
দরজায় নক, ঠক ঠক শব্দের সাথে কলিং বেলের রিং টোনের শব্দে মালতী রান্না ঘর হতে দ্রুত দরজাটা খুললেন।শিকলে আটকানো দরজাটা একটু ফাক করে জিঞ্জাসা করলেন।
–কে?
–আপনাদের একটি চিঠি আছে।
লোকটি দরজার ফাকে চিঠিটা মালতীর হাতে দিয়ে প্রস্থান নিলেন।চিঠিটা না খুলে রেখে দিলেন মালতী।ইকরামুল রাতে ঘরে ফিরলেন।মালতী চিঠিটা তার হাতে দিলেন।ওয়াস রুম থেকে ফিরে এসে ইকরামুল চিঠিটা খুলে দেখলেন আগামীকাল তাদের গ্রুপের দলীও সভার দাওয়াত।
দলীও সভায় যাবার পথে তার সহকর্মী আকবরের একটি মাদ্রাসা পড়বে।ইকরামুল চিন্তা করলেন আকবরকে সাথে করে নিয়ে যাবেন।মাদ্রাসাটির অফিস দরজার খুব কাছা-কাছি যাবার পর সে বিকট বিকট চিৎকারের শব্দ শুনতে পেল।এর আগে এ পথে এক আধ বয়সী মহিলাকে চোখের জল মুছতে মুছতে মাদ্রাসা ঘর হতে বের হয়ে যেতে দেখলেন।মাদ্রাসার অফিসের বন্ধ দরজায় দাড়িয়ে সেই বিকট চিৎকারের শব্দগুলো অনবর শুনতে পেয়ে আশ্চর্যজনক ভাবে হৃদয়কে নাড়িয়ে দিল।
-হুজুর হুজুর আমারে আর মাইরেন না..আমি মইরা যামু।আমার খুব কষ্ট হইতাছে.. আমারে এহনকার মত ছাইড়া দেন।কাইল থেইকা টাহা না লইয়া মাদ্রায় আইমু না।আল্লার কছম-আল্লার কছম।
-হুয়োরে বাচ্চা তোরে কী আমরা ঘরে বওয়াইয়া বওয়াইয়া পড়ামু খাওয়ামু?তোরে কইছি বাড়িততন মাসের খরচ লইয়া আয়।তোর মা আইয়া মাফ চাইয়া গেল।তুই বাড়িততন টাকা তুই না আনতে পারছ কালেক্টসন কইরাতো আনবি!নাকি? তাওতো পারছ না!তাইলে তোরে বাইচ্চা রাইক্কা আমাগো কী লাভটা অইব ক’ দেহি হারামজাদা।
কথাগুলো বলেই আবারো এতিম ছাত্রটির শরিরে অমানবিক অত্যাচার শুরু করেন।তার অত্যাচারিতের মাত্রা এতোটাই নির্মম ছিলো যে কাটাযুক্ত মান্দার গাছের ভাঙ্গা ডালের স্তুব ছিলো ফ্লোরে।ছাত্রটির সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী রক্তে রঙ্গীন হয়ে গেল।তার এমন ভয়ংকর পাষানী নির্মমতায় অন্যান্য ছাত্ররা ভয়ে জড়োসরো হয়ে আছেন রুমের এক কোণায়।তার পরবর্তী যে ছাত্রটির জিজ্ঞাসাবাদের সিরিয়াল ছিলো সেই ছাত্রটি এ সব দৃশ্য দেখে আগেই মাথাঘুরে পড়ে রয়েছে ফ্লোরে।
বন্ধ দরজার বাহিরে কেউ একজন এসেছেন চতুর হুজুর আকবর তা বুঝতে পেরে দরজায় নকের শব্দ পেয়ে সবাইকে চোখের মুছে স্বাভাবিক থাকতে হুকুম দিলেন।দরজা খুলে নিজেদের লোক দেখে স্বস্তি পেল আকবর।
