
যুগটা ছিলো ১/২ টাকার ভিউকার্ডের। হিরিক লেগে যেত উৎসব পার্বণের দিনগুলোতে। শুভেচ্ছা বিনিময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যমটি বোধকরি ৮০’র দশকে আমাদের কাছে বেশ অনুভূতিপ্রবণ ছিলো। যে উপলক্ষে উৎসব! সেই সেই প্রকার কার্ড সংগ্রহে সর্বাগ্রে কে বেশি সুন্দর কার্ড সংগ্রহ করতে পারলাম, তা নিয়ে সেই সময়েও ছিলো কিছুটা আভিজাত্যের গোপন এবং অলিখিত অহংকার।
বিনিময় কার্ডটা যদি আমার থেকে সুন্দর হয়,তবে মুখখানা যেন অজান্তেই শুঁকনো আমচুর হয়ে যেত। পহেলা বৈশাখ, ইংরেজী নববর্ষ,অথবা ঈদুল ফিতর। বন্ধুদের কার্ড দেবার জন্য বায়না আব্বার কাছে। নানান কৈফিয়তের পর পাওয়া যেত ৫/১০ টাকা ভিউকার্ড কেনার জন্য।
তো যা বলছিলাম আর কি……..!!
যুগতো বদলায় যুগে যুগে এ আর নতুন কি? একসময় ছিলো এ্যানালগ সিস্টেমের টেলিফোন যুগ। কম্পিউটারের বিষ্ময় কাটতে না কাটতে জুকার বার্গ সাহেব ধামাকা নিয়ে এলেন ফেসবুক নামক অনলাইন যুগের। আহারে কি আজব ধামাকায় দুনিয়ার প্রায় মানুষকে বুঁদ করে রাখলেন রে!!!
ভিউকার্ড প্রস্তত প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে তখনকার সময়ে আজাদ প্রডাক্টসের নাম সবচেয়ে প্রথমে ছিলো। আমার জানামতে।
আজাদ প্রডাক্টস’ই প্রথম ভিউকার্ড প্রচলনটা শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতায় আজাদ সাহেবের কাছাকাছি অন্য প্রতিষ্ঠানও শুরু করলেন সমান তালে বিভিন্ন ভিউকার্ড বাজারে ছাড়া। মানের দিক থেকে আজাদ প্রডাক্টস সর্বাগ্রে ছিলো। যাই হোক অবশেষে আজাদ সাহেবসহ সকলের ব্যবসায় (১/২ টাকার ভিউকার্ড) লাল বাত্তি। এখন বিয়ের কার্ড আর ভিজিটিং কার্ড অথবা হাই প্রোফাইল নিমন্ত্রণ পত্র ছাড়া, সেই পুরোনো দিনের ভিউকার্ড কি আর তেমন করে চোখে পরে? আমার তো পরেনি বহুকাল।
জানার ঘাটতিও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে মার্জনা চেয়ে রাখছি।
এবার আসি আসল বক্তব্যেঃ—-
বিভিন্ন উৎসবে জুকারবার্গ সাহেবের বানানো একখানা বাক্সের পরিচয় সম্বলিত-(যার নাম সোজা বাংলায় ফেসবুক আইডি) ইনবক্স বা মেসেঞ্জার নামে প্রত্যেকের একখানা করে আলাদা আলাদা ঘর আছে। আর সেখানেই!! আর সেখানেই শুরু হয় লিস্টে থাকা বন্ধু বান্ধবের ধুমসে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো। জনসমক্ষে (চোখের সামনে)…..বিনীত নিবেদন করছি এবং মাফও চাই সকলের কাছে—-আজ পর্যন্ত আমি এ যাবৎকালে কাউরে আমি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাই নাই। বড় আইলসা আমি। এ যাবৎ যারাই আমাকে পহেলা বৈশাখ,ইংরেজী নববর্ষ,ঈদুল ফিতরে ইনবক্স,মেসেঞ্জারে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন/জানিয়েছেন……
তাঁদের সকলের প্রতি রইলো অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। সকলের জীবন মঙ্গলময় কাটুক।
২৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
প্রথম প্রথম!!
