“শাসনক্ষমতার বৈধতা কোন নৈতিকতার মাপকাঠিতে আবদ্ধ নয়; কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাই এখানে মূল বিষয়। যার ক্ষমতা আছে সে-ই শাসন করবে, নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। ক্ষমতা অর্জন আর ক্ষমতা রক্ষা করাই রাজনীতির মূল নীতি। ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার দিয়েই জনগণের আনুগত্য অর্জন করতে হয়। রাজনীতি মানেই হলো ক্ষমতা ‘গ্রহণ আর প্রয়োগের’ নীতি” – কথাটি যার তাকে ইতিমধ্যেই “আধুনিক রাষ্ট্র-চিন্তার জনক” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কথাটি শুনতে যত কঠিন আর রূঢ় শোনাক না কেন, বাস্তবতা এটাকেই সমর্থন করে আসছে।
হ্যাঁ, আমি নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির কথা বলছি। ইতালীর ফ্লোরেন্সে নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির জন্ম ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে। তিনি ছিলেন পৃথিবীর সেরা রাজনৈতিক দার্শনিক ও মতবাদ প্রণেতা। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও মতবাদের অব্যবহিত ফলাফল হিসাবে ফ্রান্সের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সফল বিপ্লব সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে এর বীজ রোপিত হয় সুবিশাল রাশিয়াসহ পৃথিবীর দেশে দেশে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশে রাজনীতিতে ম্যাকিয়াভেলি সূত্রটি বহুল ব্যবহৃত বা বহুল প্রয়োগকৃত একটি সূত্র। কিন্তু কিভাবে এই সূত্রটি রাজনীতিতে যোগ হলো সেটি আমরা অনেকেই জানি না।
১৫ শতকের শেষভাগে ইতালি বেশ কিছু ক্ষুদ্র শাসক রাজ্যে বিভক্ত ছিল। অপরদিকে পাশ্ববর্তী ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড তুলনামূলকভাবে সংগঠিত ও একীভুত ছিল। ইতালির তৎকালীন শাসকদের ভ্রান্ত নীতি, দুর্নীতি এবং ভুল পদক্ষেপের ফলে দেশটির বহুবিভক্ত ও জনগণের ভোগান্তি ম্যাকিয়াভেলিকে খুব ব্যথিত করে। তাই তিনি এ অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য রাজনৈতিক নিয়মাচার ও দক্ষতা উন্নয়নে বিশুদ্ধ পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো, সিসেরো, লিভি, জেনোফোন দ্বারা প্রভাবিত ম্যাকিয়াভেলি তাঁর দার্শনিক ভাবনাগুলোকে সঠিক রাজনৈতিক আদর্শ খুঁজে পেতে গভীরভাবে নিবিষ্ট করেন। একপর্যায়ে তিনি রাজনৈতিক দর্শনভিত্তিক যুগান্তকারি মতবাদ দিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। বইটি ইউরোপ ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এভাবে তিনি হয়ে ওঠেন পৃথিবীর সেরা রাজনৈতিক দার্শনিক।
নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির যে সকল রচনা বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেছে তার মধ্যে বিখ্যাতটি হলো ‘দ্যা প্রিন্স, এটি মুলতঃ রাজনৈতিক বিজ্ঞান ভিত্তিক একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। ম্যাকিয়াভেলির মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে এর প্রথম মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বইটিতে তিনি রাজনীতিকে সম্ভাবনার একটি শিল্প হিসাবে বর্ণনা করেন। এতে রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কি করা উচিত হয়নি, তা তিনি লিখে কি করা উচিত সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে ক্ষুরধার যুক্তি তুলে ধরেন। বইটিতে তিনি একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা ও দীর্ঘ শাসনের উপর জোড় দেন। এতে শাসক তাঁর শাসনক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জনগণের আকাঙ্খা অনুযায়ী কিভাবে কাজ করবে তার বর্ণনা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি প্রশাসন ও প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত সৈন্যদের বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবহারের কৌশলগুলোর উপর বিস্তারিত বর্ণনা করেন। বইটিকে আধুনিক রাজনৈতিক দর্শনের প্রথম কাজ হিসাবে কৃতিত্ব দেয়া হয়ে থাকে। কেননা এতে মূর্ত ধারণার পরিবর্তে কার্যকরি সত্য গ্রহণ করা হয়েছে।
