মানুষ কারা? মানুষ মানে কি?

রিতু জাহান ২১ মার্চ ২০১৬, সোমবার, ১১:৪৪:২৮পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৭ মন্তব্য

আজ আমার মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আসার আরো একটি বছর পূর্ণ হল। ভেবেছিলাম জীবনের প্রাপ্তিগুলো সুখগুলো আজ লিখব। দুঃখকে আমি টিকতেই যে দিতে চাই না! তবুও পারলাম না সুখের কথা লিখতে। কেন পারলাম না? আমি হয়ত একটু বিরক্ত! না আমি আসলে অনেকটাই বিরক্ত। বিরক্তের কারণটা আমি অনেকটা জানি।

আসলে আমি নিজের উপর বিরক্ত। এই রক্ত মাংসে গড়া নিষ্প্রাণ শরীরটার উপর বিরক্ত। কিন্তু আমি তো দাবি করি, আমি প্রাণচঞ্চল একটা মানুষ! তবুও তো আমি ভাবি, অন্যের সাথে অন্যায় হলে আমার কি? কেউ অন্য কাউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলে আমার কি? যাক না সব চুলোয়! সব ভাবনা চুলোয় দিয়ে আমি বালিশে মুখ গুজি। ঘুমিয়ে পড়ি ঘুমের কোলে।

হঠাৎ দেখি এক আয়নার ঘরে আমি। এ কেমন ঘর, এ ঘর তো আমার নয়। আয়নায় কে যেন ডাকছে আমায়! না ডাকছে না, ব্যাঙ্গ করে হাসছে যেন! বলছে ধিক্কার তোমাকে তুমি মানুষ নও, মানুষরূপী জড় পদার্থ।

আমি বললাম,”আমি মানুষ,আমার প্রাণ আছে”।

-না,তুমি মানুষ নও তুমি আপাদমস্তক মানুষরূপী এক জড় পদার্থ। নামে মাত্র মানুষ তুমি

আমার বুক ভারী হয়ে যাচ্ছে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। তোমার মুখটা চেনা মনে হচ্ছে, তোমাকে অনেকবার দেখেছি কোথাও। হ্যাঁ চিনেছি তোমায়। মুগ্ধ হয়ে তোমার সাবলিল অভিনয় দেখেছি। তুমি মানব জীবনের যাঁতাকলে দিতে চেয়েছ, তোমার প্রতিভার বিনোদন।

এই দেখ আমি গেয়ে উঠছি, একদিন তোমায় না দেখিলে তোমার মুখের কথা না শুনিলে, পরাণ আমার রয়না পরাণে।

তুমি তো জান গানেও জীবনের চাকা ঘোরে। এতো অভিমান নিয়ে যেয়ো না তুমি। এখন আর অভিমান করো না। তুমি তো শিল্পী , বিশাল মনের অধিকারী তুমি। অভিশাপ দিওনা কখনও এই মানুষ জাতিকে। জানি দিবে না, কারণ তুমি শিল্পী, তুমি বিশাল। কিন্তু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ও ছেড়ো না। কোথায় যাচ্ছ? শোন শুনে যাও, আমি আমি আমি মানুঊঊঊঊষ।

দিতি, বাংলা চলচ্চিত্রের এক শিক্ষিত অভিনেত্রী। আসলে সে শিল্পী আমার চোখে। কিন্তু তার বড় পরিচয় সে মানুষ। সে জড় পদার্থ ছিল না, সে ছিল মানুষ। তার অভিমান ছিল, কষ্ট ছিল। সবই এখন স্মৃতি।

যাই হোক আমি আসলে মানুষরূপী কিছু জানোয়ারের জবাব দিব তাই লিখতে বসেছি।

দিতি যখন অসুস্থ ছিল, তখন অনেকবারই এই লেখাটা আমি লিখতে চেয়েছি। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ, অনেকটা আলসেমিতে তা হয়ে ওঠেনি। বেঁচে থাকতে সে মরেই গেছিল, যখন সবাই আঙ্গুল তুলত তার দিকে, যে সোহেল চৌধুরীর মৃত্যুর জন্য। কিন্তু বাঙ্গালি ভিড়ের দলে চলে। সত্য না যেন অন্যের দেখাদেখি ঢিল ছুঁড়তে, গুলি ছুঁড়তে, আগুন দিতে পারে। আঙ্গুল তো সামান্য।

