
কথা হলো বছর পাঁচেক পর !
প্রাইভেট নাম্বারের কলটা আসছে গেল সপ্তাহ ভর,
প্রথম কয়টা গাড়িতে, পরের গুলি বাড়িতে-
যখন মোবাইল ছিল না হাতে,
শেষ কলটাও হয়নি ধরা, সাড়ে বারোটায়- মধ্য রাতে ।
গেল সন্ধ্যের কলে জড়িয়ে গেলাম
মোবাইলটা তখন হাতে,
একচালার নিচে অপেক্ষায় যখন
গুড়ি গুড়ি বরষাতে ।
খুউব চেনা কোন কন্ঠস্বর যেন !
তবে বেশ পরিপক্ক আর গোছানো ।
বলল-
>ডাক্তার বলছি ,
>সেই দুই দিন ধরে তোমায় কল করে খুঁজছি ,
>কেন এমনটা হলো ?
>এতগুলি কলের সারমর্ম বৃথা ”
>কি করে হবে তা বলো ?
অবাক হলাম !
তবু আউড়ে গেলাম –
খানিক ফুসরত নিবে দিদি ,
বলতে দিবে, না বলেই যাবে,
বি..র..তি..হী..ন নিরবধি ?
>কে আপনি ? আমি অদিতি রায়কে খুঁজছিলাম !
আপনিই বা কে ? আমি ডাবল থ্রী ডাবল এইট এর মালিক বলছিলাম ।
>আমি কেন পরিচয় দিতে যাবো ?
>বলেছিতো ডাক্তার- তাছাড়া
>অপরিচিত ই যদি হবেন, কেনইবা পরিচিত হবো ?
তিনদিন ধরে গুনে গুনে,
নাম্বার লুকিয়ে জেনে শুনে,
একটার পর একটা কল করে যাচ্ছেন আপনি ;
আর অপরিচিতে অজানায় কেন পরিচয় দিবো আমি ?
>পুরুষ মানুষ পরিচয় দিতে ভয় কি ?
হাহাহা- মেয়ে মানুষ হলেই বা তাতে দোষ কি ?
>আপনি অযথা কথা বাড়াচ্ছেন –
>বললেই হলো, আপনি অদিতি রায়ের স্বামী !
আপনি অযথাই বলে যাচ্ছেন –
কি করে বুঝলেন যে, আমি বিবাহিত!
আর; অদিতি রায়কে চিনি ?
>সরি সরি সরি ,
>অনেক হয়েছে
>এখন আমি ফোনটা রাখবো ।
যা বলার বলুন-
শুনতে হবে, তাই শুনবো,
কাল মনে হয় না ফোনটা ধরবো।
এই আপনাদের মতো মেয়েমানুষদের তুলনা হয় না –
কাজের কথা ফেলে শুধু ভিন্ন কথা
অযথাই কথা বলার বাহানা ।
খানিকটা রেগে গেল
যেন চিৎকার শুরু হলো-
>যাচ্ছে তাই বলে গেলেন !
>আমি বাকি জীবনেও আপনাকে কল করবো ?
>কি করে ভাবলেন ?
>কে ভাই আপনি ? করেনটা কি শুনি !
>বুঝতে পারছি, মেয়েদের বিষয়ে আপনি- মহা জ্ঞানিগুণী !
পরক্ষনেই বললো এমন কথা !
যে কথার খুঁজে পাইনি আগা-মাথা-
বললো-
>শুনুন, মিস্টি নিয়ে ঘরে যাবেন,
>মেয়ে সন্তানের বাবা হচ্ছেন-
> যেন আমাকে কল বেক করে, আপনার বৌ-কে
মানে আমার পেসেন্টকে বুঝিয়ে বলবেন ।
>এই নাম্বারে এটুকু বলার ছিলো,
>মনে নেই যে, কার মুখ দেখে আজকে সকাল হলো____!
বললাম –
ভালো কাউকেই দেখেছেন ,
বলেনতো কি পেয়েছেন ?
অসময়ে ভদ্রলোক কে ফোন করে করে জালাচ্ছেন-
বিয়েই করিনি- আপনি আমাকে বৌ দিচ্ছেন,
সন্তান দিচ্ছেন ।
>আহারে মরি মরি ; কি যে করি !!
>ওকে ;
>সরি সরি সরি !
>হয়তো রং নাম্বার ছিলো, ফোনটা রাখবো,
>অর্কিডগুলি শুকিয়ে আছে- পানি দিতে যাবো-
হাহাহা-
তিন তিন বার সরি বললেই সব শেষ হয়ে যায় !!
তিন তিন বার সত্যি বললেও কি মিথ্যেটা ঢেকে যায় ?
>ওরে বাহ্- অরণ্য রায়ের ডায়লগ, বেশ ছিলো-
>দ্বিতীয় উপন্যাসের ডায়লগ সম্ভবত-
>আচ্ছা ওর সে গল্পটা কি মলাটবদ্ধ হয়েছিলো ?