‘দ্যা প্রিন্স’ নামের বইটিকে সেকালে সমালোচকরা মূল্যায়ন করেন ‘স্বৈরশাসকের হ্যান্ডবুক’ হিসাবে। কেননা বইটিতে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে কঠোরতা, চাতুরতা, শঠতা, শত্রু বিনাশের কৌশল ও নির্দেশনা রয়েছে। এ সমালোচনার কারণেই ম্যাকিয়াভেলিয়ান টার্মটি ব্যবহার করা হয় অনৈতিক এবং প্রবঞ্চনামূলক রাজনৈতিক কৌশল বোঝাতে। ম্যাকিয়াভেলির ধারণাগুলোর গভীরতা অনুধাবনে ব্যর্থতার কারণেই এমন ধারণা পোষণ করা হতো। ‘দ্যা প্রিন্স’ বইটি যুগে যুগে পৃথিবীর হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাগণ পড়েছেন। এটি পৃথিবীর বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতাদের নীতি আদর্শ গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বইটি পড়ে হয় তাঁরা প্রভাবিত হয়েছেন অথবা তাঁর মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নিজের রাজনৈতিক পথ খুঁজে পেতে সমর্থ হয়েছেন। আর এ কারণে ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তার প্রধানমত প্রতিষ্ঠাতা বা জনক মনে করা হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে গণতান্ত্রিক সরকার না বলে বরং ম্যাকিয়াভেলির মতে একটি স্বৈরশাসক নিয়ন্ত্রিত সরকার বলাটাই উত্তম। তথাকথিত নির্বাচন এবং সরকার গঠনের ধরন দেখে চোখ বুজে বলা চলে, এরিস্টটল প্রবর্তিত গনতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও বাংলাদেশে অবশিষ্ট নেই, যা আছে তা বইয়ের পাতার কালো হরফ মাত্র আর আঁচে ম্যাকিয়াভেলির “একটি ‘স্বৈরশাসকের হ্যান্ডবুক’। পাঠক মাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন, ম্যাকিয়াভেলির প্রবর্তিত স্বৈরশাসন অন্যকথায় কট্টর গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার-ই নামান্তর যেখানে সরকার তার বিরোধী কট্টর পদক্ষেপকে কঠোর হাতেই দমন ও নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। এ কথাও অনস্বীকার্য যে কট্টর বিরোধী পক্ষকে নিবৃত করতে ততোধিক কঠোরতার বিকল্প নাই। এখানে তথাকথিত গণতান্ত্রিক মানসিকতার স্থান নেই, বিরোধী পক্ষের ক্ষমতালিপ্সা যেখানে গণতান্ত্রিক সংবিধানের পরিপন্থি সরকার সেখানে গণতান্ত্রিক হবেন এমনটা আশা করা বাতুলতা।
আবার এটাও ভুলে যাওয়া চলবে না যে স্বয়ং রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ও ‘গণতন্ত্রের জনক’ এরিস্টটল অনেক আগেই বলে গেছেন “ গনতন্ত্র হল মূর্খের শাসনব্যবস্থা” তাই একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা শুধু কাল্পনিক নয় অবাস্তব বটে। সেক্ষেত্রে ম্যাকিয়াভেলির একটি গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং সাবলীল যদি সে সরকার স্বৈরতান্ত্রিক পন্থায় গনতন্ত্রকে লালন করে চলেন। এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় সরকার অবশ্যই গণতান্ত্রিক মতালম্বি হবেন কিন্তু কার্য পরিচালনার পক্ষে সৎ এবং স্বৈরতান্ত্রিক হবেন। দেশের পক্ষে যা মহৎ এবং কার্যকরী তা সরকার যদি বলপ্রয়োগপূর্বক সমাধান করতে পারেন তাই প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের চর্চা বলে বিবেচিত হবে।