বসে বসেই দুজনের রাত কেটে গেল,কারো ঘুম হলনা। ভোরের আগমনী বার্তা এল বিচ্ছেদের সুর নিয়ে।রিয়া নাশতা না করেই চলে যেতে চাইল।কিন্তু রোহানকে দেখতে না পেয়ে পুরো ঘর খুঁজে শেষে রান্নাঘরে পেল।দেখল সে রিয়ার জন্য নাশতা বানাচ্ছে। পাউরুটি টোস্ট করে চা বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে দিল।এবার রিয়া কি তা না খেয়ে চলে আসতে পারে?সে রাগী,জেদী যত যাই হোক,অমানুষ তো নয়।তাই সে খেয়ে নিল।খাওয়ার ফাঁকে রোহানের দিকে তাকাল আর মনে মনে ভাবতে লাগল,
“আজ যদি না চাইতেই রোহান আমাকে পেয়ে যেত,তাহলে কি অমন হাত পুড়িয়ে রান্না করে খাওয়াত,নাকি এমন মাথায় তুলে রাখত?পায়নি বলে আজ এত আদর যত্ন।পুরুষরা আসলে এরকমই -একটা মেয়েকে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে,তখন কত কি অসাধ্য সাধন করে বসে থাকে, তা বোধহয় নিজেও জানে না। উদ্দেশ্য একটাই,যেন মেয়েটি ইমপ্রেস হয়।আর যখন ইমপ্রেস হয়ে যায়,তাকে ধরা দিয়ে বসে, তখন পাত্তাই দেয় না,খাতির যত্নতো দূরে থাক! চাইনা তোমাদের ২ মিনিটের আতিথেয়তা,পারলে এমন কিছু করো,যা আজীবন বহাল থাকবে।”
রোহান কিকরে যেন রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনোভাবটা কিছুটা বুঝে গেল।তাকে বলল,
:জানি,এসব রান্নাঘর, হাজবেন্ড,হাঁড়ি পাতিল তোমার ভাল লাগে না। কিন্তু আমরা কি বন্ধু হতে পারি, রিয়া?
কিছুক্ষন ভেবে রিয়া বলল,
:পারি।
তারপর নাশতা করে রিয়া তার হোস্টেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।সেখান থেকে অফিস।রোহান ও অফিস করল।তারপর বিকেলে রিয়াকে ফোন করল।এভাবে বেশ কিছুদিন কাটল।রোহানের সাথে বন্ধুত্ব করে তার ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে অনেকটাই জানা হল।সে আগে রোহানকে যেমন কাঠখুট্টা আর অমানুষ ভেবেছিল,সে মোটেও তেমন নয়।বরং ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন,ঠান্ডা মাথার ধৈর্যশীল, সৎ,মেধাবী ও ভাল চরিত্রের অধিকারী একটি ছেলে।বউয়ের সাথে মিল পরছে না বলে অন্য মেয়ের ইনবক্সে, ফ্ল্যাটে দৌড়াদৌড়ি করার মত নয়।আজ এ গাছের ডালে তো কাল সে গাছের ডালে চড়ে বেড়ায় না। যদি তেমন স্বভাব থাকত,তাহলে এতদিন তাই করত।কিন্তু যতদিন রিয়া তাদের বাসায় ছিল,রোহানকে দেখেছে ঠিক সময়ে অফিস যেয়ে আবার ঠিক সময়ে ফিরে আসতে।এমনকি ফোনেও তাকে এই বান্ধবী,সেই বান্ধবী কল করত না,অন্তত রিয়া কোনদিন দেখেনি।আবার রিয়া তাকে পাত্তা দিচ্ছে না বলে সে অন্য মেয়ে নিয়ে নাটক করে রিয়ার মনে হিংসে জাগানোর চেষ্টাও করেনি। যদিওবা এসব করলে বরং রিয়া হিংসা বোধ করার পরিবর্তে রোহানকে চরিত্রহীন ভেবে ঘৃণা করত।রোহানের অন্য সব ত্রুটির সাথে এটাও যোগ হত।রোহান খুব সুদর্শন একটা ছেলে।সে চাইলে তার এই বাহ্যিক রূপটাকে কাজে লাগাতে পারত।কিন্তু রিয়াকে খুব অবাক করে দিয়ে রোহান নিজেকে ব্যতিক্রম ভাবে প্রকাশ করল,ঠিক যেমনটা সে চাইত। রিয়া তাকে যতই অমানুষ ভাবুক,কিন্তু কোনদিন চরিত্রহীন ভাবতে পারে নি। যদি সেটা ভাবত,তাহলে এক রাতের আশ্রয়ের জন্য তার বাড়ি যেত না,একই ঘরে রাত্রি যাপনের সাহস করত না।যদিও তারা কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী।কিন্তু তাদের মনের মাঝে সে ভালবাসার বন্ধনটি এখনো গড়ে ওঠেনি বলে একে অপরের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার প্রয়োজন বোধ করছে। কারন ভালবাসাহীন ছোঁয়া কখনো হৃদয়ে পৌঁছে না।
.
