
প্রিয় মাধু্বীলতা,
বছর ছয়েকপর তোমার নামে চিঠি লিখছি! পাঁচ টাকার কলম আর পঞ্চাশ টাকার ডায়রীতে কতটুকু আবেগ লিখা যায় তা আমার জানা নেই। পরনে সেন্টুগেঞ্জি, বা’হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে দশটাকার পুরনো নিকোটিন! হাত কাঁপছে আজ। জানিনা চিঠি পড়ে কতটা অপমান কিংবা ঘৃণা করবে আমায়! আমি আজকাল নেশাও করি। অফিস থেকে ফেরার পথে কোনো এক নির্জন ফাঁকা রাস্তায় উন্মাদের মত সিগারেট টানতে টানতে বাসায় ফিরি রোজ! কেউ কিছু বলে নাহ। আর কেউ কিছু বলবেও নাহ কোনোদিন। আমি শহর ছেড়ে পালিয়েছি আজ এক মাস হল! অভিমান আর অভিযোগের তীব্র নেশায় এই শহর আমাকে মুক্তি দেইনি। সেদিন সন্ধ্যাবেলা তোমাকে খুব মনে পড়ছিলো। ফোনের স্কিনে তোমার ছবিটা দেখে মূহুর্তে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো আমার! জানো মাধু্বীলতা, আমার নাহ আজকাল খুব কাঁন্না পায়। মাঝে মধ্যে কারণ ছাড়াই হুহু করে কাঁদি। কি করবো বলো কাঁন্নায় যাদের সুখ তাদের তো কাঁন্নাই মানায়!যাইহোক, আমার কথা বাদ দাও। তোমার কথা বলো। কেমন আছো তুমি? তোমার বারান্দার মল্লিফুল ওরা কেমন আছে? আগের মত যত্ন নিচ্ছো তো? রোজ ফুলগুলোতে পানি দিবে,আজতো ওরাই একমাত্র স্মৃতি! আচ্ছা মাধুবীলতা, তোমার মনে আছে সেইদিন মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে দুজন রিক্সা দিয়ে ঘুরছিলাম। হঠাৎ তুমি বায়না ধরলে আইসক্রীম খাবে! আমি চোখদুটি সিঁদুর লাল করে বললাম এই ঠান্ডার মধ্যে আইসক্রীম? তুমি বললে কাশি হলে ডাক্তার তো আছেই। আর তুমি ঔষুধ কিনে দিবা। তারপর দুজন বেশ কয়টা আইসক্রীম খেয়ে পুরো শহর ঘুরছি! বিখ্যাত জাদুরঘর, ঝর্ণার লেক, শিশু পার্ক সহ খুব সুন্দর একটি মুভি দেখেছিলাম সেদিন। মুভি দেখে বাড়ি ফেরার পথে তুমি আমার হাত ধরে বসে ছিলে। রিক্সার ঝাকুনি খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে আমায়। আমি তোমার স্পর্শে উজ্জীবিত হয়েছিলাম লজ্জাবতী ফুলের মত।।
তারপর, আর কোনোদিন দেখা হয়নি আমাদের। ঠুনকো কিছু ভুলে সেই যে চলে গেলে আর কোনোদিন ফিরোনি তুমি! প্রিয় মাধুবীলতা, আমি এখনো তোমার জন্য অপেক্ষা করি। প্রতিরাতে ফজরের আগে তাহাজ্জুদ পড়ে প্রার্থনা করি প্রভুর নিকট, যেন আমার মাধু্বীলতা আজন্মকাল ভালো থাকে। পৃথিবীর সব সুখ যেন দৌঁড়ে এসে লেপ্টে পরে তোমার পায়ের নিকট! প্রিয় মাধু্বীলতা, আমি ভালো নেই! আজকাল বুকের চিনচিন ব্যথাটাও ক্রমশ বাড়ছে। যদি কোনোদিন কাওকে না জানিয়ে ওপারে চলে যাই একনজর দেখতে আসবে তো?
