
একবার বোধ করি; খুব খরার কবলে পড়েছিলাম।
চৌচির বুকের জমিনটা কাঁদত, ক্ষুধার জ্বালায়!
হঠাৎ দুর্ভিক্ষে যতোটা না;তারচেয়ে বেশি ছিল, হাভাতের কাঙ্গালপনা।
একদিন,
বেরিয়ে পড়লাম; বিরান পথে নদীর ধার ঘেঁষে,
শুনেছি, নদীর কিনারা ধরে এগুলে, উর্বর জনবসতি মিলবে,
ঠিক পেয়ে গেলাম।
আশ্চর্যের বিষয় হল ঐ গাঁয়ে একজনই মানুষ ছিল,
বেচারা সব শুনে, আমায় খুব যত্ন আত্তি করল, ভুলে গেলাম আমি আটকুঁড়ে রাণী!
পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করতে পারি, চিরস্থায়ী নিবাস গড়তে পারিনা!
মানুষটি ও কিছুদিন পর আমার সংশ্রবে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ল,
ভাবলাম তাকে একা থাকতে দেওয়া উচিৎ,
নিজের ঝোলা কাঁধে চেপে আবার বেরিয়ে পড়লাম পুরনো পথ চিনে চিনে,
কতোবার যে পিছু ফিরে দেখেছি, ইয়ত্তা নেই!
মানুষটার মায়ায় পা জড়িয়ে পড়ত,
মনে সাধ জাগত, আহা তার ও কি এমন মন কেমন করে?
মনে পড়ে আমায়? যদি সে ডাকে, আর আমি বেখেয়ালিপনায় শুনতে না পাই!
সজাগ দৃষ্টিতে কান খাড়া রাখতাম।
চেনা স্বরে কেউ ডাকেনি আর!
খরার রাজ্যে ফিরে এলাম, কিন্তু একেবারে খালি হাতে আসিনি,
পথে একটি জংলী ফুলের চারার প্রেমে পড়লাম!
শেকড় সমেত উঠিয়ে মুঠোপুরে নিয়ে এলাম।
এবার পড়লাম মহাসংকটে!
এখানেতো জলশূন্য ধূলিমাটি আঙ্গিনা জুড়ে !
চারা গাছটি কোথায় পুঁতি?
জায়গা একটা পেলাম অবশেষে!
এ জনাকীর্ণ পৃথিবীর আড়ালে ও আমার একটা পৃথিবী আছে।
সেখানেই বেড়ে উঠছে এখন, আমার শেষ প্রেম জংলী ফুলের চারাটি।
মানুষটিকে ভুলতে পারলাম না,
তাকে ভেবে নাওয়া খাওয়া শিকেয় উঠত!
তার প্রতি অবসেসিভ হয়ে পড়লাম।
হ্যালুসিনেশনে ডুবে যেতাম।
মন হত সে আছে আমারই পাশে আমাকে ভালোবেসে!
হঠাৎ কথা বলা শুরু করবে, হেসে উঠবে!
মনে মনে কথা বলতাম তার সাথে।
সে বলত, ভালো থেকো।
তার কথামতই ভালো থাকতে শুরু করলাম।
অদ্ভুত ভাবে আবিষ্কার করলাম, আমার পৃথিবীতে তার পদধূলি কখনো পড়েনি!
পুরোটাই আমার অনুভূতির গোলকধাঁধা!
সে আছে, রক্তে মাংসে নয়, আমার দুর্বল অনুভবে।
স্মিত হেসে নিজেকে তিরস্কার করলাম, মানুষ এত বোকা হয়!
জংলী ফুলের সৌন্দর্যে উঠোনের খরা কেটেছে,
আশা করছি মৃতরাজ্য ও প্রাণ ফিরে পাবে।
অমানিশা শেষে বৃষ্টিস্নাত ভোরে নতুন সূর্যের সৌর্য্য
চুষে নেবে সূর্যমুখী!
আমি!
আমি তখন ও রইব বিলাসী দুঃখের দুঃখী!
২৩টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
একটা বিধুর বিয়োগের অথবা বলা যেতে পারে আত্মউত্থানের উপাখ্যান পড়লাম। সাবলীল শব্দপ্রোয়গে প্রতিটি শব্দ দূরবীন দিয়ে যেচে দেখতে গিয়ে দেখেছি কিছু উপমা রয়েছে লুকানো। ঠিকঠাক ব্যাখ্যটুকু আড়ালেই থাক। পুরো ব্যাখ্যায় না গিয়ে বরং এভাবে বলা যেতে পারে,
খাদিজাতুল কুবরা
আপু, দুকলম লেখার দুঃসাহসই আমার শেষ প্রেম!
