যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বা প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা আমাদের সন্তানদেরকে ইংরেজী মাধ্যমে পড়ালেখা শিখাই। অনেকে আছেন তারা বাসাতেও সকলের সাথে ঐ ইংরেজী ভাষাতেই কথা বলে। একটি বিদ্যালয়ের এসএমসি সদস্য আমাকে বলেছিল,” আপা ! আমার সন্তানেরা ইংরেজী মাধ্যমে পড়ালেখা করছে, আমার সন্তানেরা বাংলা ভাষায় কথা বলার চেয়ে ইংরেজীতে কথা বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। আমার সন্তানের সামনে যখন বাংলা মাধ্যমে পড়া ছেলেমেয়ে আসে তখন তারা নিজের অজান্তেই গুটিয়ে যায়, তাহলে বুঝেন ইংরেজী মাধ্যমে পড়াটা কত জরুরী”। সেইসব অভিভাবকদেরকেই দেখেছি সভা আর সেমিনারে বলে,” বাংলা মাধ্যমে পড়ালেখা শিখতে হবে, শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলতে হবে আরো কত কি ? হায়রে কিছু মানুষ ! এরা ঘন্টায় ঘন্টায় তাদের বাক্য বদলায়।
আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদেশীরা কাজ করছে। তারা তাদের ভাষার উপর প্রাধান্য দিয়েই উচ্চ পদসমূহে স্টাফ নিয়োগ করছে–অথচ বাংলাদেশ হতে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা বা চাকুরী করতে গেলে ইংরেজীতে দখলদারী হয়েই যেতে হয়। লক্ষ লক্ষ বিদেশী বছরের পর বছর এখানে কাজ করছে, কেন তারা আমার মুখের ভাষায় কথা কইবে না !!!!!
যে কেউ ইংরেজীসহ বিভিন্ন ভাষা আয়ত্ব করতেই পারে তবে বাংলা ভাষার গাথুনীটা ঠিকে রেখে। যে সকল ভাইবোনেরা / বন্ধুরা বিদেশে আছেন, অনুরোধ রইলো আপনাদের সন্তানদেরকে বাংলা ভাষা চর্চা করিয়েন, ঘরে কথা বলুন বাংলায়, বাংলা ভাষাতে কথা বলে মেথে উঠুন গল্পে-কথায়-আদরে-স্নেহে-মমতায় —
জন্মের পর শিশু একটু একটু করে বড় হয়, এক সময় আধো আধো বোলে বলে ওঠে মা-মা, বা-বা, দা-দা, না-না, চা-চা সহ আরো কত সন্দর ভাঙ্গা শব্দের ঝলকানি। আরো একটু বড় হলে সেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথাগুলো পূর্ণ শব্দে রূপান্তর ঘটে, শব্দগুলো বাক্যে পূর্ণতা পায়–আল্লাহর কি অপূর্ব লীলাখেলা !!
