ট্রেন চলতে ধরলে মনে হয় আর থামবে না। ট্রেনের সাথে দুলুনি, ঝকঝক আওয়াজ! পান, বিড়ি, সিগারেট ,দোতরার টুং টাং!
বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য ঢাকা যাচ্ছি।সময় ২০০৩! বাসে মাথা ঘোরায়,বমি হয়। প্রথম ট্রেন ভ্রমণ ! একটু শিহরণ! আমার আবার যাত্রাপথে ঘুম ধরেনা। আব্বা গল্প করছেন! কিছুক্ষণ কারেন্ট নিউজ পড়ি, কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখি। আর আমি ভাবি কখন হুইসেল দিয়ে গাড়ি থামবে। এন্টারসিটি গুলো খুব কম স্টেশনে থামে। ভাবলাম, দুইটা বগির মাঝে যে জানালা থাকে ওখানে গিয়ে ঠাণ্ডা বাতাসে শীতল হই, সেই সাথে মনের মাঝে ডুব দেই।
রাতের ভ্রমণ করার মজাটাই আলাদা। চাঁদও সঙ্গ দেয়, একা মনে হয়না। বিলাসি জোসনা, ঐ দূরের প্যাঁচার ডাক। হাঁটুরের ঘরে ফেরা লণ্ঠন হাতে। উফ, অভাবনীয়।কখন যেনো চোখ বুজে এসেছিলো।
কে যেনো গলা দিয়ে খুশখুশ করে কাশি দিয়ে আমাকে জাগানোর চেষ্টা করছে।
চমকে…….আপনি?
আমি সজল।
তো?
বিসিএস দিতে যাচ্ছি !
হাসি দিয়ে বললাম, আমিও! কিন্তু
এখানে কেনো? এটা জানতে চাচ্ছেন ।
হুম।
ভালো লাগছেনা। সবাই কথা বলছে। এসে অবশ্য লাভ হলো। নীল জোসনায়, নীল পরীকে দেখা গেলো। আপনাকে হুমায়ুন স্যারের তিথির মতো লাগলো। অনেকক্ষণ চেয়েছিলাম।
ধ্যাৎ! কি যে বলেন।
সত্যি! এমন করে কখনো কারও দিকে দেখেনি। বাতাস আপনার চুল নিয়ে খেলছে। চাঁদ চুমো দিচ্ছে কপালে। আর আপনার নীল ড্রেস, আপনি যেনো এক মাধুকরী। অপুর্ব মায়ায় মেশানো আপনার মুখ। কবিতা বলতে ইচ্ছে করছে আপনাকে নিয়ে। যদি অনুমতি দেন।
অনুমতি দেয়া হলো।
নীল কবরী, নীল টিপ
তুমি নীলাঞ্জনা ।
তুমি মাতালে আমায় এ রাতে
সুবাসিত ফুলে
বাসন্তী সুবাসে
আমি মুর্ছিত, আমি ভাষাহীন।
এখনি ভাষাহীন হলে হবে। আরও চার ঘণ্টা বাকি। ট্রেনের হুইসেল শোনা যাচ্ছে। কোন স্টেশন ?
ময়মনসিংহ মনে হয়! আপনার সিট কোথায় পরেছে?
মনে হয় সারা ঢাকা শহর খুঁজবেন?
তা নয়!
কিন্তু আমি চাচ্ছি ,আপনি শুধু এই ট্রেনের আমার সহযাত্রি হয়ে থাকবেন।কখনো ট্রেনের শব্দ শুনে, স্মৃতির পাতাটা নড়ে উঠে, মনে করিয়ে দেবে আমায়! আমি ভাসবো মানসপটে! কখনো মনে হবে, আমিই সেই প্রেমিকা! যাকে আপনি খুঁজেছিলেন। অথবা আপনার ভাবনার নীল পরী নীলাঞ্জনা! আমিও আপনাকে নায়ক মনে করে, পাশের পুকুরে আনমনে ভাসিয়ে দিবো পাতার ভেলা।ভেলা দুলবে, স্মৃতিও দুলবে। অকারণে হাসবো,ভাসবো। কেমন হবে?
