
নারী, সে এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে আমাদের জীবনে, সে কখনো কন্যা, কখনো জায়া, কখনো জননী।
যেমন আমার স্বর্গীয়া আম্মার কথায় বলি প্রথমেই, আমার আম্মাকে সারাদিন ঘরের এই কাজ, সময় সেই কাজ করতে দেখতাম, ভোরে আমাদেরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে রেডি করে দিতেন, এরপর দ্রুত সকালের ব্রেকফাস্ট মাটির চুলোতে তৈয়ার করে, খাইয়ে স্কুলে পাঠাতেন, এরপর আব্বার অফিস যাওয়ার পালা, আব্বা বেরিয়ে গেলে ঘরদোরের সকল কাজ শেষ করে দুপুরের জন্য রান্নার ব্যবস্থা, রান্না করা, আমরা এলে আমাদের খাইয়ে বাসন, ডেকচি কড়াই পরিস্কার করে দুপুরে একটু ভাত ঘুম দিলেন কি না দিলেন, শুরু করলেন বিকেলের নাস্তার আয়োজন, এরপর রাতের খাবার, এইসব করতে করতে উনার রাত বারোটা বাজতো, এরপর ঘুমাতে গেলেন, মাঝ রাতেই ছোট ভাই বোনের বিছানা ভেজানো সহ নানা কারণে উনার ঘুম কি হতো তা আমার সন্দেহ ছিলো।
তদ্রূপ আমি দেখছি আমার সহধর্মিণীকে, সে সতেরো বৎসর সংসার করে এসেছে আমাদের কাছাকাছি পনেরো জনের সংসার সামলিয়ে, এরপর ঢাকায় চলে আসার পর ওকে দেখছি সেই আমার আম্মার রূপ, সকাল সন্ধ্যা, রাত তার বিরাম নেই কাজের, মাঝে মাঝে আমি ওকে স্যালুট ঠুকি, বলি আমার সকল আয়ের চাইতেও বেশি হতো তোমার ইনকাম, যদি এই দেশে হাউজ ওয়াইফদের বেতন ধরা হতো, আমরা তো সকাল ৯টা /৬টা অফিস করি, আর তোমরা করো কম বেশ চব্বিশ ঘন্টা।
অথচ দেখুন, ওরাও মানে আমার আম্মা এবং আমার সহধর্মিণী কারো কন্যা ছিলেন, যেমন আমার একমাত্র কন্যার মতো, যে কন্যা একদিন এদের মতোই কাজ করবে কম বেশ চব্বিশটি ঘন্টা।
অন্যদিকে যেসব মহিলারা অফিস করেন, তাদের কথা চিন্তা করুন, উনারা তো অফিসের সাথে সাথে তার ঘরও সামলান।
কিছুদিন আগেই একটা ভিডিও দেখেছিলাম আমাদের সংসদ অধিবেশনের, যেখানে বেগম রওশন এরশাদ বক্তৃতা দেওয়ার প্রাক্কালে বলছিলেন, “মাননীয় স্পীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন নারীর ক্ষমতায়নে ব্যবস্থা করবেন, কিন্তু নারী ক্ষমতায়নের কিছুই তো করেছেন তা দেখছিনা”।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী উনাকে দুই তিনবার ইশারা করে দেখালেন, নিজেকে, মাননীয় স্পীকার মহোদয়াকে এবং বিরোধী দলের নেত্রী বেগম রওশন এরশাদকে।
এতে আমাদের প্রিয় আপা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বুঝালেন তা আপনারা একবার বুঝে দেখুন?