অনেকে বলে থাকেন মুখের কথাগুলো সুন্দর করে বলো। আহা ! আমার জেলার ভাষায় আমি কথা কইমু, তাতে আপনের কি আইসে যায় !!! আমি এই ভাষাতেই পরিবারের সক্কলের লগে কথা কইমু, সাথীদের লগে আমার জেলার ভাষাতেই খেলা করমু, ঘুড়ি উড়ামু আর কইমু ইস্ কত্ত উপরে যাইয়ে উড়তেছেরে, পুকুরের কাছে যাইয়ে দাঁতে দাঁত ঠক ঠক কইরে কইমু কত্ত শী-ই-ত রে, এক-দুই-তিন বইলে ঝাপ দিয়ে পানিতে ভাইসে উইঠে কমু পুকুর পারে আইসাই নাইতে মনে চাইলো, মার রান্ধন খাইয়া কমু, ওমা মারে তোমার রান্ধন জব্বর স্বাদের হইছে, রাখালের বাংলা গানে ধানের শীষে নাচন দেখমু, আমার পরাণের ভাষাতেই গল্পে-স্বল্পে মাইতে উঠমু–ওরে আমার পরাণের ভাষারে —–
ভাষার জন্যও মানুষ জীবন দেয় !! হুম- জীবন দেয় ! আমার দেশের মানুষেরাই দেয় – আমার দেশের মানুষেরা কত সাহসী, কত উদার, কত কমিটেড, কত দেশ প্রেমিক– !!! যারা বাংলা ভাষা রক্ষার্থে জীবন দিয়েছেন তাদেরকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন —
১২টি মন্তব্য
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
বাংলার ভাষার মতো মধুর ভাষা পৃথিবীতে আর নেই।
শুভকামনা রইল
স্বপ্ন নীলা
ঠিক বলেছেন, বাংলা ভাষার মত এত মধুর এত কমিউনিকেটিভ ভাষা খুবই বিরল— আপনার জন্যও শুভকামনা রইল
পপি তালুকদার
অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। আমাদের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।। বাংলা ভাষা আমাদের গর্বের ভাষা।
স্বপ্ন নীলা
আপু, অনেক সময় আমার বাংলা ভাষা তাৎপর্য ভুলে যাই, অথচ এই ভাষার জন্য আমাদের দেশের মানুষ জীবন দিয়েছে– আর হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন–বাংলা ভাষা আমাদের গর্বের ভাষা — অনেক অনেক শুভকামনা রইল
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কমিটেড টা বেমানান লাগছে , প্রতিশ্রুতিবদ্ধ লিখলে ভালো হতো। বাংলা ভাষাটাকে আজকের শিক্ষিত সমাজটাই ধ্বংস করে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসটা আসলেই যতো মাতামাতি বাংলা নিয়ে, শহীদ মিনার নিয়ে। বাকীটা সময় কি হয় সেটা আমরা সবাই জানি। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম। শুভ রাত্রি
স্বপ্ন নীলা
আন্তরিক ধন্যবাদ দিদি। আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা, এই বাংলা ভাষা মাথা উঁচু করে বেচে থাকুক পৃথিবীর বুকে –অনেক অনেক শুভকামনা রইল
বোরহানুল ইসলাম লিটন
মাতৃভাষার প্রতি সর্বদাই শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ ভাষা বাঙালীর গর্ব।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম নিরন্তর।
স্বপ্ন নীলা
সুন্দর মতামতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ লিটন ভাই। ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন সব সময়ই
আরজু মুক্তা
” আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, পরে ইংরেজি শেখার গোড়া পত্তন! ”
এটা যে কেনো বুঝি না আমরা। বাংলা আমার মায়ের ভাষা। কতোই না মধুর!
তৌহিদ
বাংলা আমার মায়ের ভাষা আমার প্রাণের ভাষা। ছোটবেলায় প্রথম যে শব্দটি বলেছিলাম তা বাংলায় এবং আমি নিশ্চিত সেটি ছিল মা। প্রাণের এই ভাষার মহত্ব আমাদের বুকে লালন করা উচিত।
খুব সুন্দর লিখেছেন আপু। শুভকামনা রইল।
মনির হোসেন মমি
আপনি ঠিক বলেছেন আমরা যদি বিদেশ কাজ করছে অন্য ভাষাায় দক্ষতা আনি তবে ওরা কেন দেশে কাজ করতে আসা বাংলা ভাষা জানবেনা। পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে যেখনে কেব তাদের মাতৃ ভাষাই চলে অন্য ভাষা চলে না এবং ওরা মেনেও নেয় না। চমৎকার পোষ্ট।
সাখাওয়াত হোসেন
বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। পৃথিবীতে ভাষার জন্য বাঙালিরাই একমাত্র সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে। তাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি গৌরবের ভাষা। তাঁদের প্রেরণা নিয়েই এগিয়ে যাব।