বন্যা লিপি
দেয়ার মতো তো কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা প্রথম হবার জন্য। অনেক গুলো ফুলের শুভেচ্ছা নিয়ে নিন চক্ষু বন্ধ কইরা 🌷🌺🌼🌻💮💐🌸🌹🍀🍁
তৌহিদ
স্কুল কলেজ লাইফেও পোস্টকার্ড কেনা হতো, উপহারও পেতাম প্রচুর। কালের গর্ভে হাড়িয়ে যাচ্ছে সেসব দিন।
আর এখন ম্যাসেঞ্জারের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে গেছি। এক ম্যাসেজ যে কতজন পাঠাচ্ছে! এই যন্ত্রনায় আমি ঈদের তিন চারদিন ম্যাসেঞ্জার আনইন্সটল করে রেখেছিলাম। কারও জবাব দেইনি।
কাগজবার্তার সেই আবেগগুলি আর পাইনা অনলাইনে।
সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন আপু।
বন্যা লিপি
কাছের কয়েকজনরে ছাড়া কারোে প্রতিউত্তরও করিনাই। সেই পুরোনো দিনের ভিউকার্ডের কতস্মৃতী যে আজো ভালোলাগা আনে মনে!! ভিউকার্ড জমানার প্রেম নিবেদন ও ছিলো সাক্ষী এই ভিউকার্ড!
সেরকম কিছু কাহিনী নিয়ে লিখবো পরবর্তিতে ইচ্ছা আছে।
শুভেচ্ছা, শুভ কামনা 🌺🌺
প্রদীপ চক্রবর্তী
কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে এসব দিন আজ।
..
যথার্থ উপস্থাপন আপু।
বন্যা লিপি
সেই যে, যুগ বদলায় যুগে যুগে!! হারায় যত আছে যা পুরোনো দিনের আবেদন। কৃতজ্ঞতা জানাই পড়েছেন।
জিসান শা ইকরাম
অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিল তোমার এই লেখা,
ভিউ কার্ডের কতটা যে এ্যালবাম ছিলো আমার তা নিজেই জানি না। কত ধরনের যে ভিউ কার্ড ছিলো।
কোথায় রেখেছি সেসব এ্যালবাম তাই ভুলে গিয়েছি।
আসলেই একটা প্রতিযোগিতা মুলক অহংকার ছিল ভিউকার্ড সংগ্রহে।
ম্যাসেঞ্জারে শুভেচ্ছা দেয়ার রেওয়াজ আমারো ভালো লাগেনা।
সব চেয়ে বেশী খারাপ লাগে ফরোয়ার্ড করা মেসেজ।
কিছু আছে জোর করে ধর্মীয় ম্যাসেজ, মনে হয় ফেইসবুক প্রতিষ্ঠার আগে আমার কোন ধর্মই ছিল না, এরা ধার্মিক বানাচ্ছে আমাকে।
একান্ত অনুভুতি ভালো হয়েছে।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
ইনবক্স মেসেঞ্জার যেন এখন বিরক্তিকর পর্যায়ে চলে গেছে এই কিছু ধরনের বার্তার কারনে। এমন কেউ কেউ আছেন…. সকাল,দুপুর, বিকেল,সন্ধা, রাত্রি’র”শুভ”উইশ করা ফরজ মনে করেন প্রতিদিন। মেজাজ বিগড়ে যায়, এত ক্যারে বাপ? খাইয়া দাইয়া কাম নাই আর কোনো? তারওপর আরো আছে যত রকম এ্যাটাচমেন্ট পাঠানো। ধর্মীয় বার্তার তো কথাই নাই। ফেসবুকিয় তাবলীগে নামছে এরা মনে হয় যেন।
শাহরিন
আমার কাছে সব ধরনের শুভেচ্ছাই ভালো লাগে যদি সেখানে একটু আপন গন্ধ পাই ☺
বন্যা লিপি
আপন পর বুঝি কম। ইনবক্স মেসেঞ্জার ভিত্তিক সব বার্তাই একই রকম লাগে। গন্ধ যদি একই রকম লাগে তবে ভিন্নতা কোথায়? ধন্যবাদ পড়েছেন।
শাহরিন
অনেক বছর চাকরি করেছি আপু, ব্যাস্ততা অনেক খারাপ একটি জিনিস। যখন অনেক ব্যাস্ত থাকতাম তখন প্রিয় মানুষদের একটি হাসির ইমো ও ভাল লাগতো বা সবাই কে সবার মনের মত করে খুশি করতে পারতাম না। রেডিমেড কার্ড পাঠালেও আন্তরিকতার অভাব থাকতো না। কেউ একজন শত ব্যাস্ততম সময়ে ও ১ সেকেন্ড বের করে আমাকে একটি ম্যাসেজ ফরওয়ার্ড করলে আমি খুশি হই। আসলে সবার মন তো একরকম না। ধন্যবাদ
সঞ্জয় মালাকার
কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে এসব দিন
ভালো লেগেছে খুব,
শুভ কামনা আপু।
বন্যা লিপি
সেটাই তো বিষয় দাদা! সবাই নতুন জোয়ারে গা ভাসাতে গিয়ে অনুভূতি এখন ভোতানুভূতিতে পরিনত হয়েছে।
অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানবেন 🌺
আরজু মুক্তা
মাথা আউলা হলো স্মৃতির জ্বালায়!!
