
মেঘলা দিন সাথে হাল্কা শীত শীত ভাব। শরীর- মনে চরম আলস্য ভর করেছে, যেন কোন কাজ নেই। সব ফেলে রেখে এ সময় আমি কিছু পুরোনো মুভি দেখতে পছন্দ করি। কালেকশন থেকে বেছে নিলাম অসংখ্যবার দেখা “বাজরাঙ্গী ভাইজান”।
‘আশিয়ানা মেরা সাথ তেরে হ্যায়না,,,,
তু যো মিলা লো হো গেয়া ম্যায় কাবিল!
তু যো মিলা তো হো গেয়া ম্যায় হাসিল,,,,
কিউ কি তুম ধারকান ম্যায় দিল’-
কি অসাধারণ ভালোবাসার প্রকাশ! আজকাল বহুবছর একসাথে থাকার পরও আমরা বলতে পারি না ‘ তুম ধারকান, ম্যায় দিল’!
হ্যাঁ, একটি ছয়বছরের মেয়ের জন্য বাজরাঙ্গী ভাইজান যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন এবং তাকে পাকিস্তানে পৌঁছে দিতে নিয়েছিলেন জীবনের চরম ঝুঁকি। পরিচালক কবির খান নিপুন পরিচালনায় অনবদ্য একটি ফিল্ম বানিয়েছেন। যা ২০১৫ সালের হলেও আমার মত অনেকেই বারবার দেখে থাকেন।
সিনেমা নিজেদের প্রকাশের একটা চমৎকার প্লাটফরম ভারত একটা ভালো বোঝে। দ্বিতীয় হল প্রতিবেশী রাষ্টের সাথে মধুর পারস্পরিক সম্পর্ক।বাস্তবে করুক না করুক তারচেয়ে তাদের মুভি গুলোতেই টপ্রকট।
তো বলছিলাম মুভি নিয়ে- ভারত পাকিস্তানের চরম সংকটময় অবস্থায় তারা দেখিয়ে দেয় কিভাবে পাকিস্তানী হারিয়ে যাওয়া একটি মেয়েকে নিজের দেশে ফিরিয়ে দিতে হয়। প্রধান চরিত্র পাবন কুমার(বাজরাঙ্গী)একজন হাসিখুশি সহজসরল মানুষ যিনি গড হনুমানজীর ভক্ত। বছর বছর পরীক্ষায় ফেল করে বাপের থাপ্পর খাওয়া এই মানুষটি অত্যন্ত কোমল মনের।মিথ্যা বলেন না এবং নকল করেও পাশ করবেন না।
মুভিতে দেখা যায়, পাকিস্তানী মেয়ে মুন্নি জন্ম থেকে বোবা। মায়ের সাথে ভারতের মাজারে আসার সময় হারিয়ে যায়। ভাগ্যচক্রে বাজরাঙ্গী ভাইজানের সাথেই দেখা হয়।
“যার নিজের থাকার জায়গা থাকে না আর যে ভালবাসা পায় না সেই আসলে বোঝে একটু নিশ্চিন্তে ঘুম আর ভালোবাসার মূল্য কত বেশি?”
