মাহবুবুল আলম
বাইরামপুর স্কুলের বিশাল কাঠবাদাম গাছের ছায়ায় সালিশের আয়োজন চলছে। সালিশের জন্য সাত গ্রামের মাতব্বর মুরব্বীদের গ্রাম পুলিশ দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আছর নামাজের পর শুরু হবে শালিশ। জাহাজপুর মাদ্রাসার বড় হুজুর মুফতি মাওলানা আজিজার রহমান জাহাজপুরি এরই মধ্যে এসে হাজির হয়েছেন। এসেই উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে জাহাজপুরি হুজুর বল্লেন,‘আপনারা সবাই ইজাজত দিলে আছরের নামাজটা পড়েই কাজ শুরু করি, কি বলেন আপনারা’। উপস্থিত সবাই হুজুরের কথায় সায় দেয়, ‘ জ্বি মুক্তি সাব, নামাজ পইড়াই সালিশের কাম শুরু করলেঐ ভালা অইব ’। আরেক জন কিছু লেখা পড়া জানা লোকে বলে, ‘দুর মিয়ারা মুক্তি সাব না । মুফতি সাব’। রেনু মিয়া কথা কেড়ে নিয়ে বলে “আরে মিয়া এক কতাঐ। বেশী বুঝদারি দেহাইওনা। লোকটি ক্ষেপে গিয়ে বলে, ‘ওরা মুক্তি সাব না। এরা হইল গিয়া রাজাকর সাব। আমগো মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মিয়া রাজাকার কমান্ডার আছিল’।
এ কথা শুনে রেনু মিয়া গনগনিয়ে বলে, ‘আরে মিয়া পুরানা কতা বাদ দেও’। ‘ক্যান বাদ দিমু ক্যান।’ লোকটি এক রকম চেচিয়ে ওঠে। … শেষে রেনু মিয়া রণে ভঙ্গ দেয়।
এই সব বাদানুবাদের মাঝেই নামাজ পড়ার জন্য হুজুর মসজিদে ঢুকেছেন। সালিশের
জনসমাগমও বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে উঠতি বয়সের ছেলে ছোকড়াদের উপস্থিতিও কম নয়। ইউনিয়ন পরিষদের দুইজন গ্রাম পুলিশ স্কুলের ভেতর থেকে চেয়ার, টুল, টেবিল এনে লাইন করে বিছাচ্ছে। তারা ছেলে ছোকড়াদের হাত লাগানোর জন্য তাগাদা দিয়ে বলছে, ‘এই পোলাপানরা হুদা হুদি ঘুরাঘুরি না কইরা আইয়ো সবাই একটু আত লাগাও। আইয়ো সবাই মিইল্লা চেয়ার টেবিল গুলান বিছাইয়া, একটা ছোয়াবের কামে শরিক হই’।
কিন্তু গ্রাম পুলিশদের কথায় কেউ কর্ণপাতই করছে না। গ্রাম পুলিশ আয়েব আলী এতে বিরক্ত হয়। মানজু মিয়া কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরেই বলে, ‘আরে মিয়া আইজ কাইলের পোলাপান আসল পুলিশের কতাই পাত্তা দেয়না আর এরা হুনব তোমার মত গ্রাম পুলিশের কতা। মানজু মিয়া আয়েব আলীর কথায় কেমন চুপসে যায়।
শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে দুই গ্রামপুলিশ মিলেই চেয়ার টেবিল টানাটানির কাজটা করছে। চেয়ার টেবিলের আয়োজনটা শুধু বিচারক ও বিভিন্ন গ্রামের মাতব্বর মুরব্বিদের জন্য। আর সাধারণ পাবলিকদের জন্য স্কুলের মাঠের প্রাকৃতিক ঘাসের বিছানা তো আছেই।
আজ এখানে ছাদির মিয়ার স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়ে ভানু ও কালু মিয়ার ছেলে করিমের জেনা সংক্রান্ত কর্মকান্ডের চুড়ান্ত বিচার হবে। দু’জন বেগানা নারী-পুরুষ নিজেদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে দিনের পর দিন জেনার কাজ করে শরিয়তের বিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যে পাপ তারা করেছে, তার বিচারের জন্য গ্রামে আরো দুইবার সালিশের আয়োজন করা হলেও এর কোনো বিহিত হয় নাই। গ্রামের লিবারেল শালিসদাররা চেয়েছিল তওবা টওবা পড়িয়ে দুজনকে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া। মেয়ে পক্ষ তা মানলেও করিমের বাবা কালু মিয়া প্রতিবাদ করে বলেছে, ‘কি কন আপনেরা! শয়তানের ফেরে পইড়া না অয় আমার ছেইলা একটা ভূল কইরা ফালাইছে। তাই বইল্লা ছেইলে থাইক্যা পেরায় পোন্র বছরের বড় বেটির লগে ছেইলের বিয়া অইব কি কইরা? বড়জোর বিশ পঞ্চাশ হাজার টেকা না হয় জরিমানা কইরা কান ধইরা উঠ বস করাইয়া তওবা পড়ইয়া দিলে এক কতা। কিন্তু কিছুতেই বিয়া পড়ানের রায় আমি মানিনা’।