যায় দিন ভালো,আসে দিন খারাপ।।
বন্যা লিপি
মাথাটারে গুছাইয়া নিয়া লিইখ্খা ফালান স্মৃতীর কেচ্ছা। আমরাও পড়ি।
যথার্থ বলেছেন, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।শুভেচ্ছা জানবেন। 🌺🌺
রেহানা বীথি
ভিউকার্ড নিয়ে আমার কিছু মজার স্মৃতি আছে। হয়তো লিখবো কোনো একসময়। আপনার লেখাটি বড় ভালো লাগলো। সেই দিনগুলো ফিরে পেলাম যেন। বিশেষ দিনগুলোতে ইনবক্সের যন্ত্রণায় অস্থির প্রায় সবাই। তবু জুকার সাহেবকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারি না, কিছু মানুষের সাথে বন্ধুত্ব ভাবতে শেখায় অন্যভাবে, সমৃদ্ধ হই প্রতিনিয়ত। এ পাওয়া পরম পাওয়া।
বন্যা লিপি
তবু…..শব্দটার সাথে আমারো বিরোধ নেই কোনো। জুকার বার্গ সাহেবরে ধন্যবাদ দেয়াই যায়। এইরকম একটা দুনিয়ায় এনেছেন বলেই হারিয়ে ফিরে পেতে অনেক সাহায্য হয়েছে বন্ধু,পরিজনদের। আবার বিপরিতে ততটাই বিরম্বনাও পোহাতে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। সবটাই আত্মনিয়ন্ত্রনের উপর নির্ভর করে। যার যার নিয়ন্ত্রন তাঁর তাঁর কাছেই সন্মানজনক থাকুক। এটাই কাম্য।
আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম, বেশি অপেক্ষায় রাখবেন না যেন।
আপনার ভালোলাগাটুকু আমার অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবে।শুভেচ্ছা জানবেন🌹🌹🌹
মনির হোসেন মমি
ঠিকই বলেেন সেই যুগটাই ছিলো আজাদ সাহেবের।ভিউকার্ড ছাড়া সেই সময় কোন উৎসবই জমতো না এমন কি প্রেম ট্রেম করতেও আজাদের ভিউকার্ড ছিলো অনন্য।অবশ্য মানের দিক দিয়েও আজাদ ছিলো উন্নত।যতটুকু শুনেছি আজাদ প্রডাক্ট তার ব্যাবসার লাইটে আসেন সাগর পাড়ে একটি শিশুর ছবি তোলার জনপ্রিয়তায়।আর বাকী যা লিখলেন ঠিক আমিও আপনার মতই…।স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন..চোখে জল আসছে।
বন্যা লিপি
ভাই,ভিউকার্ড যুগের প্রেম নিবেদনের কিছু স্মৃতী নিয়ে এরপরে লেখার ইচ্ছে আছে। আপনার তথ্যের জন্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। ক্রমশঃ আমরা আবেগহীন পড়ছি যেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার অনেকগুলো ভিউকার্ড ছিলো। সব নায়ক সালমান শাহ’র। বিশাল বড় একটা পোস্টার ছিলো, ঘুম থেকে উঠে একবার দেখতাম আর ঘুমানোর আগে একবার। 😊😊
কত কি মনে পড়ে গেলো ! ৯৪,৯৫ ৯৬ কত ভিউকার্ড কে জমাতে পারে, কার কাছে এক্সট্রা অর্ডিনারি কালেকশন বেশি ইত্যাদি ইত্যাদি। তুমি খুব ভালো লেখো। নিজেদের তুলে আনতে পারি তোমার স্মৃতিকথায়।
