মা,
তোমার গর্ভের ঘ্রাণ চাই আরেকবার। এ জন্মের খোলস পড়ে আজও আমি ভালো হতে পারিনি। অযাচিত ভাবে বয়ে নিয়ে যাওয়া জীবনে আক্ষেপ করার সুযোগটুকু ও পেতে দিচ্ছে না রাত-দিনের বেহিসেবি পাঁচালী। তোমার জঠরের রক্তের ভেতরে মাংসপিণ্ড হয়ে থাকার সময়গুলো আজও ডাকে। ওখানে ঝড় ছিলোনা, নিঃশ্বাসের ভাবনা ছিলোনা। ছিলোনা ক্ষুদ-পিপাসার জ্বালা, ভালোবাসা পাওয়া-না-পাওয়ার হিসেব, ছিল না নগ্ন প্রতারণা। এখন আমি নিঃশ্বাসে শুধু উগ্রতর গন্ধ পাই, দম আটকে আসে মা। আর বুঝি নিস্তার নেই। আমি আজ মিছে ফসলের চাষী, রোজ বুনো ফসলের চাষ করে যাচ্ছি। বিক্রি করছি রোজ তাকে-ওকে-অন্যকে। বিনিময়ে খোলামকুচি। আমি কি এতোই জটিল হয়ে গেছি? সবাই বলে অনেক মিষ্টতা ছিলো, এখন আমি শুধুই বিভীষিকা। এই যে আমার খোলা দোকান। সেখানে একটি আরশি ঝুলছে দেয়ালে। একটি সিন্দুক ও রাখা আছে। ওই বাক্সের ভেতর কি যে জমাচ্ছি, সে হিসেব কবে হবে, আদৌ হবে কিনা, জানিনা।
সেই কবে থেকে ক্ষুধার্ত! বলতে পারো মা, এতো খিদে কেন আমার? স্বস্তির খিদে, সুখের খিদে, শান্তির খিদে, বন্ধুত্বের খিদে। ওসব খাদ্য এ পৃথিবীর কোথাও নেই। অথচ মনে আছে জরায়ুজ অবস্থায় ওসব খাদ্য আমার খিদে নিবারণ করতো। তোমার গর্ভে আবার ফিরে যেতে চাই। মা, জন্ম নেবো আবারও তোমার উষ্ণ উত্তাপের জন্যে।
ইতি তোমার আত্মজা
**চেষ্টা করলাম একটিবার পৃথিবীর সকল সন্তানদের পক্ষ থেকে মায়েদেরকে একটি চিঠি দিতে। এ চিঠি শুধু আমার মামনির জন্যে না। সকল মায়েদের জন্যে। যারা কখনও তাদের সন্তানদের স্বস্তিটুকুই চায়, বিনিময়ে কিচ্ছু চায় না। পৃথিবীর সকল মায়েদের আমার প্রণাম।
হ্যামিল্টন, কানাডা
৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ইং।
৩২টি মন্তব্য
নীতেশ বড়ুয়া
বোতলে কাঁঠালিচাঁপা ফুল না???
মায়ের কাছে চিঠি নিয়ে তো বলার কিছু নেই… আত্মজ, আত্মজা সবারই একই উপলব্দি হয় 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
হুম আমার মামনির প্রিয় ফুল। বাপি মামনিকে এভাবে প্রচুর চমক দিতো। আমাদের বাগানের বাসায় চাঁপা ফুলের গাছও লাগিয়েছিলাম। বড়ো হতে পারেনি, বাগানই ছেড়ে দিলাম।
আপনার মাকে আমার প্রণাম রইলো। 🙂
অরুনি মায়া
আমিও আজ এই চিঠি আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দিলাম। মনের কথা লিখেছেন আপু।
পৃথিবী আমার ভাল লাগেনা। ভাল তো তখনি ছিলাম যখনযখন মায়ের জঠরে ঘুমিয়েঘুমিয়ে ছিলাম।
যত সুখ যত শান্তিশান্তি শুধু সেখানেই ছিল। জন্মের পর পর ই তো শুরু হয় নিজ সন্তান কে নিষ্ঠুর পৃথিবীরর
হাত হতে রক্ষার জন্য মায়ের যত সংগ্রাম তবুও মায়েরামায়েরা হেরে যায় যখন সন্তানেরা শান্তি খুঁজে পেতে ব্যার্থ হয়।
মন খারাপ হয়ে গেল নীল আপু,,,,,,
নীলাঞ্জনা নীলা
