
গোপাল ভাঁড় হচ্ছে রাজ্যসভার একজন ভাঁড় যার কাজ সভার সদস্যদের হাসানো। তার কাজে ভালো কিছু থাকলেও তার কথায় সবারই হাসি পায় বলেই সে ভাঁড়। আর এ কারনেই রাজ্যসভায় রাজার প্রিয়পাত্র হয়ে থাকে গোপাল ভাঁড়। রাজার কাছে তার সাতখুন মাফ।
করোনা আতঙ্কে বিচলিত যখন সবাই ঘরে নিজেদের বন্দী করে রাখছে, গোপাল ভাঁড় তখন বিশাল ভুঁড়ি নিয়ে হেলেদুলে বিজ্ঞানীর সাথে জনমানবশূন্য রাস্তা দিয়ে গরুরগাড়িতে করে যাচ্ছিলো পা দোলাতে দোলাতে।
আর যায় কোথায়!! শয়তান মন্ত্রী গোপাল ভাঁড়কে জব্দ করার জন্য দিলো রাজার কানে কূমন্ত্র। রাজা তৎক্ষণাৎ হুকুম দিলেন- গোপাল রাজ্যসভার সদস্য হলেও আইন অমান্য করেছে, তাঁকে শাস্তি পেতেই হবে।
রাজার হুকুমমত লাঠিয়াল বাহিনী রাস্তায় যাকেই পাচ্ছে তাকেই মারছে। গোপালকে যখন জিজ্ঞেস করলো- তুমি জানোনা একসাথে দুইজন বের হওয়া যাবেনা, আর তিনফুট দূরত্বে থাকতে হবে এটা রাজার আদেশ?
এসব শুনে হাবাগোবা বিজ্ঞানী ভয় পেয়ে কিছুটা দূরে অবস্থান করলো। আর অতি চালাক গোপাল বুক ফুলিয়ে লাঠিয়ালকে বললো- তুমি কে হে? আমি রাজ্যসভার লোক তুমি জানো?
আর যায় কোথায়! লাঠিয়ালের মাইর শুরু হলো। গোপাল তুমি রাজ্যসভার সদস্য হলেও আইনের উর্ধ্বে নও। দু’জন তিনফুট দূরত্বেও ছিলেনা তোমরা। তোমাদের দিয়ে করোনা ছড়ালে আমাদের পরিবারের কি হবে?
মাইর খেয়ে গোপালের প্রেস্টিজ পাংচার তাও আবার বিজ্ঞানীর সামনে! যেহেতু শয়তান মন্ত্রী এবার সঠিক কাজটিই করেছে তাই গোপাল পড়েছে বেকায়দায়। পিছনে কলকাঠি নাড়া মন্ত্রীকে জব্দ করার এখন একটাই উপায় বাতাসে উড়োবুলি ছড়াতে হবে। তাই সে ভাবলো এমন কিছু করতে হবে যাতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করাও যায় আবার মানুষও তার কাজে হাসে।
এসবের জন্য সে যেটা করলো-
– সবাইকে বলতে লাগলো আমি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় করনীয় সম্পর্কে বিজ্ঞানী সহ রাস্তায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করছিলাম।
– আমরা রাজার লোক পরিচয় দেবার পরেও লাঠিয়াল আমাকে মেরে পক্ষান্তরে রাজাকেই অপমান করেছে। এর বিচার করতে হবেই হবে।
– আমি যেহেতু দূর্বল এই সুযোগে কুচক্রী মন্ত্রীর লোকেরাই আমাকে মেরেছে, সবকিছু বিরোধী দলীয় মন্ত্রীর কারসাজি।
– আশেপাশে আরো লোক ছিল তাদের না মেরে কেন শুধু আমাকেই মারলো? এসব আসলে রাজ্যসভার সদস্যদের ইচ্ছেকৃত অপমান করার ফন্দি। এসবের সাক্ষী হচ্ছে বিজ্ঞানী।
– মুখবদন নামক পত্রিকায় নিজের সুবিধামত গালগপ্পের বিস্তারিত লিখে বিলি করতে করতে লাগলো। সেখানে লেখা ছিলো- ” যারা আমাকে মেরেছে তারা এই রাজ্যের সম্মানীত লোকদের অন্য রাজ্যের লোকেদের কাছে ছোট করতেই আমার মত দেশপ্রেমিককে মেরে এসব প্রচার করছে। আসলে সেই লাঠিয়াল বাহিনী পূর্বোক্ত রাজার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে সব বিরোধী দলের চক্রান্ত বোঝাই যায়।”
মাঝেমধ্যে গোপালের এই ভাঁড়ামি এত চরম বিরক্তির পর্যায়ে পৌঁছায় যে রাজ্যসভার অন্যন্য সদস্যরা তার উপর বিরক্ত হয়ে রাজার কানে নালিশ করতে বাধ্য হয়।
যেহেতু গোপাল ভাঁড় রাজ্যসভার সদস্য তাই সত্যমিথ্যার মিশেলে সত্যকে খুঁজতে গিয়ে এসব শুনে রাজাও কিঞ্চিত বিচলিত হয়ে পড়লেন। আসল সত্য জানতে বিজ্ঞানীকে ডেকে বিস্তারিত শুনে তিনি হলেন থ’!
