
নীরা র বিয়ে হয়ে গেল। আকাশগুলো যখন এলোমেলো ছিল । পাতাগুলো প্রেমিকের টানে কুঁচকে যাচ্ছিল। মেঘলা আকাশ/ মেঘলা মন/ মেঘলা যৌবন/ বুঝতে পারছিল না ঠিক বিয়ে” কাকে বলে? একটা ছেলে একটা মেয়ে র বাসর ফুলশয্যা সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই/ সংসার” র অ আ ক খ অভিজ্ঞতা ও তাঁর মধ্যে ছিল না / তবু তাঁকে একপ্রকার মনের অনিচ্ছা একরাশ পাথর বুকে নিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসতে হল/“ যদিদাং হৃদয়ং মম” মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হল।
একটা আঠারো বছরের রোগা পাতলা মেয়ে “ বাঙাল” পরিবার তাও আবার রগচটা শিক্ষিত হলেও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ”– বৌ মানে তাঁরা একপ্রকার পায়ের জুতো মনে করতেন/
পরিবারের থেকে ও পাড়ার মূর্খ বাঙাল মহিলারা / নীরা একা থাকত কম কথা বলত পড়াশোনা করত সেটা তাঁদের সহ্য হত না/ তাঁরা ঝগড়া বাজিয়ে রাখতে ও মানসিক অত্যাচার করতেন নীরার উপর/ স্বামীকে দিয়ে মার খাওয়ানো থেকে যেকোন সময়ে ছোট করে রেখে মজা পেত তাঁরা মূর্খ বলে?
স্বামীর জিনিস বৌয়ের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হত/ গালি গালাজ লাথি ঝাঁটা মারপিট লেগেই থাকত/ শুধুমাত্র শিক্ষিত বাড়ি থাকা কাজের লোক ” মনে করা হত / কোনরকম অধিকার ভালোবাসা দেওয়া হোত না / অধিকার ফলাত বাংলাদেশ থেকে শ্বশুড় শাশুড়ি অবৈধভাবে ইন্ডিয়ান কাগজ পত্র তৈরী করে/ তাঁর উপর দিয়ে সম্পত্তি বাঁচাল , কাগজ পত্র করল , ঘর বাড়ি প্রতিপত্তি জমাল–সেই মেয়েটিকে ব্যবহার করল কেবলমাত্র একজন একশ বছরের বুড়ো লোক পালন করার জন্য/ সেই মেয়েটিকে ই শ্বশুড় শাশুড়ি দুটি ননদ মিলে অযথা যথেষ্টভাবে মানসিক অত্যাচার করত আর বরকে প্রত্যেকদিন — নীরার জীবন পুরো নরক হয়ে উঠল/ বাংলাদেশ এ থাকতেন সারা বছর দুই তিনমাস এসে স্থায়ী বাসিন্দা নীরা র উপর মানসিক শারীরিক অত্যাচার চালাতেন। চুলের মুঠি ধরে মারতেন গালিগালাজ করতেন। বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতেন। নীরা খালি হাতে আসেনি । নীরা র কাকার কাছ থেকে দেড় লাখ মত টাকা নেওয়া হয়েছিল।
নীরা একজন শিক্ষিত মেয়ে। কিন্তু ছোট বাচ্চা নিয়ে জব করা খুব কষ্টের ব্যাপার তাই এইরকম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে প্রায় আট থেকে নয় বছর।
নীরার স্বামী শিক্ষিত অকর্মন্য ছোটলোক । নিজের যোগ্যতা নেই তাই বৌ কে যেকোন কাজে ছোট করে অযোগ্য প্রমাণ করে মজা পান। স্বামী স্ত্রী র মধ্যে কোনরকম ভালো সম্পর্ক নেই। খেতে পরতে দিতে চায় না / যেকোন অজুহাতে পাড়ার মহিলাদের আত্মীয়দের সামনে মারধর করে খুব মজা পেতেন/ আর মূর্খ মহিলা পাড়ার লোকেরা ও খুব আনন্দ পেতেন/ তাঁরা চাইত নীরা পায়ের তলে পড়ে থেকে পচে পচে মরুক কেউ কারোর ভালো চায় না/
যাইহোক নীরা লড়াই করে বেঁচে আছে । কিন্তু মন টা পুরো ভেঙে চুরমার । যে আশা নিয়ে বিয়ে করতে এসেছিল সব শেষ । স্বামীর কাছ থেকে শারিরীক মানসিক দৈহিক আত্মিক আর্থিক সম্মান কোনকিছু ই স্বামী দিত না!
এক পাখির উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে বিকেলটা কেটে যায়
কতশত গৃহবধূ এভাবে দিন কাটাচ্ছে যন্ত্রণায়
পরাধীনতার অনলে নিজেদেরকে বলি” ও দিচ্ছে অনেকে!
কাকদ্বীপ
দক্ষিন চব্বিশ পরগনা
৬টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
“এক পাখির উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে বিকেলটা কেটে যায়
কতশত গৃহবধূ এভাবে দিন কাটাচ্ছে যন্ত্রণায় “
সব অভাগার মিলন হয় একি মোহনায়।
ভাল লাগলো দিদি। শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
মনোরম লেখা । মনোযোগ দিয়ে পড়লাম । মুগ্ধ হলাম লেখায়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
শিক্ষিত হলেই হয় না – মনুষ্যত্ব, বিবেক ভিতর থেকে আসতে হয়, পরিবার থেকে আসতে হয়। এমন অসংখ্য নারী অলিতে গলিতে পঁচে মরছে পাখির উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে। ভালো থাকবেন দিদি। শুভ কামনা রইলো
মনির হোসেন মমি
চলুক লেখা।সমাজে কিছু লোক আছে যারা বৌয়ের কামাই খেতে এবং কথায় কথায় খোটা দিয়ে মারদর করা এরা হীনমন্যতার মানুষ।
শামীম চৌধুরী
এক পাখির উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে বিকেলটা কেটে যায়
কতশত গৃহবধূ এভাবে দিন কাটাচ্ছে যন্ত্রণায়
পরাধীনতার অনলে নিজেদেরকে বলি” ও দিচ্ছে অনেকে!
সত্য প্রকাশ।
আলমগীর সরকার লিটন
নারীর বন্ধনা লেখেই গেলেন ভারি চমৎকার দিদি