আর তাইতো বাজরাঙগী ভাইজান মুন্নিকে নিয়ে আসে তার হবু স্ত্রী অর্থাৎ কারিনা কাপুরের বাসায়। বাঁধ সাধেন হবু স্ত্রীর বাবা। তিনি কিছুতেই এক পাকিস্তানী মেয়েকে জায়গা দেবেন না। অবশেষে এই বোবা মেয়েটিকে বাজরাঙ্গী ভাইজান পৌঁছে দিতে পাকিস্তানে ভিসা পাসপোর্ট ছাড়াই ঢুকে পরেন। অনেক হাস্যরসও রয়েছে এই মুভিতে। দেখা যায় বিপদে পরে তারা মসজিদে আশ্রয় নেয়। মাওলানা সাহেব উদার মানসিকতার পরিচয় দেন।
সিনেমাটিতে দেখা যায়, অসফল মানুষরা রিস্কি হয়,তারা নির্দ্ধিধায় অন্যের পাশে দাঁড়ায়। ইন্টেলিজেন্ট হিসেবে আমরা যাদের জানি তারা নিজের জীবনকে বেশি ভালোবাসে আর তাই তারা কারও জন্য ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে না।
জীবনের ঝুঁকি নেয়া অসফল পাকিস্তানের আর একজন সাংবাদিক চান্দ নবাব( নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী)। যার অসামান্য ভূমিকা ও সহযোগিতায় মুন্নিকে তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
একসময় বাজরাঙ্গী ভাইজান স্পাই হিসেবে আটকে যান। তার উপর চলতে থাকে অমানবিক নির্যাতন। তখন আর একজন শক্তিমান অভিনেতা তার দেশপ্রেম ও মনুষ্যপ্রেমের পরিচয় দেন। তিনি বর্ডার পার করে দেবার মত ঝুঁকি নেন। সেখানে দেখা যায় বর্ডার কোষ্টগার্ডরাও ভালোবাসা ও সহমর্মিতার পরিচয় দেন।
ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করা সম্ভব তাইতো বোবাও কথা বলে। এমন এক মুভি বাজরাঙ্গী ভাইজান। আমার অসংখ্যবার দেখা এই মুভি এবং প্রতিবারই আমাকে শেষটুকুতে গিয়ে কাঁদতে হয়। কি করুন দৃশ্য! শেষ দৃশ্য বড়ই মর্মান্তিক। দুদিকে দুদেশের মানুষ হাজির। পাকিস্তানীরা বর্ডারের তালা ভেঁঙ্গে বিদায় দিতে এবং ভারতীয়রা তাদের দিল ওয়ালাকে নিয়ে যেতে। মুন্নি( শাহিদা) পেছন থেকে ‘মামা’ বলে ডাক দেয়। বাজরাঙ্গী ভাইজান তার ডাকে ফিরে এসে তাকে জড়িয়ে কোলে তুলে নেয়।
কি অপরিসীম ভালোবাসা একটি অপরিচিত মেয়ের জন্য। যার জন্য সে কাবিল( যোগ্য)হয়ে ওঠে এবং সে ধারকান( স্পন্দন) হয়।
আমরা খুব সহজে কাউকে ভালোবাসত পারি না বা চাইও না। হৃদস্পন্দন তো দুরের কথা! মুভির পরতে পরতে ভালোবাসার পরিচয়, প্রেমের পরিচয় পাওয়া গেছে। যেটা আমাদের জীবনে খুবই জরুরী “মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য”- এই সহানুভূতিটুকু আমরা পারি না দিতে কারন আমাদের মনে হয় স্বার্থ এবং শারীরিক প্রেমই সকল কিছুর উদ্ধে। এছাড়া অন্যকোন প্রেম হয় না। আর তাইতো প্রেমহীন পৃথিবী সহমর্মিতা ও ভালোবাসার অভাবে খরখরে শুকনা হয়ে গেছে। আমরা কারও দিকে না তাকিয়ে উদ্ধশ্বাসে কেবল ছুটেই চলছি। কিন্তু কেন এত ছুটাছুটি? তা জানা নেই!
কবিতা মনে পড়ে গেল-
“ যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি
যদি ভালবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাব
যদি ভালবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
আর সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল।”
তাই আসুন হিসেব-নিকেষ, স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসি। পৃথিবী হয়ে উঠুক ভালোবাসাময়, প্রেমময়!!! দুর হোক সকল জরা, রক্তারক্তি, হিংসা বিদ্বেষ!
