-চল না কোথাও ঘুড়তে যাই।
-পাগল!, আমার ক্লাশ আছে না।
-ক্লাশ বুঝি তোমার একলাই আছে ,আমাদের নেই!
-না ভাই ,তোমরাই যাও স্যার বকবেন।
ঘুড়তে না যাওয়া ছেলেটি ক্লাশের ফাষ্ট বয় আর মুহিন দ্বিতীয়।মুহিন এমনি প্রায় সময় এখানে সেখানে ঘুড়তে যায় ।আজ সে সকালে ক্লাশে এসেই পাচ ছয় বন্ধুদের জড়ো করে ঘুড়তে যাওয়ার প্লানে এক মত হয়ে ক্লাশের ফাষ্ট বয়কে বলে সে ইগনোর করাতে তাকে ফেলেই বই গুলোকে ক্লাশের টেবিলে রেখেই দে দৌড়…অজানেকে জানতে।
আজ কাল শিক্ষালয়ে অজানাকে জানতে বন ভোজনঁ তেমন একটা যাওয়া হয় না বললেই চলে।এই ইট পাথড়ের পীচ ঢালা পথে বেড়ে উঠার শিশুদের অদম্য হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেকে কে রুখবে ওদের চাহিদাগুলো মিটাবার তেমন কোন উদ্দ্যেগ এ শহরে নেই যা আছে তা যৎ সামান্য।
এক সময় ওরা পাচ জন উপস্থিত বাস স্ট্যাসনে।
-কি রে চলেতো এলাম কিন্তু যাবো কোথায় তা তো ঠিক হয়নি?
-এ্যা সেরেছে… এটাতো ভাবিনি!
-ঠিক আছে টিভিতে যে মুক্তি যুদ্ধে শহীদের স্মৃতিসৌধ দেখায়… সেখানে যাওয়া যেতে পারে।
তাদের মধ্য অন্য একজন তার মনে ভয় ভয় কাজ করছে সে বলল।
-সে তো বহু দূর ফিরতে রাত হবে,মা বকবেন।
-ধুর বোকা এখন কেবল সকাল …এসে পড়ব বৈকালেই।
এরই মধ্যে সরকারী গমের বস্তা ভর্তি একটি ট্রাক হতে পরচিত একজন ডাকছেন মুহিনকে।
-মহিন ….ও মহিন।
-জি চাচ্চু
-কই যাইবা তোমরা?
-স্মৃতি সৌধ দেখতে
-আমিতো ঐ দিক দিয়েই যাবো …উঠো ,তোমাদের ঐখানে নামিয়ে দেবো নে। উপরে গমের বস্তা আছে সেখানে শুয়ে শুয়ে আরাম করে যেতে পারবে ।
সবাই দ্রুত যে যেভাবে পারছে উঠলো, ভয় যতো ঐ ভিতু মুটকো রোহানকে নিয়ে ,সে শত চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না।এ দিকে ট্র্যাটটি জ্যাম সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।গাড়ীগুলোর প্রচন্ড হর্ণের শব্দে তাদের শ্রবন শক্তিতে আঘাত করছে ।আমার মনে হয় এই একটি দেশ যেখানে যান বাহনে বিরামহীন হর্ণ দেয়ার বৈধতা আছে।ট্রাকটি ছেড়ে দিল এরই মধ্যে মুটকোকে মুহিন সহ অন্য এক জন তার দুহাত ধরে জোড়ে টান দিয়ে উপরে তোলতেই মুহিন ক্লান্ত হয়ে গমের নরম বস্তায় শুয়ে পড়ে চলন্ত আকাশ দেখছে।আকাশের মেঘ গুলো যেনো তার চোখের সামনে দিয়ে উড়ে উড়ে যাচ্ছে।সে বসে পড়তেই শা্টের প্রথম বাটন বাতাসের তীব্রতায় খুলে যায়। তার চোল গুলো পিছু ফিরে তাকায়।
জ্যামে আটকা পড়ল এক ঘন্টা।সথে যা খাবার ছিল এরই মধ্যে শেষ।কিন্তূ পেটের ক্ষিধেতো মিটেনি বুঝতে পেরে ড্রাভার তার হেলপার দিয়ে কিছু বিরানির প্যকেট দিলো তাদের।
-তোমরা খেয়ে নাও বারোটা বাজে।
এর মধ্যে জ্যাম ছুটে গেল,গাড়ী চলল শোশো করে।উপর থেকেই দেখছে ওরা বাংলার মায়াবী উদাসী রূপ। গৃহিণীর চঞ্চলতা ঘর কর্মের।একটি ছোট্র দীঘি বি্শ্রী ময়লা পানিতে গোছল থালা বাসন ইত্যাদি ধৌত করছেন।এ পুকুরগুলোর এক সময় যৌবন ছিল, ছিলো রূপের ঝিলিক আধুনিকতার করল গ্রাসে তা আজ বিলুপ্ত প্রায়।
-কিরে কি দেখছিস?
