বছর পাঁচেক পর- (দুর আলাপন)

এস.জেড বাবু ১৮ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ০৮:৩৯:০৯অপরাহ্ন অন্যান্য ২৬ মন্তব্য

কথা হলো বছর পাঁচেক পর !
প্রাইভেট নাম্বারের কলটা আসছে গেল সপ্তাহ ভর,
প্রথম কয়টা গাড়িতে, পরের গুলি বাড়িতে-
যখন মোবাইল ছিল না হাতে,
শেষ কলটাও হয়নি ধরা, সাড়ে বারোটায়- মধ্য রাতে ।

গেল সন্ধ্যের কলে জড়িয়ে গেলাম
মোবাইলটা তখন হাতে,
একচালার নিচে অপেক্ষায় যখন
গুড়ি গুড়ি বরষাতে ।

খুউব চেনা কোন কন্ঠস্বর যেন !
তবে বেশ পরিপক্ক আর গোছানো ।

বলল-
>ডাক্তার বলছি ,
>সেই দুই দিন ধরে তোমায় কল করে খুঁজছি ,
>কেন এমনটা হলো ?
>এতগুলি কলের সারমর্ম বৃথা ”
>কি করে হবে তা বলো ?

অবাক হলাম !
তবু আউড়ে গেলাম –
খানিক ফুসরত নিবে দিদি ,
বলতে দিবে, না বলেই যাবে,
বি..র..তি..হী..ন নিরবধি ?

>কে আপনি ? আমি অদিতি রায়কে খুঁজছিলাম !

আপনিই বা কে ? আমি ডাবল থ্রী ডাবল এইট এর মালিক বলছিলাম ।

>আমি কেন পরিচয় দিতে যাবো ?
>বলেছিতো ডাক্তার- তাছাড়া
>অপরিচিত ই যদি হবেন, কেনইবা পরিচিত হবো ?

তিনদিন ধরে গুনে গুনে,
নাম্বার লুকিয়ে জেনে শুনে,
একটার পর একটা কল করে যাচ্ছেন আপনি ;
আর অপরিচিতে অজানায় কেন পরিচয় দিবো আমি ?

>পুরুষ মানুষ পরিচয় দিতে ভয় কি ?

হাহাহা- মেয়ে মানুষ হলেই বা তাতে দোষ কি ?

>আপনি অযথা কথা বাড়াচ্ছেন –
>বললেই হলো, আপনি অদিতি রায়ের স্বামী !

আপনি অযথাই বলে যাচ্ছেন –
কি করে বুঝলেন যে, আমি বিবাহিত!
আর; অদিতি রায়কে চিনি ?

>সরি সরি সরি ,
>অনেক হয়েছে
>এখন আমি ফোনটা রাখবো ।

যা বলার বলুন-
শুনতে হবে, তাই শুনবো,
কাল মনে হয় না ফোনটা ধরবো।
এই আপনাদের মতো মেয়েমানুষদের তুলনা হয় না –
কাজের কথা ফেলে শুধু ভিন্ন কথা
অযথাই কথা বলার বাহানা ।

খানিকটা রেগে গেল
যেন চিৎকার শুরু হলো-
>যাচ্ছে তাই বলে গেলেন !
>আমি বাকি জীবনেও আপনাকে কল করবো ?
>কি করে ভাবলেন ?
>কে ভাই আপনি ? করেনটা কি শুনি !
>বুঝতে পারছি, মেয়েদের বিষয়ে আপনি- মহা জ্ঞানিগুণী !

পরক্ষনেই বললো এমন কথা !
যে কথার খুঁজে পাইনি আগা-মাথা-
বললো-
>শুনুন, মিস্টি নিয়ে ঘরে যাবেন,
>মেয়ে সন্তানের বাবা হচ্ছেন-
> যেন আমাকে কল বেক করে, আপনার বৌ-কে
মানে আমার পেসেন্টকে বুঝিয়ে বলবেন ।

>এই নাম্বারে এটুকু বলার ছিলো,
>মনে নেই যে, কার মুখ দেখে আজকে সকাল হলো____!

