বর্তমান সময়ে কাবিনও একপ্রকার যৌতূক হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে আজকাল এই ব্যাপারটা জটিল আকার ধারণ করেছে। আগেকার সময় বিয়ের কাবিন একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিলো এজন্য যে, মেয়েদের কাজ করে খাওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতো না বলে কোন কারণে বিয়ে ভেঙে গেলে এই কাবিনটা তার একটা আর্থিক সাপোর্ট হয়ে দাঁড়াতো। সম্ভবত ধর্মীয় বিবেচনাটাও এ দৃষ্টিকোণ থেকেই এসেছে। পরনির্ভরশীল এবং প্রয়োজনে আত্মনির্ভরশীল হয়ে চলার ক্ষমতাহীন নারীর ক্ষেত্রে এটা প্রয়োজনীয় কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষিত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারীরা বা তার পরিবার কেনো বেহিসাব কাবিন হাকাচ্ছেন?
আমার কাছে কাবিন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, স্বনির্ভরশীল জীবন যাপন। মাত্রাতিরিক্ত কাবিনের অংক আমার নিজেকে ছোট করে ফেলা মনে হয়।
আবার অন্যদিকে দাম্পত্যকালীন সময়ে সংসারের প্রয়োজনে যদি যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মক্ষম জীবন যাপনের প্রচণ্ড ইচছা থাকা সত্ত্বেও বেকার জীবন যাপন করতে বাধ্য হতে হয়, তবে সেক্ষেত্রে আমার দাবী থাকবে একান্ত নিজস্ব খরচবাবদ মাসিক মানসম্মত একটা নির্দিষ্ট অংক বরাদ্দের এবং সে দাবীর শর্ত (প্রয়োজনে দালিলিক) মানা সাপেক্ষেই কর্মজীবনে না জড়িয়ে সংসার ধর্মে মনোনিবেশ করা। অথবা দাম্পত্যকালীন অর্জিত সম্পদে সমভাগ নিশ্চিত করা এবং অর্জিত সে ভাগে একক অধিকার নিশ্চিত করা যেনো কখনো দাম্পত্যে বিচ্ছেদ ঘটলে তা নিজ এখতিয়ারে আসে।
এখানে আমার যুক্তি হচ্ছে, সংসার দুজনের, সাংসারিক ঝামেলাও দুজনের। সাংসারিক খরচও দুজনের। একজন বাহির দেখবে আরেকজন ঘর দেখবে এ যুগ এখন আর নেই। এখন আর্থিক স্বাবলম্বিতা উভয়েরই থাকা চাই। বিয়ে যেহেতু একটি চুক্তি, যেকোন সময় তা ভেঙে যেতেই পারে। তখন সাবলম্বী হয়ে চলার যথাযথ যোগ্যতা থাকার পরও শুধুমাত্র ঘর দেখার দায়িত্বে থাকার কারণে মানুষটি হয়ে পড়ে কপর্দকশূন্য। এ পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যই এ সিদ্ধান্ত।
কারণ, এ সময়ে এসে আমি অনেক নারীকেই দেখছি যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা ষোলআনা সংসারী হয়ে সংসার ধর্ম করে মধ্য বয়সে এসে স্বামীর সাথে দাম্পত্য টানাপোড়নে জড়িয়ে হয় ডিভোর্স নিচ্ছেন, নাহয় মেনে নিয়ে মানিয়ে নিয়ে আত্মমর্যাদাহীনভাবেই সংসার করে যাচ্ছেন। আর স্বামী মানুষটি ‘তুমি আর কই যাবা’ এ মানসিকতায় একটু বেপরোয়া ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। অথচ নারীটির তার নিজের পায়ের উপর দাঁড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ ছিলো। আর যারা আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে ডিভোর্সই নিচ্ছেন তারা ভীষণরকম আর্থিক সংকটে পড়ছেন, অথচ তাদের নিজের পায়ের উপর দাঁড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ ছিলো।
সো, মেয়েরা এই যুগে এসে কাবিন নয়, নিজের পায়ের উপর দাঁড়াও।
স্বর্ণলতা হয়ে নয়, শিকড় ছড়িয়ে দাঁড়াও।
কাবিন তোমার মর্যাদা বাড়াবে না বরং খাটো করবে।
স্বনির্ভরতা তোমার মর্যাদা বাড়াবে, সেসাথে তোমার ভিতকেও শক্তিশালী করবে।
৭টি মন্তব্য
মাছুম হাবিবী
মেয়েদের প্রতি আপনার দারুন আহবান ধন্য করেছে পুরো মেয়ে জাতিকে!
অসাধারণ লিখেছেন। শুভ কামনা
সাবিনা ইয়াসমিন
বিয়ে একটি ধর্মীয় রীতি। ধর্মীয় রীতি পালণে এর যথাযথ নীতি পালণ করা আবশ্যক। দেনমোহর আদায় এবং প্রদান করা বিবাহ নীতির প্রধান শর্ত। তবে দেনমোহর কত হবে, কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে তার জন্যে অনেক বিষয়ে অবগত হতে হবে। উভয়পক্ষের সম্মিলিত আলোচনায় দেনমোহরের পরিমান নির্ধারণ করে নিতে হয়। এখানে বাড়াবাড়ি করা অনুচিত। ধর্মীয় রীতিনীতি পালণে কোনো অংশ বাদ দেয়া যায় না।
প্রতিটি মেয়েই স্বামীর ঘরে ভুমিকা রাখে। পারিবারিক, সামাজিক, ক্ষেত্র বিশেষে অর্থনৈতিক দিকেও তার অবদান সংসারে কোনো অংশেই কম না। সবগুলো পার্টই আন্তরিক ভাবে নিষ্পত্তি করতে হয়। হাজব্যান্ড-ওয়াইফ যদি একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত আর যত্নবান হয় তাহলে সব ঠিকঠাক থাকে।
আহমেদ ফাহাদ রাকা
অনেক ভালো লিখেছেন,
আসলে ইসলাম ধর্মে খুব কমসংখ্যক বিয়ে শরিয়ত মোতাবেক হয়, কাবিন দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে ৫ টাকা হোক আর ৫ লাখ হোক ছেলের সাধ্যমত সেই টাকাটা সাথে সাথে পরিশোধ করা,সেই অর্থে আমার ও আমাদের কারো বিয়েই সঠিক নয়
মনির হোসেন মমি
সময়ের উপযোগী লেখা
কাবিন নয় নিজে স্বাবলম্ভী হও।
চমৎকার লেখা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
দুঃসাহসিক লেখা। মেয়েরাও যৌতুক নিচ্ছে!
এভাবে কখনো ভেবে দেখিনি!
আপনার সাথে একমত।
আরজু মুক্তা
সাবলম্বী হওয়া অবশ্যই দরকার। কাবিনও দরকার। কারণ ওটাও একটা এসেট হয় অনেকসময়।
মোঃ মজিবর রহমান
খমতা বা যোগ্যতা থাকলে নারি-পুরুস ডিফার নয়।