এ নিয়ে গ্রামের কট্টরপন্থী আর মধ্যপন্থী মানুষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মধ্যপন্থীরা চাচ্ছে, কিছু জরিমানা টরিমানা করে বিষয়টা মিটমাট করে দেয়া; আর কট্টরপন্থীদের সাফ কথা “এর শরিয়তের বিচার হতে হবে; কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা কালু মিয়ার নিকট থেকে ঘুষ নিয়ে মেয়েটিকে এক তরফা দোষী বানিয়ে বিচার গরবর করতে চায়। তাদের সাথে গোট পাকাচ্ছে সাবেক চেয়ারম্যান জরাব আলী, এই জরাব আলী হলো অলোয়েজ গভর্নমেন্ট পার্টি। তাদেরই এখন দিন। সরকারের ছত্রছায়ায় তারা এখন দিনকে রাত করতে পারে। তাদের ধারণা ছাদির মিয়ার মত গরীব মানুষের পক্ষে কোর্ট কাচারী দূরে থাক, এই নিয়ে বেশী বাড়াবাড়িও করতে পারবেনা। আমাদের দেশে গরীবের বেলায় যা হয় ছাদির মিয়ার ক্ষেত্রেও হয়েছে তা-ই। আর এই সুযোগটাই নিয়েছে পার্শ্ববর্তী গ্রামের মাদ্রাসার হুজুর গং ও তাদের জেহাদী ছাত্ররা। তাদেরও এক কথা , ‘এ ভাবে বিয়ে শাদী পড়িয়ে দিলে শারিয়তের বিচারে তা হবে নাজায়েজ; যা শরিয়তের অবমাননার শামিল। এ জন্য সঠিক ফতোয়ার মাধ্যমে ইসলামের বিধি বিধান মেনে বিষয়টির ফয়সালা করতে হবে’।
এ নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা তিন চার দিন আগে এলাকায় জঙ্গি মিছিলও করেছে। ‘ইসলামের অবমাননা “সহ্য করা হবেনা-হবেনা। ইসলামের শত্রুরা – হুশিয়ার সাবধান। মুফতি আন ফতোয়া দাও-জেনা কারীদের দোররা দাও’। ইত্যাদি ইত্যাদি।
নানা ধরণের জেহাদী জাতীয় হাতের লেখায় পোস্টরিংও করা হয়েছে। ছাত্রদের এই সব কর্মকান্ডে যে, হুজুরদের প্রচ্ছন্ন ইন্দন রয়েছে তা বিভিন্ন জনে ফিসফাস করে বলার ও চেষ্টা করছে। এমন কী অনেকে এ কথা ও বলছে যে, গ্রাম্য সাধারণ শালিসে এমন একটা ঘটনার বিচার হয়ে গেলে হুজুরদের ফতোয়াগিরির আর মূল্য থাকলো কোথায়? তা হলে তো হুজুররা ভাতে মারা যাবে। তাই মাদ্রাসার ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে শরিয়তের বিচার করতে চাচ্ছে। কিন্তু নিজেরা আবার কোন বিচারের ফেরে পড়ে যায় এই ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে সাহস করছে না। তবে মাদ্রাসা ছাত্রদের এইসব বাড়াবাড়ি নিয়ে গ্রামের শিক্ষিত ছেলে পেলেরা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফোঁসছে। তাই যে কোনো সময় এই নিয়ে এলাকায় রক্তারক্তির একটা ঘটনা ও ঘটে যেতে পারে, তা ভেবেই আজকের এই সালিশের আয়োজন।
২
যাকে নিয়ে এতসব ঘটনা সেই ভানু কাশিতলা গ্রামের বর্গাচাষী ছাদির মিয়ার মেয়ে, দুই সন্তানের মা। বয়স ত্রিশ বত্রিশের কোঠায় হবে। বিয়ে ও হয়েছিল অনেকটা দেরিতে। তবে দেখা শুনায় এক নজরেই সবার দৃষ্টি কাড়ার মত মেয়ে সে। বিয়ের সময় ছাদির মিয়া কথা দিয়েছিল যৌতুক হিসাবে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও ব্যবহার্য কিছু কাঠের ফার্নিচার দেবে। কিন্তু পরে সংসারের অভাব অনটনে দুই সন্তানের মা হয়ে গেলেও ছাদির মিয়ার পক্ষে আর কথা মত যৌতুক দেয়া সম্ভব হয়নি । এই নিয়ে ভানুর উপর চলে শ্বাশুড়ী ননদ, জামাইর অকথ্য নির্যাতন। স্বামী হাতেম আলী একদিন ভানুকে মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে, পরে জ্ঞান ফিরে এলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বলে, যা হারামজাদী আমার ঘর থাইক্কা বাড় অইয়া যা। যেই দিন পঞ্চাশ হাজার টেকা আর মালামাল নিয়া আইতে পারবি হেই দিনঐ আইছ। না অইলে এই অইল গিয়া তর শেষ বিদায়। খাল্লাছ। মনঅ রাহিছ’। যা।
নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে আসতে হয় ভানুকে। গরীব বাবার পক্ষে যৌতুক দেয়াও সম্ভব হয়না আর স্বামীর বাড়িও যাওয়া হয়না ভানুর। শেষে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার; কিন্তু ছেলে মেয়ে দুইটাকে আর সাথে করে আনতে দেয়নি তার স্বামী।
দুই বৎসর যাবতই ভানু বাপের বাড়িতে আছে। কিন্তু বাবার অভাব অনটনের সংসারে বোঝা হয়ে থাকতে চায়নি বলেই সে কাজ নেয় কালু মিয়ার ধান ভাঙ্গার চাতালে। এই চাতালে কাজ করতে করতেই এক সময় কালু মিয়ার বখাটে মেঝ ছেলে করিমের কু-নজর পড়ে ভানুর ওপর। চাতালে এলে যে কোন ভাবে একটা সুযোগ পেলেই করিম মিয়া ভানুকে গদিতে ডেকে নিত। একথা সে কথার ফাঁকে ইনিয়ে বিনিয়ে নানা ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা বলতো, শরীরের স্পর্শ কাতর অংশে হাত দিত। প্রথম প্রথম এ সব গায়ে মাখতো না ভানু। মনে মনে ভাবতো “ গরীবের বিধবা বউ সবারঐ ভাবি। এ নিয়া কতা কইতে গেলে শেষে কামটাই আরাইতে অইব। এই কৌশলে অনেকদিন নিজকে গুটিয়ে রাখতে পারলেও একটা সময়ে এসে শরীর ও মনের দাবীর কাছে ভানুকে হার মানতেই হয়।
করিম একদিন রাতে গোপনে ভানুর সাথে মিলিত হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ভানু তুমি খুব সুন্দর। তোমারে আমি ভালবাসি। ভানু বাঁধা দিয়ে বলে, ‘না। এইডা অয়না ’। ক্যান অয় না। গলা খাদে নামিয়ে করিম বলে। ‘ক্যান আবার অয়না তুমি বুঝনা। তোমরা অইলা গিয়া মালিক, আর আমরা হইলাম গিয়া কামলা, চাকর’। ভানুর কথার পিঠে করিম বলে, ‘ভালাবাসার কাছে আবার মালিক কামলা কি। এর কাছে কোনু ধনি গরীবের তফাত নাই’। ‘খালী ত এইডা না আরঅ সমস্যা আছে’। ভানুর এই কথা কেড়ে নিয়ে করিম বলে, ‘আবার কোন সমস্যা’? ‘ক্যান, তোমার আমার বয়স। তুমি আমার কত ছোড মনে আছে’। ‘মনঅ থাকবনা ক্যান। তুমি আমার দশ বার বছরের বড় হইবা আর কি’।
‘তইলে এইডা কোনু সমস্যা না’? ভানু বলে। জবাবে করিম বলে, ‘এইডা আবার সমস্যা অইব কিয়ের লাইগ্যা। আমাদের নবী অ দ পোনরো বছরের বড় খতেজা (রাঃ) রে বিয়া করছিল। হেগ দ কোনু সমস্যা অয় নাই । ত আমাগ সমস্যা অইব কিয়ের লাইগ্যা’। এই কথার জবাব আর ভানু দিতে পারে নাই…।
এমনি করেই ধীরে ধীরে করিমের মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে পড়ে যায় ভানু। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তোলে করিম। তা চলতে থাকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। এভাবে চোরের দশদিন আর গৃহস্থের এক দিন প্রবাদের মতই গ্রামের কিছু যুবক ছেলে রাতে গোপন পাহাড়া বসিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় দুজনকে ধরে ফেলে। ছেলেদের হাত থেকে করিম লেংটো হয়ে ছুটে পালিয়ে যেতে পারলেও ধরা পরে যায় ভানু। ভয়ে ভানু সব কিছু খুলে বলে সবাইকে। এই হলো আজকের ফতোয়া শালিস আয়োজনের কাহিনী বৃত্তান্ত।
তিন
