সন্তান :- বেশীরভাগ মানুষই আসে বিদেশে সুখ-সাচ্ছন্দ্যের জন্যে। কিন্তু কতোজন পেয়ে থাকে? তারপরেও প্রত্যেকেই দেশের বাইরে যেতে চায়। কেউ কেউ দেশে খুব ভালো অবস্থানে থেকেও দেশের বাইরে চলে আসে শুধুমাত্র সন্তানের জন্য। কারণ তাদের মতে, দেশে নিরাপত্তা নেই, শিক্ষাব্যবস্থার করুণ পরিণতি, চাকরী বাজারে মন্দা ইত্যাদি। দেশের বাইরে এসে সেই সন্তানরা দেশে না-পাওয়া সুবিধাগুলো পেয়ে যায়। আর সব মা-বাবার তো এটাই চাওয়া। কিন্তু যখন সেইসব সন্তানরা স্বার্থপর আচরণ করে, তখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই থাকেনা। হয়তো সেই সন্তানদের মা-বাবা প্রবাস জীবনে তেমন কিছুই করতে পারেনি(ঘর, অর্থ ইত্যাদি), শুধুই সন্তানদের কথা ভেবে গেছে। আমার সেইসব পিতা-মাতার কথা ভাবলে কষ্ট হয়। শেকড় উপড়ে আরেক মাটিতে সেই শেকড় লাগানো খুবই কষ্টসাধ্য। যা কেবল প্রবাসীরাই বোঝে।
ভাষা :- প্রবাসে বসবাসরত বাঙ্গালীরা প্রায়ই বলে থাকেন, তাদের সন্তানেরা বাংলা বলতে পারেন না মোটেও। কেউ কেউ গর্ব করেন, আর কেউবা আফসোস। অথচ আমরা এটা জানি বাচ্চারা দারুণ মেধাবী হয়। যে কোনো ভাষাকে আয়ত্ত করার ক্ষমতা খুব বেশী। আমার মতে ওদের সাথে যদি বাসার ভেতর নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলা হয়, কখনোই তারা নিজেদের ভাষা ভুলবেনা। অনেকে এও বলে থাকেন, বাংলা না বললেও ক্ষতি কি? আমি বলি আমরা দেশে যখন বেড়াতে যাই, তখন সকলে কিন্তু ইংরেজী বোঝেন না। হয়তো এটাও বলতে পারেন দেশে যাওয়া হয় ৫/৭ বছরে একবার, তার জন্য শেখাবার কি দরকার? আমি বলি একদিন তো পৃথিবী থেকে চলেই যেতে হবে, ভালোভাবে থাকার জন্য এতো আয়োজনেরই বা কি দরকার?
উপসংহার :- আমি এই লেখাটি মাত্রই লিখলাম ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখে। একজন লিখেছেন তার সন্তান বাংলা বলতে পারেনা। তাই উনি বাচ্চাকে বাংলা শেখাবার জন্য শিক্ষক খুঁজছেন। কিন্তু আমার মতে ভাষা শেখানোর জন্য মা-বাবাই তো যথেষ্ট। বাসার ভেতরে যদি নিজেদের ভাষায় কথা বলেন উনারা, ছেলে-মেয়েরাও সেটাই করবে। কতো সহজ ব্যাপারটিকে জটিল করে তুলছেন কিছু প্রবাসী মা-বাবারা! সবশেষে বলতে চাই, যে দেশেরই নাগরিকত্ব গ্রহণ করুন না কেন, দিনশেষে সকলেই জানতে চাইবে, “Where is your back home?”