মন খারাপ করতে নেই। তাতে মায়েরা কষ্ট পায়। জানেন গতকাল দেশে ফোন দিতেই মামনি বলে আমায়, “তোর এই উইকএন্ড তো ছুটি, কি প্ল্যান করেছিস?” প্রায় ৩ সপ্তাহ পর ফোন, অথচ আমার অফ কবে সেটা ঠিক মনে থাকে। মায়েরা এমন কেন? আমি না মা হিসেবে এমন ভালো না।
আপু তোমার মাকে আমার প্রণাম রইলো।
অরুনি মায়া
মা খুব মিস করে আপনাকে বোঝাই যাচ্ছে। একটু ঘুরে যাও আপু। মায়ের কোলে একটু ঘুমিয়ে যাও,,,,,,
নীলাঞ্জনা নীলা
ঘুরে এসেছি আপু। এই তো মার্চে গেলাম। দিন-রাত গ্রীনলাইফ হাসপাতালে কাটালাম। বাপির হিপ জয়েন্ট সার্জারী হলো। মামনির সাথে হাসপাতালে ছিলাম।
ছাইরাছ হেলাল
দারুণ চিঠি, মায়ের প্রতি আপনার অগাধ ভালোবাসা লেখায় ও নূতন সৌকর্যে ফুটে উঠেছে।
অভিনন্দন আপনাকেই।
গতানুগতিক লুতুপুতু (অবশ্যই প্রয়োজনীয়) এর বাইরে এসে লিখছেন বলে।
নীলাঞ্জনা নীলা
গতানুগতিক লুতুপুতু যখন ছিলো, মন্তব্য করতেন কেন বেশী ভালো ভালো?
এতো দুই নম্বরী ভালু না বেড়াল-চাষী। :@
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তবুও।
নুসরাত মৌরিন
নীলাদি,
মা এমন একজন যার কষ্টটুকু সন্তানরা কখনই বোঝে না।নয় মাস তিলতিল করে যার জঠরে বেড়ে ওঠে একটা শিশু,কতশত নির্ঘুম রাত কাটে তার।কত সেবা কত মমতা কত ভালবাসা আমরা তাঁর কাছ থেকে নিই।বিনিময়ে দুঃখই হয়ত বেশি দিই।
এমন চিঠি সব মায়েদের…আমিও দিলাম আমার মা কে।আমার বড্ড দুঃখিনী,অভিমানী মাকে। ঈশ্বর যেন আমাকে এতটুকু শক্তি দেন আমি যেন তার বিন্দু পরিমান সুখের কারন হই,তাকে যেন অনাবিল আনন্দে ঘিরে রাখতে পারি।
আপনার চিঠিটা পড়ে চোখে জল এলো…।
নীলাঞ্জনা নীলা
নুসরাত মৌরিন আপু মায়েদের কোনো তুলনা হয়না। সব মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে একই ভাবে দেখেন, ভালোবাসেন। আদর-স্নেহ-মায়া-মমতায় জড়িয়ে রাখেন। আপনার মায়ের প্রতি আমার প্রণাম।
জিসান শা ইকরাম
এ চিঠিতে যেন আমারই কথা
কত নিশ্চিন্ত একটি সময় পার করেছি মায়ের জঠরে।
লেখাটি তোমার অন্য লেখার ধাঁচের বাইরে
অসাধারণ।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা আসলেই মায়ের কোনো বিকল্প নেই। একটা মানুষ ওই জায়গাটিতে ছোট্ট একটা বাচ্চা হয়েই থেকে যায়। কি অদ্ভূত সৃষ্টি ভগবানের! মা -{@
জিসান শা ইকরাম
এই চিঠি আমার পড়া শ্রেষ্ঠ চিঠি -{@ -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা চিঠিটা কিছু আলোর ছোঁয়া পেয়েছে যে। তাইতো আলোকিত। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
অদ্ভূত সুন্দর একটা চিঠি নীলাপু। এ বড় কষ্টও দিলো। সত্যিই জানা নেই কি জমা করছি সিন্দুকে, কিচ্ছু না। স্বার্থপরতা ছাড়া কেউ কোন খিদে মেটাবেনা আপু। মা কে নিয়ে লেখা এ চিঠি আমারও এখন থেকে সবচাইতে প্রিয় হলো। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আসলেই মা, মা-ই। কতো যে রাগ করি মাঝে-মধ্যে ফোন দিয়ে। তাও চুপ করে শুনে যায়। তারপর বলে, “কি হয়েছে, মন খারাপ কেন?” মা ছাড়া আর কেউ কি এমন বলে?
