বিয়েতে পেঁয়াজ উপহার
★
গ্রামের বাড়িতে আছি।
ফজরের নামাজ পড়ে চা দোকানে রুটি কিনতে গেছি। লাইনে আছি, সকালে রুটি কিনতে শুধু গ্রামে নয়, শহরেও লাইন ধরতে হয়।
একজন কারিগর রুটি বানাচ্ছে, কাস্টমারদের কেউ টেবিলে বসে খাচ্ছে আর কেউ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। আমিও রুটির অর্ডার দিয়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি।
পাড়ার ছেলে আবচার, খু্ব সম্ভব আমার সমবয়সি হবে, কিংবা আমার চেয়ে একটু ছোটও হতে পারে। আমার মনে আছে, আমি যখন সরকারী প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম তখন স্কুলের বাউন্ডারির বাইরে আবচার পেটি নিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করত। একটি খজেইয়্যা আইসক্রিম ৫ পয়সা, ভালো আইসক্রিম ১০ পয়সা, দুধের আইসক্রিম ২৫ পয়সা। খজেইয়্যা আইসক্রিম মানে যে আইসক্রিম খয়ে গেছে, মানে কিছুটা গলে লুজ হয়ে গেছে।
পেটিতে থরে থরে আইসক্রিম সাজিয়ে রেখে তার উপর একটি পলিথিন বিছিয়ে দিয়ে তারপর আরেক চালান আইসক্রিম। তারপর আবার পলিথিন এবং আবার আইসক্রিম। এভাবে আইসক্রিমের পেটি পুরোনো হতো। ভিতরে পলিথিনের ফাক দিয়ে বাতাস ঢুকে আইসক্রিম গলে ছোট হয়ে যেতো, তখন হতো এটা খজাইয়্যা আইসক্রিম এবং এর দাম অর্ধেক, ৫ পয়সা।
বলছিলাম আবচারের কথা,
আবচার পরে কেমনে কেমনে লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে ভাল সরকারি চাকরি করে। কয়েকবছর আগে সম্ভবত উপজেলা শিক্ষা অফিসার ছিল, মনে হয়ে এখনো আছে। আমরা গ্রামের কৃতি সন্তান হিসেবে একবার আবচারকে সংবর্ধনাও দিয়েছিলাম।
আইসক্রিম বিক্রিতে আবচারের ওস্তাদ ছিলো ওরই বড়ো ভাই বাবুল। বাবুল আরো আগে থেকে আইসক্রিস বিক্রি করত। আইসক্রিমওয়ালা হিসেবে আমি মনে হয় বাবুলকেই বেশি পেয়েছিলাম। হ্যাঁ এখন মনে পড়ছে, আবচার বয়সে আমার ছোটই হবে।
আচারের বড়ো ভাই সেই বাবুলও আজ সকালে রুটি অথবা পরোটা কিনতে সেই চা দোকানে এসেছে যেখানে আমি রুটি অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছি।
চা-দোকানের বাইরে একজন পরোটা বানাচ্ছে, ভিতরে আলাদা একটি ছোট ঘরে একজন রুটি বানাচ্ছে। সেখানে কয়েকজন কাস্টমার রুটির সিরিয়ালে আছে, আমি বাইরে ক্যাশের পাশে দাঁড়িয়ে রুটির অর্ডার দিয়ে টাচ মোবাইল টাচ করে যাচ্ছি। ক্যাশে একটি কিশোর ছেলে, ছেলেটি স্কুলে পড়লে হয়তো ফাইভ, সিক্সে পড়তো। চা দোকানের টেবিলে কয়েকজন বসে নাস্তা খাচ্ছে। টেবিলের কাস্টমারকেও রুটি দিতে হচ্ছে বলে আমরা যারা পার্শ্বেল নেবো তাদের অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হচ্ছে।
আমার পাশে দাঁড়িয়ে বাবুল। বাবুল বলল, গতকাল একটি বিয়েতে একজনে উপহার দিয়েছে ২ কেজি পেঁয়াজ। ৪০০ টাকা দিয়ে ২ কেজি পেঁয়াজ পেকেট করে বিয়েতে উপহার দিয়েছে। আমি শোনে অবাক!
