অনেক দিন আগে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব ঘটনা।সম্ভবত ১৯৯০/৯২ সাল।বহু বছর যাবৎ গ্রামের পরিবেশটা দেখা হয় না।কঠিন পাথরে শহুরে ব্যাস্ততার মাঝে জীবন আটকে গেছে।এখানে একজন আর একজন এর এত কাছাকাছি থেকেও যেন কেউ কাউকে চিনিনা।
কুমিল্লা যাবার একটি বিয়ের দাওয়াত পেলাম।শীতের সকাল তরিগড়ি করে আমি এবং আমার ছোট ভাই দু জনে ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেলাম আমাদের এলাকা চিটাগাং রোড বাস স্ট্যান্ডে।মুক্তি স্বরনীর কাছে কুমিল্লা যাবার বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।আমার এক হাতে ছিল তসিবার ক্যামেরা এবং অন্য হাতে হাজার তিনেক টাকাএবং কাপড় চোপড় ভর্তি একটি ব্যাগ।ছোট ভাইয়ের হাতে ছিল বিয়ের প্রেজেন্টটিশনের একটি প্যাকেট।ছোট ভাইয়ের বয়স তখন ১০/১২ বছর হবে।প্রচন্ড রোদে অনেকক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায় হঠাৎ আমার কাছা কাছি এক লোক আরেক লোকের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করে কি যেন আবদার করছিল।এক সময় ঐ বিষয়টি আমার কাছাকাছি এসে কথা বলছে।ধীরে তারা আমার একেবারে কাছাকাছি এসে কথা বলাবলি করছে….
-ভাই আপনি না নেন এই জিনিসটা কোথায় বেচতে পারব দয়া করে একটু বলে যান।
লোকটির হাতে কাগজের পোটলায় মুড়ানো ছিল গ্রাম্য মহিলাদের জলপাই বিচির মত কয়েকটি স্বর্নের মাদলী অথাৎ কাইতনের গলার হাড়।লোকটি দেখতে বেশ ভদ্র ঘরের বলে মনে হল।হয়তো বিপদে পড়ে এ গুলো বিক্রি করতে চাইছে।এবার লোকটি অন্য লোকটিকে ছেড়ে আমার কাছে এসে কাগজে মুড়ানো জিনিসটি দেখিয়ে কান্না কান্না কন্ঠে বলছে….
-ভাই আমি হেই সোনার গাঁ থেইকা আইছি।আমার ঘরে মেলা সমস্যা।অনেক ঋণে পড়ে আছি,বউকে না জানায়ে নিয়া আইছি যদি বেচতে না পারি তা হলে আমার অনেক বিপদ অবে।একটু দয়া কইরা কই বেচা যায় বলে দিবেন?একটু উপকার করেন ভাই।
-স্বর্ণের দোকানে যান ।
-আমিতো চিনি না।এই দেহেন খাডি সোনা।
বলে লোকটি জিনিসটি আমার হাতে দিল।আমি হাতে নিয়ে নাড়া চাড়া করে হালকা করে জিনিসের উপর কামড় দিলাম।তার পর হতে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা।আমি ভুলে গেলাম আমার কোথায় যেন যাবার কথা ছিল।ভুলতে বসেছি আমার সাথে আমার এক ছোট ভাই আছে।মুক্তি্স্বরনীর পিছনে গেলাম লোকটিকে স্বর্নের দোকান দেখিয়ে দিতে।সেখানে গিয়ে দেখলাম সব দোকান বন্ধ।লোকটি যতই সময় যাচ্ছে ততই যেন ভেঙ্গে পড়ছে, হতাশার ছাপ তার চেহারায় লক্ষ্য করছি।লোকটিকে আসস্থতঃ করলাম।
-কোন সমস্যা নেই আপনি ঐ ডেমড়া গলাকাটা পুলে যান সেখানে অনেক স্বর্নের দোকান আছে।
লোকটির চোখ দিয়ে এবার জল এসে গেল।
-ভাইরে আমিতো কিছুই চিনি না তাছাড়া এতগুলো স্বর্ন নিয়ে একা যাইতেও ভয় করছে।আপনি নিয়ে নেন কিছু কম দর হলেও চলবো।