-আসসালামুআলাইকুম।
-ওয়াআলাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
ইকরামুলকে কিছু বুঝতে দেয়ার আগেই তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন সভাস্থলে যোগদানে।পথে যেতে যেতে এ বিষয়ে কথা হলেও আকবর তাকে অন্য ভাবে বুঝ দেন।
“আমি মুসলমান তবে আমি ধর্মান্ধ নই।আমার ধর্ম নিয়ে কেউ ইতরামি করবে আর আমি চুপ থাকবো তাও আমি নই।আমার ধর্ম শান্তির, কোন উৎশৃংখলতায় বিশ্বাসী নয়।ধর্মকে নিয়ে যারা ধান্দা করে ধর্মকে পুজি করে যারা অবৈধ টাকায় অবৈধ ফুর্তি করে আর যাই হোক তারা আমার প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর দলের লোক নয়।নবীজিও ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন,ইসলাম ধর্মের প্রসার করেছেন পুরো বিশ্ব জুড়ে সেই ইতিহাসে যুদ্ধ বিদ্রোহ থাকলেও কোন খুনাখুনি ছিলোনা–ছিলোনা অন্য ধর্মের প্রতি সহিংসতা।আমরা সেই ধর্মের সেই নেতার অনুসারী যেখানে ছিলো আল কোরান আর হাদিসের নীতি।তাদের জীবন চলার বিধানে ছিলো সততা ন্যায়পরানয়তা ও সংযমের অতুলনীয় উদাহরণ“।
আমি আপনাদের মতামতের সাথে আছি তবে ইসলাম ধর্মের কোন ক্ষতি বা বদনাম হয় এমনটিতে আমি সম্ভবত থাকতে পারব না।
মজলিসে ইকরামুলের এমন একটি বক্তবে ইসলাম ধর্মপন্থী কিছু নেতা টাইপের হুজুর অনেকটা নাঁখোশ।তাদের মুখোশ যেন তাদের চোখের সামনে এসে দাড়াল।বক্তিতা শেষে তারা ইকরামুলকে জোর জেরা করা শুরু করল।
–কী ভাই! এতো সাধু হলে দুনিয়া চলবে!আপনাকে একটি মাদ্রাসার প্রধান করা হয়েছে।আপনাকে অবশ্যই মাদ্রাসার উন্নয়ণে অন্যান্য সভাসদদের মতামতে যা সিদ্ধান্ত হয় তার সাথে কাজ করার মন মানষিকতা থাকতে হবে।
–তাই বলে কোমলমতি ছোট ছোট বাচ্চাদের রাস্তায় নামিয়ে অর্থ আদায় করব? তাহলে তারা আমাদের কাছ থেকে কী শিখল? আমরা এর বিকল্প রাস্তা বের করতে পারি না?
–বলেনতো দেখি কী সেই বিকল্প রাস্তা?
–সরকারের কাছে আবেদন করতে পারি।তাছাড়া দেশে বহু ধনী ব্যাক্তি আছে তাদের কাছে আমাদের আর্থিক সংকটের কথা আমরা তুলে ধরে সহযোগীতা চাইতে পারি।
–আপনি কী মনে করছেন এসব করা এখনো আমাদের নেতা বাদ রেখেছেন?এসব করা হয়ে গেছে।অলরেডি সরকারের ফান্ড হতে কিছু অর্থ পেয়েও গেছি।
–তাহলে বাচ্চাদের দিয়ে ভিক্ষার মত অর্থ সংগ্রহে কী দরকার!
