মুখোমুখি দু’টো বাড়ি। মাঝে শহরের মেইন রাস্তা। ওবাড়ির খালাম্মা সৌখিন ভাবে সাজিয়েছেন বাড়িটি। তাঁর হাতের পায়েস না খেলে আমাদের ঈদ পরিপূর্ণ হতো না। আমাদের টিভি কেনার আগ অবধি আমরা সে বাড়িতে “এসো গান শিখি” কিংবা “এইসব দিনরাত্রি” দেখি।
বাড়িটির পিঠেপিঠি বয়সী তিন কন্যা সব সময় একই রকম জামা পরে। একজনই শিক্ষক। ডাইনিং টেবিলের চারপাশে গোল হয়ে বসে বাংলা, ইংরেজি, অংক, ধর্ম__ সবই পড়ান তিনি। পড়া দেয়। পড়া নেয়। না পারলে হাতের তালুতে ঠাস্ঠাস্ করে মারেন লাঠি দিয়ে। সন্ধ্যার পর পাড়ার অন্য খালাম্মারা বেড়াতে গেলে সে বাড়ির খালাম্মা যখন গল্পে মশগুল, কিংবা আপ্যায়নে ব্যস্ত, তখন তিন কন্যা একযোগে “ভাত খাবো” ” ভাত খাবো” বলে কাঁদতে থাকে। খালাম্মা অগ্নিচোখে শুধু তাকায়। কিছু বলেন না। অতিথি’রা চলে গেলে তিন কন্যাকে প্লেটভর্তি ভাত দিয়ে লাঠি নিয়ে সামনে বসেন। ওরা খায়। জোর করেই খায়। কিন্তু সব শেষ করতে পারে না। শাস্তি স্বরূপ__ ঠাস্ঠাস্ মার !
আমাদের ছোট্ট জগতটা কেমন দ্রুত খালি হয়ে যায়। সবকিছু কেমন দ্রুততার সাথে বদলায়। কিছুই থাকে না আগের মতো। যেমন এই শহরে কাল ঝকঝকে রোদ ছিল, আজ ঝুম বৃষ্টি। অবিরাম শহর ধুয়ে যাওয়া বৃষ্টি…
জানি, বৃষ্টি শেষে ধরণী হবে স্নিগ্ধ, সতেজ, নির্মল,
তবে কেন কান্না শেষে মানব প্রান হয়না শান্ত, শীতল ?
৩৩টি মন্তব্য
অলিভার
পুরানো স্মৃতিরা আটকা পড়ে যায় দেয়ালের নতুন রঙের আড়ালে, সেখানেই তৈরি হয় নতুন গল্প নতুন স্মৃতি। আর যা ছিল পুরনো তা মনের ভেতর পিষ্ট করতে থাকে জীবনভর। কেউ আপনার মতই অভিমান করে স্মৃতিদের চোখের আড়ালে রাখতে চায় চিরতরে। আর কেউ নতুন স্মৃতির ভেতরে পুরানো স্মৃতিকে হারাবার চেষ্টা করে।
আপনার স্মৃতিচারণ দেখে রীতিমত মুগ্ধ হচ্ছি।
শুভকামনা নিরন্তর 🙂
রিমি রুম্মান
স্মৃতি কখনো আনন্দের, কখনো বেদনার। তবে মানুষগুলোর চলে যাওয়া বেদনাবিধুর।
শুন্য শুন্যালয়
কোথাও কেউ নেই। শুধু মুখোমুখি দু’টো বাড়ি দাঁড়িয়ে, কালের সাক্ষী হয়ে। আরো কিছু আছে স্বাক্ষী হয়ে, আরো আরো কিছু। পরিবর্তনের নামই তো এইসব দিনরাত্রি আপু। মানব মনে স্মৃতির স্থায়িত্ব এত কম হলে আমরা যে বেঁচে থাকতাম না। এত টাচি কেমন করে লেখেন?
