
আজ একটা চূড়ান্ত হিসেব না হওয়া পর্যন্ত এই ছেলেকে ছাড়বো না। এই করোনাকালেও আধা ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। সে সবসময় ওয়েট করায়। কতগুলো ছেলে হালুম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেউ বলছে, আহারে! কেউ আসবো নাকি সোনা? কেউ নেই নাকি? কি নিষ্ঠুরের প্রেমে পড়েছে।
অথচ রোদ্দুরকে ফোন দিলেই বলছে, “এই আসছি মেঘ, একটু দাঁড়াও।
সবসময়ই দেরিতে এসে নানা অজুহাতে কানে ধরে আর কমন ডায়ালগ “ভালো জিনিসের কদর বেশি। ভালো প্রেমিক পেতে হলে এরকম অপেক্ষা ব্যাপার না, সয়ে নিতে হবে।”
এই ভালোতে মনে পড়ে গেল, আমার জীবনের সব ভালো এমন কেন? তাদের পেছনে ছুটে ছুটে আমার বেহাল দশা।
মিঠু, আমার দর্জি। ভদ্র, অমায়িক, অসাধারন ছেলে। জামা- কাপড় সব আমাদের বাসায় এসেই নিয়ে যায় আবার দিয়েও যায়। একদম পারফেক্টলি সব বানায়।আমি মহা খুশি এতোদিন কত জামা- কাপড়ই না নষ্ট হলো, এখন রক্ষা। প্রথম প্রথম ঠিক চললেও হঠাৎ এক ঈদের আগে ফোন অফ। দোকানে গেলাম তাও নেই। মহা ঝামেলা ঈদ পুরাই নষ্ট।
ঈদের দিন দশেক বাদে হাসিমুখে এসে হাজির, “আপু সরি, ভীষন জ্বর ছিলো?”
ডাহা মিথ্যা কথা কারণ তার জ্বরের ছিঁটেফোঁটা লক্ষন শরীরে নেই। নির্ঘাত কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলো। গা জ্বলে গেলো কিন্তু তার বলার ভঙ্গি কাবু করে ফেললো। কিছু মানুষের সাথে কেন যেন রাগ করা যায় না? আবার সব ভুলে গিয়ে তাকেই কাপড় বানাতে দিলাম। এরপর কম হলেও দশবার সে এই কাজ করেছে। আর আমি তার ফিটিং আর কাটে পাগল হয়ে ছাড়তে পারিনা। সম্প্রতি সে আবারও সে ফোন ধরছে না এবং উধাও।
অফিসে যাবার আগে চরম তারাহুরো লেগে যায়। পরিচিত এক রিক্সা চাচার নাম্বার নিয়ে রেখেছি। তিনি ভীষন ভালো মানুষ। কিন্তু তাড়াহুরোর দিনই তার রিকসার পাম চলে যায়। প্রতিদিনই কথা দেন এরপর চেক করে আনবেন। আনেন কিনা জানিনা তবুও তার রিক্সাই আমার চাই।
শহিদুল ভাই, ফার্নিচার এক্সপার্ট। ভালো মানের কাঠ ও লেটেষ্ট ডিজাইনের সমস্ত সমাহার যেন তার কাছেই। চাকুরীর প্রথম বেতন দিয়ে তার কাছে দিলাম খাট বানাতে। ডেলিভারীর কদিন আগে সে উধাও। তার নাকি অনেক দেনা হয়েছে সেজন্য পালিয়েছে। সে বহু ইতিহাসের পর কিছু টাকা নতুন করে গচ্ছা দিয়ে অবশেষে খাটটি উদ্ধার হলো।
ছ’ মাস সে ইন্ডিয়া না কোথা থেকে এসে বাসায় হাজির। -“আপু পালানোর ছেলে আমি না, সমস্যা হতেই পারে।বাকি যা যা বানানোর কথা ছিলো তার অর্ডার দেন।”
মন চাইলো পুলিশে দেই। কিন্তু ডিজাইনে মন ভরে গেলো, ভুলে গেলাম সব।
এতসব ভেবে ফেললাম অথচ এখনও রোদ্দুর নেই। আজ ভীষন রেগে আছি। ব্রেকআপ তো হবেই সাথে হিসেব নিকেশ সব চুকে ফেলবো। তুমুল ঝগড়া করতে নির্বিঘ্ন , নিরিবিলি পরিবেশ লাগে। ভাগ্যভালো এ সময়টা ফাঁকা। তুমুল ঝগড়া চলছে দুজনের মাঝে। রোদ্দুর নাকি আমার উপর অনেক ইনভেস্ট করেছে। মেজাজ খারাপ হলো। কারণ ব্রেকআপের পর ছেলেরা এ দূর্নামটাই আগে রটায়। তাই এ ব্যাপারে আমি যথেষ্ঠ সচেতন ছিলাম। আমি এ যুগের ছেলে ভাঙ্গানো মেয়ে না। খাবারের বিল, রিক্সা ভাড়া, গিফট সব প্রায় সমান সমান দিয়েছি। রোদ্দুর কিছুতেই আটকাতে না পেরে হাঁসফাঁস করতে লাগলো।
হঠাৎ বলে বসলো, একটা জিনিসে আমি এগিয়ে আছি সেটা শোধ না হওয়া পর্যন্ত তুমি যেতে পারবা না।
ওকে, ডান! বলো? শোধ বোধ হয়েই ব্রেকআপ হবে। শুনে কান লাল হয়ে গেলো কিন্তু জবান যখন দিয়েছি তাই শোধ তো দিতেই হবে। ঋণ রেখে মরাও ঠিক না। খুউব রেগে আছি তবুও তার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেলাম। সন্ধ্যার পাখিরা সমস্বরে বলে উঠলো, “চুপ পৃথিবী, শ্রেষ্ঠ প্রেমিক যুগল এখন ভালোবাসা-বাসীতে ব্যস্ত!”