–আপনিতো দেখছি হাদিস কোরানেও কাচা!আরে ভাই আপনি জানেন না মসজিদ মাদ্রসা তৈরী হয় বিভিন্ন দানের অর্থ দিয়ে!যাক আপনি নতুন ধীরে ধীরে সব কিছু বুঝে যাবেন।
দলনেতা সবাইকে ডাকছেন তার বৈঠকখানায় কেউ একজন এসে বলে গেলেন।সবাই সেদিকে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।মাশাল্লাহ্ নেতার বৈঠকখানা বটে! রাজা বাদশাদের বৈঠকখানায় চিত্তাকর্ষ যা যা থাকে এখানেও তার কমতি নেই।শুধু প্রকাশ্যে সুরা এবং নারী জাতীয় নর্তকী নেই।বৈঠকখানায় সারিবদ্ধ যে বিশাল বিশাল আলমারি সুকেজ!ফ্লোরে বসার নামীদামী গঁদি তাতে খোঁজলে হয়তো খুজেঁও পাওয়া যেতে পারে তেমন কিছুর আলামত।
দলের প্রায় দশজন সদস্য।গোল টেবিলে গোল হয়ে বসে আছেন নামী দামী কেদারায়।গোলাকার টেবিলের মাঝখানে নেতা বসে আছেন শুধুমাত্র একটি মুভিং চেয়ারে।
সবার সামনে একটি করে টাকার বান্ডেল ছুড়ে দিচ্ছেন নেতার বিশেষ পিএ।টাকার বান্ডেলগুলো সবাই দ্রুত নিজ নিজ পকেটে রাখলেন।ইকরামুল চিন্তায় পড়লেন।এটা কীসের টাকা! হারাম হালালের ভাবনায় তিনি টাকাগুলো স্পর্শ করলেন না।টাকাগুলো টেবিলের উপর যেখানে ছিলো সেখানেই পরে রইল।নেতা তা লক্ষ্য করলেন।
–আপনি কোন এরিয়ার?
–জ্বী, আমি উত্তর পাড়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার।
–ঠিক আছে কাল ফজরের নামাজের পর পর ছেলে পোলেদের নিয়ে রাস্তায় নামবেন এরপর আপনার মোবাইলে জানানো হবে কখন কী করতে হবে।আপনার যোগাযোগের সুবিদার্থে আপনার সাথে রহিম বকস থাকবেন।আর আপনার মাদ্রাসায় কিছু ব্যানার ফ্যাষ্টুন পাঠিয়ে দেয়া হবে।
–জনাব,কিছু মনে করবেন না।ছাত্রদের নিয়ে রাস্তায় নামানোর উদ্দ্যেশ্য কী? মানে কোন বিষয়ের উপর আমাদের প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামতে হবে ?বিশেষ করে নিষ্পাপ ছাত্রদের?
নেতাকে কেউ প্রশ্ন করবে এমন ভাবনায় নেতা অবাক।অনেকটা রাগের কণ্ঠে বললেন।
–এতো প্রশ্ন কেন?আর টেবিলের টাকাগুলো পকেটে নিচ্ছেন না কেন?কালকের জন্যতো লাগবে।
–দুঃখিত।সৎ এবং উদ্দ্যেশ্য স্পষ্ট বিহীন আমি কোন কাজে হাত দেই না।আমি এখন আসি।আসসালামুআলাইকুম।
টাকাগুলো টেবিলে রেখেই ইকরামুল সেখান থেকে প্রস্থান নিলেন।কী ভেবে যেন নেতা টু শব্দটিও করলেন না। শুধু বললেন।
–আল্লাহর কাজে আপনাকে আবারো ফিরে আসতে হবে।
ইকরামুল একটু মুচকি হেসে চলে গেলেন।
তখন বৈকালীন হাওয়ায় মাতাল শহর।তীব্র তাপে ভষ্ম পরান।এখন একটু ঝড়ো শীতল হাওয়া যেন হৃদয় ঠান্ডা হল।ইকরামুলের পকেটে রাখা মোবাইলে ইসলামীক গজলের রিং টোনটি হঠাৎ বেজে উঠল।
–হ্যালো…
–দুলা ভাই?
–হ্যা কে?
–আমি অমল।
অমল!ইকরামুল চিন্তিত।এতো বছর পর মালতীর ছোট ভাইয়ের ফোন!।
–হ্যা,কেমন আছো তুমি?
–জ্বী আমরা ভাল।
–তা বলো কী খবর?
–দুলা ভাই আপনি তারাতারি নন্দন হাসপাতালে চলে আসুন।
–কেন?কার কী হইছে?