আর তা যদি আপনার এমন অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্য আদায় করতে পারে তবে সেটা মাথার মনিহার।
খুব ভালো লেগেছে আপু!
অশেষ শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা রইল।
বন্যা লিপি
কিছুটা রেখো নিজের জন্য
কিছুটা থেকো অহংকারের মত।
কখনো নিজের অহম ভুলোনা।
প্রাপ্য ততটা
যোগ্যতা যতটা।
কাউকে খুব বেশি কিছু দিও না
কাউকে খুব কমও কিছু না।
পরিমাপ্য প্রয়োজন
পরিমিতি বাক্যে।
বাক্যের অন্তস্থ বোঝার বোধটুকু যত্নে রেখো।
খাদিজাতুল কুবরা
নিশ্চয়ই আপু মনে রাখবো।
বন্যা লিপি
পড়ে দেখলাম, শব্দের ভীতে উপমাদের ভীড়! প্রতি উপমায় বোধটুকু নাড়া দিলো দারুনভাবে। আমার ইচ্ছে করবে এই লেখাটা পাঠ করতে আমার মত।
ভালবাসা রইলো রু্বি❤
খাদিজাতুল কুবরা
আপু আপনার কণ্ঠে আমার লেখা শুনতে পেলে আমি কৃতার্থ হবো।
আমি অপেক্ষায় রইলাম।
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল আপু
বন্যা লিপি
লেখাটা ইনবক্সে দিও।
ফয়জুল মহী
ভীষণ ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে
খাদিজাতুল কুবরা
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো মহী ভাইয়া
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাহ্ এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। মনে হল ক্ষত-বিক্ষত এক আত্মার কথন॥ শুরু থেকে শেষ সাজানো গুছানো বেদনা॥ কেমন করে পারো। বরাবরের মতই মুগ্ধতা রেখে গেলাম॥
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল।🥰🥰
খাদিজাতুল কুবরা
রুকু, বন্ধু তুমি আমার জন্য অনন্য অনুপ্রেরণা। সবসময়ই উৎসাহিত কর,তাইতো লিখতে পারি। আমি তো মাঝে মাঝে ভাবি আর কখনো লিখবো না।
ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা রইলো প্রিয়
আলমগীর সরকার লিটন
অসাধারণ এক অনুভূতির প্রকাশ কবি আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
খাদিজাতুল কুবরা
আন্তরিক ধন্যবাদ লিটন দা।
শুভেচ্ছা জানবেন
রেজওয়ানা কবির
বেদনা মধুর হয়ে যায় তুমি যদি দাও গানটি মনে পরে গেল।অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম।খুব ভালো লাগল আপু। মনে হল অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বেদনার সমাহার। শুভকামনা ।
খাদিজাতুল কুবরা
আপনার ভালো লেগেছে এটাই আমার প্রাপ্তি। অশেষ ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা রইল
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
সুন্দর কবিতা
শুভকামনা রইল
খাদিজাতুল কুবরা
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
তৌহিদ
যাপিত জীবনে আমরা কখনো স্থির থাকিনা বা প্রকৃতি সে শক্তি আমাদের দেন নি। ভালোবাসার খড়া কিংবা সতেজতা মিলিয়েই প্রেম কাব্য রচিত হয়।
লেখা পড়ে ভালো লাগলো বেশ। শুভকামনা জানবেন আপু।
খাদিজাতুল কুবরা
সুন্দর বলেছেন ভাইয়া।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানবেন।
আরজু মুক্তা
বুনো ফুল রং ছড়ায় বেশি। অল্প নিয়ে মানুষের সন্তুষ্টি থাকা উচিত।
খাদিজাতুল কুবরা
একদম তাই আপু।
সুখ সন্তুষ্টির মধ্যেই নিহিত।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা অবিরত
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চলমান জীবনে কত শত ঘটনার মধ্যে দিয়ে পার হতে হয়। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর অনেক কিছুই পিছনে ফেলে আসা হয় যা সবসময় সুখকর হয়না আবার কিছু সঙ্গেই রয়ে যায় অন্যরকম সুখের আবেশ নিয়ে। বিলাসী দুঃখের দুঃখী হয়ে থাকতে হয় আজন্ম । জংলি ফুলের রূপ, গন্ধ সবসময়ই মন কাড়ে কিন্তু তা কারো ঘরে ঠাঁই পায় না।
চমৎকার লেখা। জানিনা কতটুকু বুঝতে পারলাম। একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেলো। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
খাদিজাতুল কুবরা
দিদি আপনি একদম ঠিক ধরেছেন।
আমাদের যাপিত জীবন কখনো আমাদেরকে দুঃখ বিলাস থেকে ছুটি দেয় না।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা রইল।