সপ্তাহ শেষে ছুটির সকাল গুলোতে ছেলেকে নিয়ে কোচিং এ ছুটতে হয়। তুষারপাত কিংবা অঝোর বৃষ্টির দিনে গাড়ী নেই না। বাড়ীর পাশেই বাসস্টপ। টুপ করে উঠে পরি। ছেলেকে নামিয়ে দিয়েই ফিরতি বাসে উঠে বসি। নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যায় বাস। ছুটির সকাল, বিধায় যাত্রী কম। কখনো তিন চারজন। কখনো আমি একা। কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুন্তে শুন্তে বাইরের দৃশ্য দেখি। কখনো তুষারপাত, কখনো অবিরত ঝরে পরা বৃষ্টি। একমাত্র যাত্রী নিয়ে বিশালাকৃতির বাসটি ছুটে চলে হাইওয়ে ধরে। পথে কখনো দুই চারজন উঠে। শীতে হিটার, গরমে এসি__ এতো সুবিধা বাসগুলোয় ! তবুও মন পরে রয় দেশে। মানস চোখে ভেসে উঠে, কতদিন টেকনিক্যালের মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি সকালের ক্লাস ধরবো বলে। কিন্তু, লোকজনে ঠাসা বাসগুলোতে উঠবার সাহস হয়নি। কেবলই মনে হতো, পরের বাসে নিশ্চয়ই ঠাই হবে। অসহায় দৃষ্টিতে পরপর কয়েকটি বাস চলে যেতে দেখি। কেউ কেউ নারী যাত্রী নিতে চায় না। বলে সিট খালি নেই। শেষে নিরুপায় হয়ে কোন একটিতে ঠেলাঠেলি করে উঠি।
দৃশ্যপট বদলায়। ভেসে উঠে, শ্রদ্ধা আর সন্মানের একটি মুখ। আমার বিয়ের এ্যালবামে যার হাস্যোজ্বল, গল্পে মশগুল অনেক ছবি। সেই তিনি সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী। তিনি বাস থেকে নামার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার আগেই বাস ছেড়ে যায়। নামতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পরে যান। প্রতিদিনের ব্যস্ত মানুষটি চলে যান সকল চাওয়া-পাওয়ার বাইরে, ব্যস্ততাবিহীন এক জগতে। রাস্তায় পরে রয় তাঁর নিথর দেহখানা।
কত সীমাবদ্ধতা নিয়ে টিকে আছে আমার জনবহুল জন্মভূমি ! তার মাঝেই আবার কেউ কেউ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠে। কিছু ভালো মানুষের চেষ্টায় কিছুদূর এগিয়ে যায় দেশটা। আবার কিছু খারাপ মানুষের কারনে পিছিয়ে যায় বহুদূর, অনেক দূর। কেমন করে উন্নতি হবে এই অভাগা দেশের ! অজান্তেই বুকের গহীন থেকে করুন সুর হয়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। ততক্ষনে লাউড স্পীকারে বাস ড্রাইভারের এনাউন্স মনে করিয়ে দেয়, আমার যে নামার সময় হলো। দেশ ছেড়ে দূরে আছে যারা, প্রতিনিয়ত এমন করে তারা দেশকে বুকে ধারন করে চলে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়…
২২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ আমার আমাদের দেশ।
আমরা বাঁচার স্বপ্নই দেখি।
রিমি রুম্মান
মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। শুভকামনা রইল।
প্রজন্ম ৭১
‘ কিছু ভালো মানুষের চেষ্টায় কিছুদূর এগিয়ে যায় দেশটা। ‘ —এই কথায় বলে দিলেন আসল সত্যিটা।৭৫ এর পর থেকেই এটা শুরু হয়েছে আসলে।সব অর্জনকে বর্জন করে পিছিয়ে নেয়া হলো দেশকে।এখনো টেনে নিয়ে যাচ্ছে পিছনে।সম্ভাবনাময় একটি দেশকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া প্রত্যক্ষ করছি আমরা।
রিমি রুম্মান
যতদিন ভাল মানুষগুলো বেঁচে থাকবে, ততদিন ধ্বংস হবে না আমার দেশ। পথ হারাবে না বাংলাদেশ। ভাল থাকুন।
আবু জাকারিয়া
সকল প্রতিকুলতা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবে আমাদের দেশ, এটা কামনা।
রিমি রুম্মান
সব ষড়যন্ত্রের পরেও এগিয়েই যাচ্ছে দেশটি। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ নামক দেশটি। জাতিসঙ্ঘের সামনে পত্পত্ করে যখন আমার লাল সবুজকে উড়তে দেখি… আমি আবেগে আপ্লুত হই। বুক ভরে শ্বাস নেই।
নওশিন মিশু
জন্ম দিয়েছো মাগো,
তাই তোমায় ভালবাসি …..