>শিরোনাম কি ছিলো- ?
আপনি অরণ্য রায় কে চিনতেন ?
বলুনতো শুনি, কেমন করে কতটা জানতেন-
আচ্ছা ভাল কথা,
মলাট পাওয়ার আগেই গল্পটা আপনি পড়েছিলেন-?
>সাহিত্য আমার বিষয় নয়, গাইনীতে পড়াশোনা,
>তবে তেমন কিছু গল্পে আমার খানিক জানাশোনা-
>বলুন না- ওর সে বইটা ছাপানো হয়েছিল কি না !
আমিও ব্যাবসায়ি, অতি সাধারণ-
অবসরে কখনো যদি চায় মন- কিছুক্ষন,
কালো অক্ষরগুলিতে দৃষ্টি ফেলি –
কিছু গল্প আপন মনে, আপন করে তুলি,
কিছু গল্পের শিরোনাম, চিরকাল বাকি রাখি,
কিছু গল্পের শুধুমাত্র, জলছবিটা আঁকি -।।
সে শেষ গল্পটার দু’চার কথা একজনই শুধু জানতো
আজও সে গল্পের শেষ অনুচ্ছেদ বাকি,
যদি সে কথা সে কখনো শুনতো / মানতো !!
–
অতঃপর কিছুটা বিরতি-
যেন কেটে যাচ্ছে মহাকাল, বদলে যাচ্ছে নিয়তি ।
–
ঊনষাট মিনিটের কল-
যার শেষ পনের মিনিট ছিলো শুধুই শব্দশূণ্য,
দুপাশের দুটি মোবাইল শুনতে পায়নি-
শত মাইলের ব্যাবধানে দুটি হৃদয়ে কালবৈশাখি পরিপূর্ণ।
শেষ ক’লাইন দুজনের ছিলো,
নিরবতা ভেঙ্গে। ডাক্তার বলেছিলো-
>তোমার কন্ঠটা বেশ বদলে গেছে, আগের মতো নেই- অবাক লাগছে, আমি চিনতে পারিনি তোমায় !!
বলেছিলাম’
ইচ্ছে করে বদলে যাইনি, তবে বদলে যাওয়ার ধারা রুখে দিতে পারিনি। সময় যেন সবই বদলে দিচ্ছে, দিনের পর দিন ইচ্ছে কেড়ে নিচ্ছে।
বলেছিলো-
>আমার ইচ্ছেরা চিড়কাল পোড়ামাটি,
>তবু জানি, কারো অনলে পুড়েই সে বিশুদ্ধ-
সে আজও তেমনি খাঁটি- ।।
আরও বলল-
>অবাক লাগে !
>আজও তোমার “সেই গল্পের” শেষটা খুঁজে পেলেনা ? জানতাম অরণ্য রায়ের তৃতীয় গল্পের সূচনার সূচনা হবেনা।
বলেছিলাম আমিও –
নাহ্-
ইচ্ছে করেনি অপূর্ণ গল্পের কাল্পনিক উপসংহারে টেনে নিতে,
ইচ্ছে করেনি, কারো পালিয়ে যাওয়ার গল্পগুলি , সবাইকে জানিয়ে দিতে ॥
-০-
লিখা- নভেম্বর ২০১৮
২৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
পড়লাম আবার পড়ে নেব।
ফোন কল বুঝি এমনই হই।
এস.জেড বাবু
ঠিক নাই।
দুনিয়াতে যত রকম সম্পর্ক আছে, হয়ত তত রকম ফোন কল হয়। আমার তাই মনে হয়।
ধন্যবাদ ভাই
মোঃ মজিবর রহমান
সব হাওয়ায় ভাসে এখন । এই এল এই গেল।
তৌহিদ
কথোপকথনরত কবিতা ভালো লাগলো বাবু ভাই। সময় যেন বদলে দিচ্ছে আমাদেরকে। কেড়ে নিচ্ছে আবেগ, অনুভূতিগুলোকে।
ভালো থাকবেন ভাই।
এস.জেড বাবু
আবেগ আজকাল আর কৈ-
মমতা আবেগ সবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থের সাথে জড়িয়ে গেছে অজান্তে।
কতটা বদলেছে- একটা নব্বইয়ের দশকের কিশোর হয়ত তা অনুমান করতে পারে।
ধন্যবাদ ভাইজান।
বন্যা লিপি
এটা কি ছিলো? গল্প,কবিতা,না অন্যান্য কিছু?