–আপু,আপু হাসপাতালে…।
–মানে?ওতো বাসায় ভালই ছিলো!
–একটু জলদি আসুন।ডাক্তাররা আপনাকে খোজঁছেন।
অমল আর কিছুই বলতে পারলেন না।আবেগে চোখ ভিজে গেল।ঠোট কম্পনে শব্দেরা লুকিয়ে গেল।
ইকরামুলের যেন এখন আর হুস নেই।কী ভাবে যে সে হাসপাতাল গিয়ে পৌছল তা সে নিজেও জানে না।শালা অমলকে কাছে পেয়ে ইকরামুল আবেগে চোখের জল ফেলে তাকে জড়িয়ে ধরে।
–তোমার আপা কই?
–ওটিতে..
–ওটিতে ?
–হ্যা,ওটির বেডে আছেন ওনি।ওনাকে এক্ষুনি অপারেসন করাতে হবে।নতুবা বাচানো যাবেনা।দ্রুত টাকার ব্যাবস্থা করুন।
ডাক্তারে এমন কথায় ইকরামুল ভয় পেয়ে গেলেন কিন্তু ভরসা রাখলেন আল্লাহর উপর।
–কী হয়েছে ডাক্তার ?
–মাথার বা পাশটার কিছু অংশ ফেটে গেছে,হাতেও অনেক জখম।প্রচুর রক্ত ঝরছে।ও হ্যা,রক্ত লাগবে,এবি‘ পজিটিভ।যত দ্রুত সম্ভব রক্ত এবং টাকার ব্যাবস্থা করেন।
–কত টাকা লাগবে ডাক্তার?
–ব্লাডটা আপনাকে ম্যানেজ করতে হবে।ব্লাড ছাড়া হাজার পঞ্চাশ কিংবা তার বেশীও লাগতে পারে।
ডাক্তার চলে গেলেন তার কর্তব্যে।নিজ মাথায় হাত দিয়ে পাশের চেয়ারে বসলেন ইকরামুল।অমলের চোখের জল ছলছল করছে।মা মরা একমাত্র বড় বোনের এমন পরিস্থিতি তাকে অনেক কিছুই ভাবিয়ে তুলছে তার নরম মন।তারপরও দুলা ভাইকে অমল শান্তনা দিচ্ছেন।
–টেনসন কইরেন না দুলা ভাই।ভগবান যা করেন তা ভালর জন্যই করেন।ভগবান যখন বিপদ দিয়েছেন আবার নিশ্চয় ভগবানই এ বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।
ইকরামুল জানে অমল যা বলছেন তা কেবল আশার বাণী বাস্তবতা বড় বেদনার বড় ভাগ্যের।এখন এই মুহূর্তে সে এতো টাকা কোথায় পাবেন কিংবা রক্তই বা যোগার করবেন কোথা হতে!তাহলে মালতীকে কী সে বাচাতে পারবেন না?অমল একটা প্রস্তাব দিলেন।
–দুলা ভাই,আমাগো বাড়ীতে খবর দিবো?তা না হলে আমি বাসায় যাই বাবার কাছ হতে বলে লাখ খানেক টাকা নিয়ে আসি।
–না, না অমল।তুমি কাউকে কিচ্ছু বলবেনা।
–কেন?আমাগোতো টাকার অভাব নাই।টাকার জন্য আপুর অপারেসন হবে না তা কী হয়!