বিরোধীপক্ষ যদি যেনতেন ভাবে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষপাতি হয়ে ওঠেন সেক্ষেত্রে সরকারী দলকে গনতন্ত্রের চরম পরাকাষ্ঠা দেখাতেই হবে যারা মনে করেন তাঁরা সত্যিকারের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা বোঝেন কি না তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। গণতন্ত্রের চর্চা সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত না হলে শুধুমাত্র ব্যক্তি বা দলবিশেষে তার চর্চা না হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। গনতন্ত্র অর্থই সার্বজনীন, সবার মধ্যে তার প্রভাব না থাকলে সেখানে গনতন্ত্র মূল্যহীন, সৎ শাসনের জন্য সেখানে স্বৈরতন্ত্র জরুরী হয়ে পড়ে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমরা অনেক সময় একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিজম ইত্যাদি আলাদা আলাদা বিষয়কে এক পাল্লায় মাপার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞানুযায়ী এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। স্বৈরাচার শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো যে শাসক তাঁর নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী দেশ শাসন করেন—দেশের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নয়। অর্থাৎ কোন সরকার যদি কারো কোন উপদেশ বা মন্ত্রণা ব্যতিরেকেই নিজ অভিজ্ঞতা থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তবে তিনি স্বৈরাচার হবেন কিন্তু তার কর্মকাণ্ড যদি দেশ বিরোধী ধ্বংসযজ্ঞ না হয়ে দেশ রক্ষাকারী রাষ্ট্রনায়কোচিত কর্মকাণ্ড বলে পরিগণিত হয় তবে তাকে একজন সৎ স্বৈরশাসক বলে অভিহিত করা যেতে পারে। আবার এই স্বৈরশাসক যদি ন্যায়সংগত বিরোধিতাকারীদের সর্বপ্রকার অধিকারকে হরণ করেন এবং কণ্ঠরুদ্ধ করে তার স্বীয় কর্মকাণ্ড মানতে বাধ্য করেন তবে তাকে একজন ফ্যাসিবাদী সরকার বলা হয়। ইতালির স্বৈরশাসক মুসোলিনি ছিল এই ধরনের ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসক। বলা উচিত যে, এই ধারার স্বৈরশাসক নিন্দিত ও ধিক্কৃত হয়ে থাকেন, বাংলাদেশে হুসেইন মহম্মাদ এরশাদ এর প্রকৃষ্ট উদাহরন। একনায়কতন্ত্রে একজন একনায়ক (Dictator) সকল শাসনকাজ পরিচালনা করে থাকেন। একনায়ক রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা এবং চরম ক্ষমতার উৎস, ক্ষমতা প্রয়োগে কেউ তাঁকে বাধা দিতে পারে না। এক দেশ, এক জাতি, এক নেতা। -একনায়কতন্ত্রের আদর্শ। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা একনায়কের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। তাঁর কাজকর্মের জন্য তাঁকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। তাঁর আদেশ নির্দেশ সকলে মেনে চলতে বাধ্য। একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় একনায়কের নেতৃত্বে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। একনায়ক তাঁর পছন্দমত উপদেষ্টা দের নিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। উপদেষ্টামণ্ডলী তাঁর কাছে দায়ী থাকে ও তাঁর সন্তুষ্টির ওপর তাঁদের কার্যকাল নির্ভর করে। বলাই বাহুল্য, এই ব্যবস্থায় কোন আইনসভার অস্তিত্ব নেই। তবে এ সরকার ব্যবস্থার-ও ভাল এবং মন্দ উভয় দিক বিদ্যমান।
ম্যাকিয়াভেলির প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