তার ঠোঁটে কতক্ষন আছি, ছিলাম এসবের হিসেব হারিয়ে গেলো। আর রেগে যে ছিলাম সে দুনিয়া ছেড়েছে। আর আমার শুধুই মনে হলো এই মানুষটাকে ছাড়া কোনভাবেই চলবে না? দুহাতে রোদ্দুরকে শক্ত করে জডিয়ে আছি, সেও আমাকে। কিছুতেই যেন ছাড়তে ইচ্ছে করছে না? এরপরের ডেটেও আমাকে আবার দাঁড় করিয়ে রাখবে এটা জানার পরও মনে হলো জ্বালাক না একটু, আমারি তো মানুষটা।
তবুও রাগের ভান করে ছুঁড়ে দিলাম। ও মা গো মা বলে কি জানেন? এখনও একটা বিষয় শোধবোধ বাকি।
আবার কি?
“ তুমি যতগুলো দিন আমার জন্য অপেক্ষা করেছ আমিও ঠিক ততোদিনই অপেক্ষা করবো তারপর ব্রেকআপ হবে।”
নেক্সট টাইম ঠিক হলো সে সারে চারটায় আসবে। আমি পাচটায় গিয়ে তাকে কোথাও পেলাম না। মিনিট পাঁচেক পরে এলো সেই হাসিতে, কপালের চুল সরিয়ে এক্কিউজ রিক্সা পাওয়া যায়নি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আর ডেট নয় বাসায় কথা বলো বিয়ে করবো। বয়স তো কম হলো না।
অনারম্বর বিয়ের পর বাসর ঘরে সে আমায় আসছি বলে গেল। রাত তিনটে বাজে, আমি অপেক্ষায় না থেকে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকাল দশটায় সে এলো একগোছা ফুলহাতে।
-মেঘ, চুরি করে আনলাম তোমার জন্য।
কপালের চুল সরিয়ে নির্বিকার উত্তর, টুটুলদের ছাদবাগানে রাতে অনেক জোনাকি আসে। তোমার পছন্দ তাই আনতে গিয়ে ধরতে ধরতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। সুন্দর না জেনাকিগুলো? তুমি কি অনেক রাগ করেছ মেঘ?
আমি তখন রেগে না গিয়ে দেখছি, তার চুল কেন এতসুন্দর করে বাতাসে ওডে? চিকন ঠোঁটের কোনায় দুষ্টুমি ভরা হাসিতে এতসুন্দর করে কথা কেমনে বলে? ফুলগুলো চুরি করে আনতে তার কতটা কষ্ট হয়েছে?জোনাক ধরতে সে কতটা কষ্ট পেয়েছে? অনুভব করছি, আমাকে খুশি করতে এ মানুষটার করা বারবার ভুল গুলোকে।
একঝাঁক পাখি কলকলিয়ে উড়ে গেল! কি সুন্দর স্বচ্ছ নীল আকাশ আর আমার ঘরে সোনালী রোদ্দুর। সে বকবক করেই যাচ্ছে, ভাবছে আমি অনেক রেগে আছি। আমি একটুও রাগিনি, ফুল ও জোনাক আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে। রাতে তার সাথে জোনাকগুলোকে ছেড়ে দিয়ে আলো জ্বলা দেখবো।
“অপেক্ষা মধুরতর হয়, যখন প্রিয় কারও জন্য করা হয়। আমি এই মানুষটার জন্য এমন মধুর অপেক্ষা সারাজীবন করতে চাই!”
জীবন এতো সুন্দর কেন? এই পাগল মানুষটার জন্যই কি????
ছবি- নেটের
২৩টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ রোমান্টিক গল্প অনেক শুভেচ্ছা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ লিটন ভাই। শুভ কামনা রইলো
বন্যা লিপি
ডুবে গেলাম তো দেখি! আমি আবার ভীষণ রোমান্টিক কিনা!! লিখতে পারিনা যদিও রুমান্টিক লিখা! গান,নাটক,নভেল ভীষণ টানে আমাকে। আপনাদের লেখা পড়ে যদি কিছুটা শিখে- টিখে লিখতে পারার সাহস/টাহস পাই আর কী! ফুল/ জোনাকি আনার জন্য বাসর বরবাদ করা পাগলা প্রেমিক/স্বামী এই প্রথম পেলাম কোনো গল্পে😃😃😃ব্রাভো👏👏👏
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা বন্যা আপুর এমন অসাধারন মন্তব্যে লেখা আমার সার্থক। অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা আপু।
আপনিও পারবেন। অপেক্ষায় রইলাম।
আরজু মুক্তা
রোমান্টিক গল্প পড়ে। মুডে আছি। এই রকম প্রেম থাকলে আর কিছু চাই? তো মেঘ একটু চা কফি নিয়প আসুক। আমরা আসছি।
গল্প ভালো হয়েছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এই প্রেমের সময় কাউকে ডিসটেরাব( ডিসটার্ব) করা কি ঠিক?
