হঠাৎ বিকটশব্দে বিস্ফোরণ হতেই রহমান সাহেবের চারতলা বাড়িটা ভেঙ্গে পরে গেল, সাথে সাথে পথচারী আর রিক্সাওয়ালা সেই ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পরে গেল, ইলেক্ট্রিক তারের খাম্বা উড়ে গেল, পানির লাইন ফেটে গেল, মজনু ভাইয়ের হোটেলের পুরী আর পিয়াজু রাস্তায় ছড়িয়ে গেল, প্রতিবেশির বাড়িটাও অক্ষত রইল না, শুধু পুরু দেয়াল আর টাইল্সের কারণে মসজিদটা রক্ষা পেল, আরমানিয়া স্কুলটাও বিশাল মাঠের বরাতে বেচে গেল তবে প্রশাসনিক ভবনটা গুড়িয়ে গেছে, ধোয়ায় প্রায় আধমাইল এলাকা ছেয়ে গেল; এই অবসরে পুলিশ, ফায়ার বিগ্রড, বোম্ব স্কোয়াড আসার আগেই সাংবাদিকরা লাইভ টেলিকাস্টের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল।
এতসব বিশৃংখলার মধ্যে জমির চাচা’র গুড়ো গুড়ো হয়ে পরা টংটার কথা কারো মনে থাকল না, শুধু কিছু পোলাপান ধ্বংসস্তুপের ভিতর থেকে চাচাকে বের করার চেষ্টা কএর যাচ্ছে। জমির চাচার টং-এ প্রতিদিন আড্ডা জমে, বিশেষ করে বিকালের দিকে। চা-সিগারেটের সাথে সাথে চলে সমাজ, রাজনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা-বার্তা, আর সুযোগ পেলেই চাচা তার যুদ্ধের সময়কার গল্প বলত।
কোন এক বর্ষণমুখর দিনে এই এলাকায় মিলিটারী এসে আরমানিয়া স্কুলের কুড়েঘরটা দখল কএর নেয়। হ্যা, সেই সময় কুড়েই ছিল বটে। আর আসেপাশে এত গিঞ্জি বস্তি ছিল নাকি? প্রায় বুজে যাওয়া নর্দমাটা এত নোংরা ছিল? আর বড় ব্যাংকটার ওখানে ছিল ধানখেত।
এমনি দিনে এক রাতে কিছু চ্যাংরা ছেলেপিলে চাচার বাড়িতে এসে ডুকে। চাচা ওদের পেয়ে খুশিই হয় আর ঘরের ভিতর গাদাগাদি করে লুকিয়ে রাখে। ঠিক তার পরের রাতেই চ্যাংরাগুলো অস্ত্র নিয়ে স্কুলে হামলা চালায়, শেষ মিলিটারীটাও মারা পরে সেদিন। গল্প এই পর্যন্তই।
কিন্তু জমির চাচাও যেটার হদিছ জানে না, তা হল স্কুলের কাছেই ছোট বাংকারের ভিতর ছিল লুকিয়ে রাখা কয়েকটি শেল, মিলিটারীদের রসদ। এবং সেদিনের হামলায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে শেষ মিলিটারীটা মারা যাওয়ার সাথে সাথে সেই বাংকারের অস্তিত্বের শেষ সাক্ষীটাও শেষ হয়ে যায়। ক্রমে ভারী বর্ষণে বাংকারের গর্ত বুজে যায় আর শেলগুলোর উপর মাটির চাপ পরে।
এরপর একদিন ব্যবসায়ী রহমান সাহেব ঠিক সেইখানেই তার দোতলা বাড়িটা বানায়। এতে শেলের উপর চাপ আরো বাড়তে থাকে। রহমান সাহেবের ছেলেটাও দিন দিন বড় হতে থাকে, এবং বিয়েও করে ফেলে। তখন বাড়িটাকে তেতলা করা হয়। পরে অধিক লাভের আশায় কিছু ভাড়াটিয়া বাগানোর জন্য বাড়িটা চারতলা হয়। ফলে চাপ দ্বিগুণ হয়। নতুন ভাড়াটিয়ায় বাড়িটায় লোকসমাগম বাড়ে। এদিকে রহমান সাহেবের নাতিটাও দিন দিন বড় আর ভারী হয়। তারপরই একদিন ঘটনাটা ঘটে, কারণ মাটির নিচে সিক্ততার কারণে খোলসে জং ধরলেও শেলগুলোর বিস্ফোরক প্রায় অক্ষতই ছিল।
তো সেদিন রহমান সাহেব টিভি দেখতে দেখতে পুত্রবধুকে বলছিল, – “দেখছো বউমা, রাজনীতি দেশটারে এক্কেবারে খাইয়া ফালাইলো!”