উনি বুঝালেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলিয়ো নেত্রী এবং স্পীকার মহোদয়া যেখানে নারী, তাহলে নারীর ক্ষমতায়ন কতটুকু হয়েছে তা অবশ্যই বিরোধী দলিয়ো নেত্রীর বুঝা উচিত।
সত্যি তাই, বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন অন্যান্য বারের চাইতে এখন বেশিই, যেমন আমাদের এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট একজন নারী, এছাড়া বিমানবাহিনীর চারজনের অধিক এখন নারী পাইলট বিমানবাহিনীর ফাইটার বিমান, হেলিকপ্টার চালাচ্ছেন, তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের প্রচুর নারী এখন কর্মক্ষেত্রে জড়িত হয়ে আছেন, যাদের সুনাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে, এছাড়া প্রাইভেট সেক্টরেও নারীরা নিজেদের কর্মদক্ষতা দেখাচ্ছেন।
সুতরাং নারীদেরকে আর দমিয়ে রাখা যাচ্ছেনা, তারা এখন সমাধিকার নিজেরাই করে নিচ্ছেন, এখন কারোরই উচিত নয় নারীদের বাঁকা চোখে দেখার, কথায় আছেনা, ” যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে”।
তেমনি নারীরা এখন অনেকাংশে পুরুষদের চেয়েও বেশি কর্মদক্ষতা দেখাচ্ছে।
এই জন্যই বলি, যেসব নারী সংসার সামলাচ্ছেন তাদেরকে ছোট করে দেখবেননা, উনারা আপনার, আমার চাইতেও বেশি দক্ষ, উনারা যা করছেন তা আপনি, আমি পারবোনা, দরকার হলে ট্রাই করেই দেখুননা, উপলব্ধি করেই দেখুন উনারা কত কষ্ট করছেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো”, কথাটি কিন্তু খুবই সত্য, মেয়েরা যত শিক্ষিত হবে, ততই এই জাতি শিক্ষিত হয়ে উঠবে, কথা দিচ্ছি এর কোনো ব্যত্যয় হবেনা।
ঘরের শিক্ষাটা প্রথম আসে মার কাছ থেকে, এই শিক্ষাটাই সত্যিকার অর্থে আসল শিক্ষা, যাকে ইংরেজিতে বলে ফাউন্ডেশন বা শক্ত ভীত, এই ভীত যদি শক্ত হয় তাহলে জাতি নিশ্চিত অনেকদূর এগিয়ে যাবে, সুতরাং অনুরোধ করছি, কন্যা সন্তানকে আর অবহেলা নয়, ওরা অনেকাংশে ছেলেদের চাইতেও ভালো করছে, সুতরাং ওদের শিক্ষিত হতে দিন, ওদের এগুতে দিন, ওদেরকে মানুুষের মতো মানুষ হতে দিন।
আজ বিশ্ব নারী দিবস, আসুন আমরা সবাই মিলে তার যৌগ্য সম্মানটিই তাকে দিই।
প্রিয় সকল ব্লগার আপুদের জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
হে নারী স্যালুট তোমাকে, তোমার জন্য একদিনের নয়, প্রতিদিনের নারী দিবস হওয়া উচিত।
সমাপ্ত।
ছবিঃ গুগল।
৩১টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। নারীর প্রতি এমন ভাবে দেখার জন্য, সম্মান দেবার জন্য। সংসারের কাজ অনেকটা কঠিন কিন্তু যারা অফিস করে আবার সংসারের কাজ ও করে তারা আসলেই স্যালুট পাবার যোগ্য। তবে নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিলে খুউব ভালো লাগতো। নারী দিবস নারী পুরুষের বৈষম্য বাড়িয়ে দেয় বলে আমার অভিমত। প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও টা দেখে খুব মজা পেয়েছিলাম। শুভ নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সকল নারীদের প্রতি।
ইঞ্জা
আপু অবশ্যই ওরা মানুষ, নাহলে কেন এই লেখাটি লিখলাম, ব্যাক্তিগত ভাবে আমি নারীদের সম্মান করি বিধায় এই লেখাটি আমি লিখলাম।
নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া যারা নারীকে শুধু দিবসে বন্দী রাখতে চায় , আমি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছি। আমরা অবশ্যই মানুষ । ধন্যবাদ ভাইয়া
মোঃ মজিবর রহমান
নারী দিবসে নারীর কাজ ও জিবন নিয়ে তাদের মুল্যায়ন দারুন। নারী জিবন প্রতি পুরুষ জিবনেরঅমুল্য সম্পদ।
ইঞ্জা
শতভাগ খাঁটি বলেছেন ভাই, এই অনুভবটা সকল পুরুষের থাকা উচিত, ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
সবাই বুঝলে মন্দ কোথায় যাবে ভাইজান।
ইঞ্জা
যাক পালিয়ে, তার যাওয়াটাই ভালো হতো।
মোঃ মজিবর রহমান
তা হবআর না ভাইজান। ভাল থাকুন।
ইঞ্জা
শুভকামনা ভাই
কামাল উদ্দিন
সত্যিই ওরা অনেক বেশীই করে, তবু বলা চলে ওদের মূল্যায়ন অনেক কম। এমন বিভিন্ন দিবসগুলো থাকা ভালো, অন্তত আমাদের কর্তব্যগুলো এই দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়। শুভ কামনা জানবেন ইঞ্জিনিয়ার ভাই।
ইঞ্জা
নারীদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে এই দেশে, কিন্তু প্রতিটি পুরুষের উপলব্ধি হওয়া উচিত যে নারী ছাড়া আমরা সত্যি অচল, ধন্যবাদ ভাই।
ত্রিস্তান
নারীর প্রতি সহিংসতা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের এখানে বলতে গেলে অনেক কম। আপনি যদি আমেরিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর নিয়ে দেখেন দেখবেন ওখানে অর্ধেকের ও বেশি কন্যা শিশু বিভিন্ন ভাবে হ্যারাজমেন্টের শিকার হন।
বিশ্ব নারী দিবসে সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা।
ইঞ্জা
কথাটির আংশিক মানতে পারলাম না ভাই, আমাদের দেশেও নারীর প্রতি হিংস্রতা বেশি হয় যা সবাই জানেন, কিন্তু এ অনুচিত।
ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীর প্রতি শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
চাকুরী না করা একজন নারী খুব সকাল হতে মাঝ রাত পর্যন্ত যে সংসারের কাজ করেন, তার কোনো তুলনা হতে পারে না।
শুভ কামনা।
ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।
ইঞ্জা
নারীদের প্রতি আমাদের আরও আস্থাশীল এবং সম্মান সবসময় থাকা উচিত ভাইজান, তাহলেই ওরা এগুবে।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইজান।
ছাইরাছ হেলাল
আজন্ম সংগ্রামী নারীদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
আমার মা ছিলেন বলেই আমি আজ আমি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সময়ের উপযুক্ততা নিয়ে নিয়মিত লিখে সোনেলাকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন।
ইঞ্জা
আমাদের আত্ম উপলব্ধিই পারে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
ধন্যবাদ ভাইজান, সুন্দর এবং যথার্থ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আবারও।
সুপায়ন বড়ুয়া
নারী দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ ভাইজান সবকিছু তুলে আনার জন্য।
দেশের অর্ধেক জনশক্তিকে বাইরে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝেন বলেই নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রনী ভুমিকা নিচ্ছেন।
আজ স্কুল, কলেজ , প্রাইভেট প্রতিষ্টান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সচিবালয় সব জায়গায় নারী বিরাজমান।
জয় হোক নারী জাগরনের।
ইঞ্জা
সম্পূর্ণ একমত দাদা, নারীদেরকে বাইরে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
বিশ্ব নারী দিবসের হাজার লাল গোলাপের শুভেচ্ছা রইল ইঞ্জা দা
ইঞ্জা
আপনাকে শুভেচ্ছা ভাই।
ফয়জুল মহী
নারীকুলকে সম্মান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ।
ইঞ্জা
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
প্রথমেই এত সুন্দর করে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা। একজন নারী সে মা জননী বোন সহধর্মিনী বন্ধু এভাবে যদি সবাই চিন্তা করতাম তাহলে নারীরা অসম্মানিত হতো না।
আমাদের সংসারে একজন নারী সে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে অমানুষিক পরিশ্রম করেন একজন পুরুষের সাথে আমরা তা করিনা। নারী দিবসে তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। কোন বিশেষ দিন নয় প্রতিটি দিন হোক তাদের জন্য সম্মানের আনন্দের।
ভালো থাকবেন দাদা।
ইঞ্জা
সম্পূর্ণ একমত, শতভাগ মনের কথাটিই বললেন ভাই, ধন্যবাদ অফুরন্ত।
প্রদীপ চক্রবর্তী
নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীর প্রতি শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
খুবি ভালো লেখনী দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অফুরান দাদা। 😍
হালিম নজরুল
“তদ্রূপ আমি দেখছি আমার সহধর্মিণীকে, সে সতেরো বৎসর সংসার করে এসেছে আমাদের কাছাকাছি পনেরো জনের সংসার সামলিয়ে, এরপর ঢাকায় চলে আসার পর ওকে দেখছি সেই আমার আম্মার রূপ, সকাল সন্ধ্যা, রাত তার বিরাম নেই কাজের, মাঝে মাঝে আমি ওকে স্যালুট ঠুকি”
——আমাদের সকলের উচিৎ স্যালুট ঠোকা।
ইঞ্জা
আমাদের উচিত প্রতিটি নারীকেই স্যালুট দেওয়া, ধন্যবাদ ভাই।
সিকদার সাদ রহমান
শুধু নারী দিবস নয় আমাদের ব্রত হওয়া উচিত প্রতিদিন প্রতি মুহুর্ত নারীদের শ্রদ্ধা করা, তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য প্রতিপালন করা। আর কারো কিছু জানিনা, শুরুটা আমাকে দিয়েই হওয়া উচিত। প্রতিটি নারীর জন্যে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
ইঞ্জা
স্যালুট আপনাকে, সম্পূর্ণ একমত।