আমি অপরাগতা স্বীকার করে বললাম চলেন আমার সাথে।তখন স্বর্নগুলো আমার হাতে।হাটছি ওয়াবদার রাস্তা মেঠো পথে দিয়ে।পথে কিছু দুর যেতে এক চাদর গায়ে ভদ্রলোক আমাদের পথ আটকিয়ে জানতে চায় আমরা কোথায় যাচ্ছি।কেনো যাচ্ছি।লোকটিকে সরল মনে জিজ্ঞাস করলাম ভাই সামনে কি স্বর্নের দোকান আছে।লোকটি স্বর্নের জিনিসগুলো দেখে তার পর বলে…না ভাই অনেক টাকার ব্যাপার আপনারা ঐ একটু সামনে দোকান আছে সেখানে গেলেই বিক্রি করতে পারবেন।লোকটির কথামত আমরা হাটছি ছোট ভাই আমার পিছন পিছন হাটছে আমার সে দিকে খেয়াল নেই।আরো কিছুক্ষন হাটার পর আরো একজন আমাদের সাথে কথা বলল ….কি ভাই কই যান?একটু স্বর্নের দোকানে বললাম ।লোকটি জিনিস গুলো দেখতে চাইল। তার হাতে দিলাম সে কিছুক্ষন নেড়ে চেড়ে দামাদামী করছে এর মালিকের সাথে।দামধর না বনাতে লোকটি চলে যায়।আমরা আবার হাটছি।প্রায় ঘন্টা দু,এক ঘন্টা হাটার পর স্বর্নের দোকানের বাজারের কাছাকাছি আসার পর আমি লোকটিকে বললাম…
-ভাই ঐ যে দেখা যাচ্ছে বাজার, সেই বাজারে গেলে দোকান পাবেন,আপনি যান।
লোকটি কাকুতি মিনতি করা শুরু করল…
-ভাইরে এত কষ্ট যহন করছেন আর একটু কষ্ট করে বেচে দিলে বড় উপকার হয়।আমি যেন পড়লাম মহা ঝামেলায় আমার হাতে ব্যাগ ক্যামেরা অবস্হা টাইড।লোকটি আবার বলল ভাই একটু দয়া করেন আপনার ব্যাগগুলো দেন আপনার ভাই সহ আমি এখানে অপেক্ষা করি আপনি যান।এই বলে আমার হাতে স্বর্নের মাদলী ধরাইয়া দেয়।আমি ছোটকে বললাম…তুই এখানে থাক আমি যাবো আর আসব।এই বলে আমি চলে গেলাম সারুলিয়া বাজারে অনেক ঘুড়াগুড়ির পর একটি দোকান পেলাম সেখানে গিয়ে স্বর্নকারকে স্বর্ন দেখালাম।স্বর্নকার প্রথমে ভাল করে দেখে কষ্টি পাথরে যাচাই করতেই বুঝতে পারলেন এটা স্বর্ন নয়।পিতল ধাতবের উপর স্বর্নে নিকেল।আমি কি করব বুঝতে পারছিনা।হঠাৎ মনে পড়ল আমার ছোট ভাইয়ের কথা।শরীরের সমস্ত পশম দাড়িয়ে গেলো।টেনসনে মাথা চক্কর দিল।কিছুক্ষন পর দেখলাম দোকানদারা আমাকে আমার মাথায় তেল-তুল দিয়ে জ্ঞান ফিরাল।জ্ঞান ফেরার সঙ্গে সঙ্গে চলে এলাম সেখানে যেখানে আমার ছোট ভাই আর লোকটিকে রেখে গিয়েছিলাম।সেখানে গিয়ে দেখি কেউ নেই- লোকটিতো নেই বরং ছোট ভাইটিও নেই।মনে ভয় এসে গেল যদি ছেলে ধরা হয়ে থাকে তবেতো আমার ভাইকেও হারালাম।মাথায় কোন কাজ করছেনা শরীরেও কাপন এসে গেছে,সমস্হ দেহ যেন শক্তিহীন, হাটতে চাচ্ছি কিন্তু পায়ে পা লেগে যাচ্ছে।অনেক কষ্ট করে গলাকাটা পুল দিয়ে ডেমর চিটাগাং রোডে এসে ক্লাশমেট বন্ধু জজের সাথে দেখা করে সব খুলে বললাম।জজ আমাকে ঠান্ডা কোল্ড ড্রিংস পান করিয়ে….একটু সময় দে দোস্ত,তুই রেষ্ট নে দেখি আমি কি করতে পারি সে বলল।আমার আত্ত্ববিশ্বাস ছিল ও পারবে কারন চিটাগাং রোডের যত দুই নম্ভরী আছে সব ওরা কন্ট্রোল করে।তখনও হোসেন আজকের এ অবস্হানে ছিল না কিন্তু সব অপরাধের খবরই রাখত।ঘন্টা দু ঘন্টা পর জজ খবর আনে পাওয়া গেছে তবে নগদ টাকাগুলো পাওয়া যায়নি আর আমার ছোট ভাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিল লোকটি এই বলে যে ব্যাগপত্র তার কাছে রেখে তার ভাই তাকে বাসায় চলে যেতে বলেছে।আমি জজের কাছে বায়না ধরলাম লোকটিকে দেখব।জজ বুঝাল দেখ এটা একটা ফালতু অপরাধ জগত এখানে যতই খোজ নেয়ার চেষ্টা করিস কিছুই খুজে পাবি না।যা করার আমিই করেছি তুই এখন বাসায় যা খালা-খালু হয়তো এতক্ষনে তোর খোজ নিতে নিতে হয়রান।আমিও আর এগুলাম না শরীর প্রচন্ড দুর্বল লাগছে।তাই জিনিস পত্র নিয়ে জজ আমাকে বাসায় পৌছে দেয়।
