
পর্বঃ ১
“প্রিয় অভিমান”♥️♥️♥️
প্রতিদিন তোমায় লিখবো লিখবো ভেবে আর লেখা হয়ে ওঠে না। বেশকিছুদিন থেকেই ভাবছি অনেকতো হলো এবার সময় এসেছে তোমার সাথে বোঝাপরা করার। আচ্ছা এবার তবে চিরাচরিত চিঠি লেখার প্রথা দিয়েই শুরু করি,,,,
প্রথমেই তোমার প্রিয় শিউলি ফুলের শুভেচ্ছা নিও। ও হো,আমিতো ভুলেই গিয়েছি, তোমার প্রিয় ফুল কি সেটাই তো আমি জানি না 😭যাইহোক তবুও দিলাম যেকোনো একটা ফুলের শুভেচ্ছা। দিতে হয় তাই দিলাম!
কেমন আছো তুমি অভিমান? তুমি কি এখনো সেই পুরনো বাক্সের এককোনায় অযত্নে অবহেলায়,ভালোবাসাবিহীনভাবে পড়ে আছো? নাকি পুরনো বাক্স থেকে নতুন বাক্সে স্থানান্তরিত হয়েছো? নাকি আবার তোমার স্থান আর আজ কোন বাক্সেই নেই? কি ভাবছো? আমি এতো সব জানি কিভাবে? জানিতো বটেই! আমার ভিতরইতো তোমার অবাধভাবে ঘোরাফেরা আর তোমার বসবাস।
তুমি কি জানো,তোমার প্রতি আমার বড্ড ক্ষোভ ? জানবে কিভাবে? তুমিতো জানো শুধু ধীরে ধীরে আমাকে অবহেলা করে নিজে ভিতর ভিতর কুঁকরে পাহাড়সম হয়ে থাকতে, যেন তোমার সেই পাহারের সিঁড়ি কেউ আর ডিঙ্গাতে না পারে! বাইরে থেকে ভাবখানা এমন যে তোমার সিঁড়ি পর্যন্ত যাওয়াই অনেক কঠিন।
মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে, তুমি ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না। এভাবে কতদিন তুমিইই বলো? আবার বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি তাই না??
আচ্ছা যেকারণে আজ লিখছি তাহলো তোমার বন্ধু কষ্ট আর ভালোবাসার কথা মনে আছে? যে কষ্ট প্রতিনিয়ত তোমার বাক্সে জমা রাখার জন্য নতুন নতুন উপাদান দিতো!
হুম! আমি সেই কষ্টের কথা বলছি, তুমি জানো, যেদিন তুমি তোমার দঁরজায় আমার অত্যাচারে তালা লাগিয়ে দিলে তার কিছুদিন পর থেকেই কষ্ট মাতালের মতো হয়ে গেলো,পাগলের মতো খুঁজে বেড়াতে লাগল ভালোবাসাকে। আমার কাছেও এসেছিল ভালোবাসার খোঁজ নিতে। তুমি তো জানোই, ভালোবাসা ছিল বড্ড জেদী। তাই প্রতিদিন কারনে অকারনে কষ্টের সাথে ঝগড়া করত, কষ্ট যত কাছে আসতে চাইতো,ভালোবাসা ততো দূরে সরে যেতো। এভাবে ভালোবাসার দেয়া যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে কষ্ট তোমার কাছে লুকাতে তোমাকে খুঁজতে থাকে, কিন্তু তুমি যে তোমার জায়গা চেঞ্জ করেছো সেটা কষ্ট বেঁচারা জানবে কি করে বলো?
এরপর কষ্ট আবার ভালোবাসার কাছে শুধু ফিরে যায় আর তাকে আঁকড়ে থাকতে চায়। ভালোবাসা নাছোরবান্দা তার মনে হয় কষ্টের কিছুই ভালো লাগে না, সেই দুঃখে কষ্ট বেদনার নদীতে স্নান করতে গিয়ে ডুবে মরে। তখন ভালোবাসা তার চেতন ফিরে পায়। ভালোবাসা সেই বেদনার নদীতে সাঁতরাতে থাকে কষ্টকে খোঁজার জন্য । কথায় আছে “সময় গেলে সাধন হবে না “। ভালোবাসা আর খুঁজে পায় না কষ্টকে,আজ ভালোবাসা খুব একা সে ও এখন তোমার কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজেফেরে সারাক্ষন। আচ্ছা অভিমান তুমি কি জোতিষী নাকি?? পৃথিবীর সবার প্রশ্নই তোমার কাছে??
