
বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলি খান এর কন্যা ছিলেন আজিমুন্নেছা বেগম। জনশ্রুতি রয়েছ, কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় নবাবি হেকিম দৈনিক একটি মানবশিশুর কলিজা দিয়ে ওষুধ তৈরি করে দিতেন। অসুখ সেরে গেলেও তিনি মানবশিশুর কলিজায় নেশাগ্রস্ত হয়ে গোপনে নিয়মিত ভাবে শিশুদের কলিজা খেতে থাকেন। এই ঘটনা মুর্শিদকুলি খাঁ জানতে পেরে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন। মুর্শিদাবাদ ঘুরতে গিয়ে টাঙ্গার (এক ঘোড়া চালিত গাড়ি) চালকের কাছে এমন মিথ শুনে সত্যিই চমৎকৃত হয়েছিলাম। একতলা পাকা মঞ্চের উপর মসজিদে উঠার সিড়ির নিচে আজিমুন্নেসার সমাধি। মঞ্চের উপরিভাগে বাম পাশে একটা দেয়াল ছাড়া মসজিদের আর কোন চিহ্ন বর্তমানে নাই। কথিত আছে সাধারণ মানুষের পদধূলিতে তার শিশু হত্যার পাপ মোচনের জন্য মসজিদে উঠার সিড়ির নিচে তাকে জীবন্ত সমাহিত করা হয়।
(২) মুর্শিদাবাদের সরু রাজপথ ধরে টাঙ্গায় চড়ে মহিমাপুর এলাকায় এলে দেখা মিলবে আজিমুন্নেসা বেগমের সমাধি।
(৩) রাজপথ ঘেষা দুইফুট উঁচু দেয়ালে লোহার গ্রীল তারপর তিন শতাধিক বছরের পুরোনো গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে হয় আজিমুন্নেসা বেগমের সমাধিতে।
(৪) লোহার গ্রীলের ভেতরে প্রবেশ করার পরই ডানে এমন বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড রয়েছে।
(৫) অতঃপর ভেতরে এমন সুসজ্জিত বাগান পেরিয়ে সামনে কয়েকটি সিড়ি ধরে উঠে যেতে হয় একতলা পাকা মঞ্চের উপর, যেখানে কোন এক কালে মসজিদ ছিল এবং এখন অস্তিত্বহীন।
(৬) এই সিড়ির শেষ ল্যান্ডিং এর নিচেই রয়েছে সেই সমাধি।
(৭/৮) সিড়ির নিচে হলেও বেশ প্রসস্ত কক্ষ রয়েছে এখানে, সমাধীর দুই দিক থেকে তোলা দুটি ছবি।
(৯) পাকা মঞ্চের উপরে উঠার পর দেখা যায় ঘুরে দেখার জন্য ওখানে রয়েছে সুন্দর রাস্তা এবং চারিদিকে পাতা বাহার ও নানা ফুল গাছের সুসজ্জিত অবস্থান, আর সামনের ডান কোনে একটা প্রাচিন স্থাপত্য, যা হয়তো মসজিদটার শেষ চিহ্ন হিসাবে এখনো দন্ডায়মান।
(১০/১১) দুই দিক থেকে তোলা মসজিদের শেষ ভগ্নাংশের দুটি ছবি।
(১২/১৩) রয়েছে এমন নাম জানা অজানা নানা রকম ফুল, কোনটা থেকে আবার বেশ সুগন্ধি ছড়াচ্ছিল।
(১৪) চেনা ফুল কলাবতী।
(১৫) বেড়িয়ে আসার আগে পাকা মঞ্চের উপর থেকে মেইন গেইটের দিকের তোলা ছবি এটি।
২২টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে
সুন্দর ছবিতে তুলে আনার জন্য
আপনাকে ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ সুপায়ন দাদা, এমন সব স্থানে ওয়ার নেশাটা আমার প্রবল, কিন্তু সময় সুযোগ সীমিত হওয়ায় আফসোসটা সব সময় থেকেই যায়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বিভৎস বর্ণনা দিলেন। গা ছমছম করা ঘটনা। ছবিগুলো যথারীতি সুন্দর হয়েছে। ভালো থাকবেন শুভকামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
কানে কানে বলি আপু, বিষয়টা আমার বিশ্বাস হয় না।
তৌহিদ
অনেক চমতপ্রদ তথ্য জানলাম আজ। লেখাটির সাথে ছবির বর্ণনা লেখাটিকে এক অনন্যমাত্রা দিয়েছে।
ছবিগুলি কিন্তু অসাধারণ তুলেছেন। ভালো থাকবেন ভাই।
কামাল উদ্দিন
হুমম, চমকপ্রদ তথ্য। বিষয়টা কিন্তু বাস্তব মনেই হয় না, এমন কিরোগ আছে যাতে মানুষের কলিজা লাগতে পারে!!