কারন বিজ্ঞানী বলেছে- ভোজনরসিক গোপাল ভাঁড় তাকে রাজভোগ নেমন্তন্নের মিথ্যে কথা বলে নিয়ে গিয়েছিল সাথে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী বুঝতে পেরেছিলো, আসলে রাজার নাম ভাঙিয়ে গোপাল যাচ্ছিলো কারও বাসায় জোরপূর্বক দাওয়াত খেতে। বিষয়টি যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্যই বিজ্ঞানীকে সাক্ষী রাখার জন্যই সে সাথে নিয়েছিলো।
সব শুনে রাজা ভাবলেন, শাঁক দিয়ে মাছ নয় গোপাল আসলে মাছ দিয়ে শাঁক ঢাকার মত গুরুতর অন্যায় করেছে। লাঠিয়ালের সেই সাজা তার প্রাপ্য ছিলো। যাক তাহলে কুটিল মন্ত্রী এ যাত্রায় বেঁচে গেলো। আর গোপালের সাথে গিয়ে বিজ্ঞানী নিজেও আইন ভঙ্গ করেছে। তাই সাজা দুজনেরই প্রাপ্য। একা গোপাল মাইর খাবে আর বিজ্ঞানী খাবেনা তাই কি হয়?
আড়াল থেকে সব দেখে মন্ত্রী মিটিমিটি হাসে আর মনে মনে বলে- দেখলেনতো রাজামশাই! রাজ্যসভার সবাই কার্যক্ষেত্রে ভালো হয়না। আপনার প্রিয় গোপাল ভাঁড় আমাকে কূটিল বললেও এই বিপদে আমিই আপনার সম্মান বাঁচালাম।
এখন আসি মূল কথায়। ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখলাম মাস্ক পরিহিত এক তরুনকে রাস্তায় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য লাঠি দিয়ে দু’বার পিটিয়েছে। আর সেসময় তরুনটি বলতে শোনা যাচ্ছিল – আমি ছাত্রলীগের কর্মী!!
করোনার এই দূর্যোগের মূহুর্তে যেখানে সবাই হিমশিম খাচ্ছে, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় বার বার রাস্তার জনসাধারণকে সচেতন আর সতর্ক করছে যেন তারা জটলা না করেন। একে অপরের সাথে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে মেলামেশা করেন। অথচ কেউ তা মানছেন না কেন সেটাই আশ্চর্যের!
এই দূর্যোগে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার একটাই উপায় ঘরে থাকা। প্রয়োজনে বাইরে যেতে হতেই পারে তবে দলবদ্ধ হয়ে আড্ডা, জটলা এসব পরিহার করুন। আর হ্যা, রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নাম নিয়ে নিজেকে, সেই সঙ্গে কোন সংগঠনকে ইচ্ছেকৃত কলুষিত করবেননা।
করোনা কোন দল দেখবে না। আপনি হিজাবী না পাঞ্জাবী টুপি পরিহিত নাকি হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান এসব কিচ্ছু দেখবেনা। সুযোগ পেলে স্রেফ মাটির তলায় নিয়ে গিয়ে আপনাকে পঁচাবে কিন্তু।
মাছ দিয়ে শাঁক ঢাকা আপনাদের এসব কর্মকান্ড আপনাকে নিজেকেই গোপাল ভাঁড় হিসেবে প্রমাণ করে। আপনি রাজ্যসভার সদস্য হলেও রাজা কিন্তু আপনাকে ছেড়ে কথা বলবেনা। কারন রাজার কাছে প্রজাদের সুরক্ষাই সর্বাগ্রে, গোপাল ভাঁড়ের মত লোক হাসানো কর্মকান্ড করা আপনি নন।
২৪টি মন্তব্য
সুরাইয়া নার্গিস
সময় উপযোগী পোষ্ট খুব ভলো লাগছে।
সহমত পোষন করছি আমাদের সবার সচেতনতা থাকা এবং করোনা প্রতিরোধে ঘরে থাকা অকারনে বাইরে ঘুরাঘুরি না করে নিজে সেইভ থাকুন অন্যকে সেইভ রাখুন।
আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করুন।
তৌহিদ
জি আপু, একদম ঠিক বলেছেন আমাদের সচেতনতার বিকল্প নেই। কেন যে আইন অমান্য করি?
