কলকাতার আহমেদ আলী পার্কে মুসলিম লীগ কাউন্সিল সভা হবে, তখন দুই পক্ষের মোকাবেলা হবে। আমরা হাশিম সাহেবকে জেনারেল সেক্রেটারি করব এবং ম্যানিফেস্টো পাস করাব। অন্য দল হাশিম সাহেবকে সেক্রেটারি হতে দেবে না। নেতাদের মধ্যে অনেকেই শহীদ সাহেবের সমর্থক ছিলেন। তারা শহীদ সাহেবকে সমর্থন করতেন কিন্তু হাশিম সাহেবকে দেখতে পারতেন না। শেষ পর্যন্ত মওলানা আকরাম খাঁ সাহেব, শহীদ সাহেব ও খাজা নাজিমুদ্দিন সাহেব বসে একটা প্যানেল ঠিক করলেন। হাশিম সাহেবই সেক্রেটারি থাকবেন তবে ম্যানিফেস্টো এবার পাস হবে না। একটা সাব-কমিটি করা হবে, তাদের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করে ম্যানিফেস্টো ঠিক হবে। আমার মনে হয়, ম্যানিফেস্টো সম্বন্ধে এই সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছিল। আর কি কি সিদ্ধান্ত হয়েছিল আমার ঠিক মনে নাই। যাহোক, শহীদ সাহেব বললেন, “এখন গোলমাল করার সময় নয়। পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। নিজেদের মধ্যে গোলমাল হলে পাকিস্তান দাবীর সংগ্রাম পিছিয়ে যাবে।”
এই সময় বাংলায় মুসলিম লীগ সরকারের পতন হয়। গভর্নর শাসন ক্ষমতা নিজের হাতে নেন। শহীদ সাহেব দেখলেন যুদ্ধের সময় অধিক লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা কালো বাজারে কাপড় বিক্রি করার জন্য গুদামজাত করতে শুরু করেছে। একদিকে খাদ্য সমস্যা ভয়াবহ, শহীদ সাহেব রাতদিন পরিশ্রম করছেন, আর একদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। শহীদ সাহেব সমস্ত কর্মচারীদের হুকুম দিলেন, মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের আড্ডাখানা বড়বাজার ঘেরাও করতে। সমস্ত বড়বাজার ঘেরাও করা হল। হাজার হাজার গজ কাপড় ধরা পড়ল, এমনকি দালানগুলির নিচেও এক একটা গুদাম করে রেখেছিল তাও বাদ গেল না। এমনি করে সমস্ত শহরে চাউল গুদামজাতকারীদের ধরবার জন্য একইভাবে তল্লাশি শুরু করলেন। মাড়োয়ারিরাও কম পাত্র ছিল না। কয়েক লক্ষ টাকা তুলে লীগ মন্ত্রীসভাকে খতম করার জন্য কয়েকজন এমএলএকে কিনে ফেলল। ফলে এক ভোটে লীগ মন্ত্রীত্বকে পরাজয়বরণ করতে হল। যদিও এটা অনাস্থা প্রস্তাব ছিল না। খাজা নাজিমুদ্দিন সাহেব চ্যালেঞ্জ দিলেন এই কথা বলে যে, আগামীকাল আমি আস্থা ভোট নেব, যদি আস্থা ভোট না পাই তবে পদত্যাগ করব। স্পিকার ছিলেন নওশের আলী সাহেব। পরের দিন তিনি এ ব্যাপারে রুলিং দিলেন, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়ে গেছে, আর আস্থা ভোটের দরকার নাই।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৩২ ও ৩৩)
“বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-২৪) “
১২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আবারও পড়লাম,
যেমন পড়েছি আগেও।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
খুব ভাল লাগলো আপু বইয়ে পড়ে যা মজা লাগলো এখানে তাঁর চেয়েও বেশি
শুভেচ্ছা অবিরত।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বইয়ে পড়েছেন আর এখানে ধারণ করছেন। পার্থক্য এখানেই।
ধন্যবাদ মজিবর ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
আসলে আপু একবার দুবার পড়ে ধারন করা যায় না যত পড়া যাবে তত উপলধ্বী আসবে।
লীলাবতী
এই পর্বটি অনেক ছোট হয়ে গেল আপু। সংকটের সময় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে মুনাফা করে, সেই অভ্যাস এদের এখনো আছে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বইয়ে পড়েছেন আর এখানে ধারণ করছেন। পার্থক্য এখানেই।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আহ হা! লীলাবতী, উপরের মন্তব্যটা মজিবর ভাইয়ের মন্তব্যের প্রতিউত্তর ছিলো। :p
ছোট দিলাম, বড় লেখা দেখে পাঠক অনেক সময় এড়িয়ে যায়।
জিসান শা ইকরাম
দেখতে দেখতে ২৫ টি পর্ব হয়ে গেলো
নিয়মিত লিখে সোনেলাকে সমৃদ্ধ করছেন
শুভ কামনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধারাবাহিকতা বজায় রেখে লিখে যাচ্ছি। কিন্তু সে অনুযায়ী সোনেলায় সেরকম আসতে পারছি না, যা অনুচিত।
শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু পোষ্টটা এক নিমেষে শেষ হয়ে গেলো। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে আরেকটু কি বাড়ানো যায়না?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আগ্রহের কথা জেনে ভালো লাগছে। আগামীতে আবার বাড়িয়েই দেয়া শুরু করবো।