
কুমড়া ফুলের মতন মুখটা কইরা আছো কেন?
কত কথাই না বলছেন রফিক সাহেব কোন কথাতেই যেন তার সহধর্মীনির মন ভরছে না কানে যাচ্ছে না।আজ বাদে কাল ঈদ।এ দিকে আশে পাশের প্রায় সবাই ঈদের শপিং দশ পনের রোজাই সেরে ফেলেছেন।ছেলে মেয়েরাও ওদের বন্ধু বান্ধবীদের শপিং এর বাহানা ধরে ঈদ শপিং এ তাগাদা দিচ্ছে।রফিক সাহেবের স্ত্রী রাহেলা বেগম এ সব ভাবতে না ভাবতেই তাদের একমাত্র তিন চার বছরের কন্যা এসে হাজির।মায়ের আচঁল টেনে ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে বলছে।
-ও মা ও মা,আমার তিনটা বান্ধবী,ওরা ওদের ঈদের জামা কাপড় কিন্না আনছে।জানো টুম্মারা না কি সুন্দর জামা আনছে।
রাহেলা কিছুই বলছে না।পাটিসন দরজার চৌকাঠ ধরে দাড়িয়ে আছে রফিকের দিকে মুখ করে।মায়ের কাছে কোন জবাব না পেয়ে টুম্মা গেল তার বাবার দিকে আর এদিকে রাহেলার চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল ফ্লোরে।রফিক সাহেবের কাছে মেয়ে যেতেই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মেঘাচ্ছন্ন নয়নে মেয়েকে শান্তনা দিল।
-হ্যা আজই কিনতে যাবো,তুমি ওঘরে গিয়ে খেলো গিয়ে….ঠিক আছে।
-আচ্ছা, তুমি কত ভাল আর আম্মুটা না পচা।
এর মধ্যে দরজার ওপাশ হতে মেয়েকে ডাক দিতে দিতে ভেতরে ঢুকলেন রফিক সাহেবের বড় বোন।
-কইরে মামণি…..।
ডাক শুনেই ও’বুঝে ফেলেছে ফুফু এসেছেন।সেও বাবার কোল হতে হঠাৎ নেমে দৌড়ে ফুফুর কোলে গিয়ে উঠল।ভাতিজিরে কোলে নিয়ে ওর গালে মুখে চুমো দিয়ে আদর করে,মুখ হতে পানের অবশিষ্ট অংশ ওর মুখে দিয়ে ওর আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে এক হাতে রাখা শপিং ব্যাগ হতে একটি জামা বের করলেন।জামা দেখে মেয়েটি আনন্দে নেচে উঠল।
-কি মজা কি মজা!!,, ফুপি আমি বান্ধবীগো জামা দেখাইয়া আসি।
-আচ্ছা ঠিক আছে,যাও।
মেয়েটি আনন্দে নাচতে নাচতে চলে গেল জামাটা নিয়ে বাহিরে।এদিকে রফিক সাহেবের বোন খাটে বসলেন।পাশাপাশি রফিক সাহেবও।রাহেলা অনেকটা ক্ষোভে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন।
-কিরে পোলা পাইনগো লাইগা কোন কিছু কিনছ নাই।
-না,এখনো বেতন বোনাস পাইনি।
-পরশু ঈদ!তোরে না কইলাম,এ চাকরীটা ছেড়ে দে!