ম্যাকিয়াভেলি বলেছেন “ধারাবাহিকভাবে সফলতা পেতে চাইলে সময়ের সাথে আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে” গদবাঁধা মান্ধাতার আমলের জরাজীর্ণ নিয়মনীতি এবং আইনকানুনের আধুনিকিকরণ না করে বরং তা পোষণ এবং তোষণ করলে সময়ের সাথে সাথে তা অচল এবং অপরিমিত হয়ে পড়ে ফলে সেই আইন একসময় কালাকানুন হয়ে যায় এবং তা রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। উপর্যুক্ত কারণে আইনের ব্যবহারিক প্রয়োগ যদি বাধাগ্রস্থ হয় তবে তা পরিমার্জন পরিবর্ধন সংশোধন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে ঠিক একইভাবে কোন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে গনমানুশের চাহিদা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, মানুষের প্রয়োজনেই আইন তৈরি হয়, মানুষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন না হলে আইনের প্রয়োজনীয়তাও থাকে না। প্রায়শই আইন পরিবর্তন সংশোধনের সাথে সাথেই একধরনের বিরোধী পক্ষ লক্ষ্য করা যায়, এরা মানুষের চাহিদার চাইতে আইনের ফাঁক-ফোঁকর খোঁজায় বেশি ব্যস্ত থাকে, এরা ভুলে যায় প্রত্যেকটি আইনেরই কিছু ভুল ত্রুটি থেকেই যায়, এই ভুলত্রুটি সত্ত্বেও আইনটি বিশেষ লক্ষ্য পূরণে সমর্থ হচ্ছে কি না সেটাই শুধু বিবেচনার বিষয় হতে পারে। প্রয়োজনে আইনের পরিমার্জনে সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোয় থাকাকালীন একটি স্বাধীন দেশে কোন আইনকেই এক কথায় অসাংবিধানিক বলার অধিকার কারো নেই।
এটা বুঝতে হবে।
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ উদ্ধৃতি ও তথ্য বিভিন্ন ব্লগ থেকে নেওয়া।
২২টি মন্তব্য
মা মাটি দেশ
নিকোলা ম্যাকিয়াভেলি একজন বিখ্যাত দার্শনিক।সুন্দর একটি বিষয় উপাস্হাপন করেছেন। -{@ (y)
একজন আইজুদ্দিন
পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
একটু সময় নিয়ে পড়তে হবে ।
আলোচনার দাবী রাখে এই পোষ্ট ।
একজন আইজুদ্দিন
ধন্যবাদ।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য আশা করি।
খসড়া
পরে বিস্তারিত আলোচনা হবে। প্রসঙটি বেশ জটিল।
একজন আইজুদ্দিন
আপনার সু চিন্তিত মতামত আশা করি।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আমাদের দেশে পড়াশুনা করে রাজনীতি এখন আর কেউ করেনা । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সবচেয়ে ভালো ছাত্রের রাজনীতিতে আসা উচিৎ । কিন্তু বাস্তবটা ভিন্ন । আপনার লেখার সাথে সহমত প্রকাশ করছি ।
একজন আইজুদ্দিন
আপনাকে ধন্যবাদ।
ব্লগার সজীব
ম্যাকিয়াভেলি , দ্যা প্রিন্স এসব তো ভুলেই গিয়েছিলাম ভাই । আপনার পর্যবেক্ষন সঠিক ।
একজন আইজুদ্দিন
আশা করি সাথে থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
এখানে এই সামান্য ব্লগে এর আগে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে এর আগে এমন কোন লেখা কেউ আগে লিখেছে বলে জানা নেই , তাই এ লেখাটিকে একটি নবতম পালক সংযোজন বলাই যায় । আর লেখা নিয়ে আলোচনার যোগ্য পড়াশোনা আমার নেই ,তাই যুক্তির পিঠে পাল্টা যুক্তি চড়িয়ে আলোচনায় নামার সাহস ও নেই । তবে আপনার মুল্যবান লেখাটি বুঝে নেয়ার জন্য কিছু বলতে চাই ।
“হ্যাঁ, আমি নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির কথা বলছি। ইতালীর ফ্লোরেন্সে নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির জন্ম ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে। তিনি ছিলেন পৃথিবীর সেরা রাজনৈতিক দার্শনিক ও মতবাদ প্রণেতা। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও মতবাদের অব্যবহিত ফলাফল হিসাবে ফ্রান্সের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সফল বিপ্লব সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে এর বীজ রোপিত হয় সুবিশাল রাশিয়াসহ পৃথিবীর দেশে দেশে।”
এখন কোন কোন দেশে এই রাজনৈতিক দার্শনিক ও মতবাদ চালু আছে ? আমি সে সব দেশের সর্বশেষ ব্যবস্থাপনা জানার চেষ্টা করব ।