নামাজ শেষে সবাই এসে বসেছেন মাঠে। গরমটাও বেশ কমে এসেছে। বেশ ফুরফুরে বাতাস। জাহাজপুরি মাওলানা আজিজার রহমান এসে বসেছেন সভার মধ্যিখানে বড় একটা টাওয়েল জড়ানো চেয়ারে। তাকে ঘিরে পরিসেবায় ব্যাস্ত কয়েকজন মাদ্রাসার সিনিয়র ছাত্র। এই ফুরফুরে বাতাসের মধ্যেও তারা হুজুরকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। এতক্ষন হুজুর বেশ আয়েস করে পান চিবুচ্ছিলেন। পানের চিবানো অংশ ফেলে দিতে উদ্যত হলে একজন মুরব্বী গোছের লোক এসে হাত পেতে দেয় হুজুরের মুখের সামনে। ‘দেন হুজুর আমার আতেই দেন । আমি ফালাইয়া দেই’। হুজুর মৃদু আপত্তি করেও পরে ঐ লোকটির হাতেই পানের চিবানো ছোবরা ফেলে দেন। এই কাজটি করতে পেরে লোকটির চেহারায় কেমন একটা পরিতৃপ্তির রেখা ফুটে ওঠে। তার ভাব সাব দেখে মনে হলো যেন সে বেহেস্তের সিঁড়ির এক ধাপ এগিয়ে গেছে হুজুরের মুখের পানের ছোবরা নিজের হাতে ফেলতে পেরেই।
হুজুর সমবেত সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ মজলিসে হাজিরান, অভিযুক্তরা কি মজলিসে এসেছেন? সবাই এক বাক্যে উত্তর দেয়, ‘জ্বি হুজুর আইছেন, আইছেন। আপনে এখন কাজ শুরু করতে পারেন’।
মজলিসের ইজাজত পেয়ে জাহাজপুরি মাওলানা আজিজার রহমান অনেকটা ওয়াজ করার ভঙ্গিতেই শুরু করলেন, ‘নাহ্ মাদুহু আলা রাসুলিল কারিম, আম্মাবাদ… হাজিরানে মজলিস! মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহের বানীতে আপনারা আমাকে একটা শরিয়তের ফতোয়া দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এ জন্য আমি মহান আল্লাহপাকের দরবারে লাখো শুকরিয়া আদায় করছি। আর আপনারা এমন একটা জঘণ্য সমাজ ও ইসলাম বিরোধী জেনা জাতীয় কাজের বিচার, সাধারণ গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে না করে যে, ইসলাম ও শরিয়তের বিচারে ব্যবস্থা করেছেন এই জন্য হাজিরানে মজলিস আপনাদের উপর মহান আল্লাহ তাবারাকাতালার অশেষ রহমত নাজিল হউক। সবাই বলুন আলহামদুলিল্লাহ’।
সমবেত সবাই এক সাথে বলে ওঠে, ‘ আলহামদুলিল্লাহ’।
জাহাজপুরি মাওলানা একটু দম নিয়ে এবার ভাষণ এর ষ্টাইলে শুরু করেন, ‘হাজিরানে মজলিস, নানা ধরণের অপসংস্কৃতিতে আজ আমদের দেশ ভরে গেছে। দ্বীন ইসলাম রাসুলে (সঃ) পথ ছেড়ে মুসলমানেরা আজ ধরেছে কুফরীর পথ। ঈমান আকিদার পথ ছেড়ে ধরেছে জাহেলিয়াতের পথ। মসজিদের পথ ছেড়ে যাচ্ছে নাটক সিনেমার পথে। পর্দা পসিদার পথ ছেড়ে চলেছে বেআব্রুর পথে। যে মহিলাদের পর্দা মেনে, ইসলামের বিধি-বিধান মেনে অন্তঃপুরে থাকার কথা, তারা আজ প্রায় সবাই বেআব্রু হয়ে, মুখে পাউডার লিপস্টিক লাগিয়ে সেজেগুজে হাটে বাজারে যাচ্ছে, বেগানা পুরুষদের সাথে ধাক্কা ধাক্কি ডলাডলি করে কেনা কানটা করে বেশ আরাম ও আনন্দ পাচ্ছে পাচ্ছে…
হুজুরের এই কথায় সভার মধ্যে একটা হাসির ঢেউ ওঠে। তার তীব্র ধমকপূর্ণ চিৎকারে হঠাৎই হাসির ঢেউটা যেন মিলিয়ে যায়।‘হাসি বন্ধ করুন ! এখানে কোনো হাসির কথা বলা হচ্ছেনা , এখানে ইসলামের কথা, শরিয়তের কথা, পবিত্র ইসলাম ধর্মের কথা বলা হচ্ছে। রংতামাশার কথা বলা হচ্ছেনা। দেশে ইসলাম ও কোরআনের শাসন নেই বলেই আজ যতসব অনৈসলামিক কাজে দেশ ছেয়ে গেছে। তাই আজ আমাদের ভাববার সময় এসেছে দেশ কী ইসলাম ও কোরআন সূন্নার আইনে চলবে, না মানব শাসিত আইনে চলবে’। হুজুরের কথা বলার মধ্যেই অনতি দূরেই দাড়িয়ে থাকা কয়েকজন উঠতি বয়সের ছেলে বলে, ‘হুজুর করতো আইছে শরিয়তের বিচার, তা না কইরা শুরু করছে ওয়াজ।
ছেলে পেলেদের কথা বলার দিকে দৃষ্টি পড়ে হুজুরের। তিনি আবার সুউচ্চস্বরে ধমক দিয়ে ওঠেন, ‘ এই ছেলে পেলের দল, এখানে ইসলাম ও কোরআনের আইনের বিষয়ে তফসির হচ্ছে। এখানে কোন বেয়াদপী সহ্য করা হবে না। ভাল না লাগলে এখান থেকে চলে যাও।’
