“মা” – প্রতিটি মানুষের ঠোঁটে প্রথম উচ্চারিত শব্দ। কিন্তু আমরা মা’কে কতোটা ভালোবাসি! ভালোবাসা মানে “মা তোমাকে ভালোবাসি” বলা নয়। জড়িয়ে ধরা নয়। কিন্তু নীরবে, নিভৃতে প্রতিটি মা তার সন্তানকে ভালোবাসে। একজন মা-এর কি চাওয়া থাকে তার সন্তানের কাছে? সন্তান যেনো খুব ভালো একজন মানুষ হয়। আর আমরা সন্তানরা কি বলি, মায়েদের দায়িত্বই তো এই সন্তানদেরকে দেখে রাখা। কেন আমাদের সন্তানদের কি কোনো দায়িত্ব নেই? কখনো কেউ যখন আমাদের সাহায্য করে, তার প্রতি কি আপনি কৃতজ্ঞ থাকি না? আর একজন মা যে কিনা এই পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন, তার প্রতি কি আমাদের কোনো দায়িত্বই নেই?
একজন মা বড়ো একা থাকেন মনে মনে। এ ব্যাপারটা ছেলে সন্তানরা বোঝে কম। মেয়ে সন্তানরা যখন মা হয়, তখন বোঝে। মায়েরা খুব অভিমানী হয়। তার এই অভিমানকে কখনো রাগ দেখিয়ে, বকুনি দিয়ে প্রকাশ করেন। আর কেউ কেউ গোপনে কাঁদেন, কেউবা নিজেকে স্বাভাবিক দেখিয়ে ভেতরে শূন্যতা মেশানো দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাস করেন। মায়েরা সন্তানের থেকে সম্মান চায়, একটু যত্ন(Care) চায়। কেউ কি জানেন আজীবনই মায়েদের মনটা ছোট্ট একটা শিশুর মতো? একমাত্র শিশুরাই নিষ্পাপ থাকে। আর তাইতো মায়েরা সন্তানের প্রতি এতোটা অন্ধ থাকেন, বিশ্বাস রাখেন।
প্রতিটি সন্তান জন্ম দিয়ে মায়ের মৃত্যু হলে পিতা আবার নতুন করে বিয়ে করেন। পিতার মৃত্যু হলে ক’জন মা আবার নতুন করে সংসার করেন? আজকাল অনেক চাকুরীজীবী মা আছেন কিন্তু। সংসার এবং চাকুরী দুটোই চালিয়ে যাচ্ছেন একসাথে। একমাত্র মা-ই জিজ্ঞাসা করেন, “খেয়েছিস?”কেন করেন জানেন? কারণ আমরা গর্ভ থেকে খাদ্য আহরণ করেছি ওই মায়ের থেকেই। জন্মের পর খাদ্যের জন্য চিৎকার করে কেঁদেছি মায়ের বুকের দুধের জন্য। নাড়ীর টান একেই বলে। যা আমরা সন্তানরা জেনেও না জানার ভাণ করি। কেন মনে রাখিনা,
“মায়ের এক ধার দুধের দাম
কাটিয়া গায়ের চাম
পাপোষ বানাইলেও ঋণের শোধ হবেনা
এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো।”
প্রত্যেকের কাছে অনুরোধ নিজেদের মায়েদের প্রতি সম্মান রাখুন। এমনকি অন্যের মায়ের প্রতিও বিনম্র থাকুন। মায়ের যত্ন করুন। “মা” দিবসে ফেসবুকের প্রোফাইলে ছবি ঝুলিয়ে, কিংবা একটা ইমোশনাল স্ট্যাটাস লিখে নয়। বরং মায়ের পাশে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন, “আচ্ছা মা তোমার শৈশববেলাটা কেমন ছিলো?” সারাদিনের শেষে বাসায় ফিরে মায়ের কাছে গিয়ে বসুন কিছুক্ষণ, নিজের কথা বলুন, মায়ের সারাদিন আজ কেমন কাটলো সেসবও জিজ্ঞাসা করুন। ঘরে এসেই তো “কি রেঁধেছো মা” জানতে চাই। কিন্তু কতোজন আমরা জানি আমাদের মায়েদের প্রিয় খাবার কোনটি? কোন ফুল প্রিয়? কোন জায়গায় যেতে ভালো লাগে? আমাদের মায়েরা কি পেলে খুশী হয় মনে মনে? শাড়ী, অলঙ্কার এসব? নাহ! একজন মায়ের সবচেয়ে বেশী আনন্দ হয় তখন, যখন সন্তান তার পাশে এসে বসে। গল্প করে। মায়েরা বড্ড বোকা, কী অল্পতেই না খুশী হয়!
পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। প্রণাম।
হ্যামিল্টন, কানাডা
১১ মে, ২০১৮ ইং।
২০টি মন্তব্য
রিমি রুম্মান
বেঁচে থাকাকালীন সময়ে আমরা মায়েদের মূল্যায়ন করি না, সত্যি। তোমার লেখাটি অনেকের বিবেককে নাড়িয়ে দিবে হয়তো৷ ভাল থেকো, অনেক ভাল।
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমি আপু নিজের চোখেই তো দেখছি কতো “মা” আছেন, সন্তান কাছে থেকেও খবর নেয়না। আবার এমন সন্তানও আছে মায়ের সকল খরচাদি দেবে, কিন্তু ডেকে কথা বলেনা। একটা সময় ছিলো প্রতিদিন ফোন দেয়া তো দূরের কথা, মাসে দুইবার ফোন দিতাম। ওই দুটো দিন নিজের নামটা শুনতাম।
আপু তুমি এমন এক সন্তান, যার বুকে মা-বাবার স্থান সবার উপরে।
ভালো রেখো নিজেকে। -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
জীবন চক্রাকারে মায়ের আর্বিভাব প্রতিটি নারীর মাঝে।মা হীন পৃথিবী অন্ধকার।যাদের মা নেই কেবল তারাই টের পায় মায়ের অভাব।লেখাটা খুব ভাল হয়েছে।এমনি হওয়া উচিত মায়ের প্রতিটি সন্তানেরা ।।। জগতের সকল মায়েরা ভাল থাকুক এই কামনা।আপনার মাকে মা হীন এ অধমের প্রণাম জানাইবেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই “মা”–এই একটি শব্দের ভেতর ঈশ্বর বিরাজমান। যারা মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ঈশ্বরকে আর না ডাকলেও চলে।
পৃথিবীর সকল মায়েরা ভালো থাকুক।
আপনি ভালো থাকুন।
ইঞ্জা
আপু আবারো বলছি, আপনার প্রতিটি বাক্য সত্যি, মার তুলনা মা, মাদের নিয়ে ছোট পরিসরে কমেন্ট করাটাও যে সম্ভব হয়ে উঠেনা, আমি মা হারালাম এই কয়েক মাস হয়, হাড়ে হাড়ে বুঝি মা আমার কেমন ছিলেন, এ যে স্বর্গীয়, যা আমি আর পাবোনা।
মাসিমার জন্য প্রার্থনা করছি, যেন উনি আজীবন আপনাদের ভালোবাসা নিশ্চিন্তভাবে কুড়াতে পারেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া আমি জানেন ঈশ্বরের কাছে কি বলি? যতোদিন বাবা-মা আছে, ততোদিনই যেনো আমার জীবন থাকে।
ভাবতে পারিনা ওদেরকে ছাড়া আজও।
খালাম্মার আত্মার মঙ্গল করুন ঈশ্বর।
নিজেকে ভালো রাখুন ভাইয়া।
ইঞ্জা
আপু, কেউ পারেনা তাদের পিতা মাতা ছাড়া থাকতে, কিন্তু নিয়তি বড়ই কঠিন, বড়ই নির্মম। 😒
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া আসলেই নিয়তি বড়ই কঠিন, বড়ই নির্মম।
ভালো থাকুন।
মৌনতা রিতু
আমার মা খুব সাধারণ। একদম আটপৌরে যাকে বলে। জীবনটাকে স্বাভাবিক ধারায় বয়ে নিয়ে চলাই তার আদর্শ।
বাসায় কড়া শাষণ। মা ছোটোবেলাতেও খুব শান্ত ছিলো। তবে কাপড় পরা আর খাওয়ার ব্যাপারে সে বড় খুঁতখুতে। যেমন তেমন কাপড় পরতে পারে না। পরেও না।আমি খুব বকা খেতাম দুষ্টমির কারনে।
তবে আমি কিন্তু মার সাথে ঝগড়া করি, অভিমান করি। আবার প্রতিদিন সকাল বিকাল কথা বলব। মা আগে ফোন দিবে। ঝগড়া করলেও। ‘মা সবাইকে বলে “ও আমার ঢাল।”
সত্যিই, মা বাবা তা মা বাবাই।
সুন্দর লিখেছো আপু। -{@ (3
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু শুনে খুব ভালো লাগলো। লিখুন না খালাম্মার গল্প। শুনতে ইচ্ছে জেগেছে।
লিখবে আপু?
অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থেকো। -{@ (3
জিসান শা ইকরাম
জগতে একমাত্র মা ই হলেন যিনি কেবল সন্তানকে দিয়েই যান, কোনো ধরনের প্রাপ্তির আশা না করেই। প্রাপ্তি যেটা চান তা হচ্ছে সন্তানের মংগল।
জগতের সকল মা ভাল থাকুক।
মা দিবসের শুভেচ্ছা তোকে -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা খুব সুন্দর বলেছো। “জগতের সকল মা ভাল থাকুক।”
ভালো থেকো নানা। -{@
খসড়া
আজ থেকে বহুদিন আগে
আমি যখন ছোট্ট শিশুটি ছিলাম
মা ঘেরা পৃথিবী আমার
মাকেই চিনেছিলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
বাহ কী দারুণ ছড়া! তা-ও মায়ের জন্য।
ভালো থাকুন।
রেজওয়ান
আসলেই মা বেশিরভাগ জীবনের জন্যই অমূল্য রতন (3
নীলাঞ্জনা নীলা
মায়ের মতোন আপন কেউ কী আর আছে এই পৃথিবীতে?
ভালো থাকুক মায়েরা।
ভালো থাকুন আপনিও।
তৌহিদ ইসলাম
পৃথিবীরর সকল মায়েরা ভালো থাকুক।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনের কথা বলেছেন। “পৃথিবীর সকল মায়েরা ভালো থাকুক।”
ধন্যবাদ আপনাকে।
মাহমুদ আল মেহেদী
মা কে নিয়ে যে কোন লেখাই ভালো লাগে এই লেখাটা একটু বেশীই ভালো লাগলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনিও লিখে ফেলুন মায়ের কথা।