ইনবক্স !! এটা না থাকলে বুঝতামই না অলসতা কাকে বলে। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসামাজিক মনে হয়। বেচারা বন্ধু/বান্ধব (?) রা এত মেসেজ দেয়, আর সিন/ রিপ্লাই করার সৌজন্যতা দেখানোর সময়ই পাইনা। 😜😜
বন্যা লিপি
কেমন যেন লিখতে বসলেই চলে আসে স্সৃতীময়তায় পুরোনো দিনের উদাহরন। তাই টেনে নিয়ে আসি লেখার উপজিব্যে।
যে সন গুলো তুমি উল্লেখ করলে….. এসব সনের অনেক আগেই চলে এসেছি শুধুমাত্র স্মৃতী জমাতে ।
জমিয়েছিলাম বেশ কিছু ভিউকার্ড উপহারে পাওয়া। প্রিয় নায়ক/নায়িকা সহ যত সুন্দর দৃশ্যাবলী ‘র। ৯৪,৯৫,তে একবার বাবার বাসায় গিয়ে স্সৃতীর স্তুুপে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম।
তোমাকে ভালবাসা ফুরাবার নয়💕💕
মোঃ মজিবর রহমান
মনে করিয়ে দিলেন! এইতো আগের দিন। গিন্নি মেয়েকে বলে আগে কত ঈদ কারড দিতাম এখন আর এগুলা নাই। মেয়ে বলে ঈদ কারড কি? তখন হল গল্প ঈদ কারড আএ ভিউ কারডের।
বন্যা লিপি
সত্যি আগের দিনে কি কি করতাম, যখন বাচ্চাদের বলি….. ওরা বলে কি জানেন দাদা? ” ও তোমাদের কটকটি যুগের কথা ”
কৃতজ্ঞতা জানবেন, শুভ কামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যাঁ আপু আপনি ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা অবিরত।
শাফিন আহমেদ
ভিউ কার্ডের সেই সোনালি দিনগুলো খুব মিস করি।আমি সংগ্রহ করতাম রেস্লার দের কার্ড। সেই সময়ের জনপ্রিয় রেস্লার দের মধ্যে আমার পছন্দ ছিল ‘দ্য রক’ কে। রক মঞ্চে আসলেই একটা মিউজিক বাজতো ”ইফ ইউ স্মেল, দ্য রক ইস কোকেন” আরো অনেকেরই কার্ড সংগ্রহ করেছি । অনেক ভালো লেগেছে লেখাটা আপু, এরকম আরো লেখা চাই যেগুলো সোনালি দিনের স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দেয়। শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
স্যরি সাফিন, অদেখা মন্তব্য দেখাই হয়না আমার কেন যেন আজ দেখতে দেখতে চলে এলাম! এসেই দেখা পেলাম তোমার কবে রেখে যাওয়া মন্তব্য।
তোমাদের সময়ে তোমাদের বয়সি সব ছেলে রা কিন্তু রেসলার, স্পাইডার ম্যান, সুপার ম্যান, ব্যাট ম্যান, হলিউডের জনপ্রিয় হিরো, মাইকেল জ্যাকসন, এদের ভিউকার্ড সংগ্রহ করায় খুব আগ্রহী থাকতো।
লিখবো। কেন যেন স্মৃতী কথা লিখতে বেশি ভালো লাগে আমার!! সময়ই তো করে ওঠা হয়না আমার। তবুও লিখতে হলে এখানেই লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি বেশি।
তোমার প্রতি ভালোবাসা অবিরাম❤❤