ইতি তোমার অনিমেষ
তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯
১৮টি মন্তব্য
রাফি আরাফাত
আহা মাধবীলতা। ভালো লাগলো ভাই। ধন্যবাদ
মাছুম হাবিবী
ধন্যবাদ ভাই
নিতাই বাবু
পড়লাম দাদা, আপনার মাধবীলতার কাছে লেখা চিঠি খানা। আপনার মাধবীলতা ভালো থাকুক সবসময়।
মাছুম হাবিবী
অনেক ধন্যবাদ দাদা
মোঃ মজিবর রহমান
কস্টার্জিত বালবাসা হারিয়ে গেলে বুকের মাঝে চিন চিন করে। মাধবি পাক পত্র উত্তর পরে জানব ইন শাল্লাহ।
মাছুম হাবিবী
ধন্যবাদ
সুরাইয়া পারভিন
পাঁচ টাকার কলম আর পঞ্চাশ টাকার ডায়রীতে গোটা একটা জীবনের গল্প লেখা যায়। কিছু স্মৃতি কখনো হয়না বিস্মৃত। সেদিন রিক্সার ঝাঁকুনিতে শক্ত করে জড়িয়ে যে অনুভূতি টুকু দিয়েছিলো মাধবীলতা।সেই অনুভূতির অনুভবেই হয়তো একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব।
ভালোবাসা ভালো থাকুক যেখানেই থাকুক ।
চমৎকার লিখেছেন
মাছুম হাবিবী
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু
আরজু মুক্তা
স্মৃতিগুলো বড় বেসামাল। কখন কোন জানলার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয়।
মাছুম হাবিবী
একদম ঠিক আপু
অনন্য অর্ণব
শব্দের চয়ন বচন প্রকৃতি আর প্রত্যয় এসব ব্যাপারে আরো বেশি যত্নবান হোন। প্রতিটি লেখাই একেকটা দলিল।
শিরোনাম- মাধুবীলতা। নাউন এর ক্ষেত্রে ভুল না হলেও মূল শব্দটা মাধবী ফুল থেকেই এসেছে। সেক্ষেত্রে নামটা “মাধবীলতা”- লিখলেই বেশি সুন্দর লাগতো। “বাঁ’হাতের”, এই শহর আমাকে মুক্তি “দেয়নি”, ফোনের “স্ক্রিনে”, কান্না লিখতে চন্দ্র বিন্দু হয় না, মল্লিফুল চলিত প্রয়োগ না করলে মল্লিকা লেখাই ভালো, ঔষুধ না, হয়তো ওষুধ অথবা ঔষধ, ঝাঁকুনি, লজ্জাবতী লতার মতো, আর এখানে ভাবের অমিল আছে, মানুষের স্পর্শে লজ্জাবতী উজ্জীবিত হয় না বরং চুপসে যায়- এক্ষেত্রে আপনি সকালের সূর্যমুখী প্রয়োগ করতে পারেন, কাওকে- না হয়ে কাউকে হবে।
পুরো লেখাটায় একটা করুণ আর্তি ছিলো। একবারের বেশি পড়তে ইচ্ছে করেনি। কান্না পাচ্ছিলো খুব। নিজের সাথে মিলে যাচ্ছে বলে কিছু দৃষ্টিকটু ত্রুটি তুলে ধরলাম। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
মাছুম হাবিবী
অনেক খুশি হইছি ভাই ভুলগুলো শোধরে নিব। আরো যত্নবান হব ইনশাআল্লাহ্। ভালো থাকবেন ভাই
রুমন আশরাফ
অনন্য অর্ণব ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে আমি একমত।
করুণ আর্তিটা আমার ভেতরও নাড়া দিয়েছে।
ছাইরাছ হেলাল
হারানোর কষ্টের তীব্রতা লেখায় অনুভব করছি।
আর একটু মন দিয়ে লিখুন।
মাহবুবুল আলম
কালের স্রোতে চিঠির যুগ হারিয়ে গেছে কবেই। তবে আজ আপনার চিঠি পড়ে ফিরে গেলাম সুদূর অতীতে। কী যে মধুর দিন ছিল সেই চিঠির যুগে। এখন ক্ষুদেবার্তার যুগে চেঠির সেই আবেগ, সেই আবেদন অনেকটাই মাটিচাপা পড়ে গেছে। ভাল থাকবেন।
মনির হোসেন মমি
চিঠিটা পড়ে মুগ্ধ হলাম।হায়রে মাধবীলতা !!
এস.জেড বাবু
যেটুকু লিখেছেন, পঞ্চাশ পয়সায় কাগজে ধরে যাবে।
পঞ্চাশ টাকার ডাইরি পড়তে পড়তে হয়ত আমিও কাঁদতাম, হাসতাম।
আর হ্যাঁ –
মাধুবীলতা’রা কখনো হয়ত দেখতে আসে না, এমনি শেষ বেলায় ও ।
মুগ্ধ
নৃ মাসুদ রানা
অনেকদিন পর প্রেমের চিঠি পরলাম…