হ্যামিল্টন, কানাডা
৩ জুলাই, ২০১৮ ইং।
১৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
আমার জানা এবং দেখা মতে অধিকাংশ মা বাবাই প্রবাস জীবন বেঁছে নেন সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য,
দেশের অনিশ্চয়তা, পরিবেশ, সামাজিক অবক্ষয় সব কিছুর মাধ্যমে অস্থিরতায় সন্তানের ভবিষ্যতটাই মুখ্য হয়ে পরে। যদিও শেষ বয়সে দেশেই ফিরে আসতে চান প্রায় সবাই।
সন্তানরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কারনে ইংরেজীতে অভ্যস্থ্য হয়ে যায়। আমি দুই ধরনের পরিবারই দেখেছি, বাংলা ইংরেজী দুটৈ বেশ ভাল পারে, আবার বাংলা কম পারে। খুব ছোট বেলায় গেলে প্রবাসের ভাষা পরিবেশে সন্তান অভ্যস্থ হয়ে যায়।
তবে বাংলা ভাষায় অভ্যস্থ করান উচিৎ।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা একটা প্রবাদ আছে, যার মানেটা এমন, কাক যতোই কোকিল সাজার চেষ্টা করুক, সে কাক-ই থেকে যাবে। নিজের অস্তিত্বকে যারা স্বীকার করেনা, তাদেরকে আমি মানুষ বলে মনে করিনা।
ভালো থেকো নানা।
তৌহিদ ইসলাম
আপু অনেক শিক্ষণীয় বিষয় লিখেছেন। আমরা হয়তো একটু ভালো কিছু করার জন্য বিদেশে যাই কিন্তু একসময় সেখানকার কালচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। নিদেনপক্ষে নিজের ভাষার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে শিশুর জন্য মা বাবাই মুখ্য ভুমিকা রাখতে পারে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমাকে কানাডা অনেক কিছু দিয়েছে। যা আমি দেশে পাবার কথা চিন্তাও করতে পারিনা। তা বলে তো নিজের দেশকে ভুলে যেতে পারবোনা। আমার শেকড় তো বাংলাদেশ। প্রথম ডেকেছি “মা।” Mother বলিনি।
ধন্যবাদ লেখাটির পাশে থাকার জন্য।
তৌহিদ ইসলাম
শুভকামনা রইলো
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
শেকড়ের টান উপেক্ষা করা ঠিক না,
পরগাছার জীবন জীবন না,
ভাষাকে অস্বীকার করা নিজেকে অস্বীকার করা।
দিন শেষে নিজেকে নিজের মুখোমুখি হতেই হয়।
খুব ভাল জিনিস চুলে ধরেছেন।
সামান্য কোবতে থাকলে ভালু লাগত!!
নীলাঞ্জনা নীলা
কাগজে-কলমে আমি এখন কানাডিয়ান নাগরিক। কিন্তু আমার শেকড় বাংলাদেশ। আমরাই তো নিজের সন্তানকে শেখাবো, জানাবো যে আমরা কোন দেশে ছিলাম। কি ভাষায় কথা বলতাম! কিন্তু ভাবতে পারবেন না, বেশীরভাগ মা-বাবা বাসার ভেতর সন্তানের সাথে ইংরেজীতে কথা বলে। আমার ওটাই জঘণ্য লাগে।
কোবতে আপনিই লিখে ফেলেন। 😀
মৌনতা রিতু
আমারও একই কথা,’ দুদিন বা একদিন পরে তো মরে যেতে হবে কি দরকার এতো ঠাঁটবাটের!’
ভালো লিখেছো আপু।
‘ন্যাকামো দেখলে আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়। আমার ছেলে/মেয়ে বাংলা বলতে পারে না!
এরা আসলে না ঘরের না ঘাটের।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু জানো একটা সময় তীর্থ বাংলা পড়তে এবং লিখতে পারতো। সেই জাপান থেকেই আমি ওকে শিখিয়েছি। দরোজার ওপাশে ইংরেজী, এপাশে বাংলা। এখনও তীর্থ সেটা পালন করে। কোথায় সাহিত্যে তো ও ৯০% পায় নম্বর বাসায় বাংলা বলার পরেও!
এই লেখায় প্রবাসীরা কিন্তু মন্তব্য করবেনা। কারণটা তো বুঝেছো আপু।
ভালোবাসা অনুক্ষ। (3
ইঞ্জা
প্রায় দেখি মা বাবা তাদের সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছেন বলেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন, আবার বিদেশেও দেখেছি তাদের সন্তানরা বাংলা বলতে পারেনা বলে গর্ব অনুভব করেন, অথচ দেখুন আমি নিজেই ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র, পড়ালেখা শেষ করেছি ইটালিতে, এরপরেও কখনো এই বিষয়ে মাথা ঘামায়নি, কারণ আমার পিতা মাতা আমাকে আমার শেখর ভুলতে দেননি, বুঝিনা আজকালকার পেরেন্টসরা এমন কেন? 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া যারা সত্যিকারের শিক্ষাকে ধারণ করে, তারা অহঙ্কার ধারণ করেনা। বরং তাদের সাথে পরিচিত হয়ে নিজেরা নিজেদের অলঙ্কৃত করে। আপনি তেমন একজন, আমি অলঙ্কৃত হচ্ছি আমার ভাইয়া থেকে। 🙂
ইঞ্জা
অনেক ভালোবাসা বোনের জন্য। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার ভাইয়ার জন্য সবসময় ভালোবাসা।