সুরাইয়া পারভীন
এ কেমন রোগ
এ কেমন হাকিম
এ কেমন রোগী
কি বিভৎস মিথ!
যা হোক ছবি গুলো দারুণ
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, আপনার সাথে সুর মিলিয়ে আমারো এমন সব প্রশ্ন আছে মনের ভেতর।
ফয়জুল মহী
সুন্দর প্রকাশ। ভালো থাকুন সবসময় l
কামাল উদ্দিন
আপনিও ভালো থাকুন সব সময়।
সাদিয়া শারমীন
তথ্য সমৃদ্ধ লেখা পড়লাম।আপনাকে ধন্যবাদ। অজানা তথ্য জানতে পারলাম।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকবেন সব সময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
কিছুদিন আগে একজন ইউটিউবার তার মুর্শিদাবাদের ট্যুর নিয়ে তৈরী করা ভিডিওর লিংক পাঠিয়েছিলেন। একএক করে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক জায়গা গুলো দেখলাম সেই ভিডিওতে। বাংলার শেষ নবাব এর জীবনী তার সময়কার ইতিহাস যতটুকু পড়েছি, তাতেই মন বেদনাকাতর হয়ে পড়ে। আর যারা সরাসরি এমন স্থান গুলো স্বচোক্ষে দেখেন তাদের মন কতটা স্তব্ধ হয়ে যায় বুঝতে পারি।
নবাব কন্যা আজিমুন্নেছাকে নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। মানব শিশুর কলিজা ভক্ষণ, চরিত্রগত সমস্যা ইত্যাদি। আবার অনেক ঐতিহাসিক এটাও বলেছেন যে, তাকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলেন তার স্বামী। তার পিতা মুর্শিদ কুলি খান নন। এখন এগুলোর কোনটি সত্যি আর কতটুকু মিথ্যা তা আল্লাহই ভালো জানেন।
চমৎকার পোস্ট কামাল ভাই।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
এমন মিথগুলো আমি কখনো বিশ্বাস করিনা আপু। কিভাবে এমন হতে পারে এটা প্রায় অবিশ্বাস্য। তবে এমন ইতিহাসগুলো ছুয়ে দেখতে পারলে আমি শিহরিত হই।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার প্রতিটি পোস্টেই বিশেষ কিছু থাকে,
এখানে ও যেমন পেলাম ফুলের ছবি।
কামাল উদ্দিন
আমার প্রতিটি পোষ্টে আপনার মন্তব্য নিয়ে উপস্থিত থাকাটাকেই আমি সব থেকে বিশেষ কিছ মনে করি বড় ভাই……শুভ কামনা সব সময়।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভালো লাগলো দাদা।
ছবির সাথে দারুণ বর্ণনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকুন সব সময়।
জিসান শা ইকরাম
ছবি সহ ইতিহাসকে জানলাম আপনার মাধ্যমে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বড় ভাই, আপনার জন্যও শুভ কামনা সব সময়।
হালিম নজরুল
অজানা কিছু তথ্য জানলাম। ধন্যবাদ ভাই।
কামাল উদ্দিন
শুভ রাত্রী