য় পর্ব)

মনির হোসেন মমি ২৫ অক্টোবর ২০১৪, শনিবার, ১০:২৭:৫২পূর্বাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

১৯৮০ সালে বাংলাদেশে যৌতুক নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। তাতে আছে কেউ যৌতুক প্রদান বা গ্রহণ করিলে অথবা প্রদান বা গ্রহণে সহায়তা করলে সে ৫ বছর পর্যন্ত (এক বছরের কম নয়, আবার ৫ বছরের বেশি নয়) কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডণীয় হবে। বারবার আইন করেও যৌতুক বন্ধ করা যাচ্ছে না।আইনের প্রয়োগেরও একটা ব্যাপার থাকে যা প্রশাসনের দুর্বলতা কিংবা দুর্নিতিই দায়ী।

নিম্নের পরিসংখ্যান থেকে তা সহজেই বোঝা যায়।
২০০৩ সালের জুলাই মাসে প্রাপ্ত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (টঘউচ) এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে পূর্ববর্তী ১০ বছরে ৫০ শতাংশ নারী যৌতুকের কারণে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে সারা দেশে অন্তত ১২৮ জন মহিলা যৌতুকের কারণে খুন হয়েছে, আত্মহত্যা ১৮ জন, নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪০ জন, তালাকপ্রাপ্তা হয়েছে ১৫ জন। এজন্য মামলা হয়েছে ২, ৭৭১টি।
জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির এক জরিপে প্রকাশ, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যৌতুকের জন্য খুন হয়েছে ৬৮৫ জন নারী, শারীরিক নির্যাতন ৫৮২ জন।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন সেলের হিসাব অনুযায়ী যৌতুকের কারণে ২০০০ সালে পারিবারিক আদালতে মামলা হয়েছে ৬৭৫টি। ২০০১ সালে ৪১২টি, ২০০২ সালে ১২০টি ও ২০০৩ সালে ১৪১টি।এখন এর সংখ্যা হয়তো কয়েকগুণ।
(পিআইডি ইউনিসেফ ফিচার, তথ্য অধিদপ্তর ইউনিসেফ থেকে প্রকাশিত ‘মা ও শিশু’ বই থেকে সংগৃহিত)

যৌতুকের জন্য এক প্রতিষ্টিত নারীর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার অধ্যায় এমনি আরো কত গ্রামে গঞ্জে ঘটে যাওয়া কিছু দুর্বল চিত্র বর্ননা করছেন লেখক সাংবাদিক রায়হান সাহেব তারই নিকত্মীয়র বাড়ীতে।মোটামোটি পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে বেশ কিছু অজ্ঞ বিজ্ঞ গ্রাম বাসীকে একত্রিত করে যৌতুকের উপর সচেনতার চেষ্টা চালান যদিও এটা তার দায়ীত্ত্ব নয় তবুও ঘটে যাওয়া রিপোর্টটির সত্যতা যাচাইয়ে তাকে এ গ্রামে বেশ কয়েক দিন অবস্হানের সুযোগের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্ভন করা।

এ রকম দু একদিনের সভা হতে রায়হান সাহেব পেয়ে যান বেশ কিছু আগ্রহী তরুন।তরুনদের সাথে করে সে বের করার চেষ্টা করেন ফুলী নামক মেয়েটির নিখোঁজের আসল রহস্য।

-শুনেছিলাম মেয়েটি পাচঁ মাস সংসার করার পর পাগল হয়ে কোথাও যেন চলে গেছেন,তার পর মেয়েটির বর আবার বিয়ে করেন।

তরুনদের সাথে কথা প্রসঙ্গে এমন তথ্য বেড়িয়ে আসে।

-আমি যতটুকু জানি মেয়েটির বিয়ের আগেই নাকি অন্য এক ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল হয়তো সেখানেও চলে যেতে পারে।

-তোমাদের সব কথাই মিথ্যে, মেয়েটি না পাগল ছিল না ছিল পরকিয়ায় আবদ্ধ, গ্রামের সাধারন আট দশটা গ্রাম্য বধুর ন্যায় বধু সেজে এসেছিল এ গ্রামে সে,তবে বিয়ের সময় একটু ঝামেলা হয়েছিল যৌতুকের দেনা পানা নিয়ে তা আবার কি ভাবে যেন মিটেও যায় সে ঘটনা আমার জানা নেই,আর বধু হয়ে আসার পর গ্রামে সে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। প্রায় আট দশ মাস ভালোয় ভাল ভাবে সে সংসার করতে পেরেছিল তার পর এক দিন দেখি ওদের বাড়ীতে ভন্ড ফকিরের আনাগোনা…দেবরের কাছে জানতে চাইলে সে বলেছিল ভাবী পাগল হয়ে গেছেন, এর সপ্তাহ দুয়েক পর হতেই মেয়েটিকে এ বাড়ীতে আর দেখতে পাইনি সবাই বলছেন মেয়েটি পাগল হয়ে কোথায় যেন চলে গেছেন।তখন থেকে তার নিখোজঁ সংবাদ প্রচার হতে থাকে।

লেখক পড়ল মহা টেনসনে সবার কথার মাঝে কেমন যেন একটু ফাক থেকে যায়।লেখক তরুনদের সাথে কথা শেষ করে ফুলীদের শশুড় বাড়ীর দিকে যাচ্ছিলেন হঠাৎ এক জীর্ণ মোটর সাইকেলে আসা থানার দারোগার লেখকের গতি পথে বাধা দেন।

-কোথায় যাচ্ছিস?তোর পরিচয়টা দে,আই ডি কার্ড আছে?

