রহিম মিয়া দশ বছর আগে জীবিকার উদ্দ্যেশ্য নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। সাথে দুই ছেলে, তিন মেয়ে, স্ত্রী লতিফা ও বৃদ্ধ শাশুড়ীকে নিয়ে। দেনার দায়ে গ্রামের জমিজমা সবই বন্দক রাখতে হয়েছিলো তারও আগে। অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার টানতে পারছিলেন না। ঢাকায় এসে দিনমজুরের কাজে যোগ দেন। লতিফা বেগম কাজ নেয় আসেপাশের বাসা-বাড়িতে,গৃহ কর্মীর কাজ।
দিনগুলো কাটছিলো যেমন-তেমন করেই। ছেলে-মেয়েদর সরকারি স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। দুবেলা খেয়েপড়ে চলছিলো তাদের জীবন নামের গাড়িটা।
প্রতিবছর ঈঁদের সময় হলেই রহিম মিয়া বাড়তি কাজ করতেন। সেই বাড়তি কাজের টাকায় ছেলে-মেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতেন। খুব ভালো মানের বা ভালো না হলেও নতুন পোশাক কিনতেন। ঐ পোশাক গুলো পরে তার সন্তানেরা দেবশিশুদের মতোই সারাদিন ঘুরে বেড়াতো, আনন্দ করতো। তা দেখে তারা স্বামী-স্ত্রী খুশিতে চোখ মুছতেন।
রহিম মিয়াকে তার মালিক প্রতি ঈঁদে নতুন সাদা পান্জাবী আর লুঙ্গি দিতেন। রহিমা বেগমও বাসা-বাড়ি গুলো হতে জাকাতের শাড়ি পেতেন। কিন্তু ঐগুলো তারা মনের আনন্দে পরতেন না। অভাবে ও প্রয়োজনে পরতেন। রহিম মিয়ার পছন্দের রঙ ছিলো নীল। সে প্রায়ই লতিফা বেগমকে বলতেন যেদিন টাকা হবে সেদিন তোমাকে একটা লাল শাড়ি এনে দিবো আর আমার জন্যে কিনবো নীল পান্জাবী। ঐগুলো পরেই আমরা ঈঁদ করবো। লতিফা বেগম হাসতেন আর বলতেন ,আচ্ছা তাই হবে।
আজ রহিম মিয়া কর্মস্থল থেকে জীবিত ফিরতে পারেনি। এসেছেন লাশ হয়ে। জানা গেছে, অনেক উঁচুতে বাধা মাচায় কাজ করতে গিয়ে সেখান থেকে পরে গেছেন আর মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।
সারাবাড়িতে কান্নার রোল উঠেছিলো,, জানাজা-দাফন শেষ করার পর অন্যান্য আত্মীয়রা জরো হলেন, মরহুমের সয়-সম্পত্তি ও জিনিস পত্রের ভাগ-বাটোয়ারা করতে। রহিম মিয়ার যাবতীয় ব্যাক্তিগত জিনিস পত্র একটি টিনের ট্রাঙ্কে তালা দেওয়া থাকতো। ওটা আগে কেউ ধরার সাহস করতো না, এমনকি তার স্ত্রীও কখনো সেটা খুলতো না। আজ সবাই মিলে ট্রাঙ্কটির তালা ভেঙে সেটা খুললেন। ভেতরে ছিলো কয়েকটা নতুন লুঙ্গি, হাজার খানেক টাকা, ধান কাটার একটি কাঁচি, জমির দলিল,,আর একেবারে নতুন দুটো নীল পান্জাবী।
রহিম মিয়া নীল পান্জাবী কিনেছিলেন না পেয়েছিলেন তা কখনো হয়তো জানা যাবে না। তবে কোনোদিন পরেননি। তিনি হয়তো অপেক্ষা করছিলেন একদিন সে তার প্রানপ্রিয় স্ত্রী লতিফা বেগমকে লাল শাড়ি এনে দিবেন, সেইদিন তিনিও নীল পান্জাবী পরবেন….. তারা একত্রে ঈঁদের আনন্দকে উপভোগ করবেন ।
২৩টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এমন কত হতভাগারা স্বপ্নপূরণহীন ভাবেই গত হন।সুন্দর এবং হৃদয় ছোয়া গল্প যেন বাস্তবতার স্বাক্ষী।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ ভাই। গল্প লেখা সার্থক হলো।
শুভ কামনা নিরন্তর -{@
জিসান শা ইকরাম
ভালোবাসা কত গভীর হলে হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও নীল পাঞ্জাবী তিনি গায়ে দেননি। স্ত্রীর লাল শাড়ি কেনা হয়নি বলে নীল পাঞ্জাবী ট্রাংকেই জমা করে রেখেছেন।
গল্পের শেষের হঠাত নাটকিয়তা গল্পের মুল আকর্ষন।
ভালো হয়েছে ছোট গল্প।