ইন্টারেস্টিং তো! বিয়েতে পেঁয়াজ উপহার!
আমি মনে মনে ভাবলাম ভালোইতো, পেঁয়াজগুলো বিয়েতে কাজে আসবে। বর্তমানে পেঁয়াজ হচ্ছে ‘টক অব দা কান্ট্রি’। এমনকোনো সেলিব্রেটি নেই যিনি পেঁয়াজ নিয়ে লিখছেন না। আমলা, কামলা, মন্ত্রি, সেপাই সবাই পেঁয়াজ নিয়ে কিছু না কিছু লিখছেন। লিখবেনই না কেন? যে জিনিসের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ গুণ বেড়ে যায় আর সে জিনিস যদি প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হয় তাকে নিয়ে লেখার জন্য আঙ্গুল চুলকাবেই।
আমি ভাবছি আল্লাহর কথা! তিনি কেমন আল্লাহ যিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ টন পেঁয়াজের যোগান দিয়ে গেছেন! অথচ কখনো খোটা দেননি, বিরক্ত হননি, বিনিময় চাননি! অথচ আজকে পেঁয়াজের ফলন একটু কম হয়েছে বলে আমাদের কতটা কষ্ট হচ্ছে।
কতটা সহনশীল, কতটা ক্ষমাশীল, কতটা করুণাময় হলে পাপি, তাপি, অকৃতজ্ঞ বান্দাকে এভাবে খাবারের যোগান দিতে পারেন ভাবা যায়?
আমি এমন মহা ক্ষমতাধর প্রভুর বান্দা হওয়াতে বুকটা যেন গর্বে ফুলে উঠল। আলহামদুলিল্লাহ!
১২টি মন্তব্য
কামাল উদ্দিন
আবচার আইসক্রীম বিক্রি করে শিক্ষা অফিসার হইছে, মুদি চা বিক্রি করে প্রধানমন্ত্রী হইছে। আফসোস হয় কিছুই হতে পারলাম না, নিদেন পক্ষে একজন পেয়াজ বিক্রেতা হতে পারলেও আজকে জীবনে সফল হতাম 🙂
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহা 😀😀
সুরাইয়া পারভিন
আমি ভাবছি আল্লাহর কথা! তিনি কেমন আল্লাহ যিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ টন পেঁয়াজের যোগান দিয়ে গেছেন! অথচ কখনো খোটা দেননি, বিরক্ত হননি, বিনিময় চাননি! অথচ আজকে পেঁয়াজের ফলন একটু কম হয়েছে বলে আমাদের কতটা কষ্ট হচ্ছে।
কতটা সহনশীল, কতটা ক্ষমাশীল, কতটা করুণাময় হলে পাপি, তাপি, অকৃতজ্ঞ বান্দাকে এভাবে খাবারের যোগান দিতে পারেন ভাবা যায়?
আমি এমন মহা ক্ষমতাধর প্রভুর বান্দা হওয়াতে বুকটা যেন গর্বে ফুলে উঠল। আলহামদুলিল্লাহ!
দারুণ লিখেছেন
সঞ্জয় মালাকার
আমি ভাবছি আল্লাহর কথা! তিনি কেমন আল্লাহ যিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ টন পেঁয়াজের যোগান দিয়ে গেছেন! অথচ কখনো খোটা দেননি, বিরক্ত হননি, বিনিময় চাননি! অথচ আজকে পেঁয়াজের ফলন একটু কম হয়েছে বলে আমাদের কতটা কষ্ট হচ্ছে।
কতটা সহনশীল, কতটা ক্ষমাশীল, কতটা করুণাময় হলে পাপি, তাপি, অকৃতজ্ঞ বান্দাকে এভাবে খাবারের যোগান দিতে পারেন ভাবা যায়?