-কইলেই কি ছাড়া যায়? আগ পাছ না ভেবে চাকরী ছাড়াওতো বিপদ।
বোন তার ব্যাগ হতে এক হাজার টাকার দুটো নোট বের করলেন।
-নে এটা ধর, যা পারিস ছেলেটার জন্য কিনিস।রাতুল কই?ওরেতো দেখছি না।
-বাহিরে খেলতে গেছে।
এর মধ্যে রাতুল ঘরে ফিরে।পড়নে টাইগারসদের টি শার্ট।মনে উৎফুল্ল মেজাজ।ফুফুকে দেখে দৌড়ে ফুফুর কাছে এসে জড়িয়ে ধরে।
-জানো ফুফু আমরা জিতে গেছি।আমি বাংলাদেশের হয়ে ছয়টা ছয় মাইরা আফ্রিকাগো হারাইয়া দিছি।কি ঠিক আছে না ফুফু।
-হুম একদম ঠিক আছে।নারে..আজ তাহলে যাই,ঐদিকে তোর দুলা ভাই বাড়ীতে যাবে।আম্মা আর বোনের জন্য ঈদের কিছু জামা কাপড় নিয়ে।তুই কোন চিন্তা করিস না।ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
দিন গড়িয়ে রাত এলো পৃথিবীর বুকে,রফিকের জমিনটা কেবলি দিকহীন ঘন অন্ধকার।ভাড়া বাসা ,অপরিচিত ভূবন, কেউ নেই ভাল মন্দ দেখবার।এক জন রিক্সাওয়ালা কিংবা ভিখারী সহজেই তার আয়ের পথটি বের করে নিতে পারেন কিন্তু একজন মধ্যবিত্ত পরিবার না পারেন কারো কাছে হাত পাততে না পারেন রিক্সা চালাতে।অভুক্ত পেটে সন্তানাদিদের নিয়ে নীরবে দিন কাটে অথবা অভাবের তাড়ানায় আত্মহত্যা নামক আজরাইলের হাতে কারো জীবন অকালেই ঝরে যায়।
ছেলে মেয়ে দুটোকে অন্য রুমে ঘুম পারিয়ে রাহেলা নিজ রুমে এলেন।রাতের দ্বি-প্রহরেও ঘুম আসছে না কারোর।খাটে শুয়ে আছেন যেন দুদিকে দু-মেরুর বাসিন্দা।কিন্তু অভাবী সংসারে ঋণের বোঝা মানেনা কোন বাধা তাই বাধ্য হয়েই রাহেলা পূর্বাস্থায় কথা বলছেন।
-কি কিছু হল? বেতন বোনাস দিল?
-হুম,একমাস আর বোনাস।
রাহেলা বালিশের উপর তার এক কানের নীচে এক হাত দিয়ে তার দিকে দেহ ঘুরিয়ে এক কাইতে শুইলেন।
-এতো এতো বকেয়া মাস এর মধ্যে মাত্র এক মাস! বাসা ভাড়া,ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ,বাড়তি ঋণ,ঈদের খরচ…এ সব হবে কি করে! জামা কাপড়ের কথা না হয় বাদই দিলাম।
রফিকও এবার তার মতই বরাবর মুখোমুখী চোখ বন্ধ অবস্থায় শুইলেন ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে।
-কি করব বলো?
-কি আর করবা! তুমি আমারে সারাটা জীবনই জ্বালিয়ে মারলে..নুন আনতে পান্তা ফুরায় সব সময়।এ ভাবে কি সংসার চলে? আমাদের কথা না হয় বাদ দিলাম, ছেলে মেয়েদের একটু ভাল মন্দ কিছু একটাও করতে পারি না।ওরা যখন কাছে এসে আবদার করে তখন নীরবে শুধু চোখের জলই ফেলি।
কথাগুলো বলার সাথে রাহেলার চোখের জলও কথা বলে গড়িয়ে পড়ছে বালিশে।রফিক তা অনুমান করতে পেরে চোখ খুলে দেখে সত্যিই তাই,রাহেলার দু’চোখে জলের বন্যা।মুখে ভাষা নেই কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে রাহেলার দিকে চেয়ে রইল..ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার নয়ন সাগর যেন উপচে পড়া জলে টলটল।যে কোন সময় হয়তো অঝোর ধারায় নামবে বৃষ্টি।
—————————–
নাড়ীর টানে ঈদে বাড়ী মুখী সকল বন্ধুদের যাতায়াত হোক নিরাপদ সাচ্ছন্দ ও আনন্দময় এবং ঈদ কাটুক সকলের সাথে যত দুঃখ কষ্ট মান অভিমান ভুলে নির্মল আনন্দময়।
সোনেলার প্রবাসী বন্ধুদের প্রতি রইল মা বাবা আত্মীয় স্বজনহীন ঈদ পালনে মনোবল অটুট রাখার প্রত্যাশা।
“ঈদ মোবারক ও শুভ কামনা”
২৯টি মন্তব্য
ইঞ্জা
সত্যিই কত রাহেলার চোখে যে কত জল এখন, কেউই দেখার নেই।
মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা ভাই। 😢
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইজান। ঈদ শুভচ্ছা।
ইঞ্জা
আপনাকেও শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ভাই।
শামীম চৌধুরী
ঈদ মোবারক মমি ভাই।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইজান। ঈদ শুভেচ্ছা।
শাহরিন
বাচ্চাদের জন্য কিছু করতে না পারলে মা বাবার কষ্ট কয়েকশ গুন বেড়ে যায়।
সবাই যদি তাদের গরীব আত্বীয়দের কথা ভাবেন, নিজেদের পাশাপাশি তাদের জন্যও কিছু কিনেন তাহলে হয়তো এমন বাবা মায়ের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।
মনির হোসেন মমি
ঠিক।ধন্যবাদ আপু।
ছাইরাছ হেলাল
আসলে ঈদ একই সাথে আনন্দের, আবার চরমতম বেদনার, তা লেখায় তুলে ধরেছেন সুন্দর করেই।
তারপর ও ঈদ আসে ঈদ চলেও যায়, রেখে যায় কিছু অমলিন স্মৃতি।
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা।
মনির হোসেন মমি
শুভ কামনা ভাইয়া
আরজু মুক্তা
আমরা তো পারি একটু শেয়ার করে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে।চলেন কিছু একটা করি
মনির হোসেন মমি
শুরু করলে সাথে আছি।ধন্যবাদ আপু।
তৌহিদ
ঈদ সবার জন্য বয়ে আনুক আনন্দ হাসি আর সুখ। সমাজের কত কথা এরকম অজানাই রয়ে যায় তার খবর আমরা কতজন রাখি?