-ভাবছি আমরা ওদের চেয়ে কতা সূখে আছি।ঐ যে….ঐ যে দেখ বিশাল দৈত্বের ন্যায় হাতির থোরের মতো ইট ভাটার চুঙ্গিটার উপর দিয়ে ধোয়াগুলো কেমন কুচ্ছিততায় পরিবেশ দষিত করে চলছে তেমনি নীচেও ঐ ইট ভাঙ্গার শ্রমিক কিশোরদের দিকে তাকালে খুব মায়া হয়,যতইআমরা শিশুশ্রম বন্ধ করি না কেনো তা তো রয়েই গেল।।
ভাবনা গুলো হারিয়ে যায় হয়তো স্মৃতি কভু হারায় না।সে স্মৃতি ময় স্মৃতি সৌধি যখন ট্রাক থেকেই তাদের চোখে পড়ল তখন অবাক বি্স্ময়ে তাকিয়ে রয় যা ধীরে ধীরে কাছে এসে পড়ে, তখনই ডাক এলো ড্রাইভারের।
-নামো তোমরা নামো…. তোমাদের স্মৃতিসৌধ আইসা গেছে।
সবাই নামার পরও ঐ মুটকোটা নামছে না, নামতে গিয়েও আবার উঠে পড়ে।ড্রাইভর তা লক্ষ্য করে ট্রাকটিকে ফুল স্টপ করে উপরে উঠে তাকে নামিয়ে মুহিনকে জিজ্ঞাসা করেন।
-তোমরা বাড়ীতে যেতে পারবেতো?
-জি চাচ্চু।
-ঠিক আছে, এই নাও দুশো টাকা তোমরা কিছু খেয়ে নিয়েও।
-ঠিক আছে।
ভিতরে প্রবেশ করে দেখে ওরা ওদের মতো আরো অনেকেই এখানে ঘুড়তে এসেছেন।কেউ মাথায় লাল সবুজের পতাকায় দেহ মনে দেশপ্রেম জেগেছে অথবা একজন পিতা তার আদুরনীর গোলাপী মায়াবী তার গালে লাল সুবুজের ঐ ৩০ লক্ষ শহীদের আত্ব ত্যাগে পাওয়া একটি পতাকা একটি বিশ্ব মানচিত্রে দখল করে নেয়া একটি স্বার্বোভৌমত্তের স্বদেশ একেঁ দিয়েছেন যা অসাম্প্রদায়িক এই বাংলাদেশ।
আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ অবস্থিত সাভারের নবীনগরে।এর অন্য নাম “সম্মিলিত প্রয়াস”।এতে ফলক রয়েছে মোট ৭টি এবং উচ্চতা ১৫০ ফুট বা ৪৬.৫ মিটার।এ ফলক গুলো দ্বারা ১৯৫২ হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলনের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়কে বোঝানো হয় ।
১. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।
২. ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন।
৩. ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন।
৪. ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন।
৫. ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন।
৬. ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং
৭. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তি যুদ্ধ।।
এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। উদ্বোধন করেন ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮২। মূল স্মৃতি সৌধের বাম পাশে রয়েছে সৌধ চত্বর। যেখানে রয়েছে মুক্তি যুদ্ধের নাম না জানা দশ জন শহীদের সমাধি। আর ডান পাশে রয়েছে একটি পুস্প বেদী। যেখানে এক সময় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হতো।