আরো লেখুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পটিতে এটাই বলতে চেয়েছি। ভালোবাসা সব মোহের উর্ধে থাকে। ভালোবাসার মানুষটিকে পূ্র্নতায় রাখতে চাওয়ার অদম্য ইচ্ছাটাকে ধরে রাখে মৃত্যু পর্যন্ত।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। শুভ কামনা।
রিমি রুম্মান
ছোট অথচ বেশ হৃদয় ছোঁয়া। ভালোবাসা।
সাবিনা ইয়াসমিন
অল্পতে কত চমৎকার করে বলে দিলেন আপু,,অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো।
শুভকামনা নিরন্তর ❤❤❤❤❤
মাহমুদ আল মেহেদী
ভালোবাসায় পূর্ণ হলো মনটা । ভালোবাসাতো এমনই হওয়া উচিত । অনেক ভালো লাগলো গল্পটা পড়ে।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ মেহেদী,,আপনার মন্তব্য গুলো আপনার নামের মতই,,,মন ভালো করে দেয়। যেমন মেহেদীর রঙ ভালো লাগাটা ধরে রাখে, তেমন করেই মন্তব্য করেন আপনি।
শুভ কামনা,,,
মোঃ মজিবর রহমান
প্রান থাকলে প্রানি ভালোবাসা অতল গহীন। ভাল লাগলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালোবাসা অতল গহীন,,,কথাটির গভিরতা অনেক অনেক বেশি,,,
ভালো লাগায় গল্পটিতে সার্থকতা এনে দিয়েছে ভাই,,,,,শুভ কামনা নিরন্তর
তৌহিদ
এরকম কত জনের ভালোবাসা লুকায়িত থাকে তার খবর কে রাখে? ছোট গল্পে কতকিছু প্রকাশ করলেন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
ঠিক তাই,,অপ্রকাশিত ভালোবাসা নিয়েও মানুষ বাঁচে ও মরে,,,ক জনই তার খবর রাখে ☹
তৌহিদ
সহমত আপু
ছাইরাছ হেলাল
এ লেখাটি পড়লে মনে হয় গল্প আর লেখক দু’জনে দু’জনার।
আর একটু লেগে থাকলে বেশ পয়মন্ত হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
বসন্ত তো টের পাচ্ছি না!!
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনার কথা শুনে আনন্দ আর লজ্জা দুটোই পাচ্ছি,,কোনটা রাখবো আর কোনটা বাদ দিবো ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছিনা। তবে এই শীতে বরফ ঢালেননি দেখে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বসন্ত লেখাতো লিখতে চাই,,তবে বসন্তকালে কদম ফুল ফোটে কি না এটাই জানা গেলো না মহারাজ। 🤔
বন্যা লিপি
হৃদয় ছুঁয়ে গেলো ভালোবাসার গভিরতা।শুভ কামনা, শুভেচ্ছা অবিরতম
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালোবাসা বন্যা,,,আপনি আমাকে কতটা অনুপ্রানিত করেন তা হয়তো কখনোই বলা হবে না,,,
অনেক ভালো থাকবেন ❤❤❤❤❤
শাহরিন আক্তার মুক্তা
অনেক ভাল লেগেছে পড়ে, কিছু কিছু ইচ্ছা মানুষের মনেই মরে যায়।
সাবিনা ইয়াসমিন
কিছু ইচ্ছে কখনোই পূর্ণ হয়না। মনের মধ্যে অনবরত চাপা পরে থাকে।
ভালোবাসা ও ভালোবাসা ❤❤
সঞ্জয় মালাকার
দিদি পড়ে বেশ ভালো লাগলো, কিছুটা আমারি মতো, বাস্তব।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনি এতো আগের লেখাটি পড়ে, কমেন্ট দিয়ে আমায় অবাক করেছেন দাদা। গল্পটির কিছু অংশ সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা। খুব বেদনাময় মুহুর্তে লিখেছিলাম এটি। আজ আবার মনে পরে গেলো।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
সঞ্জয় মালাকার
দিদি আপনার গল্পের বাস্তবতার সাথে আমি নিজেই যুক্ত, আর দিদি মাস সিলেক্ট করেছিলাম তাই প্রথমেই আপনার লেখাটা আসলো তাই পড়ে বেশ ভালো লাগলো, ধন্যবাদ দিদি শুভেচ্ছা রইলো।
সুরাইয়া পারভিন
দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত রহিম মিয়ার সাধ্য ছিলো না। কিন্তু খাঁটি পবিত্র ভালোবাসা ও বুক ভরা আশা ছিলো। প্রিয়তমার জন্য একদিন নীল শাড়ি কিনবে আর সে নীল পাঞ্জাবি পরে ঈদ আনন্দ করে। কিন্তু বিধিবাম সেটি আর হলো না