সিটকিনিটা খোলার শব্দ কানে আসতেই তিড়িং করে লাফ দিয়ে উঠে পড়ল অনিক। চোখ মুছতে মুছতেই খাট থেকে নেমে দাঁড়াল। রাতে ঘুমাতে যাবার আগেই বাবার কাছে অঙ্গীকারনামা নিয়ে রেখেছে। আজ ভোরে হাঁটতে বেরুবার সময় তাকে নিয়ে যেতে হবে। সেই উত্তেজনায় সারারাত হয়তো ঠিকমতো ঘুমও হয়নি তার।
অন্যান্য সময়ের মত গতরাতেও বাবা-মা’র সাথে খেতে বসে অনিকের নানান কৌতুহলী প্রশ্ন। খেতে বসে এত কথা বলা মা পছন্দ করেন না। তাই মাঝে মাঝে তিনি ধমকও দেন। কিন্তু বাবা মোটেও বিরক্ত হন না। তিনি বলেন, যে ছেলের কৌতুহল যত বেশি, সে ছেলে তত প্রশ্ন করে। ফলে সে তত বেশি শিখতেও পারে এবং বড়কালে তারাই বেশি জ্ঞানী হয়ে ওঠে। বাবার এমন উৎসাহ পেয়ে অনিক আজও আরও বেশি কৌতুহলী হয়ে ওঠে।
— বাবা, তুমি সারাদিনের অন্যসময় রেখে ভোরে হাঁটতে বের হও কেন?
— ভোরের নির্মল বাতাসে হাঁটতে ভাল লাগে। এসময় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। গাড়িঘোড়া থাকে না। তাই হাঁটতে গেলে এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা থাকে না। আর গাড়িঘোড়া-কলকারখানার ধোয়া না থাকায় বিশুদ্ধ বাতাসও পাওয়া যায়। এমন বিশুদ্ধ বাতাসে হাঁটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
— কিন্তু শুনলাম ভোরে নাকি ছিনতাইকারীরা ঘোরাফেরা করে! ক’দিন আগে নাকি তিন রাস্তার মোড়ে একজন মানুষকে ছিনতাইকারীরা মেরে ফেলেছিল?
— হ্যাঁ, ছিনতাইকারীরা তো যে কোন সময়ই এমনটি করতে পারে। তবে ওই ঘটনার পর এই এলাকায় আর ওরা নেই। কেউ কেউ পুলিশের হাতে এরেস্ট হয়েছে। বাকিরাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে এসব খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়েছে।
— তাহলে আমিও তোমার সাথে হাঁটতে যাব বাবা।
— কিন্তু তোমার তো সকালে পড়াশোনা থাকে, স্কুল থাকে বাবু।
— তাতে কি! শুক্রবার তো আমার স্কুল বন্ধ থাকে। লেখাপড়ার চাপও কম থাকে। আমাকে না হয় প্রতি শুক্রবারেই সঙ্গে নিও।
— আচ্ছা ঠিক আছে সোনা, আগামীকাল ভোরেই তোমাকে নিয়ে যাব।
বাবার আশ্বাস পেয়ে অনিকের মনটা নেচে ওঠে। অপেক্ষা করতে থাকে কখন ভোর হয়।
পরিকল্পনা মতো অনিক আর তার বাবা যথাসময়ে হাঁটতে বেরুল। গলির মোড় পেরিয়ে ওরা বড় রাস্তায় উঠেছে। অনিক বলল,
— আমরা কতদূর যাব?
— ঐ তো, ঐ যে দূরের বটগাছটা দেখতে পাচ্ছো, ওর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে এক চনমনে নদী। নদীর পাড়ঘেঁষে চলে গেছে শান্ত স্থির সুন্দর একটি পথ। ঐ পথ ধরে আমরা কিছুক্ষণ হাঁটব, তারপর বাসায় ফিরে যাব।
— নদীরা খুব সুন্দর, তাই না বাবা?
— হ্যাঁ, নদীরা খুব সুন্দর, পরোপকারী ও সৎ হয়।
— ঠিক তাই। নদীরা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। ঝর্ণাধারার মত পাহাড় বেয়ে নেমে এসে একেবেঁকে মাঠ-ঘাট, শহর-গ্রাম, বন-বনানী পেরিয়ে কি সুন্দরভাবে সাগরে গিয়ে পড়ে। কিন্তু নদীদের তো প্রাণ নেই, ওরা আবার সৎ হয় কিভাবে?
