Neonatal Intensive Care Unit(NICU) এখনকার হাসপাতাল এবং বড় ক্লিনিক গুলোর একটি অপরিহার্য অংশ। বেবী জন্মগ্রহন করার পরপর বিভিন্ন জটিলতার কারনে ওদের এখানে রেখে চিকিত্সা করা হয়।আমাদের বেবীর জন্মের পর কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় ৭ দিনের মত ওকে এখানে রাখতে হয়েছিল । এই সাত দিনের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই।
আমাদের বেবীর জন্মের পরেরদিন হঠাৎ খিঁচুনি উঠে তখন ওকে মায়ের কোল থেকে NICU তে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা বেশ restricted থাকে এবং ভেতরে কয়েকটি সেকশন থাকে। একটু দুর থেকে কাচের ভেতর দিয়ে বেবীদের দেখা যায়।অধিকাংশ বেবীরই তখন নাম থাকেনা …মায়ের নামে ওরা পরিচিত হয় যেমন baby of Samia Rahman ….etc.
নির্দিষ্ট সময়ে বাবা মায়েরা বেবীর কাছে যেতে পারে special পোষাক পড়ে।মায়েরা সাধারনত কম যায় ;বাবাদেরই বেশী থাকতে দেখেছি। মায়েরা বেবীর কষ্ট দেখে বেশী ভেংগে পরে এটা একটা কারন হতে পারে।
আমার বেবীর পাকস্থলী থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না এটাই মেইন সমস্যা ছিল। আর এইজন্য ওকে মুখে কোন খাবার দেওয়া যাচ্ছিলনা। ভিটামিন K ইনজেকশন স্যালাইনের মাধ্যমে দেবার পর পরিস্হিতির উন্নতি হতে থাকে । ৫ম দিনে রক্ত আসা বন্ধ হয় কিন্তু ওর জন্ডিস ডেভলপ করে । বেবীর চোখ তুলা দিয়ে বেঁধে তীব্র আলোর মধ্যে রেখে জন্ডিস মুক্ত করে ৮ম দিন আমরা বেবীকে বাসায় নিয়ে আসতে পারি।
আমরা লাকি যে অল্প দিনে বেবীকে সুস্হ অবস্হায় পেয়েছি।অনেকের মাসের পর মাসও এখানে বেবী রাখতে হয়।
আমার বেবীর হাতে ছোট্ট butterfly দিয়ে স্যালাইনের লাইন করা ছিল এবং হাতটা গজ দিয়ে মোড়ানো ছিল। ও একটু পরপর হাত তুলে রাখতো। আমি যখন ভেতরে যেতাম তখন মনে হতো, ও হাত তুলে আমাকে বলছে -বাবা আমি ভাল আছি।
ওয়েটিং রুমে আমরা একজন আরেক জনকে সান্তনা দিতাম। সূরা-কালাম পড়েই বেশীর ভাগ সময় কাটতো।
যাদের বেবী ইমম্যাচিউরড অবস্হায় জন্ম নেয় তাদের একটু বেশীদিন থাকতে হয়।এই ধরনের কিছু বেবী আমি দেখেছি একবারে ছোট পাখির বাচ্চার মত লাগে। অনেক বেবী বাবা/মা কাছে গেলে তাদের আংগুল ধরে থাকে…এ দৃশ্য সহ্য করা কঠিন হয়ে যায় যখন খবর আসে ঐ বেবীটা আর নেই।
কিছুদিন আগে পেপার পড়লাম জাবির ছাত্রী হলে এক ছাত্রী অনাকাংখিত বেবী জন্ম দিয়ে রুমের ভেতর ট্রাংকে জীবন্ত বেবীটিকে রেখে চলে যায় এবং পরে বেবীটাকে নীল মৃত অবস্হায় পাওয়া যায়। আমার বেবী যখন নিকুতে ছিল তখন একদিন সকালে যেয়ে দেখি আমার বেবীটা ট্রেয়ের এক কোনায় চুপকরে শুয়ে আছে,অন্য অংশ কিভাবে যেন ভেজা ছিল তাই সে নিজেই তার অবস্হান কিছুটা পরিবর্তন করেছিল। খবরটা পড়ে বারবার একটি কথায় মনে হয়েছে , ট্রাংকের বেবীটা নিশ্চয় বাঁচতে চেয়েছিল,শক্ত করে ধরতে চেয়েছিল বাবা-মায়ের আংগুল ….।।
৯টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুবই কষ্টকর এটা মেনে নেয়া, বাচ্চাদের বাবা-মায়ের যে কি অবস্থা হয় তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। নবজাতকরা সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আসুক, বেঁচে থাকুক প্রতিটি বাবা-মায়ের বুকে। ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
চোখে পানি আসলো।
মানবতা বিলীন।
শাহিন বিন রফিক
ট্রাংকের বেবীটা নিশ্চয় বাঁচতে চেয়েছিল,শক্ত করে ধরতে চেয়েছিল বাবা-মায়ের আংগুল ….।।
এই লাইটি একজন মানুষকে অনেক কিছু চিন্তা করতে শিখায়।
একটি বেবী একটি ফ্যামিলির এগুতে যাওয়ার অন্যতম অনুপ্রেরণা। আপনার বেবীর জন্য রহিল আমার শুভ কামনা।
ভাল থাকুক, জয় করুক পৃথিবী নামক এই গ্রহ, মানব আর মানবতায়।
হালিম নজরুল
খুব কাছ থেকে দেখা অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। খুবই টেনশনের একটি সময়।
কামাল উদ্দিন
কঠিন একটা বিষয় উপস্থাপন করলেন ভাই, শরীরটা শিউরে উঠল।
নাজমুল হুদা
ছোট বাচ্চাদের অনুভূতিগুলো একজন বিবেকবান মানুষের পক্ষেই সম্ভব অনুধাবন করা।
সকল শিশুদের বাসযোগ্য আগামীর পৃথিবী।
নাজমুল হুদা
*বাসযোগ্য হোক
ফয়জুল মহী
মনোরম লেখা।
মোঃ মজিবর রহমান
সবার বাচার অধিকার উম্মুক্ত হোক। সবার মাঝে সততা ও নিজ নিজ ধর্ম মত চলার অভ্যাস করুক। আমিন