শুভ কামনা রইলো সকল রোমান্টিক মুডের মানুষদের জন্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আহারে কি প্রেম! এমন প্রেম পেলে লেখিকাকে কি আর ছাড়া যায়?? চালিয়ে যান এমন প্রেমময় গল্প, কবিতা। এমন রোমান্টিক মুডে অনেক দিন পরিনি 🥰🥰🥰। অফুরন্ত শুভকামনা রইলো। শুভ সকাল
রোকসানা খন্দকার রুকু
দিদি ভাই সাথে থাকুন অবশ্যই চেষ্টা করবো
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
রোমান্টিকতার গল্প পড়ে মনটাও এত রোমান্টিক হয়ে গেল যাই একটু রিকশায় ঘুরে আসি ♥️ইশ! জেনাকীর বাক্সবন্দী ব্যাপারটা অসাধারণ ছিল। শুভকামনা আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এই রোদে ঘুরতে যাওয়া তারমানে ব্যাপার খুবই খারাপ।
শুভ কামনা রইলো।
মোঃ মজিবর রহমান
কোন মাধুরিতে মনের গহীন হতে মৃদু উষ্ণতা
ঠোট লালায়িত ঠোটের, ঠোটের লাগিয়া
চিরকাল এমনি রোদ্দুর ছায়া ভরায়ে থাকুক লাগিয়া
যতই জ্বলি ততই আপনে ভুলি তাঁর লাগিয়া!
এটাই হইতো প্রেম এটাই হইতো আকৃষ্ট হবার ………….
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাহ্ অসাধারন ছন্দময় মন্তব্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর প্রেমের গল্প,
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম কোনো বিরতি ছাড়াই।
জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই কিছু নির্ভরতা থাকেই,
সব কিছু ঠিক ঠাক মত না হলেও আমাদের যেতে হয় তাদের কাছেই।
শুভ কামনা প্রিয় লেখক।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নির্ভরতা তো অবশ্যই থাকে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
হালিমা আক্তার
এমন প্রেমের আলিঙ্গন ছাড়তে নাহি চাই। খুব ভালো লাগলো, শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুভ কামনা আপনার জন্যও। ভালো থাকবেন।
স্বপ্নীল মেঘ
প্রভাতের শুভ্র আলোয় চোখ খুলেই আপনার এ গল্প পড়ে আমি ভীষণ রোমান্টিক হয়ে গেছি বুবু।
কি সুন্দর লেখা, যেনো শেষ করতে ইচ্ছে করছেনা। একটা লাইনের পর আরেকটা লাইন বেশ আকর্ষণীয়।
সহজ সাবলীল শব্দে প্রেম কে ফুটিয়ে তুলেছেন মায়া দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে।
আজকাল এ প্রেমগুলো যদিও বিলীন, কিন্তু এরকম লেখাগুলো অন্তত একবার মনে করে দেয় এ প্রেম গুলো ছিলো আছে থাকবে।
আরো লিখুন বুবু। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এমন পাঠক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আপনাদের ভালোলাগাই আমার স্বার্থকতা। শুভ কামনা রইলো।
স্বপ্নীল মেঘ
প্রচুর ব্যস্ততায় একটু অবসর খুঁজি। আর এ অবসর টুকু হয় আমার সোনেলার পারে। সোনেলা যেনো আপনার লেখায় ভরে উঠে। আমি পড়তে আসবো।
ফয়জুল মহী
স্বচ্ছ নির্মল ভালোবাসা থাকলে জীবন সত্যিই সুন্দর হয়। উপভোগ্য হয় চারপাশ। চমৎকার লেখা
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ মহী ভাই। সবসময় পাশে থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
অপেক্ষা মধুর হয় যদি অপেক্ষাটা হয় প্রিয়জনের জন্য। যদি অপেক্ষায় প্রয়োজন বেশি প্রাধান্য পায় তাহলে ক্রোধ জমে যায়। চাইলেই প্লান মতো সব চুকেবুকে ব্রেকাপ নেওয়া হয় না, অনেক অনেক কিছু বাকি থাকে। আর আচমকা হার্ড ব্রেকে ক্ষতির পরিমাণ কিন্তু বেশিই হয়।
রোমান্টিক গল্প এমন হলেই পড়তে ভালো লাগে।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক ব্যস্ততার মাঝেও কমেন্ট করবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। পাশে থাকবেন। শুভ কামনা।