“আবার এটাও ভুলে যাওয়া চলবে না যে স্বয়ং রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ও ‘গণতন্ত্রের জনক’ এরিস্টটল অনেক আগেই বলে গেছেন “ গনতন্ত্র হল মূর্খের শাসনব্যবস্থা” তাই একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা শুধু কাল্পনিক নয় অবাস্তব বটে।”
কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থাই ফুলপ্রুফ নয় , তাই যতক্ষণ আমাদের এর থেকে উন্নত কোন ব্যবস্থার প্রচলন সম্ভব না হয় ততক্ষণ আমদের পৃথিবীময় প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই আস্থা রাখা উচিৎ ।
আবার প্লেটো গণতন্ত্রের সমালোচক হলেও স্বৈরতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন না ।‘আইনকানুন’–এ চিত্রিত নগরী ম্যাগনেসিয়াতে ভোট ও লটারির মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য আধিকারিক নির্বাচন ,রাষ্ট্রিয় পদে শ্রেণীভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ এবং রাষ্ট্রকৃত্যের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তির কারণে স্যন্ডারস্ প্লেটোর এই শেষ লেখায় গণতন্ত্রের উপাদান খুঁজে পেয়েছেন ।
আইন মানুষকে সুখী করে ; তা এ কারণে যে , তা মানবীয় ও ঐশী প্রকৃষ্টতা ,তথা সদ্গুন প্রদান করে । সেই সদ্গুনের মধ্যে আছে প্রজ্ঞা,সংযম, ন্যায় এবং সাহস । প্লেটোর মূল দার্শনিক প্রতিপাদ্য – ‘সুখই মানুষের আরাধ্য’ এবং সদ্গুন অর্জন ব্যতীত তা অর্জন সম্ভব নয় ।
আইন যেখানে শাসন করে না সেখানে কোন শাসন ব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকে না।(পলিটিক্স ৪:৪)
একজন আইজুদ্দিন
” এখন কোন কোন দেশে এই রাজনৈতিক দার্শনিক ও মতবাদ চালু আছে ? আমি সে সব দেশের সর্বশেষ ব্যবস্থাপনা জানার চেষ্টা করব ।”
খেয়াল রাখবেন, তিনি সংবিধান লিখেন নি, রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদেরকে শুধু কিছু চিন্তার খোরাক যুগিয়েছেন। তার মতাদর্শ ও চিন্তা চেতনার স্ফুরণ ঘটেছে পরবর্তী নানা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী্দের নানা মতবাদ প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে, তার দৃষ্টিভঙ্গিকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে নানা রকম পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমেই আজকের অনেক দেশের রাষ্ট্র নীতি নিদ্ধারিত হয়েছে, গনতান্ত্রিক সব দেশেই তার মতবাদ কমবেশি প্রচলিত।
পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
সংবিধান নিয়ে কথা বলিনি । অবশ্য আপনি চাইলে সে বিষয়ে লিখতে পারেন , অবশ্যই আলোচনায় যোগ
দেব । আমার লেখায় আরও কিছু বিষয়ে ছিল । আপনি সে বিষয়ে একটু আলোকপাত করলে ভালো হয় ।
‘গণতান্ত্রিক সব দেশেই তার মতবাদ কমবেশি প্রচলিত’ সব দেশে এই মতবাদ প্রচলিত এটি আমার বোধগম্যের
বাইরে ।
স্বৈরতন্ত্র পৃথিবীতে সব থেকে ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য , স্বৈরতন্ত্র স্বৈরতন্ত্র ই , এর সততার কিছু নেই ।
প্লেটো স্বৈরতন্ত্র এবং স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে সব ই বলে গিয়েছেন ।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আমাদের দেশের রাজনীতিবিদগণ রাজনীতি নষ্ট করে দিয়েছেন । এখন আর এ বিষয়টতে আগ্রহ পাইনা।
আজিম
নিকোলা ম্যাকিয়াভেলি নামটি আমি কোনদিন শুনিনি সম্ভবতঃ আমার অজ্ঞতার কারনে। তাই তার সম্পর্কে কোন মন্তব্য আমি করবনা। তবে তার স্বৈরশাসকীয় মনোভাব সংক্রান্ত ‘দ্য প্রিন্স’ বইটি সম্পর্কে এই পোষ্ট থেকে যা জানলাম, তাতে বিশ্বের অনেক নামকরা রাজনীতিক প্রভাবিত হলেও আমি প্রভাবিত হতে পারলামনা। কারন স্বৈরশাসন অধিকাংশ মানুষের কাম্য নয়, আমারও।