স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক দিয়ে যখন ওরা প্রবেশ করে তখন তারা প্রথমেই স্মৃতি সৌধটি চোখের সামনে দেখতে পায়। যদিও স্মৃতি সৌধ পর্যন্ত যেতে হলে তাদেরকে অনেক দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে।এই পথের মধ্যে দেখতে পেলো অনেক গুলো উঁচু নিচু চত্বর । কয়েক ধাপ সিঁড়ি দিয়ে বেশ কয়েক বার ওঠা নামা করে এই চত্বরগুলো পাড় হলো তারা।তারপর পাড় হতে হয় বড় একটি কৃত্রিম জলাশয় যা সেতু বেয়ে পাড় হতে হলো তাদের।চোখে পড়ল এর দু’পাশে কয়েকটি গন কবর।প্রতিটি চত্বর ও সিঁড়িগুলো ছিলো লাল ইটের তৈরি ।স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য জাতিকে যে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে,চড়াই উতরাই পার হতে হয়েছে তার প্রতীক এই দীর্ঘ হাঁটা পথটি।স্বাধীন স্বদেশ পাওয়ার জন্য যে রক্ত দিতে হয়েছে তার প্রতীক লাল ইট আর জলাশয় হলো অশ্রুর প্রতীক এবং গণকবর স্মরণ করিয়ে দেয় শহীদদের আত্মদানের ইতিহাস ।
পুরো এলাকাটি ৩৪ হেক্টর এলাকা নিয়ে নির্মিত হয়েছে। এর চারপাশে আরো ১০ হেক্টর জায়গা জুড়ে রয়েছে সবুজ ঘাসের বেষ্টনী।এই সবুজ বেষ্টনী সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের প্রতীক ।
এসব ছাড়াও স্মৃতি সৌধে রয়েছে হেলিপ্যাড, মসজিদ, অভ্যর্থনা কক্ষ,এ সব তথ্যগুলো ওরা ঘুড়তে ঘুড়তেই পেল। ক্যাফেটেরিয়া ঢুকে ওরা কিছু খাবার ও ড্রিংস পান করে ক্লান্ত হয়ে কেউ কেউ ঝিমুনি দিয়ে যেন টেবিলেই নেতিয়ে পড়ছে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুই ছুই সবাই যেন অস্তির বাড়ী ফিরে যাবার।একত্রে সিদ্ধান্ত হলো বাড়ীতে ফেরার কিন্তু মুহিনের পকেটে হাত দিয়ে দেখল মাত্র বিশ টাকা আছে কিন্তু বাড়ী ফিরতে এক এক জনের যাতায়াত খরচ লাগবে মিনিমাম পঞ্চাশ টাকা করে।এখন উপায় বাকী টাকা কোথায় পাবে তারা।চিন্তায় পড়ে গেল সবাই এর মধ্যে মুটকো কথা বলে।
-শুন আমার কাছে এক বুদ্ধি আছে।
সবাই অবাক হলো এই মুটকো দেবে বুদ্ধি!যাকে নিয়ে সবাই ঝামেলায় ছিলাম।তবুও ওরা তাকে বলতে বলল।
-ভাড়া দিবো আমি।
-কি ভাবে? তোর কাছে কি টাকা আছে?
-না,
-তবে?
-আমরা দুজন বাসের ভিতরে উঠব আর বাকীরা বাসের ছাদে উঠবি , কি ঠিক আছে?
-তারপর ?
