বৃষ্টির দিন। কাল থেকে আকাশ বিরামহীন ঝরছেই। একবার নিলয় ভাবলো আকাশকে ডেকে জিজ্ঞেস করে বহুমুত্র রোগে পেয়েছে কিনা !
.
পরীক্ষা চলমান। ফাঁকি দেয়ারও উপায় নেই। পরীক্ষা দিতেই হবে। বাসা থেকে বের হয়ে ছাতা মেলে ধরলো নিলয়। রিক্সার অপেক্ষায় মিনিট বিশেক কেটে গেছে। কিন্তু চোখে হারিকেন জ্বালিয়েও কোন রিক্সার হদিস মিললো না। অগত্যা বিরক্তি নিয়ে হেঁটেই দূরত্ব কমানোর জন্য পা বাড়ালো।
-বাবা ,যাইবেন ?
পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে কিছু না ভেবেই সে বললো,
– যাবো ।আফতাব নগর । কত নেবেন ?
– পঞ্চাশ টেকা দিয়েন।
এই রিক্সা সে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না। বৃষ্টির দিনে পঞ্চাশ টাকা ভাড়া বেশিও না।ভেজার ভয়ে রিক্সায় উঠেই পলিথিনে নিজেকে প্যাকেট করে ফেললো সে।
কিছুক্ষণ পর
রিক্সার ধীর গতি দেখে একবার ধমকও দিলো চালককে । তাতেও কাজ না হওয়ায় আবার ধমক দিলো।
– সাথে তো প্রেমিকা নাই। এতো ধীরে চালাচ্ছেন কেন ?
– জ্বর, বাবা।শইলডা দূর্বল । পোলাপাইনের মায়ের অসুখ। রিক্সা না চালাইলে অসুধ কিনুম ক্যামনে ? এই জন্যি জ্বর লইয়া বৃষ্টির মইধ্যে বাইর হইছি।
– ছেলেরা দেখে না আপনাদের?
– অহনকার পোলারা অতো কি আর দেহে ? হেগোরও সংসার আছে।
কথা বাড়ায় না নিলয়। হঠাৎ ‘ই তার চোখ পড়ে চালকের হাতের দিকে। ডান হাত নেই । বয়স আন্দাজ করে । ষাটের উপর হবে।
.
ষাটোর্ধ্ব কারও রিক্সায় চড়ে বসতে নিলয় কখনও আপত্তি
তুলেছে বলে মনে পড়ে না। গন্তব্যে পৌঁছানোই হলো কথা। আর এমন তো না যে ভাড়া মেটায় না। মায়ার দিক থেকে বরাবরই কিছুটা উদাসীন সে। মানে অতো মায়া-মমতা ওর ভেতর বাসা বাঁধে নি। জীনগত কারণেও হতে পারে। বাবা-মায়ের ভেতর এগুলো খুব একটা নেই। মানুষের প্রতি দরদ , উদারতা নিয়ে ভাবেও না সে।
ইউনিভার্সিটির সামনে পৌঁছে রিক্সা থামালো। বৃষ্টি ঝরছে তখনও। গতি কম যদিও। ছাতা মেলে রিক্সা থেকে নেমে ওয়ালেট বের করলো। কিছু ভাবলো এবার। একটা একশো টাকার নোট এগিয়ে দিলো চালকের দিকে।
– রেখে দেন। ফেরত দিতে হবে না।
– না বাবা। যা ভাড়া তাই দেন।
– পঞ্চাশ টাকা এমনিতেই দিলাম। রাখেন ।
– বাবা , মুক্তিযুদ্ধ কইরা এক হাত হারাইছি। তাও ভিক্ষা করি নাই। অহন আপনের কাছ থেইকা ক্যামনে নেই অন্যায্যা ভাড়া ? দেন। পঞ্চাশ টেকাই দেন। যাইগা। জ্বর বাড়তাছে।
নিলয় আর কথা বাড়ানোর সাহস পায় না। কোন মতে ভাড়া মিটিয়ে সে নিজেকে পৃথিবীর অন্ধকারতম স্থানে লুকিয়ে ফেলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।
একজন মুক্তিযোদ্ধার দৃঢ় ব্যক্তিত্বের কাছে অসহায় লাগে নিজেকে।
বুকের ভেতর তীব্র হাহাকার উঠে। মায়াহীন নিলয়ের চোখ তখন ঝাপসা হয়ে উঠছে থেকে থেকেই!