ভালো লাগলো ভাই।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইজান। ঈদ শুভচ্ছা।
তৌহিদ
অনেক শুভেচ্ছা আপনাকেও ভাইজান🌹🌹
শিরিন হক
অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা মায়ের চোখের জল কেউ উপলব্ধি করতে পারেনা।আপনার লেখোনিতে সুন্দর ভাবে তা প্রকাশ করেছেন। বাস্তবতা বড়ই কঠিন। ভালো লাগলো লেখাটা।।
মনির হোসেন মমি
হুম।ধন্যবাদ।ঈদ শুভেচ্ছা।
দালান জাহান
মধ্যবিত্ত পিতামাতার শেষ আশ্রয় চোখের জল। সে জলেই এঁকেছেন তাদের করুণ জীবনচিত্র। ভাল্লাগছে…
মনির হোসেন মমি
হুম ঠিক তাই।জলই তাদের সম্ভল।ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে প্রতি ঈদের আগে এমন হাজারো গল্প তৈরি হয়ে। ঈদ শেষ হয়ে যাবার পরেও এই কস্টের গল্পগুলোর রেশ অনেক পরিবারে থেকে যায়। বেতনভুক্ত ব্যক্তিদের কথা ভেবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও মালিক পক্ষের উচিৎ সময়মত কর্মচারী দের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা। স্বাবলম্বী আত্মীয় স্বজনরা যদি তাদের নিকট অভাবগ্রস্থ আত্মীয়ের পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহলে সন্তানদের মুখের হাসিতে বাবা-মায়েদের ঈদের দিনটি একটু হলেও আনন্দে কাটে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো মমি ভাই। ঈদ মোবারক 🌹🌹
মনির হোসেন মমি
ভাবে কেউ।যখন টাকাওয়ালা হয়ে যায় তখন বিবেক সব মরে যায়।ধন্যবাদ আপু।ইদ শুভেচ্ছা।
মোঃ মজিবর রহমান
মানুস কত অসহায় হয় তা আমি আপনি বা নিম্ন বেতনভুক্ত ব্যাক্তিগন ভাল জানে। আর আমাদের দেশে সংগঠনহীন চাক্রিজিবিদের দেখা বা জানার কেউ নাই। কেউ বলতেও পারেনা। কতজন ঢাকা ছাড়ছে অসহায় হয়ে। যাইহোক ঈদ সবার আনন্দ বয়ে আনুক। সবার মাঝে হাসির বারতা বয়ে যাক।
মনির হোসেন মমি
এ
মনির হোসেন মমি
এমদম ঠিক।ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
মধ্যবিত্তদের কষ্টটা অনেক বেশী।
তারা তাঁদের অভাবকে বলতে পারেন না কারো কাছে,
উচ্চবিত্তদের এসব সমস্যা নেই, নিম্নবিত্তরা যেমন ইচ্ছে আয় করতে পারেন, কেবলমাত্র মধ্যবিত্তরাই পারেন না তাল মিলিয়ে চলতে।
খুব ভালো লেগেছে আপনার এই গল্প।
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইজান
সঞ্জয় মালাকার
মধ্যবিত্ত পিতামাতার শেষ আশ্রয় চোখের জল, সেই জলেই এঁকেছেন তাদের জীবনচবত্র ভাল্লাগছে
ঈদের শুভেচ্ছা🌹🌹
মনির হোসেন মমি
দারুণ বলেছোন।ধন্যবাদ।
রুমন আশরাফ
মধ্যবিত্তরা না পারে উপরে তাকাতে না পারে নিচে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে এমন আরও অনেক ব্যাপার থাকে, যা বেশ কষ্টদায়ক এবং হতাশাজনক। লেখাটি ভাল লাগলো প্রিয় মনির ভাই।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইটি।