
একপাশে সু-উচ্চ পাহাড় শ্রেণী, অন্য পাশেও বিশাল গাছে গাছে পরিপূর্ণ এলাকা। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে দুইটি সমান্তরাল রেলপথ। দূরে পাহাড়ের ঢালুতে ছাড়ানো ছিটানো কয়েকটি আধিবাসি কুড়ে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের উপারে অস্তমিত সূর্যের আলোকচ্ছটার কিছু ভাঙ্গা অংশ কয়েকটি গাছের মাথায় শোভা পাচ্ছে। পাখিদের কিচির মিচির বাদ দিলে একেবারেই শুনশান। একটা রেল স্টেশন এতো শুনশান হয় কি করে? স্টেশনের নাম মাস্তান নগর। স্টেশনের মূল বিল্ডিং এর ভেতর কয়েকটি গরু বাঁধা দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে স্টেশনটা পরিত্যাক্ত। তো এই বেলায় ক্যমেরায় ভালো ছবি আসার কোন কারণ নাই, ক্যামেরা প্যাকআপের আগে তাও কিছু ছবি উঠাই।
আমি আর আমার সঙ্গী আলোচনা করছি স্টেশনটার এমন একটা নাম কি করে হলো? স্টেশন থেকে বের হওয়ার পথে ছোট একটা মুদি দোকানের সামনে দু’জন লোক বসা। পেছন থেকে ডাকলো ভাইজান একটু শুনবেন? আপনারা কিসের ছবি তুললেন? আমি বললাম প্রকৃতির। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এর পথে রেল লাইন ধরে হেটে মাস্তান নগর এসেছি জেনে এতো বড় হা করলেন যেন ওখান দিয়ে আস্ত একটা রেল গাড়ি চলে যেতে পারবে। সে আরো অনেক প্রশ্ন করলো কিন্তু আমাদের উত্তর সেই একটাই। কাউকে ফোন দিলো, আর আমাদের জন্য চা বিস্কুটের অর্ডার দিলো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমাদেরকে এখনি এখান থেকে বের হয়ে ঢাকার বাসে চড়তে হবে এসব বলে পার পেলাম না। কেক চা খেলাম এবং বেড়িয়ে আসলাম স্টেশন থেকে।
আসল চমক যে বাকী ছিল তা টের পেলাম একটু পরেই। সামনের কাঁচা মাটির পথ ধরে মোটর সাইকেল নিয়ে তিনজন এসে নিমিষেই আমাদের ঘিরে ধরলো। ইতিমধ্যে আরো একটা সিএনজি এসে ওদের দলটা তিন থেকে পাঁচে উন্নীত করলো। সিএনজি থেকে দুজন নামল চকচকা দুইটি চাপাতি নিয়া। মুহুর্তেই মনে পড়ে গেলো দিনে দুপুরে শত শত লোকের সামনে পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করা হয়েছিলো এমন চাপাতি দিয়া। আর সাথে সাথেই মোটর সাইকেল আরোহীদের একজন ওর জামা উঠিয়ে দেখিয়ে দিলো ওর কাছে রয়েছে একখানা পিস্তল। আশে পাশে সাহায্য পাওয়া যাবে কিনা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারকে আরো কালো করে দেওয়া একটা ইট ভাটার চিমনি দিয়ে প্রচন্ড গতিতে বেড়িয়ে আসা কালো ধোয়া ছাড়া আর কিছুই নজরে এলো না। আবারো আমাদেরকে সেই পুরোনো বকবকানি চালাইতে হলো। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রেল লাইন ইত্যাদি ইতাদি….
এক সময় মোটর সাইকেল চালকের নির্দেশে আমাদেরকে সিএনজি তে করে সামনের দিকে রওয়ানা হলো। মনের ভেতর কু ডাক ডাকছে। এক সময় সামনে ছোট্ট একটা বাজারে প্রবেশ করলাম। আমাদের নিয়ে বসাল একটা গরিবানা রেষ্টুরেন্টে। এই বাজারের চারিদিকের সব মানুষকেই শত্রু পক্ষের মতো মনে হলো। কিন্ত চাপাতি ওয়ালারা এখানে আমুল বদলে গেলো। আমাদের আপ্যায়নের জন্য বেশ তৎপরতা শুরু করে দিলো। কিছু না খেলে ছাড়বে না দেখে এক কাপ চা খেতে চাইলাম। চা খাওয়ার পর ওরাই সিএনজি ভাড়া দিয়ে আমাদের বারইয়ারহাট বাসষ্টেন্ডে পাঠিয়ে দিলো। ঘাম দিয়ে জ্বর সারল। আমি জানি এসবই হচ্ছে আমার সাংবাদিক মার্কা ক্যামেরাটার গুণে বা দোষে।
২৬টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
লোম খারা গল্পের অবতাড়না করলেন।
যাক তবু বাঁচা গেল সাংবাদিক মার্কা ক্যামেরার কল্যানে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
হুমম, সত্যিই বিপদের শংকা ছিলো ওখানে, ভালো থাকবেন দাদা।
ফয়জুল মহী
আমার বাড়ির পাশে মসন্তান নগর
কামাল উদ্দিন
বলেন কি ভাই, আপনার বাড়ির পাশে আমরা এতোটা বিপদে পড়লাম, আপনি আসলেন না? 😀
জিসান শা ইকরাম
মাস্তান নগরে বাস্তব মাস্তানদের দেখা পেলেন!
নামকরনের সার্থকতার প্রমান দিলো মাস্তানরা 🙂
ভালোই লাগলো পোস্ট।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
সত্যিই ভয়ঙ্কর একটা অবস্থায় পড়েছিলাম, তবে আল্লাহ আমাদের সহায় ছিলেন বলে পার পেয়ে গেছি ভাইজান।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আনন্দের মাঝে বিষফোঁড়া হাজির না হলে কি হয়! বাপরে ভীষণ ভয়ের ব্যাপার। ওরাতো আগ পিছ কিছু ভাবেনা।কপাল ভালো খারাপ কিছু হয়নি। মারধর করলে তো হাড্ডি মাংস এক করে দেয় , শুনেছি যদিও। ঈশ্বর সহায় হোন। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
কামাল উদ্দিন
আমার বিশ্বাস এই এলাকায় বড় কোন সন্ত্রাসীদের কোন একটা কার্যক্রম রয়েছে। তবু আমাদের ভাগ্য ভালো ছিলো বলে বেঁচে গেছি আপু,,,,,,,,,,,শুভ কামনা জানবেন।
আতা স্বপন
মস্তান নগরে মস্তানি
জান নিয়ে টানটানি।
চা খেয়ে গুড বাই
দরকার নাই বোরহানি
========================ধন্যবাদ
কামাল উদ্দিন
সুন্দর ছন্দ মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ স্বপন ভাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাস্তবতা মিলে গেলো মাস্তান নগরের সাথে।
সাংবাদিক মার্কা ক্যামেরাটার গুণে বা দোষে!
ভাগ্যিস ভালো দাদা।
শুভকামনা রইলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ প্রদীপ দাদা। অনেক যায়গায় এই ক্যামেরার জন্য সালাম ও পাই।
জাহাঙ্গীর আলম
কামাল ভাই কিছু দিন পর পর ক্যামেরা বদলায় । আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না একটি ক্যামেরা রেখে আরেকটি কেনার দরকার কি। এখন বুঝলাম ক্যামেরা কেয় চিজ হেয়। কামাল ভাই ভাল একটি দূর্ঘটনা থেকে বেচেঁ ফিরেছেন তার জন্য কিছু না করলেও অন্তত ক্যামেরাটার জন্য একটা মিলাদ মাহফিল দেওয়া অবশ্যক ছিল।
কামাল উদ্দিন
কিন্তু আমার কথা হইল, আমি যে ক্যামেরা বদলাইছি মাস্তানরা জানলো কিভাবে?
সাবিনা ইয়াসমিন
শিরোনাম পড়ে ভেবেছিলাম কোনো ফকির বাবার দরবার দেখতে গিয়েছিলেন। পড়ে দেখি আসলেই মাস্তানদের এলাকা! যাক, তবু্ও ভালোয় ভালোয় ফিরে আসতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো।
শুভ কামনা 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
মস্তান নগরে সম্ভবত একটা পীর ফকিরের আস্তানাও আছে আপু, ভালো থাকবেন সব সময়।
তৌহিদ
সাথে ক্যামেরা থাকায় হয়তো সুফল এসেছে। মাস্তান নগর! কি নাম রে বাবা!!
ভালো থাকুন ভাই।
কামাল উদ্দিন
সঙ্গীর সাথে আলোচনা করছিলাম মাস্তান নগরের মাস্তানরা কই, পরে ঠিকই মাস্তানদের সাথে চা খেতে হয়েছে……ভালো থাকেন ভাই।
শামীম চৌধুরী
শিরোনামটি দেখে ভাবলাম কোন মাস্তানের কবলে পড়লেন তা একটু পড়ে জেনে নেই। পড়ে বুঝলাম জায়গার নাম। ভাল লিখেছেন।
কামাল উদ্দিন
যায়গার নামের সাথে কাজের মিল পেয়ে গিয়েছিলাম বড় ভাই, ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
ছবি ছাড়া মনে হয় বেশী কিছু এইই লিখলেন, অবশ্য আগেও সামান্য পড়েছি।
এই তো অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে, হাঁটি-হাঁটি পা না, দৌড়-দৌড় পায়ে।
সমূহ বিপদ থেকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।
কিছু টাইপিং মিস্টেক আছে, ঠিক করে নিন।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বড় ভাই, আপনাদের এমন উৎসাহে মাঝে মাঝে কিছুটা লিখার চেষ্টা তো চালিয়ে যাই।
নীরা সাদীয়া
“ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এর পথে রেল লাইন ধরে হেটে মাস্তান নগর এসেছি জেনে এতো বড় হা করলেন যেন ওখান দিয়ে আস্ত একটা রেল গাড়ি চলে যেতে পারবে।”
খুব মজা পেলাম।
আচ্ছা, আপনি কি ভ্রমণ বিলাসী? নাকি কাজের সূত্রে ভ্রমণ করেন?
কামাল উদ্দিন
পুরোটাই আমার নেশা, আমি একজন ছোট ব্যবসায়ী আপু।
হালিম নজরুল
ভাই,
আজই আমি ভিক্টোরিয়ার পোস্ট দিতে চাই। আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন। পোস্টে ছবিগুলো কিভাবে সংযুক্ত করতে হয় জানিনা। সম্ভব হলে জানাবেন প্লিজ।
কামাল উদ্দিন
আপনার ফ্লিকার একাউন্ট না থাকলে একটা ফ্লিকার একাউন্ট খুলে নিন। ফ্লিকার একাউন্ট খুলতে হলে উয়াহু একাউন্ট থাকতে হবে। প্রত্যেক ইয়াহু একাউন্টই একটা করে ফ্লিকার একাউন্টে ১০০০ পর্যন্ত ছবি ফ্রিতে রাখার অনুমোদন দেয়। ওখান থেকে লিঙ্ক দিয়ে ব্লগে ছবি দিতে হবে। আসলে বিষয়টা আমি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে পারবো না। তবে চাইলে আপনার পোষ্টে ফ্লিকার একাউ্ট খুলে দিতে আমি সহায়তা করতে পারবো। যোগাযোগ করতে পারেন আমার সাথে ০১৭১১৩৯০২৪২