ছবি- নেট থেকে।
২০টি মন্তব্য
পপি তালুকদার
ছবি টি আমিও কয়েক বার দেখেছি। ভালোবাসার আর দায়িত্ব বোধের এক অসাধারণ উদাহরণ ছবিটি আমার কাছে মনে হয়।
রুকু আপু সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করছেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
প্রথম মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যে সবসময় অনুপ্রাণিত হই।
সাবিনা ইয়াসমিন
ছবিটি আমি দেখেছি। সাংবাদিক চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর অভিনয় খুব ভালো লেগেছে। কিছু কিছু জায়গায় অতিরঞ্জিত মনে হলেও সব মিলিয়ে ছবিটি ভালো লাগার।
আপনার উপস্থাপনা চমৎকার 🙂
আরও কিছু সিনেমা আমাদেরকে দেখাবেন প্লিজ।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা আরও কিছু সিনেমা দেখাব। আচ্ছা অবশ্যই চেষ্টা করব।
অসংখ্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
একটু ভুল আছে আপু মুভিটি আমিও দেখেছি দু’একবার। মেয়েটিকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছিল ভারতে ওর মা। ছাগল ছানা দেখতে পেয়ে বর্ডার এ চেকিং এর সময় মেয়েটি ট্রেন থেকে নেমে যায়, ওর মা ঘুমিয়ে ছিল। এভাবেই হারিয়ে যায় মুন্নী। আমরা সবসময় প্রেম বলতে পূর্ণাঙ্গ নরনারী বা শারীরিক সম্পর্ক কেই বুঝি। পৃথিবীতে এমন অনেক ভালোবাসা আছে যা কখনো নরনারীতে বা কামুকতায় পূর্ণ হয়নি। অনেক দিন আগে এদেশেও এই মুভির মত একটা ঘটনা ঘটেছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার, ব্যতিক্রম মুভিটি নিয়ে রিভিউ দেয়ার জন্য । নওয়াজউদ্দিনের অভিনয় সত্যিই অসাধারণ লেগেছে। শুভ সকাল দুষ্টের শিরোমণি
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ্যাঁ দিভাই ট্রেন থেকে নেমে হারিয়ে যায় ঠিকই আছে। আমি একটু সংক্ষিপ্ত করেছি। বেশি বড় হয়ে যাচ্ছিল।
ধন্যবাদ দিভাই। ভালোবাসা রইল।
তৌহিদ
সিনেমাটি দেখেছি এবং আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনার লেখা এই রিভিউটি ভালো হয়েছে।
শুভকামনা জানবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমি প্রচুর সিনেমা দেখি। ভালো যখন বলছেন তাহলে আরও লিখব।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
হিন্দি সিনেমা দেখি বললেই হয়, কিন্তু আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে
এ ছবিটি দেখা উচিৎ, সময় পেলে অবশ্যই দেখে নেব,
সুন্দর কবিতাটি কার লেখা একটু জানিয়েন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুন্দর কবিতাটি ‘রফিক আজাদ‘ সাহেবের।
অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা উৎসাহ দেবার জন্য।
হৃদয়ের কথা
মুভিটি দেখেছি আমি আপু। খুব সহজ সরল ভাবে মুভি রিভিউ দিলেন, খুবই ভালো হয়েছে রিভিউ। সুন্দর পৃথিবীর জন্য মানুষে মানুষে ভালোবাসা অত্যন্ত জরুরী।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালোবাসা দিয়েই শুধু জয় করা যায়। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
আরজু মুক্তা
মুভি রিভিউ ভালো হয়েছে। মুভি থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। যদি সে ধরণের মানসিকতা থাকে।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক সাহস করে লিখে ফেললাম। আরও সাহস দেবার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা ও ভালোবাসব রইল।
খাদিজাতুল কুবরা
খুব সুন্দর রিভিউ লিখেছ বন্ধু। এটা আমার প্রিয় মুভিগুলোর একটি। মর্মস্পর্শী কাহিনী। ছোট্ট একটি শিশু এবং শিশুসুলভ সারল্যের প্রতীক ভাজরাঙ্গী সততার এক দৃষ্টান্ত।
আরও মুভি রিভিউ পড়ার অপেক্ষায় রইলাম
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালোবাসা নিও।
রেজওয়ানা কবির
মুভি রিভিউ পড়ে ছবিটি চোখের সামনে ভাসছে আমি ছবি দেখি অনেক কিন্তু তুমিতো জানই কাহিনি কিছুদিন পর ভুলে যাই,পরে আবার দেখলে মনে পড়ে।যাক আবার দেখা হল মুভিটা লেখার মাঝে। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আবার দেখ। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সিনেমাটি একবার দেখেছি।
পুরোপুরিভাবে দেখেনি।
তবে যতটুকু দেখেছি এবং যা জেনেছি খুবি ভালো লাগার মতো।
.
মুভি রিভিউ খুবি ভালো লাগলো,দিদি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকবেন।