
আমাদের মসজিদের বড় হুজুরের মায়াবী মুখের দিকে তাকালেই যে কেউ আবার তাকাতে বাধ্য। মাশাআল্লাহ কি নুরানি মুখ! হুজুর বয়ান করেন আর আমি তার মুখের দিকে তাকিয়েই থাকি।
গতকাল জুম্মার খোতবায় হুজুর ভ্যালেন্টাইন ডে’র আদ্যপ্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করে হিন্দু, ইহুদি, নাছারাদের এই শয়তানি তরিকা থেকে নিজের সন্তানদের বাঁচাতে ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ কারও ছেলেমেয়ে যাতে বাড়ির বাইরে যেতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেছেন। এটা জেনা, জেনা, জেনা!
শতশত মুসল্লির সামনেতো আর মনের কথা বলা যায়না, পাছে লোকে হাসাহাসি করুক! তবে আশেপাশে অনেক পরিচিত মুখ চোখে পড়লো যাদের চোখেও হুজুরের বয়ানের বিপরীতে অজস্র প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছে।
নামাজ শেষে পাড়ার বন্ধু মোসলেমকে সাথে নিয়ে একটু নিরিবিলিতে হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম- “হুজুর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিবাহিত বৌ নিয়ে ঘুরতে যাওয়াও কি পাপের শামিল হবে?”
– “অবশ্যই বাবাজি, বৌমাকে বেগানা পুরুষ দেখলেও তা আপনাদের উভয়ের পাপ হবে।”
“হজুর, বৌকে যদি পর্দার আড়াল করে নিয়ে যাই?”
– “তা যাওয়া যাবে, তবে সেটা যেন ভ্যালেন্টাইন ডে’র উদ্দেশ্যে না হয়।”
“আচ্ছা হুজুর, আমারতো পর্দা থাকবেনা, মুখ চোখ খোলা থাকবে। বেগানা নারীরা আমাকে দেখলে কি তাদেরও পাপ হবে?”
– “আলবৎ তাও জেনার সামিল হবে বাবাজি!”
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, আমি কারও পাপের কারন হতে চাইনা। শেষ চেষ্টা হিসেবে বললাম- “হুজুর ভ্যালেন্টাইন ডে’ না হয় ইহুদী নাছারাদের, কিন্তু পহেলা ফাল্গুনতো সব বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই দিনও মুসলিম বাঙালি হিসেবে ঘোরাঘুরির কোন চান্স আছে কি নাই?
হুজুরের মায়াবী মুখে টমাটোর মত লাল আভা ধারণ করায় যা বোঝার বুঝে নিলাম। এর মধ্যে মোসলেম আর একটু বাগড়া দিয়ে জিজ্ঞেস করলো- “হুজুর, গিফট যে কেনা শেষ! ঘুরতে না হয় না ই গেলাম, কিন্তু হবু বৌ এর বাড়িতে প্রবেশ না করে শুধু গেটের সামনে তাকে ডেকে নিয়ে গিফটটা দেয়া জায়েজ হবে কি না?”
মোসলেমের মনোভাবটা এমন, শেষতক টাকাটা বুঝি জলেই গেলো! তার পিতাও শুক্রবার মসজিদে হুজুরের সেই বয়ান শুনেছেন কি না!
– “বিয়া কি পরিবার থেকে ঠিক করা বাবাজি?”
মোসলেম- “ইয়ে মানে নিজেরাই ফাইনাল করেছি, প্রেমের সম্পর্ক বোঝেনই তো! তবে সুযোগ হলেই বাসায় জানাবো ইনশাআল্লাহ!”
– “জেনা, জেনা জেনা! এটা জেনার পথ বাবারা!”
প্রেমিক যুগল ফোনে কথা বললেও তা পাপ কিনা এই প্রশ্নটা হুজুরকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম। বিরস বদনে দু’জনে বাসায় ফিরে এসেছি। আমার জন্য চিন্তা নাই, মোসলেম জীবনে এতবছর পরে এটা তার প্রথম প্রেম! আহা বেচারা! তবে আপনাদের ভাবীসাহেবা আগামীকাল বাপেরবাড়ি যাচ্ছেন, আলহামদুলিল্লাহ!
শেষতক প্রেমিক মোসলেম কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কে জানে! সে মন খারাপ করে আছে ভেবে ইনবক্স করেছিলাম- “মোসলেমরে! এ বছর জেনার পাপ থেকে আমি বেঁচে গেলাম, আল্লাহ নিজ হাতে আমাকে রক্ষা করেছেন। আগামী বছরের ভ্যালেন্টাইন ডে’ আসার আগে বাপরে রাজি করায় তুইও বিয়েটা সেরে নে ভাই!”
একটু আগে তার উত্তর এসেছে- “আমি এখন মগবাজার কাজি অফিসে! তাড়াতাড়ি চলে আয় দোস্ত, আমার বিয়ার সাক্ষি যে তুই!
এখন প্রায় মধ্যরাত বলে রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা। প্রেমিকযুগলকে পাপ থেকে বাঁচাতে আমার পাঠাও রাইড শাঁ শাঁ করে ধানমন্ডি থেকে মগবাজারের পথে ছুটে চলেছে….।
১৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
যে ছবি দেখলাম তাতেও গুনাহর অংশীদার হলে আপনি দায়ী!!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হা হা হা। দেখলেন ক্যান? গুনাহ হয়েই গেছে। হুজুরের কাছে গিয়ে পাপ কাটাইয়া নিয়া আসেন।
তৌহিদ
পাপ নিজের মনে দি ভাই। মন পরিস্কার থাকলে বাহ্যিক কিছুই পাপ করাতে পারেনা।
সৃষ্টিকর্তা আলোর পথে আসার তরিকাও বাতলে দিয়েছেন।☺
তৌহিদ
মুহতারাম, সকলের কাছে অনুরোধ সু নজরে সবার ছবি দেখুন। আপনাদের উপর সেই বিশ্বাস আছে আল্লাহ স্বাক্ষী।
ভ্যালেন্টাইন এর অগ্রীম শুভেচ্ছা ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া এমন করলে তো কেউ আর কিছু করতে পারবে না । ঘরে বসে থাকতে হবে । খাবার টা কি কেউ এসে দিয়ে যাবে? বাইরে গেলেই তো এসব দেখতে হবে, শুনতে হবে। জেনা, জেনা !!
তৌহিদ
সকল ধর্মেরই বিধিনিষেধ আছে, আমরা তার বাইরে যেতে পারিনা আসলে আর তা উচিতও নয়। প্রেম পবিত্র, তবে যারা নোংরামি করে তারাই প্রেমকে কলুষিত করেছে যুগেযুগে।
শুভেচ্ছা জানবেন দিদি ভাই।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
ভালো মন্দ মিলেই চলনের পথ।
সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে অনেক কিছুই মেনে চলতে হয়।
মুগ্ধতায় শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম নিরন্তর।
তৌহিদ
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন।
আরজু মুক্তা
হুজুরের বারোটা বাজালেন। বিয়ে করেই ভ্যালেটাইন্স, কথা কিন্তু ঠিক।
কন ঠিক কিনা?
তৌহিদ
একদম কথা ঠিক। তয় হুজুরে খুব ভালা মানুষ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধর্মীয় রীতিনীতি যথাযথভাবে মেনে যে কোনো উৎসব করা উচিৎ।
তৌহিদ
অবশ্যই ভাই। ধন্যবাদ জানবেন।
নার্গিস রশিদ
আপনার লেখাটা পড়ে খুব মজা পেলাম । ভালো লাগলো ।
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু। শুভকামনা জানবেন।