যাই হোক আমি সোহেল চৌধুরীর মৃত্যুর কারণ যেটুকু জানি লিখব। আমি লিখবোই। আমি একটু মানুষ হব। ২০০১ থেকে ২০০৭ কি ৮ পর্যন্ত ঢাকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন ছিল সানজিদুল হক ইমন। তার মা ছিল বিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ সুলতানা জাহান। নামের অর্থ পৃথিবীর সম্রাজ্ঞি। তাই ছেলে ও হয়ত ভাবত এই তার। ওর বন্ধু ছিল আর এক সন্ত্রাসী উজ্জল। সানজিদুল ইমন ধরা পড়ে ইন্ডিয়াতে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়াতে তাকে আনা হয় বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন মামলায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় তাকে রিমান্ডে আনা হয়। তো রিমান্ডে সে এমন এক অফিসারের সামনে আসে যে আসামির পেটের কথা বিরিয়ানি খাইয়ে বের করে। তো  ইমন অপকর্মের বর্ণনার এক পর্যায়ে সে দিতির সাবেক স্বামি সোহেল চৌধুরীর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বর্ণনা দেয়।

-“স্যার, আমি আমার বন্ধু উজ্জল সহ আরো কয়েকজন বন্ধু ঢাকার এক অভিজাত ক্লাবে গিয়ে মদ খাই আর খোশ গল্পে মেতে উঠি। তখন এক পর্যায়ে আমরা ঢাকা ট্রাম ক্লাবে যাবার পরিকল্পনা করি এবং তখনই মটর সাইকেল যোগে রওনা হই। কিন্তু ক্লাবে ঢুকতে গেলে ক্লাবের দারোয়ান বাঁধা দেয়। দারোয়ানের সাথে এই নিয়ে চিল্লাচিল্লি হয়। এক পর্যায়ে সোহেল চৌধুরী ক্লাবের ভিতর থেকে এসে হৈ চৈ এর কারণ জিজ্ঞেস করে। তখনও আমরা জোর করেই ক্লাবে ঢুকতে চাইলে, আমার বন্ধু উজ্জল কে সোহেল চৌধুরী ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উজ্জলের কোমরে থাকা পিস্তল দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে। সোহেল চৌধুরী একসময় চিত্র জগতে অভিনয় করলেও তাকে আমরা চিনতাম না। ঘটনা বেগতিক দেখে আমরা সেখান থেকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করি। পরেরদিন পেপারে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর হত্যাকাণ্ডের খবর দেখি এবং তখনই বুঝতে পারি, ঐ ব্যক্তিটি সোহেল চৌধুরী।

এই ছিল দিতির স্বামি সোহেল চৌধুরীর মৃত্যু রহস্য। যা আমরা পেপারে বহুবার দেখেছি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ধর্ম রক্ষকদের মন্তব্য দেখে আমি মর্মাহত হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি। আমি তাদের আইডি পর্যবেক্ষন করেছি, দেখেছি তারা কতো বড় ধর্ম রক্ষক। তারা সুন্দর একখানা ফেক আইডির মেয়ে মুখ দেখলেই লাইক দিবে, শেয়ারও করবে। একজনকে দেখলাম পরী মনির পেটের ছবি শেয়ার করেছে। বাহ!অতি উৎসাহী জনগন। একজন তো তাসকিনের হাতে কাটা মুণ্ডু ধরিয়ে দিয়ে মহা আনন্দে মেতেছে। আমরা এর প্রভাব ও দেখেছি।

আমি এখন আর লিখতে পারছি না। কলম উঠছে না। লজ্জায় ঘৃণায় আমি -,,,,,,,,,,,,,,,,

১৪১৩জন ১৪১১জন
0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