যাইহোক অনেকতো অন্যের কথা বললাম, এখন একটু এবার নিজের কথা বলি।
আসলে তোমাকে লিখতে বসলে কত কি যে মনে পড়ে! কতদিন তোমাকে বাক্স থেকে বের করি না, কতদিন তোমায় মন ভরে দেখি না! কতদিন তোমার স্পর্শে নিজেকে বিলিয়ে দেই না! কতদিন তোমার সবকিছু নিজের করে শুষে নেই না! শেষ কবে তোমার স্পর্শ পেয়েছিলাম তোমার মনে আছে? আমি কি বোকা বলো! সারাজীবন নিজের মতো করে বলে গেলাম, ভালোবেসে গেলাম সব নিজের ভিতর পুষে রাখলাম!
আর তুমি নিরবে নিভৃতে তোমার আস্তানায় পড়ে থাকলে, একটাবার ভাবলে না আমি কি চাই?আমার অনুভূতিগুলো কিরকম অথবা আমার মতো করে আমাকে ভালোবাসতে?? দূর! কি অদ্ভুত! আমিতো এতোদিনেও জানলাম না তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা?
তুমি মাঝে মাঝে বলো,ভালোবাসা নাকি প্রকাশ করতে হয় না কিছু অনুভূতি, কিছু কাজই মানুষকে বুঝিয়ে দেয়। অথচ এতোগুলো দিনে তোমার কিছুতেই নিজেকে খুঁজে পেলাম না তবুও এখনো বোকার মতো আজও তোমায় ভালোবেসে যাচ্ছি, চিঠি লিখে যাচ্ছি।
দেখো,কি আজব আমি! কি করবো বলো,আমার উড়নচন্ডী অভিমান! আমি যতই তোমার প্রতি প্রত্যাশা ছেঁড়ে দেই তুমিতো জানো,আমি তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় সারাক্ষন থাকি।
আজ স্বপ্নে দেখি তোমাকে জড়িয়ে খুব করে কাঁদছিলাম শুধুমাত্র তোমার মুখে ভালোবাসা কথাটি শোনার জন্য আর কপালে একটু আদরের জন্য। তুমি তখনো নিশ্চুপ ছিলে। স্বপ্নেও পেলাম না তোমাকে😭। আমার যে তোমার কাছে কত শান্তি! সেটা কেন বোঝ না আমার দুষ্টু মিষ্টি অভিমান?
তোমাকে ভালোবাসাতেও আমি শান্তি খুঁজে পাই, তোমার ভিতর একটা ছোট্ট জায়গা,বিশ্বাস করো বেশী বড় না কিন্তু! খুব ছোট একটা জায়গা চাই আমি। যে জায়গায় শুধুমাত্র তোমাকে যত্ন করে তোমার মতো করেই তোমাকে রাখতে চাই। কবে যে হবে সেই জায়গা??? তবে এই পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেক বেশী ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
সত্যি বলছি আজকাল নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড একঘেয়ে লাগে, নিজেরই নিজেকে বিরক্ত লাগে এতো ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি বলতে।
মনে হয় তোমায় মুক্ত করে দেই, তোমায় ছেঁড়ে দেই তোমার মতো করে। কিন্তু পরক্ষনেই তোমার বন্ধু কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়, আমি চাই না তোমার ও কষ্টের মতো অবস্থা হোক! আমি এও জানি আমি ছাড়া তোমাকে আমার মতো করে যত্ন করতে, ভালোবাসতে আর কেউ পারবে না।
তাই তোমার শত অবহেলা, শত অপমানের পর ও আমি আবার ফিরে আসি তোমায় ভালোবাসতে। আমার কাছে মনে হয়, আমার কাছে প্রতিটি সময়, প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই যেটুকু সময় আছি ভালোবাসি, পাশে থাকি, আগলে রাখি। কারন যখন থাকবো না তখন খুঁজবে আমায় এ আমার বিশ্বাস। দেখছো সেই পুরনো অভ্যাস লিখতে বসলে লিখতেই থাকি হয র ল ব যা পারি তাই লিখি 🤔 অবশ্য তোমার ভাষায় এটা ইতিহাস। হোক মাঝে মাঝে আমার জন্য না হয় ইতিহাস স্মরন করলে! ক্ষতি কি তাতে!