রিমি রুম্মান
আরও কিছু আছে অবশিষ্ট। তাইতো আমাদের বেঁচে থাকা। তবু স্মৃতি হাতড়ে কেবলই মনে হয় যেন___ কোথাও কেউ নেই।
সীমান্ত উন্মাদ
জানি, বৃষ্টি শেষে ধরণী হবে স্নিগ্ধ, সতেজ, নির্মল,
তবে কেন কান্না শেষে মানব প্রান হয়না শান্ত, শীতল ? শেষের এই লাইন দুটি বেশি ভাললেগেছে।
আর পুরু লিখাটা আমি শুধু আবেগ ঝরে পড়তেই দেখেছি।
শুভকামনা জানিবেন নিরন্তর।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকবেন আপনিও। অনেক শুভকামনা থাকলো।
তানজির খান
স্মৃতি কাদায়। আপনার লেখা আর পড়বো না। নিজের কষ্টগুলো উতলে ওঠে।
রিমি রুম্মান
আমার লেখা না পড়তে চাইলেও আমি নিশ্চিত___ আপনি ফিরে ফিরে আসবেন। কেননা, লেখাগুলো যে আপনার, আমার, আমাদের সকলেরই । শুভকামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি কবিতা লেখেন!
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুটি সৌধ
শুধু নেই কথাও কেউ ।
রিমি রুম্মান
আপনার দু’লাইন লেখাই চমৎকার। শুভকামনা নিরন্তর।
খেয়ালী মেয়ে
কোনকিছু যে এক রকম থাকে না সবসময়–বদলাবো না আমি কোনকালে, বদলাতে দিবো না কোনকিছু–তারপরও কিভাবে জানি সব বদলে যায়——–এ যে প্রকৃতির খেলা———-সময়ে সব বদলায় এটাই হয়তো নিয়ম————তারপরও সময়ের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া কিছু স্মৃতি আমাদেরকে খুববেশী নস্টালজিক করে তোলে….
কোথাও কেউ নেই। শুধু মুখোমুখি দু’টো বাড়ি দাঁড়িয়ে, কালের সাক্ষী হয়ে। (y)
রিমি রুম্মান
স্মৃতি হাতড়ে এই বেঁচে থাকা টুকু বেদনার হলেও সুখকর। পেছনের কালে ফিরে গিয়ে ক্ষণিকের সুখ। ভাল থাকুন সবসময়।
ব্লগার সজীব
___ কেউ নেই। কোথাও কেউ নেই। শুধু মুখোমুখি দু’টো বাড়ি দাঁড়িয়ে, কালের সাক্ষী হয়ে।___ এমন ভাবে চিন্তা করিনি কোনদিন।চিন্তাটি মাথায় আসাতে কেমন স্তব্দ হয়ে গেলাম।
রিমি রুম্মান
এমনটিই কিন্তু হয়। কিছুই থাকে না আগের মতন। দৃশ্যপট বদলায়। বদলায় অনেক কিছুই সময়ে…
নীলাঞ্জনা নীলা
এবার বাগানে গিয়ে ঠিক এমন লাগলো। মাত্র ৩০ মিনিটের জন্যে গিয়ে মনে হলো, কেন এসেছিলাম?
আপনার লেখা পড়লে বুকে একধরণের যন্ত্রণা হয়, কেন অনেক কথা মনে করিয়ে দিন?