-থাকবেনা কেনো,তবে ভদ্রতা বজায় রাখুন এক জন অপরিচিত লোকের সাথে প্রথম কথা বলতে হয় কি ভাবে তা মনে ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে গেছেন।

-কি বলতে চাস?

-আবারও একই ভূল,আমি আপনার বয়সেরও ছোট, তাই নয় কি?।

-ওহ্ সরি ভাইজান, আমি ভূলে গেছিলাম আপনি একজন সাংবাদিক……যাক সে কথা এখন বলেন কোথায় যাচ্ছেন এ পথে।

-রশিদ মোল্লার বাড়ীতে।

-কেনো যাচ্ছেন যানতে পারি?

-কারনটা মনে হয় আমার চেয়ে ভাল আপনিই জানেন।

-এই সাংবাদিকদের একটি দোষ কিছু জিজ্ঞাসা করলে উল্টো প্রশ্ন করে, যাক আমি শুধু বলব রশিদ মোল্লার সাথে কথা বার্তা বলে নিজ গৃহে চলে যান।

-আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?

-না…না ভয় দেখাবো কেনো,বলছিলাম এই এলাকার লোকজন বেশী সুবিদের নয়,অকারনেই মানুষ খুন করেন।

-তা হলে আপনারা আছেন কেনো?আপনাদের তো চাকুরী ছেড়ে অথবা চাকুরী চলে যাবার কথা।দায়ীত্ত্ব পালনে ব্যার্থ লোকতো স্ব-পদে বহাল থাকতে পারে না।

-নাহ্… আপনিতো দেখছি একটু তেরা।

-একটু নয় পুরাই তেরা,দায়ীত্ত্বের প্রয়োজনে জান যাবে তবুও দায়ীত্ত্বের স্প্রিড এক বিন্দুও কমবে না, বুঝলেন।পারলে সহযোগিতা করুন নতুবা ডিষ্ট্রাভ করবেন না।

-ঠিক আছে দেখা যাক…..সময় করে থানায় আইসেন কথা বলবোনে।

দারোগা মোটর সাইকেল ষ্টার্ড দিয়ে চলে গেলেন লেখক আপন গতিতে হেটে যাচ্ছে রশিদ মোল্লার বাড়ীর দিকে।এ দিকে আকাশেঁ কালো মেঘের আনাগোনা মনে  হয় যেন তুফান আসবে….ঠান্ডা বাতাস ছেড়ে দিয়েছে, আকাশেঁ মেঘের কারনে পরিবেশ কেমন যেন অন্ধকার, একটি ভয়ার্ত অনুভূতি জাগছে লেখকের মনে।এমনি পরিবেশে বেশ কিছু অচেনা লোক তার গতিপথে এসে দাড়ায় লেখক যেন হতভম্ভঃ এরই মধ্যে কিছু তরুন এসে লেখকের সঙ্গ দেয়াতে অচেনা লোকগুলো চলে যায়।তরুনদের মাঝে দু’জন লেখকের কর্মক্ষেত্রের পত্রিকার একজন লোকাল এবং অন্যজন জেলার রিপোর্টার প্রতিনিধি ছিলেন।

-সালাম রায়হান ভাই,ভালো আছেন।

-আপনাকে ঠিক চিনতে পারছিনা আবার চেনা চেনাও লাগে।

-আমি বশির একই পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি… ঐতো পাশের গ্রামেই আমার বাড়ী।এক দিন সময় করে আসবেন।

-অবশ্যই যাবো,তবে নিখোজঁ ফুলী সম্পর্কে কিছু জানেন নাকি।

-না,অনেক চেষ্টা করেছি…রশিদ মোল্লা প্রভাবশালী লোক ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না।

-এ সব প্রভাবশালী মুখোশধারীদের চিহ্নিত করার দায়ীত্ত্ব আপনাদের মতন তরুনদের।যাক আমাকে একটু সহযোগিতা করবেন।

-হ্যা,অবশ্যই।

-তবে আসুন আমার কাছাকাছি।

অত্যান্ত গোপনীয়তায় তরুনদের সাথে লেখক সাংবাদিক তার পরবর্তী কর্মপ্লান বর্ননা করেন।

চলবে…

যৌতুকের বলি (১ম পর্ব)

৬৬১জন ৬৬১জন

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