তোমার মায়ের প্রতি আমার প্রণাম আপু।
শুন্য শুন্যালয়
নিজের এই লেখাটিতে আমি বারবারই ফিরে এসেছি। আজ মনে হলো কোথাও তোমার আমার ভাবনা এক লাইন হলেও এক।
https://sonelablog.com/archives/7632
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি পড়েছি। আর অদ্ভূত লাগলো। আপু কোনো জন্মে তুমি-আমি কি জমজ বোন ছিলাম! ;? -{@ (3
শুন্য শুন্যালয়
এজন্মেই ভেবে নাওনা আপু। তোমাকে ভালোবাসি আমি খুব, নিজের বোনকে যতটা। ভালো থেকো খুব। (3
নীলাঞ্জনা নীলা
শুন্য আপু তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। এখানে এসো। আসবে? ইস তোমার সাথে কথা বলতেও যে চাই! কবে হবে গল্প-আড্ডা? কবে, কবে?
মরুভূমির জলদস্যু
আমি চিঠিটা পড়ি নি
নীলাঞ্জনা নীলা
কেন মন খারাপ হয়?
মেহেরী তাজ
;? ভাবতেছি আম্মার মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য এই চিঠিটা প্রিন্ট করে আম্মাকে দেবো।
নীলা আপু থাংকু। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
পিচ্চি আপু তোমার এমন দুষ্টুমীর জন্য মা না আমাকেই পিটানি দেয়!!!
পিটানি ভয় পাই 🙁
মেহেরী তাজ
না দিবে না। লাঠি হাতে দৌড়ানো পর্যন্তঈ আম্মার রাগ তার পর সে গলে জল। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
তাহলে ঠিক আছে। এখন তাহলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। 😀
ইমন
হাদীসে আছে, ” কোনো মা যদি সন্তান প্রসব করার সময় ,সন্তান তার পেটে যে লাত্থি মারে সেই ব্যাথার কথা মনে রাখতো তবে সেই মা দ্বীতিয়বার মা, হবার সাহস করতো না “।
আমি খুবই ভাগ্যবান যে , আমি আমার মা’র অষ্টম সন্তান। উনি অষ্টম বারের মতো জীবনের ঝুকি নিয়ে আমাকে জন্ম দিয়েছেন।
আমার মা আমার জীবিন……।। আমার দুনিয়া (3 (3 (3
নীলাঞ্জনা নীলা
বাহ কি সুন্দর কথা!
আমার একজন ক্লায়েন্ট একদিন কিছু কথা বললো, সে খুব ফিগার সচেতন এবং ফ্যাশনিষ্ট ছিলো। কিন্তু যখন যে কনসিভ করলো, তার চেহারার সৌন্দর্য, নিজের ফিগার এসব কথা ভুলেই গিয়েছিলো। বরং ওই সময় সে খুবই বিশ্রী হয়ে গিয়েছিলো দেখতে। ছবিগুলো দেখলামও। সেই সন্তান বড়ো হলো, নিজের জগত গড়ে নিয়ে চলেও গেলো। মাঝে-মধ্যে ফোন করে, বছরে একবার ক্রীষ্টমাসে আসে। এটাতেই সে খুশী। পৃথিবীর সব মায়েদের তাই একটি জায়গাতেই মিল, তারা তাদের সন্তানদের ভালোবাসে।
অরুণিমা
এটি আমারো প্রিয় চিঠি হয়ে গেলো নীলাদি।
নীলাঞ্জনা নীলা
অরুণিমাদি মা যে কখনো অপ্রিয় নয়। আপনার মায়ের প্রতি আমার প্রণাম।
অরণ্য
আজ সোনেলা দিন। তবুও আমার বেশ মন খারাপ। ঈদ মা’র সাথে করতে পারছিনা। কাল মা’র সাথে কথা হয়েছে, মাও বলেছে ঢাকাতেই থাক। আমাকে নেহায়েত সান্ত্বনা দিয়েছে, আমি জানি। লেখাটি পড়ে মাকে আরো বেশি মনে পড়ল।
অনেক দিন পরে এসে মন্তব্য করছি। জীবন মানেই বোধহয় ‘এনট্রপি’!
ভাল থাকবেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
মায়েরা কষ্ট নেয়া শিখেই আসে। হুম বুঝতে পারছি কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু আপনি তবু ভুলে যাবেন মেয়ের মুখের বাবা ডাকেই। ও যখন এসে গলা জড়িয়ে ধরবে, অনেকটাই কেটে যাবে যন্ত্রণার মেঘ। মায়েদের জীবনটায় এতো স্যাক্রিফাইস, সে যে দেশেরই মা হোক।
মায়ের প্রতি আমার প্রণাম। ঈদ উপভোগ করুন, তা নইলে মায়ের কষ্ট আরোও বেশী হবে। ভালো থেকে ভালো রাখুন। ঈদের শুভেচ্ছা -{@