-উপরে কারো কাছে টাকা চাইলে বলবি ভিতরে আমি দেবো তারপর কন্টেকদার আমার কাছে এলে তা পরে দেখবি আমি কি করছি।
মুটকোর কথা মতো ওরা বাসের অপেক্ষায় বাস স্ট্যেসনে।প্রতিটি বাসই আসছে লোকে ভরা, গেইটেও পা ফেলানোর মতো একটু জায়গা নেই।এরই মধ্যে ওরা দুতিনটি বাসে উঠার চেষ্টা করেও ভিড়ের কারনে ব্যার্থ হয়।
-যত সব মুহিনের দোষ… সব টাকা যদি ওর কাছে না দিতাম তবে টাকা কারো না কারো পকেটে থাকত।
বিরক্তির ভাব নিয়ে মুটকো কথাগুলো বলল তখন মুহিনের একটু রাগ হল।
-তুইইতো এটা খাইলি ঐটা খাইলি আমরা আর কি খেয়েছি!
-হ সব দোষতো এখন আমার।
হঠাৎ গাড়ীর হর্ণের ভয় পেয়ে উঠে মুটকো।গাড়ীটি থামার সাথে সাথে মুটকো ইশারা করল প্লান মতো গাড়ীতে উঠতে।তিন জন বাসের উপরে উঠল মুহিন আর মুটকো উঠল বাসের ভিতরে।
ড্রাইভারের পাশে একটি সিট খালি দেখল সে সেখানে গিয়ে বসল।মুহিন তার দু সিট দূরে অপজিটে।বাসটি চলতে শুরু করল।মুহিন বাসে বাদুর দোলাদের হাটু দ্বয়ের চিপা দিয়ে লক্ষ্য করল মুটকো ড্রাইভারের কি যেন বলাবলি করছে।বাসে এক মুরুব্বি মটকোকে উপদেশ দিল।
-এই ছেলে,,,ড্রাইভারের সাথে এতো কথা বলো না,এ্যাকসিডেন্টের সম্ভবনা থাকে।
-জি আচ্ছা দাদু।
বাসটি যখন এক স্টপিজে থামল কিছু যাত্রী উঠা নামা করল এই উঠা নামার মাঝে এক গর্ভবতী মহিলা যাত্রীকে উঠতে দেখে সে তার সিটটি ছেড়ে দিল।অবাক হলো সেই মুরুব্বি।
এইতো গুড আদর্শবান কিশোর।তাকে ডেকে তার সিটে চেপে সেয়ার করে বসতে বলল।পাছা মোটা মোটকু বসতে গিয়েও বসতে পারল না অবশেষে বাদুর ঝুলা হলো।ঘামে শা্র্ট ল্যাপটে আছে দেহের ভাজে ভাজে।এমন সময় কন্টেকদার এসে মুহিনের নিকট বাস ভাড়া চাইল সে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করল মুটকোর দিকে।মুটকোর কাছে ভাড়া চাইতেই মুরুব্বি মুটকোকে লক্ষ্য করল সে ডান বাম বুক পকেটে হাত ঢুকাচ্ছে আর বের করছে তা দেখে মুটকোর পকেট টু পকেটে হাত দেয়া হাত চেপে ধরেন। ওদের সবার বাস ভাড়াটা মিটিয়ে দিলো সে।লোকটিকে দেখতে কিংবা পোষাকে তেমন কোন অবস্থাশীল বলে মনে হয় না তাছাড়া মুটকোর হঠাৎ খেয়াল হলো মুরুব্বির উপড়ি ভাগে পিঠে পরিহিত পাঞ্জাবীতে কয়েকটি তালি দেয়া।মুটকো অবাক হয়ে মুরুব্বিকে কিছু প্রশ্ন করে।
-আচ্ছা দাদু তুমি কোথায় যাবে?
-অজানাতে মানে,কোন নিদিষ্ট স্থান নেই।এই বাস গুলোই আমার ঠিকানা।
-মানে!তুমি কি করো?