আমার জীবনের অনেক কিছু পেয়ে যাই আপনার লেখনীতে।
লিখুন। -{@ (3
রিমি রুম্মান
লেখাগুলো আমাদের সবার সাথেই কেমন অদ্ভুতভাবে মিলে যায়, তাই না। যন্ত্রণা দিয়ে লিখতে চাই না। যন্ত্রণা’রা আমায় ছেড়ে যেতে চায় না। আর সেসব সংক্রমিত হয় আমাদের সোনেলা পরিবারের যারা আমার লেখা পড়েন, তাঁদের সকলের মাঝে। ভাল থাকবেন,
নীতেশ বড়ুয়া
জন্ম হতে ছব্বিশটা বছর যেখানে কাটিয়েছিলাম সেখানের পৌঁছানোর রাস্তায় এলেই আজো মনে হয় ‘আমি ঘরে যাচ্ছি!’ বাড়ীর কথা মনে হলে আজো চোখে ভাসে পরপারে চলে যাওয়া সেই দাদীর কথা যিনি লাঠি হাতে দরোজায় আমার অপেক্ষায় ছিলেন সাতসকালে…ইদানীং প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে মন ডেকে উঠে ‘মা’ বলে আমার প্রবাসী মায়ের চেহারা দেখতে…
এই পোস্ট খুবই খারাপ পোস্ট… এক লহমায় সব মনে করিয়ে দিলো আবার 🙁
রিমি রুম্মান
মায়া খুব খারাপ জিনিষ। মানুষের প্রতি মানুষের মায়া মমতা আছে বলেই না আমরা অতীত মনে রাখি। মনে রাখি হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে। অজান্তে দু’ফোটা জল ঝরাই। ভাল থাকবেন।
নীতেশ বড়ুয়া
-{@ 🙂
মিজভী বাপ্পা
ভালো হয়েছে 🙂
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন সবসময়। শুভকামনা রইলো। 🙂
অরণ্য
“কোথাও কেউ নেই। শুধু মুখোমুখি দু’টো বাড়ি দাঁড়িয়ে, কালের সাক্ষী হয়ে।” – অনুভব করলাম যেন।
“তবে কেন কান্না শেষে মানব প্রান হয়না শান্ত, শীতল ?” – কিছু কান্না চাপা পড়ে আছে। বেরিয়ে এলে শীতল হওয়া সময়ের ব্যাপার। ইচ্ছে করে তা বের না করলে তা রূপ নেবে তাপে। 🙂
রিমি রুম্মান
বাহ্ … ভাল বলেছেন। ভাল থাকুন সবসময়, শীতল হয়ে। 🙂
প্রজন্ম ৭১
আপনার লেখা মাঝে মাঝে নিজকে কাঁপিয়ে দেয় আপু।
রিমি রুম্মান
আপনার, আমার, আমাদের সকলের অতীতগুলো প্রায় মিলে যায় বলেই হয়তো কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। ভাল থাকুন।
মেহেরী তাজ
লেখাটা মন খারাপের ডিব্বা….. ;(
রিমি রুম্মান
ছোটবেলার মজার স্মৃতিগুলো কিন্তু আনন্দের ডিব্বা। সময়ে তা মনখারাপের ডিব্বায় পরিনত হয়েছে।
জিসান শা ইকরাম
বাস্তবতা থেকে লেখাগুলো দিচ্ছেন
আপনার দেখার দৃষ্টি আলাদা ধরনের
অনেক ভাবেন আপনি সবকিছু নিয়ে
আর এসব ভাবনা আমাদেরকেও ভাবায় খুব।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন। শুভকামনা ।
লীলাবতী
আমরা সবাই একদিন চলে যাবো,অবকাঠামো রয়ে যাবে আরো কিছু কাল কালের স্বাক্ষী হয়ে।লেখাটি পড়ে আনমনা হয়ে গেলাম আপু।
রিমি রুম্মান
সময় কেমন দ্রুত বয়ে যায়, হায় ! 🙁
স্বপ্ন
কঠিন এক বাস্তবতাকে লেখায় তুলে আনলেন আপু।মন কিছুটা ভারাক্রান্ত হলো।একদিন আমরাও তো চলে যাবো।
রিমি রুম্মান
এমন লেখা কেন যে লিখি ! সবার মন খারাপ করে দিয়ে যাই ! 🙁