আর এ সময়ে নাতিটা ছুটে এসে জানায়, – “দাদু, আব্বা ফ্রিজ আনছে।”
রহমান সাহেবের ছেলে তখন আরো লোক নিয়ে ধরাধরি করে ভারী ফ্রিজটা ঘরে ডোকায়। তখনই, ঠিক তখনই মাটির তলে শেলগুলো বিকটশব্দে বিস্ফোরিত হয়, আর ধোয়ায় প্রায় আধ-কিলোমিটার এলাকা ছেয়ে যায়….
**এক বন্ধুর অনুরোধে ব্লগে আসা। আপাতত একটা পোস্ট রেখে গেলাম, শিঘ্রই নিয়মিত হবার ইচ্ছা থাকল।**
১২টি মন্তব্য
হৃদয়ের স্পন্দন
যুদ্ধের ভয়াবহতা যে এখনো শেষ হয়নি তার অনেকটা ফুটিয়ে তুলেছেন! স্বাগতম সোনেলায়, আপনার বন্ধু দীর্ঘজীবী হোক -{@
রাইসুল জজ্
সোনেলায় স্বাগতম
স্বপ্ন নীলা
সোনেলায় স্বাগতম
ভাল লিখেছেন—–নিয়মিত লিখুন
প্রহেলিকা
ভালো লেগেছে গল্প, চমত্কার বলতেই হয়। গল্পের প্লটে মুক্তিযুদ্ধের ও বর্তমান সমাজের মিশেলও বলা যায়। উপস্থাপনাও বেশ তবে শিরোনামের শেষাংশটা গল্পের সাথে যায় না, এমন গল্প মর্মস্পর্শী কিন্তু শিরোনামের কারণে হয়তো অনেক পাঠক বঞ্চিত হবে।
লিখুন নিয়মিত সোনেলায় স্বাগতম আপনাকে।
শুভকামনা, শুভ ব্লগিং। -{@
বৃষ্টিহত ফাহিম
হুম, তা-ই দেখছি। শিরোনামের ব্যাপারে আরো সতর্ক হইয়া উচিৎ ছিল।
হৃদয়ের স্পন্দন
এখনো চাইলে সম্পাদনা করে নিতে পারেন
বৃষ্টিহত ফাহিম
থাকুক, যা ছিল। থাক ওইটা বরং মুছেই দেই 🙂
জিসান শা ইকরাম
স্বাগতম সোনেলায়।
লিখুন এমন ভালো লেখা নিয়মিত।
মেহেদি পাতা
ভেবেছিলাম গাজা খেয়ে কেউ বোম মেরেছে, পরে দেখলাম শৈলকুপ
জমির চাচার সাথে রানাপ্লাজা মিল পেলাম, আর আপনার উড়ে যাওয়া পানির লাইন মনে করিয়ে দিলো শিশু জিয়ার কথা, যদিও আমার কথাগুলো কাকতালীয় তবে ছোট গল্প হিসেবে আমি দশে দশ দিবো
বৃষ্টিহত ফাহিম
হুম ঠিকই ধরেছেন। এরকম আরো অনেক বিষয় মিলিয়েই লেখার চেষ্টা করেছি। তবে মূল জিনিসটা হল ওই বিস্ফোরকগুলোই, একাত্তরের পরাজিত পাকি অপশক্তির প্রতীক। আড়ালেই লুকিয়ে থাকে, আর মাঝে মাঝে সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে হাজির হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
নুসরাত মৌরিন
যুদ্ধ এখনো শেষ হয় নি।
শেলগুলোর মতি পাকি প্রেত্মাতারা এখনো রয়েছে এখানে ওখানে।
ভাল লেখা।
সোনেলায় স্বাগতম। -{@
নুসরাত মৌরিন
#শেলগুলোর মত