তোমার অনেক সময় নষ্ট হলো তাই না সোনা? কত নামে যে ডাকি তোমায়!
আমার অনেক নামের ডাকা পাখি! অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পড়ো,বেশি রাত জেগো না, তোমার শরীর খারাপ হলেতো আবার আমার টেনশন, উফফ! এতো টেনশন আর নিতে পারবো না, তবে এবার যাও তোমার বাক্সে ঢুকে পড়েো আর শীত এসে গেছে তাই কাঁথা জঁড়িয়ে দিব্যি একটা ঘুম দাও। আবার কোন একদিন তোমায় বাক্স খুলে বের করবো। আজ এ পর্যন্ত আমার দুষ্টু মিষ্টি অভিমান। তুমি ছাড়া আমি সত্যি একা। তবে রেডী থেকো পরের চিঠি আবার লিখবো খুব শীঘ্রই। পড়ার জন্য রেডী থেকো।।।।
শুভরাত্রী
ইতি
তোমার “রাগ” ♥️♥️♥️
চলবে।।।।
ছবিঃ নিজের
১৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
অভিমান জমা থাক সবাই ভালো থাক।
সুন্দর লেখা।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনিও সবসময় ভালো থাকেন এই দোয়া করি, শুভকামনা সবসময়।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ।
খাদিজাতুল কুবরা
মানুষের যে কতগুলো স্বত্ত্বা থাকে তার ইয়ত্তা নেই। একটি অপরটির পরিপূরক। তাই কেউ একজন ভালো না থাকলে কারুরই ভালো থাকা হয়না। সবিস্তারে লিখেছ,ভালো লাগলো। একেবারে গুরু গম্ভীর কিছু লিখতে হবে আমিও এমন মনে করিনা।
কলম চলুক। তবে অভিমানকে বোধ হয় একটু একটু চিনি।
রেজওয়ানা কবির
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। আসলে ইচ্ছে হলো আমার অভিমান কে চিঠি লিখি তাই মনে যা আসছে তাই অবলীলায় লিখেছি। অভিমানগুলো খুব জ্বালায়,মাঝে মাঝে আসলে পুষে রাখতে রাখতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যায়।
শুভকামনা সবসময় আপু।
মনির হোসেন মমি
বক্সে অভিমান জমা থাকে৴৴
চমৎকার উপস্থাপনা। চিঠি সার্থক।
রেজওয়ানা কবির
বাক্সেই জমা রেখে দিয়েছি ভাইয়া।।।
মাঝে মাঝে না বের করলে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ভালো থাকবেন, শুভকামনা সবসময়।
মনির হোসেন মমি
ভালো থাকুন সব সময়।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।
হালিমা আক্তার
অভিমান থাকুক তালাহীন বাক্সে বন্দী। মাঝে মাঝে বের হয়ে ভালোবাসার সৌরভ ছড়াবে। খুব সুন্দর লিখেছেন। শুভ কামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য। মাঝে মাঝে এইজন্যই অভিমানকে বের করি বাক্স থেকে। শুভকামনা সবসময়। ভালো থাকবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালো ভালো খুবই ভালো।
তাই পূনরায় পড়তে হলো!!!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অভিমান নিয়ে অভিমানকেই অভিযুক্ত করা, তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠি ভালো লেগেছে আপু। অভিমান এভাবেই হৃদয়ে পাহাড়সম হয়ে জমা হয়। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা রইলো
রেজওয়ানা কবির
অভিমানগুলো এরকমই একদমই কথা শোনে না এইজন্যই মাঝে মাঝে এভাবেই অভিযুক্ত করা। ধন্যবাদ, শুভকামনা।