সেদিনই সে প্রতিজ্ঞা করে , যাদের জীবন এবং বহু ত্যাগের বিনিময়ে একটা দেশ পেয়েছে সে , সেই দেশ বিরোধী কোন অন্যায় কখনোই করবে না…
১৬টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
প্রতিজ্ঞাটা সুন্দর, জীবনের মোড়ে মোড়ে কত অজানা রহস্য লুকিয়ে থাকে, কখন কাকে পরিবর্তন করে দেয় সেই বাঁক বলা যায় না। সুন্দর লিখেছেন।
রুম্পা রুমানা
কত সুন্দর করে বললেন ! শুভ কামনা রইলো । প্রতিউত্তরে বিলম্ব হওয়ায় দুঃখিত ।
ইঞ্জা
বেশ কষ্টকর জীবন তবুও টিকে থাকে ব্যক্তিত্ব।
রুম্পা রুমানা
আসলেই। অনেক কষ্টকর এই বেঁচে থাকা। ধন্যবাদ ।
ইঞ্জা
-{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
করুণ বাস্তব চিত্র -{@
রুম্পা রুমানা
ধন্যবাদ। শুভ কামনা । (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো লেগেছে গল্পটি। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ক’জনাই বা করে! এ প্রজন্মের বেশীরভাগই তো মুক্তিযুদ্ধ কি এ কথাই জানেনা। মন ছুঁয়ে গেলো গল্পটি।
রুম্পা রুমানা
একদম ঠিক কথা , নীলা আপু। অনেক সুন্দর করে বলেছেন। ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আরো লিখুন, লিখেই চলুন।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
গল্পটি ভাল লেগেছে তবে বৃষ্টিকে বহুমূত্র রোগের সাথে তুলনা ভাল লাগেনি।
রুম্পা রুমানা
এই সময়ের ছেলেপেলেরা এগুলো বলে। ফেসবুকেই কতো পোস্ট দেখলাম ! নিলয়কে এই জেনারেশনের করেই উপস্থাপন করেছি যেহেতু তাঁর আচরণ নিশ্চয়ই আশির দশকের মামাদের মতো হবে না ! হাহাহা। ধন্যবাদ পড়বার জন্য।
শুন্য শুন্যালয়
অনেককিছু মনে পড়লো লেখাটা পড়ে। এতো টাচি করে লিখেছেন রূম্পা! প্রকৃত দেশাত্ববোধ যদি সত্যিই নিলয়ের মতো থাকতো আমাদের তাহলে আর এমন হতোনা দেশটা। খুব সুন্দর।
রুম্পা রুমানা
কি সুন্দর করে বললেন ! অসংখ্য ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য । উত্তর দিতে দেরী হওয়ায় দুঃখিত ।
অপার্থিব
বৃষ্টির উপমা বহুমুত্র !!! হাহাহা … তাহলে বজ্রপাত কি বীর্যপাত ?
জোকস এপার্ট , লেখা ভাল লেগেছে ।
রুম্পা রুমানা
এই সময়ের ছেলেপেলেরা এগুলো বলে। ফেসবুকেই কতো পোস্ট দেখলাম ! নিলয়কে এই জেনারেশনের করেই উপস্থাপন করেছি যেহেতু তাঁর আচরণ নিশ্চয়ই আশির দশকের মামাদের মতো হবে না ! হাহাহা। ধন্যবাদ পড়বার জন্য।