–না ভাই তুমি বুঝবে না।তোমাদের সহযোগীতা আমি নিতে পারব না।
ইকরামুল ফ্লাসব্যাকে চলে গেলেন।
ভিন্ন দুই ধর্মের দুজন–মালতী ইকরামুল এর ভালবেসে বিয়ে করাটা দুটো পরিবারে কেউ মেনে নিতে পারেনি।সমাজও তাদের তিরস্কার করেছিলো।অবস্থাশীল পিতার আশ্রয় চাইতে মেয়ে মেয়ের জামাই তার বাড়ীতে গেলে অহংকারী পিতা তাদের তাড়িয়ে দিতে চায়। মমতাময়ী মা তাদের পক্ষ হয়ে কথা বললে মালতীর পিতা মালতীর মাকে কঠিন এক পরিস্থিতির মাঝে ফেলেছিলেন।জাতকুলের দোহাই দিয়ে পিতার মাথায় পিতা নিজেই তার লাইসেন্সকৃত পিস্তলটি ঠেকিকে মালতীকে বাধ্য করলেন নিজ ঘর চির তরে প্রস্থানে।এমন এক কঠিন পরীক্ষায় মায়ের সিদুঁর মেয়ের কারনে মুছে যাবে! মেয়ে হয়ে মায়ের এমন ক্ষতি কী করে করবেন?এমনি অপরাগতায় মেয়ে বাধ্য হলেন ইকরামুলের হাতটি ধরে যেমনটি এসেছিলেন তেমনি ভাবে বাড়ী হতে বের হলেন।যাবার বেলায় মালতী বলে গেলেন–জীবনের অন্তিম সায়েহ্ণেও এ বাড়ীর চৌকাঠে আর কখনো পা রাখবেন না।আর কখনো কোন প্রয়োজনীয়তা মেটাতে তাদের নিকট আসবেন না।
মালতীর বাড়ী ছাড়ার ঠিক দুই মাস পর মা তার স্বর্গলোকে গমন করলেন।যতটুকু জানতে পারেন মালতী–সে ঐ বাড়ী হতে চলে আসার পর হতেই মা তার শোকে দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছেন।অসুস্থ ছিলেন তবুও তিনি কোন ঔষধ সেবন করেননি।মনের শোকে ক্ষোভে শেষ পর্যন্ত নিজেকে সপে দিয়েিলেন অকাল মৃত্যুর কাছে।অহংকারী পিতা মৃত্যু কালেও মায়ের মুখটি শেষ বারের মতন দেখার সুযোগ দেননি মালতীকে।তখনি মালতী স্বামীর হাতটা তার মাথায় রেখে কসম দিয়েছিলেন স্বামী ইকরামুলকে–জীবনে আর কখনো কোন প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে পিতার নিকট স্বরনাপন্ন যেন না হন।
এর মধ্যে আবারো ডাক্তার এসে জিঞ্জাসা করলেন।
–আমরা আর পনের বিশ মিনিটের মধ্যে রোগীকে ওটিতে নিয়ে যাবো আপনি সব ব্যাবস্থা করেছেনতো?
বলে একটি ফাইলের কাগজে অপারেসন করার অনুমতির সাইন করতে বললেন।
–নিন এখানে একটা সাইন করুন।
বিমূর্ষ নয়নে ইকরামুল সাইন করলেন।এর মধ্যে আবারো মোবাইলে রিং টোন বেজে উঠে।সহকর্মী রহিমের ফোন দেখে ধরলেন।
–হ্যালো,
–ইকরাম তুমি কই?তুমি নাকি নেতার কথার ডিনাই করেছো? টাকাগুলোতো নিতে পারতে!কাজ না হয় আমরাই সবাই মিলে–ঝিলে করে দিতাম।
–ভাই আমি এখন হাসপাতালে..
–মানে?কার কী হয়েছে?