রিমি রুম্মান
ভালোবাসি ভালোবাসি…
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর অনুভুতি,
আসলে আমাদের দেশের
শিক্ষিত সমাজের মনে বেশি
পচন ধরেছে
যেখানে মলম দিয়ে রিপিয়ার করা দুস্কর।
এটা থেকে বাহির হওয়া খুবই কঠিন।
রিমি রুম্মান
ওরা শিক্ষিত সমাজ নয়, শিক্ষিত নামের কলংক।
জিসান শা ইকরাম
বাইরের সাথে যখন তুলনা করি,তখন সত্যি খুব খারাপ লাগে।
এমন তো আমাদের দেশেও হওয়া সম্ভব ছিলো।
তারপরেও বেঁচে থাকা একবুক স্বপ্ন নিয়ে।
রিমি রুম্মান
কিছু মানুষের ভুলের মাশুল গুনছে বাংলাদেশ। তবে এর থেকে বেরিয়ে আসবে জানি। শুধু সময়ের ব্যাপার ।
ব্লগার সজীব
প্রবাসে থেকে দেশ নিয়ে এমন ভাবনার জন্য ধন্যবাদ আপু।
রিমি রুম্মান
প্রবাসীদের মন পরে রয় দেশে। প্রতিনিয়ত দেশকে বুকে ধারন করে চলে তাঁরা নিজের অজান্তেই।
খসড়া
১৫কোটি জনগন ৫৩হাজার বর্গমাইলে এমন ঘটনা কি খুব বিস্ময়কর? বিস্ময়কর হতে পারে যদি ২০০বর্গমাইলে ৩কোটি জনগন হতো।
রিমি রুম্মান
তবুও কি আমাদের স্বপ্ন দেখা থেমে থাকে ? শুভকামনা নিরন্তর।
স্বপ্ন
এই দেশে বেঁচে থাকাটাই এখন সৌভাগ্য আপু।
রিমি রুম্মান
বেঁচে থাকুক মানুষগুলো, পরিবারগুলো স্বপ্নগুলো।
সীমান্ত উন্মাদ
আপু তারপরও এই দেশটার প্রতি এক অদ্ভুত মায়া আমাদের, এযে আমার জন্মভূমি আমার মায়ের দেশ। ভালো থাকুন পরবাসে। শুভকামনা নিরন্তর। ।
রিমি রুম্মান
তাইতো সকল সুযোগ সুবিধার মাঝে থেকেও মন পরে রয় সেই দেশে…
শিশির কনা
আর নিতে পারছিনা আপু।
রিমি রুম্মান
সুদিন আসবে। আমাদের স্বপ্ন পুরন হবে। আমি আশাবাদী। এখনও ভাল মানুষগুলো বেঁচে আছে।একজন মারটিন লুথার কিং একদা স্বপ্ন দেখেছিল, কালোরা এই দেশ শাসন করবে। আজ একজন কালো বারাক ওবামা এই দেশের প্রেসিডেন্ট, যে দেশে আমি থাকি। স্বপ্নরা পূর্ণতা পাবেই।