
চাকরি যাওয়ার কথা শোনে ফারুক সাহেব ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। শুকনো খড় যেমন বাতাসে ওড়ে যায় তেমনি ওড়ে গেলো তার স্বপ্ন। মনে মনে বললেন যা ভেবেছিলাম তাই হলো। মস্তিষ্কে এড্রিলিনের স্রোত ঘুরপাক খেতে লাগলো।
তার চোখে নেমে আসলো ভয়াবহ অন্ধকার। এমন একটা অন্ধকার রাত তার সমগ্র অস্তিত্বেও সংবহন করে না। আলো এবং আলো অতিরিক্ত আলোয় যখন চোখ মেলা যায় না চোখ মেললেও তাকানো যায় না, তেমন অন্ধকারে ঝলসে ওঠা আলো এসে চোখ বন্ধ করে দিলো তার। ফারুক সাহেব আবার ভাবলেন তবে কী আলোই অন্ধকারে উৎস!
ফারুক সাহেব অনুভব করলেন সূর্যের কণাগুলো তীরের তীক্ষ্ণ ফলার মতো বিঁধে যাচ্ছে তার বুকে। ফারুক সাহেব মাথা ঘুরিয়ে নিচে পড়ে গেলেন। বিড়ালের ঝুড়িটা ছিটকে গিয়ে পড়লো একেবারে ট্রাকের নিচে। ফারুক সাহেব অনুভব করছেন, অপারেশনের আগে রুগীকে যেভাবে অচেতন করা হয় তিনিও ঠিক একইভাবে অচেতন হয়ে যাচ্ছেন।
আলো এবং আলোক উজ্জ্বল ঝলমল চোখ যেন পৃথিবীর সমস্ত শুভ্রতার বার্তা বাহক। ফারুক সাহেব অনুভব করলেন সুদীর্ঘ শীতল ছায়া তাকে আলিঙ্গন করছে। যার অনুভবে তার মন সতেজ ও সজীব হয়ে ওঠছে। জীবনের সমস্ত ভাবনার সুতো কেটে, নতুন এক অধ্যায়ে গমন করলেন তিনি তিনি। এ-র মধ্যে তিনি এটাও অনুভব করলেন সম্ভবত এরই নাম মৃত্যু।
তবে মৃত্যুর ব্যাপারে ফারুক সাহেবের ধারণা আরও জটিল ছিলো। এ-র মধ্যেই তিনি দেখতে পেলেন ম্যাডামের ব্যাগের উপরে আঁকা দুটো বিপরীতমুখী সূর্যমুখী ফুল। ধীরে ধীরে দুটো বড়ো সূর্যে পরিণত হচ্ছে এবং হিংস্র নেকড়ের মতো তারা ঢুকে পড়ছে তার চোখে। মূহুর্তটা যেন সেকেন্ডে বদলে গেলো,
ফারুক সাহেবের চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো তিনি যেন পলকের মধ্যে যেন শতকের চিত্র দেখতে লাগলেন। তিনি দেখলেন রোদের প্রতিটি কণা তরঙ্গাকারে বলিত হয়ে মানুষের মিছিলে যোগ দিচ্ছে। যেখানে একদল গৃহহীন মানুষ না খেয়ে মৃতের মতো পড়ে আছেন পার্কের ঘাসে
সেই পার্কে বিলিতি কুকুর নিয়ে হাঁটতে যাচ্ছেন আরেকদল মানুষ। তাদের হাত পা চলন-বলন দেখতে মানুষের মতো হলেও তাদের পাশে পাশে হেঁটে যাচ্ছে জানোয়ারের ছায়া। অই জানোয়ারটার হাতে একটা দৃশ্যহীন শেকল যে শেকলটা আটকানো আছে
মানুষের গলায়। ফারুক সাহেব আরও দেখলেন , একদল মানুষ বিড়াল-কুকুর নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন এসি গাড়িতে চড়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা ভিক্ষুকেরা তাদের গাড়ির জানালায় অনবরত টোকা দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তারা তা তাকিয়েই দেখছেন না।
ফারুক সাহেব আরও দেখলেন, ইউনিভার্সিটির একদল তরুণ-তরুণী পথে আটকিয়ে তাদের পথে নাটক “মানব-উন্নয়ন” পরিবেশন করছে। যেখানে একদল কুকুর একদল মানুষকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। একদল বিড়াল মানুষের প্লেটে বসে ছুড়ি মারছে। আরেকদল সাপ ফণা তোলে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে ধ্বংসন করছে।
দুধের মতো সাদা পাজ্ঞাবি আর পায়জামা পড়া একটা কালো মানুষ। যার মাথা থেকে ভাগ হয়ে গেছে পৃথিবীর সব নর্দমার লাইন। যার কানে হুইস্পারিত হচ্ছে অগণিত সব মিথ্যাবাদীদের মুখ। তার মুখের সামনে মাইক্রোফোন চুম্বকের মতো পৃথিবীর সব ধুলি টেনে নিচ্ছে। তিনি মাইক্রোফোনে বলছেন মানুষের স্বপ্ন ও সংগ্রামের কথা।
তিনি বলেছেন , আপনারা কুকুর বিড়ালের চিকিৎসার পেছনে টাকা খরচ না করে , অসহায় সম্বলহীন মানুষ যারা হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে শুধু মাত্র টাকার অভাবে চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে তাদের চিকিৎসা করুন। পথশিশুদের আবাসন করুন তাদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করুন, বৃদ্ধাশ্রমে দান করুন। এ-ই বলে লোকটা ডগ স্কোয়াড নিয়ে চলে গেলেন।
৯টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
আপনার এই পর্বের শেষের লাইনগুলি যদি সমাজের প্রতিটি মানুষ যার যার অবস্থান থেকে পালনের জন্য এগিয়ে আসে তবে অসহায় সম্বলহীন মানুষেরা চিকিৎসা, খাদ্যাভাবে ভুগবে না।
পশুদের জন্য হাজার হাজার টাকা নষ্ট করার লোকদের আমি বলব বিকৃত মানসিক রূচি।
যাহা হোক আপনার এই পর্বে বাস্তবতা ফুঁটিয়ে তুলেছেন।
শুভ কমানা রইলো।
দালান জাহান
সুন্দর মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা দাদা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার বাস্তবতা তুলে ধরলেন । আমাদের চারপাশের ধনী ব্যাক্তিরা পোষ্য প্রাণীদের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তা দিয়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকা, হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থাকা জীবন বেঁচে যায়। মানবধর্ম বড় ধর্ম। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা রইলো
দালান জাহান
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু
ফয়জুল মহী
সৌন্দর্যময় কথামালা । উৎকৃষ্ট চিন্তার চয়ন ।
দালান জাহান
ধন্যবাদ ভাই শুভেচ্ছা
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ মানবতার লেখা গল্প কবি জাহান দা
অনেক শুভেচ্ছা রইল————–
দালান জাহান
ধন্যবাদ দাদা ভালো থাকুন সবসময়
রোকন রিপন
ভিন্ন ধারার গল্প। শুভকামনা রইলো।