-ভিক্ষে,এখন যে টাকা তোমাদের ভাড়া দিলাম তা আমার বৈকালের কামাই।
বাসটি আবারো স্টপিজ করল মুরুববি লোকটি লাঠিতে ভর দিয়ে নিঃশব্দে নেমে পড়ল।মুটকো অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ভাবছে পৃথিবীটা এ সব মহৎ মানুষগুলোর জন্যই এতো সুন্দর।
এক সময় বাসটি গুলিস্থান এসে পৌছল।তারপর গুলিস্থান থেকে একটি আদমজী বাসে উঠে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে এসে পরিচিত একজন দোকানদার থেকে ভাড়ার টাকা নিয়ে বাস কন্টেকদারকে দিয়ে স্ব স্ব বাসায় ফিরল।মুহিনের বাসায় ফিরে ধরা পড়ে মায়ের হাতে।মা তার হাতটি চেপে ধরে তাকে ধমকের সূরে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন।মুহিন কাদো কাদো নয়নে বার বার বলে যাচ্ছে।
-না মা এমনটি আর করব না।
মা তবুও থামছেন না সে তার স্কুলে ফেলে আসা বইগুলোকে দেখিয়ে বকা ঝকা করছেন।এরই মধ্যে মুহিনের আব্বু বাসায় ঢুকে ছেলেকে মায়ের কড়া শাসন থেকে রক্ষা করলেন।মা যেনো এবার তার পিতার প্রতি ক্ষেপে গেলেন।
-তুমিই সব নষ্টের গোড়া….ছেলেকে আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছো।
পিতা তার সন্তানের চোখের জল মুছে নরম সূরে শাসন করেন।
কোথায় গিয়েছিলে পূত্রধণ
ঐতো স্মৃতিসোধ দেখতে
সাবাস বাপ কা বেটা এইরে কথাটা একটু জোড়ে হয়ে গেল তোমার আম্মু মনে হয় শুনে ফেলেছে।
শুনবো না আবার এইটু ঘরে চলা যায় কতোবার বলছি বাসা পাল্লাও বাসা পাল্লাও… পাল্টাও আর বলতে পারলো না সে পিতার নয়নে সূখের জল এইতো আমার স্বর্গ।পিতাকে চুপ করে এক মায়ের কথার চলার ভঙ্গি দেখছেন মা তার একের এক অভিযোগের বাণী আওড়াতেই থাকেন।পুত্রের মতো মায়েরো খেয়াল হলো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তার দিকে ভালবাসা বিশেষ ভালো লাগার ভিন্ন এক মায়ার সংসার।মা তার পিতার মুখ বরাবর সন্মুখে মুখ রেখে
কি হলো কি দেখছো এই;;;;;;;;
হে হে তোমাকে নয় অন্য কিছু দেখছি স্বর্গ যেনো আমার ছোট্র ঘরে সর্বত্রই বসবাস।
আজ ভদ্র ছেলের মতো মুহিন সহ ওরা পাচজন ক্লাশের সামনের বেঞ্চে বসল।ম্যাডাম ক্লাশে ঢুকেই গতকালের স্কুল ফাকির শাস্তি স্বরূপ ক্লাশের এক পাশে কান ধরিয়ে এক পায়ে দাড়িয়ে থাকতে অর্ডার করলেন।ওরা ম্যাডামের আদেশ মেনে শাস্তিরত অবস্থায় ক্লাশের এক পাশে।ক্লাশের অন্য ছেলেরা ওদের দিকে তাকিয়ে মিট মিট হাসছে।
ম্যাডাম ক্লাশ শুরু করলেন।
-আজ পহেলা ডিসেন্বর, স্বাধীনতা বিজয়ের মাস তাই আজ আমরা ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ স্বরণে জাতীয় স্মৃতি সৌধে কথা বলব।গত ক্লাশে যে সব প্রশ্ন করেছিলাম তার উত্তর আজ দিবে তোমরা।
ম্যাডাম ক্লাশ ফাষ্ট বয়কে জিঞ্জাসা করলেন বোর্ডে চক দিয়ে স্মৃতিসৌধটি একেঁ।
-আচ্ছা বলতো ঐ যে স্মৃতি সৌধে লাল ইট কিসের প্রতীক?