“শাসনক্ষমতার বৈধতা কোন নৈতিকতার মাপকাঠিতে আবদ্ধ নয়; কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাই এখানে মূল বিষয়। যার ক্ষমতা আছে সে-ই শাসন করবে, নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। ক্ষমতা অর্জন আর ক্ষমতা রক্ষা করাই রাজনীতির মূল নীতি। ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার দিয়েই জনগণের আনুগত্য অর্জন করতে হয়। রাজনীতি মানেই হলো ক্ষমতা ‘গ্রহণ আর প্রয়োগের’ নীতি” – কথাটি যার তাকে ইতিমধ্যেই “আধুনিক রাষ্ট্র-চিন্তার জনক” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কথাটি শুনতে যত কঠিন আর রূঢ় শোনাক না কেন, বাস্তবতা এটাকেই সমর্থন করে আসছে।
স্বীকার করলাম বাস্তবতা এটাকেই সমর্থন করে আসছে, তবুও এই মতবাদ ভুল এবং সঠিক নয়। স্বৈরতন্ত্র দিয়ে দেশ কখনও ভালভাবে চলতে পারেনা, বিশ্বের বড় বড় মনীষীরা এই মতবাদকে সমর্থন করলেও না।
আর এরিষ্টটল কোন প্রেক্ষিতে বলে গেছেন যে,’গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খের শাসনব্যবস্থা’, তা জানিনা। তবে এর চেয়ে উন্নত কোন শাসনব্যবস্থা বিশ্বে আজো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এটা-ই, অর্থাৎ গণতন্ত্র-ই হচ্ছে সবচেয়ে ভাল শাসনব্যবস্থা।
এধরনের উন্নত মানের মনীষীর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে মূর্খের (?) গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনেক অনেক ভাল, শুধু ভালই নয় অনেক অনেক উন্নতও বটে।
একজন আইজুদ্দিন
“নিকোলা ম্যাকিয়াভেলি নামটি আমি কোনদিন শুনিনি সম্ভবতঃ আমার অজ্ঞতার কারনে। তাই তার সম্পর্কে কোন মন্তব্য আমি করবনা। তবে তার স্বৈরশাসকীয় মনোভাব সংক্রান্ত ‘দ্য প্রিন্স’ বইটি সম্পর্কে এই পোষ্ট থেকে যা জানলাম, তাতে বিশ্বের অনেক নামকরা রাজনীতিক প্রভাবিত হলেও আমি প্রভাবিত হতে পারলামনা। কারন স্বৈরশাসন অধিকাংশ মানুষের কাম্য নয়, আমারও।”
নিকোলা ম্যাকিয়াভেলি যে রাজনৈতিক চিন্তা ধারনার প্রবক্তা তাকে কোনক্রমেই স্বৈরতান্ত্রিক নিয়ম ধারার সমান্তরাল ভাবা উচিত হবে না বরং তিনি কট্টর গনতন্ত্রমনা, যে গনতন্ত্র কট্টরভাবে প্রতিপালিত হয় সেখানে বাহ্যিক দৃষ্টিতে সেটাকে গণতন্ত্রের মতো লাগে না বরং সেটা সৎ-স্বৈরতন্ত্র বলেই প্রতীয়মান হয়। নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির এই দৃষ্টিভঙ্গিকে তার সমালোচকেরা বলেছেন স্বৈরতন্ত্র বলে, এটা তাদের গভীর অনুধাবনের অজ্ঞতা তাই ‘দ্য প্রিন্স’ বইটিকে ‘স্বৈরশাসকের হ্যান্ডবুক’ বলা হলেও পরবর্তীতে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী একে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সহায়ক বলে মেনে নিয়েছেন। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
আজিম
সৎ-স্বৈরতন্ত্র! আমার যা খুশী আমি তা-ই করব, এটা কীভাবে সৎ হয়? দেশের, সমাজের, রাষ্ট্রের অতি প্রয়োজনে কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত হয়ত সময় সময় নিতে হতে পারে। এটা তো স্বৈরতন্ত্র হতে পারেনা; বরং এটা-ই উৎকৃষ্ট গণতন্ত্র। কারন এটাতে বৃহত্তরভাবে মানুষেরই কল্যান হচ্ছে। আর যে-কাজে মানুষের সার্বিক কল্যান হয়, তা স্বৈরতন্ত্র নয়, কখনও হতে পারেনা।
’স্বৈরশাসনের হ্যান্ডবুক বলা হলেও পরবর্তীতে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী একে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সহায়ক বলে মেনে নিয়েছেন।’
এটার উত্তরে বলব, যে সমস্ত রাষ্ট্রবিঞ্জানী মেনে নিয়েছেন, তারাও স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা দ্বারা আচ্ছন্ন। না হলে মানবেন কেন?