হুজুরের আদেশ শুনে কয়েকজন মাদ্রাসার ছাত্র তেড়ে যেতে চায়। মাতব্বর মুরব্বীদের হস্তক্ষেপে মাদ্রাসার ছাত্ররা শান্ত হয় । মুরব্বীরা ছেলেদেরকে কড়া ধমক লাগায়। হুজুর কন্ঠে মিলাদে রসুলের সুর তোলেন। সমবেত জনতা তার সাথে কন্ঠ মিলায়। মিলাদ পড়া শেষ করে হুজুর বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত মাতবরদের সাথে অনুচ্চ স্বরে কিছু একটা পরামর্শ করেন। মজলিসে তখন পিন পতন নিরবতা।
৪
ভানু স্কুলের বারান্দায় তার মা বোনসহ অন্যান্য মহিলাদের সাথে দাড়িয়ে আছে। করিম ও তাদের পক্ষের লোকজনের সাথে দাঁড়িয়ে।
শালিস শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে যে সব মাতবর আগের শালিসগুলোতে উপস্থিত ছিলেন তাদের সাথে কিছুটা শলা-পরামর্শ করে জাহাজ পুরি হুজুর বলেন, ‘ সে দিনের ঘটনার সাক্ষী কে কে ? এ দিকে আস।’ রমজান, রফি, কাশেম, খালেক ও টেরা আসাদ বেশ আদব কায়দা সাথে এসে হুজুর ও মাতবরদের সামনে দাড়ায়। হুজুর তখন চোখমুদে নিমগ্নতায় ডুবে। মুহূর্তের মধ্যেই নিমগ্নতা ভেঙে চোখ খুলে ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ তোমরা কি সে দিনের ব্যভিচারের ঘটনাটি নিজ চোখে দেখেছ?’ সবাই এক সাথে বলে ওঠে, ‘ জ্বী হুজুর আমরা নিজ চুক্ষে দেখছি। এবং দুই জনরে খারাপ কাজ করার সময় হাতেনাতে ধরছি।’ টেরা আসাদ বলে, ‘ করিমরে আমি ঝাপটাইয়া ধরছিলাম, হে আমারে কামড় মাইরা দিছে। শেষে সবাই মিইল্যা পারছা পারচি করার সময় হে লঙ্গি ফালাইয়াঐ ভাইগ্যা গেছে। টেরা আসাদের কথায় আবার সবাই এক সাথে হেসে ওঠে। হুজুর খালেককে বলে, ‘ তুমি বল’। খালেক ডোক গিলে কিছুটা সংকোচিত চোখে মুখে বলে, ‘ হুজুর আমরা বহুদিন ধইরা হেগরে ধরার চেরেষ্টা করছি, তার পর হেই দিন পাহাড়া বসাইয়া পরে ধরছি। পারাপারি কইরা করিম ছুইট্যা গেলেও ভানুরে ধইরা হের কাছ থাইক্যা সব কতা আদায় করছি।’ বেশ দৃঢ়তার সাথে কথাগুলো বলে যায় খালেক। হুজুর রফিকে ডাকে, ‘এই ছেলে তোমার নাম কি?’ ‘হুজুর আমার নাম রফি ’। রফির কথার পিঠেই হুজুর বলেন- ঠিক আছে, তুমি এদিকে আস’। রফি কিছুটা আড়ষ্ঠ হয়ে বিচারকদের পাশে এসে দাড়ায়। জাহাজপুরি হুজুর তখন বলেন, ‘ তোমরা তাদের দুজনকে কথাবার্তা বলার সময় ধরেছ না… বলে হুজুর কেশে গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিতে নিতে রফি কিছু বলতে আমতা আমতা করে এ আমতা আমতার সুযোগে টেরা আসাদ বলে, জ্বি না হুজুর কতাবার্তার মধ্যে না, একবারে আসল কামের মধ্যে ধরছি। টেরা আসাদের চোখের চাহনী ও কথা বলার ঢং দেখে মজলিসে আবার হাসির রোল ওঠে। কিছুক্ষনের মধ্যেই হাসিটা মিলিয়ে গেলে জাহাজপুরি হুজুর বলেন, ‘অভিযুক্ত দুইজনকে হাজির করা হোক।’ হুজুরের কথা শুনে সালিশ বৈঠকের মানুষজন নড়েচড়ে বসে। বিচারক ও হুজুরদের একপাশে ভানু ও অন্যপাশে করিম এসে দাঁড়িয়েছে। দুজনেরই নতমুখ। জাহাজপুরি হুজুর অনেকটা ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দুজনকে দেখেন। তারপর করিমকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘বল করিম তোমার কি বলার আছে?’ করিম কেমন কান্না জড়ানো গলায় বলে, ‘ হুজুর আমার কোনু দোষ নাই। ভানুঐ আমারে ফুসলাইয়া নিয়া এই কাম করাইছে।’ করিমের এ কথা শুনে ফোঁসে ওঠে ভানু, সে অনেকটা জোর গলায় বলে ,‘এই হারামী কুত্তা, আমি তরে ফুসলাইয়া এই কাম করাইছি, তুই ত তোগ চাতাল কাম করার সুযোগ নিয়া, দিনের পর দিন আমারে কু পরামর্শ দিয়া, বিয়া করনের লোভ দেহাইয়া আমার লগে খারাপ কাম করছত। এহন কছ সব দোষ আমার।’ ভানুর মুখ থেকে ছো মেরে কথা কেড়ে নিয়ে করিম বলে,‘ তোমারে আমি বিয়া করনের কতা কমু কোন বিবেচনায়, তুমি হইলা গিয়া আমার কত কত বড়। কথার মধ্যেই করিম হুজুরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,‘ জ্বী না হুজুর হে মিছা কতা কইতাছে। আমারে ফাঁসানের লাইগা মিছা কতা কইতাছে। হুজুর ধমক দিয়ে করিমকে থামিয়ে দিয়ে বলে,‘ তুমি এখন থাম ব্যাভিচারী পুরুষ কোথাকার। ভানুর দিকে তাকিয়ে তার আপাদ মস্তক পর্যবেক্ষণ করে জাহাজপুরি হুজুর। ভানুর দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যায় হুজুর। মুহূর্তেই ঘোর কাটিয়ে ভানুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ এই মেয়ে তুমি এখন তোমার কথা বল।’ হুজুরের কথার প্রতি উত্তরে ভানু যে ভাবে কথা বলে, তা শোনার জন্য যেন মজলিসের কেউ প্রস্তুত ছিল না। হুজুরের কথার পিঠে ভানু বলে ওঠে,‘ আমার কোনু কওয়ার নাই। আপনের বিচার আপনে করেন।’ ভানুর কথা মুনে হুজুর রাগে গোস্বায় ফোঁস ফোঁস করতে থাকেন। হুজুরে এ অবস্থা দেখে কাশিমপুরের মাতব্বর হারিস মিয়া রেগে-মেগে বলে ওঠে, ‘এই বেয়াদপ মাইয়্যা, হুজুরের লগে কীভাবে কতা কয় দেহ, চুরিতো চুরি আবার সিনাজুরি।’ মাতব্বরের কথা শুনে ভানু রক্তচক্ষু করে তার দিকে তাকায় । মাতব্বর কেমন চুপসে যায়। জাহাজপুরি হুজুরের রাগ এখনো পড়ে নাই। মাদ্রাসা ছাত্ররা উত্তেজিত। একজন অতি উৎসাহী ছাত্র হুজুরের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনার ভংগিতে বলে, ‘ হুজুর আপনে খালী আদেশ দেন, বেসরম বেলাজ চরিত্রহীন মাইয়্যাটাকে মাটিতে পুইত্যা পাথর ছুইরা মারি। হুজুর হাতের ইশারায় শান্ত হতে বলে ছাত্রটিকে। তারপর পকেট থেকে ছোট্ট একটি পানের কৌটা বের করে একটা পানের খিলি মুখে পুরে মানিকপুর গ্রামের মাতব্বর আলী হোসেনের সাথে কথা বলেন। অন্যান্য মাতব্বররা ও এক সাথে মাথা ঝুকে জাহাজপুরি হুজুরের কথা শুনে। আলী হোসেন মাতব্বর বিগলিত হয়ে বলেন, ‘ হুজুর এহানে আর সাক্ষী সাবুদের দরকার নাই। আমরা ত আগেঐ সাক্ষী সাবুদ লইছি। আর আপনেওদ সাক্ষী লইলেন। এখন খালী ফতোয়াডা দিয়া দেন, সব খাল্লাছ। শরিয়তের বিছার এহানে কারো কিছু কওয়ার নাই।
হুজুরের মুখে এখনো পান। হুজুর বেশ মজা করে পান চিবুচ্ছেন। হাকিমপুরি পাত্তিজর্দার ঘ্রাণে হুজুরের আসপাশ বেশ মৌ মৌ করছে। তবে পাত্তিটা বোধ হয় একটু বেশীই পড়ে গেছে। কেমন জানি টাল সামলাতে পারছেন না হুজুর। তার কপাল ও নাকের ডগায় চিকন ঘাম। তবু হুজুর আয়েশ করে পান চিবুচ্ছেন। দুই চিবুকের পাশ ঘেসে অনেকটা পানের রস বেড়িয়ে এসেছে।
আধা ঘন্টা সময় হাতে আছে আর। তারপরই মাগরিবের আযান পড়ে যাবে। এর মধ্যেই ফতোয়ার কাজ শেষ করতে হবে। না হলে সালিশের কাজ ছাড়াভাঙা হয়ে যাবে। এমনই তাগিদ দিলেন আসপাশের গ্রামের মাতব্বররা।
৫
এই পড়ন্ত বিকেলে মানুষে মানুষে গিজগিজ করছে সারা মাঠ। সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ এখন জাহাজপুরি হুজুরের দিকে। এতক্ষনে জর্দার ধকলটা কাটিয়ে ওঠেছেন হুজুর। চেয়ারে নড়ে চড়ে বসেন তিনি। তারপর বলেন,‘হাজিরানে মজলিস ! সময় খুবই সংক্ষিপ্ত। অল্প কিছু পরেই মাগরিবের নামাজ। তাই এর আগেই আমরা শালিসের কাজ শেষ করতে চাই। সুতরাং আর দেরি করার অবকাশ নেই। শরিয়তের বিচারে এরূপ জেনার কাজের শাস্তি হলো দুই ব্যবিচারীকে কোমড় পর্যন্ত মাটিতে পুতে পাথর ছুরে মারা। আর একটা পথ হলো দোররা মারা। আমরা আসপাশের গ্রামের মাতব্বর মুরব্বীদের সাথে আলাপ করে শেষোক্ত শাস্তিটিই দিতে চাই। তাই এখন মেয়েকে একশোটি এবং ছেলেকে পঞ্চাশটি দোররা মারার আদেশ দিলাম।