এদিকে রোহান দেখতে পেল রিয়া খুব ধৈর্যহীন,রাগী, বেশ সরল ও খোলা মনের একটা মেয়ে।রাগী স্বভাবের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক পৃথিবী ভালবাসা। সে মাকে,বাবাকে,সকল মানুষকে,মানুষের মনকে,প্রকৃতিকে,সৃষ্টিকর্তাকে ভালবাসে, ভালবাসেনা শুধু রোহানকে আর লম্পটদেরকে। সে প্রচন্ড নারীবাদী আবার মানুষবাদী। সে খুব সৎ ও উদার মনের। তার চরিত্রে কোন কলঙ্ক নেই,সে পবিত্র,এটা রোহানের বোঝা হয়ে যায়। তার ভেতরে যা বাহিরেও তাই।যখন মেজাজ খারাপ হয়, তখন সবচেয়ে কাছের মানুষের ওপর তা ঝাড়ে,যেমন ইদানীং রোহানের ওপর ঝাড়ছে।রোহান তা ঠান্ডা মাথায় মেনে নেয়,কারণ সে জানে, রাগ পরে গেলে রিয়া একদম শিশুর মত হয়ে যাবে।
এভাবে দুজন দুজনকে বুঝতে ও চিনতে গিয়ে আরো কিছুদিন কাটিয়ে দিল।মাঝে মাঝে তারা ছুটির দিনে একত্রে ঘুরতে যায়। এটা ওটা কিনে খায়। দুজন শীতের দিনে বস্তিতে গিয়ে লোকজনকে শীতপোশাক কিনে বিলিয়ে দেয়। কখনো শিশুদের পাশে দাঁড়ায়।কখনো বন্যার্তদের সমস্যা শুনে জুটি বেঁধে চলে যায় তাদের কাছে। কখনো নিছক আনন্দে কেটে যায় কিছুটা সময়। একে অন্যকে বই কিনে উপহার দেয়।নির্ভেজাল একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তাদের মাঝে।এ বন্ধুত্বে কোন বাঁধা নেই। কেউ বলবে না যে, এ মেয়ে পরপুরুষের সাথে ফস্টিনস্টি করছে।
কিন্তু সবকিছুর পরেও কিছু সমস্যা থেকেই যায়।রিয়ার সাথে তার বাবার সম্পর্ক নষ্ট হয়েছিল রোহানের নোংড়া অভিযোগের কারণে।তা ছাড়া রিয়া সংসার,রান্নাঘর, হাঁড়ি পাতিল ইত্যাদি পছন্দ করে না। তাহলে কি করে রোহান তাকে সংসারে ফেরাবে?
.
আগামীকাল প্রজ্ঞার শেষ পর্বে সকলকে আমন্ত্রণ………
২০টি মন্তব্য
ইঞ্জা
মুগ্ধ হয়ে পড়ছি, আশা করি রিয়া রোহানের মিলন হবে।
আগামীকাল গল্পটি শেষ হবার পর নতুন কিছু যেমন কবিতা, গল্প সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখবেন।
শুভকামনা।
নীরা সাদীয়া
Last episode timely dite parini bole sorry. I will try to fulfill your desire.
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রউলাম
ইঞ্জা
রইলাম★
ছাইরাছ হেলাল
মিলিয়ে দিচ্ছেন তাহলে!(রিয়া ও রোহান উপস্থাপন)
অপেক্ষা করি।
নীরা সাদীয়া
Last episode timely dite parini bole sorry. Now diachi. Valo thakben.
নীলাঞ্জনা নীলা
ইস আগামী পর্বে সমাপ্তি? মন খারাপ হয়ে গেলো শুনে।
তার মানে কি
“মধুরেণ সমাপয়েৎ?”
নীরা সাদীয়া
Last episode timely dite parini bole sorry. Now diachi. I hope it will fulfill your desire.
নীলাঞ্জনা নীলা
বাংলায় টাইপিং-এ কি সমস্যা?
নীরা সাদীয়া
হুম। তখন বাংলা কী বোর্ড ছিল না। তাই।
অরুনি মায়া অনু
প্রেম তবে নতুন করে দানা বাঁধছে আবার। তাও ভাল। মধুর মিলন হোক।
নীরা সাদীয়া
Last episode timely dite parini bole sorry. Now diachi. I hope it will fulfill your desire.
ব্লগার সজীব
আপনি বেশ ভাল লেখেন আপু। গল্পের উপস্থাপনা চমৎকার।
অপেক্ষায় থাকলাম।
নীরা সাদীয়া
Thank u bro. Last episode timely dite parini bole sorry. Now diachi. I hope it will fulfill your desire.
মোঃ মজিবর রহমান
বেশ জটিলতার পর জমছে আবার
নীরা সাদীয়া
Hmmm. Last episode timely dite parini bole sorry. Now diachi. I hope it will fulfill your desire.
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ আপু। আপু মনে কিছু নিবেন না, এখানে ইংরেজি বর্ণমালায় লেখা নিষেধ জতটুকু জানি। তাই বাংলায় লেখার চেস্টা করুন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
নীরা সাদীয়া
আমার বাংলা কী বোর্ড ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে লিখেছিলাম।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ আপু।
নীরা সাদীয়া
শুভকামনা রইল।