আপনি শেষে বলেছেন, ”আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন “ এটা আলোচনার ভাষা নয়। আপনি বেশী বুঝেন, আমি কম। তাই বলে এভাবে বলতে হয়না।
একজন আইজুদ্দিন
”আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন ”
প্রথমেই ঐ বাক্য টুকুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বিশ্বাস করুন, সে সময় ঐ বাক্য টুকু লেখার আগে ঠিক তিন মিনিট ভেবেছি, কি লেখা উচিত সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষ মেশ ঐ কথা টুকুই মনে পরেছিল। ঠিক এই মুহূর্তেও আসলে কি লেখা উচিত ছিল সেটা ভেবে উঠতে পারছি না। তবে, বাক্য টুকু কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট এটুকু উপলব্ধি হচ্ছে, আশা করি এটাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি ঠিক আপনাকে জ্ঞান দিচ্ছি এই মানসিকতা থেকে ওটা বলতে চাইনি, আমি আমার ধারনা আপনার কাছে পরিষ্কার করতে পেরেছি কি না সেটাই জানতে চেয়েছি।
“সৎ-স্বৈরতন্ত্র! আমার যা খুশী আমি তা-ই করব, এটা কীভাবে সৎ হয়?”
সৎ-স্বৈরশাসক প্রসঙ্গে কথা বলেছেন, আমি বলতে চেয়েছি যে স্বৈরশাসক নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করবেন কিন্তু সেটার উদ্দেশ্য সৎ হবে, জনমুখি উন্নয়নমুলক হবে, তাকেই সৎ-স্বৈরশাসক বলেছি।
মিসু
রাজনীতি ভালো লাগেনা । ভোট আর দেয়া হবে কিনা জানিনা ।
একজন আইজুদ্দিন
“রাজনীতি ভালো লাগেনা । ভোট আর দেয়া হবে কিনা জানিনা ”
ভুলে যাবেন না যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার আপনার নাগরিক অধিকার।
ভোট না দিলে দেশ গঠনে আপনার অবদান থাকবে কি করে?
আপনার ভালোর স্বার্থেই আপনাকে ভোট দিতে হবে।
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
আজিজুল ইসলাম
স্বৈরশাসন যেকোন দেশের জন্য জঘন্য অধ্যায়, যেটা কোন ক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়, হতে পারেনা। যতোই নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির মতো তথাকথিত দার্শনিকগণ তা বলুক না কেন।
গণতন্ত্র-ই সেরা রাষ্ট্রিক ব্যবস্থা, আগেও ছিল, এখনও আছে এবং অবশ্য অবশ্যই ভবিষ্যতেও থাকবে। এটাকে মূর্খতা বলে পাশ কাটানো যাবেনা, পাশ কাটানোর কোন উপায় নাই।
একজন আইজুদ্দিন
” স্বৈরশাসন যেকোন দেশের জন্য জঘন্য অধ্যায়, যেটা কোন ক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়, হতে পারেনা। যতোই নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির মতো তথাকথিত দার্শনিকগণ তা বলুক না কেন।”
আমাদের কোথাও একটু ভুল হচ্ছে!
নিকোলা ম্যাকিয়াভেলি কিন্তু স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে লিখেন নি, বরং তিনি যা লিখেছেন সেটা কট্টর গণতন্ত্রের পক্ষে। কট্টরপন্থী গণতান্ত্রিক সরকারের কার্যকলাপ অনেকটাই স্বৈরতান্ত্রিক বলে মনে হয় বিধায় অনেকেই নিকোলা ম্যাকিয়াভেলিকে স্বৈরতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক এবং “‘দ্যা প্রিন্স” বইটিকে একটি ‘স্বৈরশাসকের হ্যান্ডবুক’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে কোন কথা বলেন নি।
এ লেখার কোথাও স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন করে কিছু লেখা হয় নি।