–তোমার ভাবী,বাথরুমে পা পিছলে পড়ে এখন অবস্থা খুবই খারাপ।কিছুক্ষণ পর অপারেসন করাতে হবে।
–বলো কী!কোন হাসপাতালে?আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি.তুমি চিন্তা করোনা।
–তুমি আসবে আসো কিন্তু ঐসব হারাম টাকাগুলো নিয়ে এসো না।
–দেখো এখন অভিমান করার সময় না।তাছাড়া হাসপাতালে এখন তোমার টাকার খুব দরকার হবে।
–না, আমি মিনতি করছি।আমার মালতী বাচুক কী মরুক তবুও হারাম টাকা আমি নিবো না।
–দেখো টাকা ছাড়া তুমি মালতীকে বাচাতে পারবে না।
–বাচা মরার মালিক আমি তুমি কেউ নই রহিম।সব পরম করুনাময় আল্লাহর হাতে নিশ্চয় তিনি আমার মালতীকে বাচাতে কোন না কোন পথ দেখিয়ে দিবেন।তুমি তোমরা শুধু দোয়া করো।
ফোনটা কেটে দিয়ে চোখের জল হাত দিয়ে মুছলেন এবং মনে বিশ্বাস রাখলেন যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন।
চলবে…
২য় পর্ব পড়তে চাইলে পড়তে পারেন।
১৬টি মন্তব্য
পপি তালুকদার
গল্পটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। পরবর্তী অংশ পড়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
মনির হোসেন মমি
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
সুন্দর প্রেক্ষাপট। ভালো লাগলো গল্পটি। শুভেচ্ছা রইলো।
মনির হোসেন মমি
আপনাদের ভাল লাগা আমার বেশী বেশী লিখতে উৎসাহ বাড়ায়।সমালোচনাও আশা করছি।ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।
আরজু মুক্তা
জীবনের গল্প এমনি হয়। বাস্তবতা আর গল্পের প্লট কখনো মিলে যায়।
দারুণ গল্প।
শুভ কামনা
মনির হোসেন মমি
নিরন্তর শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
কিছু গল্প এমনি হয়!
গল্পের ভাবধারাটা অসাধারণ প্রেক্ষাপটে সামিল হয়েছে।
বাঁচা – মরাটা সৃষ্টিকর্তার কাছে।
আমরা কেবল প্রার্থনার আবেদনকারী।
নিশ্চয় পরবর্তী গল্পে মালতী সুস্থ হয়ে উঠবে।
.
ভালো লাগলো,দাদা।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এতো বিরতি নিয়ে আসলেন ভাইয়া? গল্পটি পড়ার জন্য মনটা ব্যাকুল ছিল। এবার পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিবেন । অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো আগামী পর্বের। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
মনির হোসেন মমি
পড়ার আগ্রহ জেনে খুব ভাল লাগছে।লেট শুধু আমি একা নই করোনায় এখন সারা বিশ্বই লেটের দিকে।তবে এবার আর দেরী করব না।দিয়ে যাব পর পর।অসংখ্য ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
অপেক্ষা করতে চাই।
মনির হোসেন মমি
আচ্ছা
ভালবাসা অবিরত।
তৌহিদুল ইসলাম
আমি মুসলমান তবে আমি ধর্মান্ধ নই।আমার ধর্ম নিয়ে কেউ ইতরামি করবে আর আমি চুপ থাকবো তাও আমি নই।আমার ধর্ম শান্তির, কোন উৎশৃংখলতায় বিশ্বাসী নয়।ধর্মকে নিয়ে যারা ধান্দা করে ধর্মকে পুজি করে যারা অবৈধ টাকায় অবৈধ ফুর্তি করে আর যাই হোক তারা আমার প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর দলের লোক নয়।
এটি আমারও মনের কথা। সবার বোধদয় হোক এটাই চাই। চমৎকার লিখেছেন ভাই। শুভকামনা জানবেন।
মনির হোসেন মমি
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন। কেবল এই ভরসাতেই এখনো অনেক মানুষ নিজের বিবেক বুদ্ধি আর সততার পথে নিজেকে কায়েম রাখতে পারেন।
আবার অনেকে পারিপার্শ্বিক অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। দেখা যাক ইকরামুল সাহেবের বেলায় কি ঘটে।
মাদ্রাসায় এতিম বাচ্চাদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের বর্ননা পড়ে শিউরে ওঠেছি। এতিমরা দুষ্টলোকের কাছে ব্যবসায়ীক একটা পন্য।
পরের পর্বের অপেক্ষা করি, একটু আগে দিয়েন ভাই।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
মনির হোসেন মমি
অসংখ্য ধন্যবাদ বড় আপু।