— নদীরা তো অন্যায় করতে জানে না। ওরা শুধু উপকার করতে জানে। নদীর জলে সেচ দিয়ে কৃষকেরা ফসল ফলায়। মানুষ ও শত শত পশু-পাখি নদীর জল খেয়ে তৃষ্ণা মেটায়। সেই জলে ফুটে ওঠে শাপলা- শালুক, নানান ফুল। এই নদীর জলেই বাস করে রুই, কাতলা, ইলিশ, বোঁয়ালসহ হাজারো মাছ। আমরা নদীর জলে গা ডুবিয়ে গোসল করি, সাঁতার কাটি।
— কিন্তু নদী তো আমাদের অনেক ক্ষতিও করে বাবা। কত মানুষের ঘর-বাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়! ডুবিয়ে নিয়ে যায় ফসলের ক্ষেত।
— প্রতিষোধ, বুঝলে বাবা, ওভাবে ওরা প্রতিষোধ নেয়। আমরা মানুষেরা যখন ওদের খুব ক্ষতি করি, তখন ওরা এভাবে প্রতিষোধ নেয়।
— মানুষ আবার ওদের ক্ষতি করে কিভাবে?
— করে বাবা। এই ধর মানুষ জোর করে নদী দখল, নদী ভরাট করে ঘরবাড়ি-কলকারখানা বানায়, ওদের গতিপথ বদলে দেয়। তাই ওরা রেগে যায়। এইসব কারণে একসময় ওরা ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
*** (চলবে…..) ***
২২টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
নিখুঁত ভাবনায় কোমল হাতের পরশ।
হালিম নজরুল
অফুরান ভালবাসা ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
ভাত ঘুম শেষে লেখক এমন সুন্দর গল্প নিয়ে ফিরে আসলে,
পড়ার মজাই মজা !!
বলেন, ঠিক না বেঠিক!!
হালিম নজরুল
আপনার মত কবিকে কাছে পেলে অনেককিছু ঠিক হয়ে যায়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
নদী নিয়ে দারুণ গল্প। অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আশা করি ভালো আছেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
হালিম নজরুল
আপনারা সবাই ভাল থাকলেই আমি ভাল থাকি। আপনাদের সকলের জন্য শুভকামনা রইল।
আরজু মুক্তা
প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ।
আসুন, বেশি করে গাছ লাগাই। প্রকৃতির কোলে ফিরে যাই।
গল্প ভালো লাগলো
হালিম নজরুল
চমৎকার আহবান, ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার অনেক শুভেচ্ছা রইল কবি নজরুল দা
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ ও ভালবাসা ভাই।
শামীম চৌধুরী
বহুদিন পর আপনার লেখা পড়লাম ভাইজান। ছোটগল্পটা ভাল লাগলো। নিয়মিত পড়ার আশায় রইলাম। শুভ কামনা রইলো প্রিয় কবি।
হালিম নজরুল
আমার খুব প্রিয় মানুষদের মধ্যে আপনি একজন। আপনার এই প্রেরণাকে উপেক্ষা করতে পারি না। লিখব ইনশাআল্লাহ।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
প্রকৃতিও প্রতিশোধ নিতে জানে॥না নিলে মানুষ তো শিক্ষা হবেনা॥ তারপরও তো আমাদের হুঁশ হয়না।চলুক পড়ে পড়ে ধন্য হই।
শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
অনেক ধন্যবাদ সাহস দেবার জন্য।
সুপায়ন বড়ুয়া
অনেকদিন পড়ে এলেন বন্ধু নদীর গল্প নিয়ে।
তাই তো আমি শেষ করেছি মনোযোগ দিয়ে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
আপনাদের প্রেরণাই আমার লেখার শক্তি দাদা। আরও লেখার চেষ্টা করব।
উর্বশী
নদী,জীবন, অনীক এবং বহমান সময় এসব নিয়ে কিছু সুখ,কিছু না পাওয়া তা নিয়েই রচিত প্রকৃতির এর সুন্দর সময়ের গল্প। ভাল লেগেছে। প্রকৃতি তো কিছু নেয় না তেমন, বরং বেশীর ভাগ দিয়েই যায় অমিয় ধারায়। অনেক ভাল থাকুন ব্যস্তপাখি।
অফুরান শুভ কামনা রইলো।।
হালিম নজরুল
মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসি। তাই তাদেরকে নিয়ে লিখতে ভাল লাগে।
রেজওয়ানা কবির
প্রকৃতির লীলাখেলা।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ আপু।
তৌহিদ
প্রকৃতি যেমন সুন্দর তেমনি সেই সৌন্দর্য কেউ নষ্ট করলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতেও দ্বিধা করেনা। গল্পের উপজীবী বিষয়টি ভালো লেগেছে ভাই।
চলুক গল্প। শুভকামনা রইলো।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ প্রেরণা দেবার জন্য। আপনারা সাহস দেন বলেই লিখতে ইচ্ছে করে। ধন্যবাদ ভাই।