আমি এমন মহা ক্ষমতাধর প্রভুর বান্দা হওয়াতে বুকটা যেন গর্বে ফুলে উঠল। দারুণ লিখেছেন দাদা
তৌহিদ
লেখাপড়া করে মেধাবী নিম্নবিত্তের পরিবারের অনেকেই ভালো পজিশনে যান আর এটাই সাফল্য। তবে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মুল্যবৃদ্ধির পিছনে নীতিনির্ধারকরা অনেকাংশেই দায়ী কিন্তু।
অতিশিঘ্রই এর থেকে উত্তরণ জরুরী। লেখা ভালো লেগেছে।
ছাইরাছ হেলাল
আল্লাহ রাহমানুর রহিম বলেই আমরা পার পেয়ে যাচ্ছি।
এস.জেড বাবু
কতটা সহনশীল, কতটা ক্ষমাশীল, কতটা করুণাময় হলে পাপি, তাপি, অকৃতজ্ঞ বান্দাকে এভাবে খাবারের যোগান দিতে পারেন ভাবা যায়?
ভাবিয়ে দিলেন- তবু শুকরিয়া
ভিন্নতায় সেই পিঁয়াজের গল্প পড়লাম।
মুগ্ধ ভাই
মনির হোসেন মমি
পিয়াজঁ নিয়ে ভাবনা
আর না আর না…..খামুনা পেয়াজঁ।
খুব ভাল লাগল।
সাবিনা ইয়াসমিন
বর্তমানে পেয়াজ টক অব দা কান্ট্রি 🙂
দাম বেড়েছে বলেই আজ পেয়াজ হয়েছে সেলিব্রিটি।
ছোট বেলায় দেখা আইস্ক্রিমের বাক্সগুলোর কথা আমারও একটু আধটু মনে আছে। আইস্ক্রিম ওয়ালা মাথায় একটা চারকোণা বাক্স নিয়ে আসতেন। বাক্সের ভেতরে পার্ট বাই পার্ট বরফ দিয়ে আইস্ক্রিম গুলো সাজানো থাকতো।এক টাকা দিয়ে বেশ বড় একটা আইস্ক্রিম কিনতাম তখন। ঐটার নাম ছিলো বালিশ আইস্ক্রিম। খেতাম আর কাশতাম। আসলেতো ঐটা বরফ, রঙ আর স্যাকারিন মেশানো একটা বরফের পিন্ড ছাড়া আর কিছু নয়। তবুও তাইই ভালো লাগতো।
সৃষ্টিকর্তার দয়া আর দানের কোনো পরিসীমা নেই বলেই তিনি রহমানুর রাহিম। তার যাবতীয় সৃষ্টির মাঝে আমরাই চরম অকৃতজ্ঞ প্রানী। তারপরেও তিনি আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত খেতাব দিয়েছেন। আমরা যেনো তাকে ভুলে না যাই, অন্তরে মহা শক্তিমান আল্লাহ তায়ালার জিকির সর্বদা জাগ্রত থাকুক এই তৌফিক তিনি তার সমস্ত বান্দাদের দিন। আমিন।
শুভ কামনা বাহার ভাই 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
আল্লাহ রহম করবেন পুনরায়,
পেঁয়াজ আগের মতই সুলভ হয়ে উঠবে আশাকরি।
উপহার হিসেবে পেঁয়াজ ভালোই উপহার হবে।
ভালো লেগেছে লেখা।
শুভ কামনা।
নুর হোসেন
পেঁয়াজ জরুরী কোন ঔষধ নয় তথাপি চাষ করা যায়।
সরকারের উচিত
সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিটিভির পর্দায় বাতাবী লেবু চাষ না করে
পেঁয়াজের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কিভাবে চাষাবাস করা ঘটতিপুরণ করা যায় তার ধারনা প্রদান করা।
আশার কথা এই যে,
রাশিয়ান প্লেনে চেপে পাকিদের পেঁয়াজ এখন দেশের বাজারে।
সাবিনা ইয়াসমিন
বাহার ভাই আপনি কোথায়?