প্রিয় বন্ধুগণ,চলার পথে আপনার জীবনেও ঘটতে পারে এমন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা যা আপনার কাম্য নয়।কিন্তু আপনার সাবধানতা আর বিচক্ষনতাই আপনাকে এ থেকে রক্ষা করতে পারে।
১/ (y) মাথা ঠান্ডা রেখে যাত্রা পথে ঘর থেকে বাহির হবেন মনে কোন প্রকার হতাশা কিংবা টেনসন রাখবেন না।
২/ (y) বাসে ,লঞ্চ ঘাটে কোন অপরিচিত লোকের কাছ থেকে কোন কিছু খাবেন না অথবা কোন কিছু স্পর্শ করবেন না।
৩/ (y) যাত্রা পথে আপনার প্রয়োজনীয় ফোন নম্ভর সহ মোবাইল সাথে রাখবেন।
৪/ (y) যাত্রা পথে গাড়ীতে কিংবা যে কোন যানবাহনে কোন অপরিচিত লোকের সাথে মনমুগ্ধকর কোন আড্ডায় মসগুল থাকবেন না।
৫/ (y) আমরা মানুষ তাই মানুষ হিসাবে মানুষের উপকার করাই ধর্ম কিন্তু সাবধানে এগুবেন বুঝতে হবে অন্যের উপকার করতে গেলেও অনেক সময় নিজে বিপদে পড়তে পারেন।তাই সে সময় অত্যান্ত বুদ্ধিমত্তার সহিত এগুতে হবে।
৬/ (y) অপরিচিত কেউ কিছু ক্রয় করে আনতে বললে সাবধান থাকবেন কারন আপনার এই অনুপস্হিতের সময়টা শত্রু কাজে লাগাবে।
এইতো মোটামুটি এগুলোই সতর্কমুলক ভাবে মেনে চললে অনেক বিপদ হতে নিজেকে সাময়িক রক্ষা করা হয়তো সম্ভব হবে।
(y) সবাই ভাল থাকুন সুস্হ থাকুন।শতর্কতায় পথ চলুন। :=
১১টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
আপনার ছোট ভাইয়ের কোন ক্ষতি হয়নি দেখে স্বস্তি পেলাম
আল্লাহ্ রক্ষা করেছেন।
এমন ধরনের প্রতারক সমাজে অনেক আছে।
উপদেশ গুলো কাজে লাগবে সবার।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ :=
স্বপ্ন
কি অবস্থা ! কত ধরনের ধান্দা বাজী চলে । ধন্যবাদ আপনাকে ।
মা মাটি দেশ
অনেক শুভেচ্ছা 🙂
নীলকন্ঠ জয়
সতর্কতাবাণী গুলো জরুরী কিছু কথা জানান দিয়ে গেলো। ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টের জন্য। -{@
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ নীল (y)
ছন্নছাড়া
যখন ছোট ভাই কে পাওয়া যাইতেছিল না তখন খুবী ভয় পেয়ে গেছিলাম ………
পরে ভাইয়ের খবর পাওার পরে সশ্তি পেলাম …………………।।
ছোট ভাই এখন কেমন আছে ……………।।
অনেক প্রয়োজনীয় একটা পোস্ট ধন্যবাদ
মা মাটি দেশ
ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে খুব মিশুক ধন্যবাদ আপনাকে না ছোট ভাই এখন বেশ বড় হয়ে যুব উন্নয়নে অফিসার পদে সরকারী চাকুরী করছে (y)
ছন্নছাড়া
যখন ছোট ভাই কে পাওয়া যাইতেছিল না তখন খুবী ভয় পেয়ে গেছিলাম ………
পরে ভাইয়ের খবর পাওার পরে সশ্তি পেলাম …………………।।
ছোট ভাই এখন কেমন আছে …………… কতো বড়ো হয়েছে কি করছে এখন ছোট ভাই
অনেক প্রয়োজনীয় একটা পোস্ট ধন্যবাদ
খসড়া
আমি সকালে মন্তব্য করেছিলাম তা কেন নাই। খুব কঠিন ও বেশ বড় বাস্তবতা ছিল তাতে। তীব্র প্রতিবাদ করছি।
তৌহিদ
আমরা মানুষ তাই মানুষ হিসাবে মানুষের উপকার করাই ধর্ম কিন্তু সাবধানে এগুবেন বুঝতে হবে অন্যের উপকার করতে গেলেও অনেক সময় নিজে বিপদে পড়তে পারেন।তাই সে সময় অত্যান্ত বুদ্ধিমত্তার সহিত এগুতে হবে।
এটাই সত্য