হুজুরের রায় শুনে ভানুর চাচাতো ভাই মুন্না বলে ওঠে,‘ হুজুর এহানে আমার কতা আছে। হুজুর বলেন,‘বল তোমার কি কথা? মুন্না কেশে গলাটা একটু পরিস্কার করে নিয়ে বলে,‘ দুইজন ত সমানঐ পাপ করল। তয় একজনকে একশো আর একজনকে পঞ্চাশ দোররা ক্যান, দুইজনকেঐ সমান সমান মারা হঔক। হুজুর বলেন,‘ এখানে মেয়েটির পাপই বেশী, কেননা ছেলেটি মেয়েটির চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। মেয়েটি নিষেধ করলে ছেলেটি জোর করতে পারত না।’ মুন্না আরও কিছু বলতে চাচ্ছিল, কিন্তু তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কয়েকজন মুরব্বী গোছের লোক মিলে তাকে জোর করে বসিয়ে দেয়।
হুজুরের ফতোয়া শুনে ভানু কেমন মাথা নিচু করে নির্বিকার দাড়িয়ে থাকে। দোররা মারার আয়োজন চলছে। মাদ্রাসার ছাত্ররা মোটা প্লাষ্টিকের কয়েকটা রশি একত্রে পেঁচিয়ে দোররার চাবুক বানিয়ে এনেছে। কে দোররা মারবে এনিয়ে সাময়িক একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত হুজুরের ওপরই দোররা মারার দায়িত্ব পড়ে। আগে ভানুকে এনে সভার মাঝখানে ধরাধরি করে দাড় করানো হয়েছে। জাহাজপুরি হুজুর আজিজার রহমান নিজের জুব্বাটাক কোমড়ের সাথে শক্ত করে গিট দিয়ে বেঁধে চাবুকের জন্য ছাত্রদের দিকে হাত বাড়ান। ছাত্ররা দৌড়ে সে হুজুরের হাতে চাবুকটা তুলে দেয়। তা হাতে নিয়ে জাহাজপুরি হুজুর টেনেটোনে পরখ করে দেখেন। তারপর ধীর পায়ে হেটে এসে দাড়ান ভানুর সামনে। তিনি সমবেত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘ আমি একটা করে চাবুকের বারি দেব আপনারা সবাই গুণবেন।
হুজুর দোররা উচিয়ে প্রথম আঘাতটি করতেই আওয়াজ ওঠে-এ এ ক । ভানু কোকিয়ে ওঠে। হুজুর আবার আঘাত করতেই সম্মিলিত একটা আওয়াজ ওঠে-দু ই ই। কিন্তু তৃতীয় আঘাত করতেই উপস্থিত সবাইকে হতবম্ভ করে ভানু হুজুরের চাবুকটি ডান হাতে শক্ত করে টেনে ধরে। রাগে ক্রোধে যেন ভানুর দুচোখ দিয়ে রক্ত ঝরে পড়তে চাচ্ছে। হুজুর যথাসাধ্য শক্তি দিয়ে ভানুর হাত থেকে চাবুকটা ছুটানোর চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হন। ভানুর হাতের মুষ্ঠি ফেটে রক্ত ঝরছে। হঠাৎই ভানুর এমন অগ্নিমুর্তি দেখে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছেনা। ভানু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আপনেরা সক্কলে হুনেন। যেই জাহাজপুরি হুজুর আইজ আমারে জিনার লাইগ্যা ফতোয়া দিয়া দোররা মারত আইছে। ত আইজ আমিও চার বছর আগে আমার মামাত ভাই সাজুরে এই জাহাজপুরি হুজুর তার মাদ্রাসায় বলৎকারী কইরা অসুস্থ বানাইয়া ফালাইছিল। হেই বিচার আইজ পর্যন্ত অয় নাই, মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়া ভয় দেহাইয়া বিচার দামাচাপা দিছে। হুজুররে দোররা মাইরা হেই বিচার আইজ নিজের আতে করমু। কথাটা বলেই ভানু চাবুক নিয়ে হুজুরের সাথে টানা টানি শুরু করে। হুজুর ও তীব্র স্বরে তার মাদ্রাসার ছাত্রদের ডেকে বলে, ‘এই ব্যবিচারী মহিলাকে আটকাও, সে পাগল হয়ে আবলতাবল বকছে।’ ভানুও চিৎকার করে বলে, না আমি পাগল হই নাই, আর কোনু আবল তাবল বকতাছিনা। আপনেরা সবাই খোজ নিয়া দেহেন আমার কতা সত্য না মিত্যা।