যাই থাকুক খুব ভালো লেগেছে উপস্থাপন ভঙ্গি।
এস.জেড বাবু
জানি না তো আপু
এমনিতেও আমি বাংলায় টেনেটুনে পাশ।
ভাল লেগেছে জানলে খুশি লাগে।
অান্তরিক ধন্যবাদ রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
কবিতায় কথোপকথনের ছলে গল্প বলা সহজ কাজ নয়।
ধারাবাহিকতা রক্ষার মুন্সিয়ানা আপনি ঠিক-ই দেখিয়েছেন তাল-লয় যথাসম্ভব রক্ষা করে।
প্রথম দিকটা পড়ে শেষটি অনুমান করা যায়-নি, তবে কিছু একটা পরিচিতিপরায়ণতা যে আছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি।
কী বলে প্রশংসা করবো! বুঝছি না।
এস.জেড বাবু
এমন মন্তব্যের পর আর প্রশংসা লাগেনা।
ঢের আমার জন্য।
ধন্যবাদ প্রিয় লিখক, প্রিয় ভাই।
নৃ মাসুদ রানা
বছর পাঁচেক পর..
এস.জেড বাবু
জ্বী ভাই –
ধন্যবাদ আপনাকে
অনন্য অর্ণব
বলেছিলাম’
ইচ্ছে করে বদলে যাইনি, তবে বদলে যাওয়ার ধারা রুখে দিতে পারিনি। সময় যেন সবই বদলে দিচ্ছে, দিনের পর দিন ইচ্ছে কেড়ে নিচ্ছে।
আসলেই দিন দিন সব বদলে যাচ্ছে। আর এই বদলে যাওয়াটা ন্যাচরাল। এর কোন প্রতিকার আছে বলে মনে হয় না।
এস.জেড বাবু
ঠিক বলেছেন ভাই ।
সত্যি কোন প্রতিকার নাই। কারণ সময় সবকিছু বদলে দেয়। তারিখ, ঘন্টা, মিনিট কখনো থেমে থাকে না- বদলায়।
তাই সবই বদলায়।
ধন্যবাদ ভাই, চমৎকার মন্তব্য
নিতাই বাবু
সবার জীবনটা এভাবেই বদলে যায়।
এস.জেড বাবু
বদলে যাওয়ার নামই জীবন-
বেঁচে থাকলে সবই বদলাবে।
থেমে যাবে যেদিন আমি ইতিহাস হবো।
শুভেচ্ছা রইলো ভাই।
নিতাই বাবু
আপনাকে শুভেচ্ছা!
রেজওয়ান
কিছু গল্প না জানানোই শ্রেয়😂সুন্দর উপস্থাপন ভাই👌
এস.জেড বাবু
ঠিক বলেছেন, কিছু গল্প নিজের হতে হয়।
ভাইজান- অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
রেজওয়ান
আপনিও ভাল ও সুস্থ থাকুন ভাই😇
সুরাইয়া পারভিন
তোমার কন্ঠটা বেশ বদলে গেছে, আগের মতো নেই- অবাক লাগছে, আমি চিনতে পারিনি তোমায় !!
ইচ্ছে করেনি অপূর্ণ গল্পের কাল্পনিক উপসংহারে টেনে নিতে,
ইচ্ছে করেনি, কারো পালিয়ে যাওয়ার গল্পগুলি , সবাইকে জানিয়ে দিতে ॥
দারুণ লেগেছে।
এস.জেড বাবু
কিছু কতা হয়ত এমন থাকে- যা একজনকে বলা যায়- তাকেই বলা হয়।
তেমন কোন কথায়, স্বভাবে, হয়ত পরিচয় মিলে, তেমন মৌলিক কোন মানুষের-
–
সব গল্প কি আর বলা হয় ? হয় না।
–
অনেক শুভেচ্ছা আপু।
সঞ্জয় মালাকার
ইচ্ছে করে বদলে যাইনি, তবে বদলে যাওয়ার ধারা রুখে দিতে পারিনি। সময় যেন সবই বদলে দিচ্ছে, দিনের পর দিন ইচ্ছে কেড়ে নিচ্ছে।
জীবনটা এভাবেই বদলে যায়, শুধু রুখে দিতে পারিনা।
দারুণ লিখেছেন শ্রদ্ধে ভাইজান।
এস.জেড বাবু
কেহই হয়ত পরিবর্তনের স্রোত থামিয়ে রাখতে পারে না।
জীবনের এইতো রীতি ।
শুভেচ্ছা সঞ্জয় দা ।
সঞ্জয় মালাকার
ধন্যবাদ বাবু ভাই,
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পের শেষটা কাল্পনিক দিয়ে করলে পুরো গল্পটাই যে মিথ্যে হয়ে যায়! যা হয়েছিলো, যা হতে পারতো তাতো কল্পিত নয়।
ছন্দবদ্ধ কথোপকথনে চমৎকার এক গল্প। প্রতি লাইনের পর ভেবেছি, এবার কি হবে! আসলে ঘটনা কি? রং নাম্বার কোথায় গিয়ে থামে,,
বেশ ভালো,
শুভ কামনা 🌹🌹
এস.জেড বাবু
কিন্তু সত্যি সে গল্পটা শেষ হয়নি,
ঠিক তেমনি ডাইরির বাকি পৃষ্ঠাগুলি আজও বিরানভূমি।
মুগ্ধকর কমেন্ট পেলে মন ভরে যায়। আন্তরিক ধন্যবাদ আপু।
অনেক ভাল থাকবেন আপনি।