নাজমুল হুদা
অনেক সুন্দর একটি পোস্ট।
ঐসব গোপাল ভাঁড়রা মনে করে সংগঠনে নাম লিখলে বললে স্বর্গের টিকেট কেটে বসা সে। চাইলে যখন তখন যা খুশি তাই করতে পারবে। এটাও একটা বার মনে করে না পাপ বাপকেও ছাড়ে না।
নিজের পরিচয়ে বড় হওয়া এবং কর্ম করা তৃপ্তির।
তৌহিদ
আমার কাছে মনে হয় নিজে বাঁচার জন্য স্বেচ্ছাকৃত দলের নাম নিয়েছে। আর্মির কাছে সবাই সোজা। মাইরের উপর ঔষধ নাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
অতি উৎসাহীদের দলের নাম ভাঙ্গানো কাসলত
জীবনে ও যাবে না। ভাবে মাফ পাবে
করোনা যে কাউকে ছাড়বে না তাই তারা বুঝলো না।
গোপাল ভাঁড়ের গল্পটি ভারী মজার।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
করোনা কাউকেই ছাড় দেবেনা। সবারই নিজের সচেতনতা জরুরি অবশ্যই।
ভালো থাকবেন দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
করোনার কাছে স্বজনপ্রীতি বলে কিচ্ছু নেই।
সে আস্তিক/নাস্তিক/রাজা/উজির/নাজির ডাক্তার /বিজ্ঞানী কাউকেই পরোয়া করে না।
তৌহিদ
হ্যা একদম ঠিক ভাই। নিজেরই সাবধান থাকতে হবে।
ফয়জুল মহী
অনুপম। সুচিন্তিত , সুচারু মনোভাবের প্রকাশ ।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
ছাত্রলীগ পরিচয় দেয়ার পরেও সেনাবাহিনীর সদস্য তাকে পিটিয়ে ভালো করেছে।
করোনা কি ছাত্রলীগ, ছাত্রদল দেখবে?
মাইরের উপ্রে ঔষধ নেই আসলে।
গোপাল ভাড়কে এনে দারুন এক ম্যাসেজ দিলেন এই লেখার মাধ্যমে।
শুভ কামনা ভাই।
তৌহিদ
হ্যা ভাই, মাইরের উপ্রে ঔষধ নাই। রম্যে রম্যে পাঠককে মেসেজ দেয়ার চেষ্টা আর কি! নিজের সচেতনতা জরুরি।
ভালো থাকবেন ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সরকার দলীয় সবকিছু তে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে করতে করোনার বেলায় ও ক্ষমতা দেখাতে আসে। কোথায় আছি আমরা?? ধন্যবাদ ভাইয়া ভালো লেগেছে গোপাল ভাঁড়ের উদাহরণ টা। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
গল্পের মাধ্যমে পাঠককে সতর্ক করার চেষ্টা করলাম আর কি! ভালো থাকবেন আপু।
এস.জেড বাবু
এদের মতো ছেলেদের দলীয় পরিচয় দিতে কে বলেছে?
ফাজিল / বেহায়া টাইপের মানুষের কোন দল হয়না-
সে যে দলই হউক।
কুলাঙ্গার হলে বাপ ও ছেলেকে ছেলে বলে পরিচয় দেয়না-
এদেশে দল তা দেয়। (হয়ত)
উপযুক্ত পোষ্ট
প্রদীপ চক্রবর্তী
সময়োপযোগী লেখার সাথে আমার গোপাল দাদুকে এনে লেখাটা সুচারুভাবে ফুটে উঠেছে।
করোনার সাথে কারো স্বজনপ্রীতি নেই।
যারা ক্ষমতা দেখিয়ে অন্যায় অবিচারে লিপ্ত হয় তাদের ধংস হোক করোনায়।
তৌহিদ
রাইট দাদা, আসলে গোপাল ভাড় সকলেরই উপকার করে। তাই নাম ভাঙানো উচিত নয়।
ভালো থাকবেন দাদা।
তৌহিদ
ভাই মাইরের উপ্রে ওষুধ নাই। নিজে বাঁচার জন্য ছেলেটি হয়তো দলের নাম নিয়েছে। সবার সতর্কতা জরুরি। ভালো থাকবেন ভাই।
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার সচেতনতামূলক গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট। করোনার কাছে সবাই অসহায়।
তাকে ধরবে তাকে সজা মাটির নিচে গিয়ে পঁচাবে।
তাই সাবধানতা অবলম্বন করা খুব জরুরি।
তৌহিদ
গল্পের মাধ্যমে পাঠককে সতর্ক করার চেষ্টা করলাম আর কি! ভালো থাকবেন আপু।
হালিম নজরুল
চমৎকারভাবে সাজিয়েছেন ভাই।
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
রেহানা বীথি
এই সময়ে যারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে গা বাঁচতে চায়, তাদেরকে আরও বেশি পেটানো উচিত।
সুন্দর সাজিয়েছেন লেখাটা।
তৌহিদ
গল্পের মাধ্যমে পাঠককে সতর্ক করার চেষ্টা করলাম আর কি! ভালো থাকবেন আপু।