বললাম –
ভালো কাউকেই দেখেছেন ,
বলেনতো কি পেয়েছেন ?
অসময়ে ভদ্রলোক কে ফোন করে করে জালাচ্ছেন-
বিয়েই করিনি- আপনি আমাকে বৌ দিচ্ছেন,
সন্তান দিচ্ছেন ।

>আহারে মরি মরি ; কি যে করি !!
>ওকে ;
>সরি সরি সরি !
>হয়তো রং নাম্বার ছিলো, ফোনটা রাখবো,
>অর্কিডগুলি শুকিয়ে আছে- পানি দিতে যাবো-

হাহাহা-
তিন তিন বার সরি বললেই সব শেষ হয়ে যায় !!
তিন তিন বার সত্যি বললেও কি মিথ্যেটা ঢেকে যায় ?

>ওরে বাহ্- অরণ্য রায়ের ডায়লগ, বেশ ছিলো-
>দ্বিতীয় উপন্যাসের ডায়লগ সম্ভবত-
>আচ্ছা ওর সে গল্পটা কি মলাটবদ্ধ হয়েছিলো ?
>শিরোনাম কি ছিলো- ?

আপনি অরণ্য রায় কে চিনতেন ?
বলুনতো শুনি, কেমন করে কতটা জানতেন-
আচ্ছা ভাল কথা,
মলাট পাওয়ার আগেই গল্পটা আপনি পড়েছিলেন-?

>সাহিত্য আমার বিষয় নয়, গাইনীতে পড়াশোনা,
>তবে তেমন কিছু গল্পে আমার খানিক জানাশোনা-
>বলুন না- ওর সে বইটা ছাপানো হয়েছিল কি না !

আমিও ব্যাবসায়ি, অতি সাধারণ-
অবসরে কখনো যদি চায় মন- কিছুক্ষন,
কালো অক্ষরগুলিতে দৃষ্টি ফেলি –
কিছু গল্প আপন মনে, আপন করে তুলি,
কিছু গল্পের শিরোনাম, চিরকাল বাকি রাখি,
কিছু গল্পের শুধুমাত্র, জলছবিটা আঁকি -।।

সে শেষ গল্পটার দু’চার কথা একজনই শুধু জানতো
আজও সে গল্পের শেষ অনুচ্ছেদ বাকি,
যদি সে কথা সে কখনো শুনতো / মানতো !!


অতঃপর কিছুটা বিরতি-
যেন কেটে যাচ্ছে মহাকাল, বদলে যাচ্ছে নিয়তি ।

ঊনষাট মিনিটের কল-
যার শেষ পনের মিনিট ছিলো শুধুই শব্দশূণ্য,
দুপাশের দুটি মোবাইল শুনতে পায়নি-
শত মাইলের ব্যাবধানে দুটি হৃদয়ে কালবৈশাখি পরিপূর্ণ।

শেষ ক’লাইন দুজনের ছিলো,
নিরবতা ভেঙ্গে। ডাক্তার বলেছিলো-
>তোমার কন্ঠটা বেশ বদলে গেছে, আগের মতো নেই- অবাক লাগছে, আমি চিনতে পারিনি তোমায় !!

বলেছিলাম’
ইচ্ছে করে বদলে যাইনি, তবে বদলে যাওয়ার ধারা রুখে দিতে পারিনি। সময় যেন সবই বদলে দিচ্ছে, দিনের পর দিন ইচ্ছে কেড়ে নিচ্ছে।

বলেছিলো-
>আমার ইচ্ছেরা চিড়কাল পোড়ামাটি,
>তবু জানি, কারো অনলে পুড়েই সে বিশুদ্ধ-
সে আজও তেমনি খাঁটি- ।।
আরও বলল-
>অবাক লাগে !
>আজও তোমার “সেই গল্পের” শেষটা খুঁজে পেলেনা ? জানতাম অরণ্য রায়ের তৃতীয় গল্পের সূচনার সূচনা হবেনা।

বলেছিলাম আমিও –
নাহ্-
ইচ্ছে করেনি অপূর্ণ গল্পের কাল্পনিক উপসংহারে টেনে নিতে,
ইচ্ছে করেনি, কারো পালিয়ে যাওয়ার গল্পগুলি , সবাইকে জানিয়ে দিতে ॥

-০-

লিখা- নভেম্বর ২০১৮

৮১২জন ৬৪৫জন
0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