ভানু আর কিছু বলার সুযোগ পায়না। ধুমসা সাইজের কয়েকজন মাদ্রাসার ছাত্র এসে ভানুকে আটকিয়ে আর হাত থেকে চাবুকটি ছুটিয়ে দেয় । সাথে সাথে হুজুর হিংস্র বাঘের মত সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ভানুর ওপর। ছাত্ররা ভানুর দুহাত দুদিকে টেনে ধরে রাখে আর জাহাজপুরি হুজুর তার সমস্ত অসুরীয় শক্তি প্রয়োগ করে ভানুর ওপর। চাবুক দিয়ে দোররা মারতে মারতে ভানুকে রক্তাক্ত করে তোলে। ভানু তার প্রতিরোধের সমস্ত শক্তি হারিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। মুন্না সহ কয়েকজন ভানুর সাহায্যে এগিয়ে আসে। তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে জাহাজপুরি হুজুরসহ মাদ্রাসার ছাত্ররা এক ফাঁকে গা ঢাকা দেয়। রক্তাক্ত ভানুর নিথর নিস্তব্দ দেহটা তুলে নিয়ে ছেলেরা রওয়ানা দেয় গৌরীপুর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। আর একদল হুজুর মাতব্বরদের বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্দশ্যে রওয়ানা দেয় তিতাস থানার দিকে।
——–
১৫টি মন্তব্য
ইঞ্জা
এখনো এইসব ফতোয়াবাজরা ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের নিজ বাসনা চরিত্রার্ত্ব করার জন্য, কত ভানু যে এদের হাতে হতাহত হলো তার ইয়াত্তা নেই, এর পরেও হাদিস কোরআনের নামে মিথ্যা বানোয়াট ফতোয়াজারি এখনো চলছে যা দুঃখজনক, দেশে আইন আছে, প্রশাসন আছে এরপরেও কেন এইসব বন্ধ হয়না তা আমার বোধগম্য নয়।
মাহবুবুল আলম
আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জে এখনো অনেক অসহায় মেয়ে ফতোয়াবাজীর শিকার হচ্ছে। এজন্য সামাজিক আন্দোলন জরুরী।
ইঞ্জা আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ!!
ইঞ্জা
সত্যি তাই, সহমত।
শুভেচ্ছা ভাই।
জিসান শা ইকরাম
মোবাইলে আমি এখন, শরীর পুরোপুরি সুস্থ হয়নি৷ ল্যাপটপে লেখাটি পড়ে মন্তব্য দেবো ভাই৷
শুভ কামনা৷
মাহবুবুল আলম
জিসান ভাই ধন্যবাদ!
নিতাই বাবু
এখনো বাংলার আনাচে-কানাচে ফতোয়াবাজদের অভাব নেই। এঁরা একটুখানি সুযোগ ফেলেই ফতোয়া জারি করে ফেলে। আপনার সাহিত্যের কলাম পড়ে মুগ্ধ হলাম। শুভেচ্ছা জানবেন শ্রদ্ধেয় লেখক।
মাহবুবুল আলম
নিতাই বাবু ! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
শামীম চৌধুরী
জ্ঞানহীন ও ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে যাদের নুন্যতম জ্ঞান নেই তারাই ফতোয়াবাজ। আর এদের সংখ্যাই বেশী। তাই সাবধান। ভালো লিখেছেন।
মাহবুবুল আলম
শামীম চৌধুরী! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও শেুভেচ্ছা আপনাকে!
আরজু মুক্তা
পরিবর্তন নাই। নারী, সেই নারীই আছে।
মাহবুবুল আলম
আরজু মুক্তা!
ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ!
মনির হোসেন মমি
ফতোয়াবাজ ভন্ড হুজুরে ভরে গেছে দেশে।এ সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলা এখন সময়ের প্রয়োজন।দারুন লেখা।
মাহবুবুল আলম
মনির হোসেন মমি! যথার্থ। আমরা পরিবর্তন না হলে সমাজ পরিবর্তন হবে না। ধন্যবাদ!
তৌহিদ
ফতোয়াবাজদের কাজই হচ্ছে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মনগড়া আইন অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া। এদের জন্য ধ্বংস হচ্ছে অনেক পরিবার,সমাজ। সবাই মিলে প্রতিহত করতে না পারলে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন অপসংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব নয়।
মাহবুবুল আলম
তৌহিদ!
আসুন সবাই মিলে এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলি।
ধন্যবাদ!