ফাষ্ট বয় রাতে মুখস্ত করা কোন পড়াই তার মনে আসছে না।অবশেষে সে বলতে পারলনা সে।শাস্তিতে দন্ডায়মাণ পাচ জন ছাড়া বাকী সবার মধ্যে কেহই এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না।আবারা ম্যাডাম আরেকটি প্রশ্ন করলেন।
-আচ্ছা বলতো এর যে সাতটি খাম্বা আছে এর এক একটি স্তম্ভ মানে খাম্বার অর্থ কি ।এবারো কেউ পারল না।ম্যাডামের অনেক রাগ এলো।তখন শাস্তি রত মুহিন খিল খিল হাসছে।
-এই মুহিন হাসছো কেনো?
-ওরা পারবেনা ম্যাডাম।
-ওরে দুষ্টু ছেলের দল, ক্লাশ ফাকি দিয়ে কোথায় দল বেধে গিয়ে ছিলে সেটা বলতে হবে না,আমি বুঝে নিবো যদি তুমি ঐ সব প্রশ্নের উত্তর গুলো দিতে পারো আর তোমাদের শাস্তিও মওকুফ হবে।ঠিক আছে?
-মুহিন জোড়ে স্যালুটের ভঙ্গিমায় ইয়েস মেডাম বলল।তার চোখের ভেসে উঠে গতকাল ক্লাশ ফাকি দেখে আসা স্মৃতিসৌধ।আচমকা দৌড়ে উঠল মঞ্চে ব্লাক বোর্ডের সামনে।হাতের কাছেই ছিলো সাদা চক আর ডাষ্টার।কয়েকটি ভুল বানাণ আর অগোছালো হাতে লেখা ছাড়া উত্তর বুঝতে বাকী রইলো না ম্যাডামের।তাইতো সে তবে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল মুহিনের দূরন্তপণার লেখার ইতিহাসের দিকে।
প্রথম প্রকাশ: www.ajagami.com
৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
অসাধারণ লিখেছেন ভাই, আসলে আমাদের সবার উচিত আমাদের বাচ্চাদের এইসব ঐতিহাসিক জায়গা গুলোতে নিয়ে যাওয়া যাতে তারা জানতে পারে, বুঝতে পারে, শিখতে পারে।
নীলাঞ্জনা নীলা
এসব ঐতিহাসিক জায়গাগুলোতে স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কি শিক্ষকেরা যায় আগের মতো? আমি জানিনা।
যখন ক্লাশ এইটে পড়ি তখন গিয়েছিলাম স্মৃতিসৌধে, সারাটি দিন অজানা কতো কিছুর সাথে যে পরিচিত হয়েছিলাম, আজও সেসব মনে আছে। একটাই কারণ বই পড়ে জানা যায়, কিন্তু মনে রাখা যায় খুবই কম।
যতোগুলো পোষ্ট দিয়েছেন, তার মধ্যে এটি খুব বেশী ভালো লেগেছে মনির ভাই।
মিষ্টি জিন
গল্পের মাধ্যমে খুব ভাল একটা বিষয় তুলে ধরেছেন।
সেই ২০০০ সালে আমি মেয়েদের নিয়ে গিয়েছিলাম জাতীয় স্মৃতি সৌধে।
ব্লগার সজীব
অনেক কিছু জানলাম ভাইয়া। মুহিনের মত দুরন্ত ছেলেরাই যারা ৭১ এ বড় ছিল তারা যুদ্ধে চলে গিয়েছিল দেশের টানে।
অরুনি মায়া অনু
খুব সুন্দর একটি পোস্ট পড়লাম। আসলে আজকাল বাচ্চারা পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোন কাজে অংশ নেয়না। স্কুল, একাধিক কোচিং প্রভৃতিতে তাদের তো খেলাধুলার টাইম টাই নাই, জ্ঞান অর্জন তো দূরের কথা। অথচ প্রয়োজনের সময় এই শিক্ষা কাজে লাগেনা বললেই চলে। আপনার পোস্টটি শিক্ষণীয়। ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য।
ছাইরাছ হেলাল
অনেক সুন্দর করে লিখেছেন,
আজকাল এ সব উঠেই গেছে, এখন এগুলো সময় নষ্ট মাত্র,
আমাদের ঐতিহ্য অবহেলিত হচ্ছে এমন করেই।
নীরা সাদীয়া
বেশ ভাল লাগল মুহিনের পথচলা।