নিঃশ্বাস গাঢ় করে উনি বললেন, তবে তাই হোক!
আমরা দুজন দুই কম্পার্টমেন্টের দিকে গেলাম। অকারণ, নিথর,নিস্তব্ধ, সুক্ষ্ম একটা টান টেনে ধরে চলবে আজীবন স্মৃতির পাতায়।
১৬টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
বাহ্ কি সুন্দর শুভ যাত্রা।এ যেন হুমায়ুন স্যারের অনুগল্প পড়লাম।সরি হুমায়ন আহমেদের অনুগল্প ছিলো কি না জানা নেই।খুব ভাল লাগল।
আরজু মুক্তা
না, হঠাৎ মনে হলো লিখে ফেললাম।
শুভকামনা
তৌহিদ
সত্যিই অনেক ভালো লাগলো লেখাটি। মনে হলো হুমায়ুন পড়ছি। আপনার লিখনি দিনে দিনে আরও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে আপু। ট্রেনের মধ্যে দুজনের কথোপকথন এক অন্যরকম আবহ তৈরী করবে পাঠক মনে নিশ্চিত। ঘটনা কি সত্যি আপু?
শুভকামনা জানবেন।
আরজু মুক্তা
ঘটনা কাল্পনিক।
টিভির মতো বলতে হয় গল্প কাকতালীয় ভাবে কারও সাথে মিলে গেলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
ভালো থাকবেন
জিসান শা ইকরাম
প্রেমে পড়ার জন্য মনে হয় অত্যাবশ্যকিয় একটি গুন হচ্ছে কবিতা পাঠ। এই গল্পেও তাই দেখলাম।
থাকুক তারা স্মৃতির মাঝে, সুন্দর হয়ে।
ভালো গল্প।
আরজু মুক্তা
এই প্রথম শুনলাম। কবিতা প্রেমের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম।
শুভকামনা
রাফি আরাফাত
বাসা থেকে ঢাকা আসার সময় মধ্যরাতে অনেকবার ট্রেনে ছিলাম। অনেক কিছু মাথায় আআসছিলো। কিন্তু এভাবে হয়তো কখনো ভেবে দেখিনি।
অকারণ, নিথর,নিস্তব্ধ, সুক্ষ্ম একটা টান টেনে ধরে চলবে আজীবন স্মৃতির পাতায়।
কি সুন্দর সমাপ্তি। ভালো লাগলো আপু
আরজু মুক্তা
ভাবনার আকাশ অনেক বড়। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
শুভেচ্ছার ফুলঝুড়ি।
শিরিন হক
আমার কখোনো ট্রেনে চড়া হয়নি। আজ চড়ে নিলাম।
ভালো লিখেেন আপু
আরজু মুক্তা
শুভকামনা আপি
প্রদীপ চক্রবর্তী
ট্রেন যাত্রা।
বাহ্ দারুণ লেখনী দিদি।
অকারণ, নিথর,নিস্তব্ধ, সুক্ষ্ম একটা টান টেনে ধরে চলবে আজীবন স্মৃতির পাতায়।
তাই হোক।
শুভকামনা দিদি।
আরজু মুক্তা
শুভেচ্ছা অফুরন্ত
শাহরিন
অপরিচিত মানুশের সাথে সুন্দর কথোপকথন। ভালোবাসা আর পেট খারাপ কখন যে হয়ে যায় বোঝা মুশকিল।
আরজু মুক্তা
হা হা।
ঠিক বলেছেন।
শুভকামনা
শাফিন আহমেদ
খুব বেশি ভালো লেগেছে আপনার লেখাটি । তবে লেখার নায়কের মত দুঃসাহসী হতে পারলাম না এই জীবনে।
আরজু মুক্তা
দুঃসাহসী না হলে কপালে ভালোবাসা জুটবেনা।
শুভকামনা